বুশরা আফরিনকে নিয়ে আপনার ট্রলের কারনটা বুঝি নি আসলে ! একটু বুঝাবেন ?
বুশরা আফরিনের বাবা আতিকুল ইসলাম ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র। উনার পদমর্যাদা একজন পূর্ণ মন্ত্রীর সমান। মেয়র হওয়ার আগে তিনি ছিলেন গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সর্দার !
তার মেয়ে বুশরা আফরিন । বিদেশে পড়াশোনা করে আবার দেশে ফেরত এসেছেন ! অথচ চাইলেই তিনি আমেরিকায় স্থায়ী বসবাস করতে পারতেন কিংবা যে কোনো উন্নত দেশে চাকরিসমেত স্থায়ী সিটিজেন হিসেবে থাকতে পারতেন ! উনার জন্যে এটা কোনো ব্যাপারই ছিল না । মিথ্যা বললাম ?
তিনি দেশের বাইরে পড়াশোনা করে আবার ফেরত এসে দেশেই চাকরি করতে গেলেন ! তার কি চাকরির খুব দরকার ছিল? আমাদের পাড়ার চেয়ারম্যানের পোলাও তো চাকরি খুজে না। হয় রাজনীতি বা ঠিকাদারের ব্যবসা করে, তাতে পাওয়ারও এক্সেস হয় আবার নিম্নমানের কাজ দিয়ে কোটিপতি হতেও সময় লাগে না !
বুশরা তার বাবার ব্যবসাও সামলাতে পারতেন !
অথবা তিনি পারতেন কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে সেখানেই স্বামী-সন্তানসহ স্থায়ীভাবে থিতু হতে! একটা সামান্য সরকারী চাকরি করা পিওনও ঘুষ খেয়ে বিদেশে গাড়িবাড়ি করে ফেলেছে, তার উদাহরন তো এই বঙ্গদেশে দুএকটা না, শত শত উদাহরন আছে ! বুশরার জন্যে এটা করাও কি খুব কঠিন কিছু ছিল?
সেসবে না গিয়ে তিনি একটা চাকরি নিলেন, আবার বলি উত্তর সিটিতে জাস্ট ''একটা চাকরি'' নিয়েছেন তিনি। তাহলে কি বেতন বেশী তাই নিয়েছেন?
কতো বেতন হবে তার?
ধরেন, মাসে সর্বোচ্চ এক/দুইকোটি !
একজন মন্ত্রীর/মেয়রের মেয়ে, একজন হাজার হাজার কোটি টাকা নাড়াচাড়া করা ওয়ালার মেয়ের কাছে মাসে এক কোটি ইনকাম করাটাও তো বিশেষ কিছু না, উনি উনার বাবার ব্যবসা দেখলেও এর চেয়ে ঢের বেশী ইনকাম করতেন !
আপনারাই তো বলেন, বিদেশে পড়তে গিয়ে সবার দেশে ফেরত এসে দেশকে সার্ভিস দেওয়া উচিত, তাহলে বুশরা তো ফিরলো, তাকে আপনারা এপ্রিশিয়েট করলেন না কেনো ?
সে তো এখানে যোগ দেওয়ার আগেও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি করে এসেছে, তাহলে তার চাকরিতে অসুবিধাটা কোথায় ?
একজন মন্ত্রীর মেয়ের কাছ থেকে আপনি কি আশা করেন ? একজন কোটিপতির মেয়ের কাছ থেকেই বা আপনি কি আশা করেন?
৬ নাম্বার বাসে ঝুলতে ঝুলতে আর আপনার বগলের ভোটকা গন্ধ শুকতে শুকতে তিনি রোজ উত্তরা মতিঝিল অফিস করতে যাবে? এটা চান আপনি? কিংবা একটা চাকরির জন্যে তার সেন্ডেলের তলা ক্ষয় হয়ে যাবে আপনার মতোন, এটা চান আপনি ? একজন কোটিপতি মন্ত্রীর মেয়েকে এইরুপে দেখতে পারলে আপনি কি তাকে তখন এপ্রিশিয়েট করতেন ?
তখন হয়তো তার আরেকটা দোষ বের হতো !
তিনি ভিন্ন সাবজেক্টে পড়ে এই চাকরিতে এসেছেন তাই ?
আপনি ইতিহাসে পড়ে কোন দেশের ঐতিহাসিক হয়েছেন ভাই? বাংলায়/ইংরেজীতে পড়ে ব্যাকরনবিদ/সাহিত্যিক হয়েছেন তো ?
তবুও জেনে নেন, বুশরার কাজটা তার ডিপার্টমেন্টের সাথেও ইররেলেভেন্টও না! তার এই কাজে যথেষ্ট পড়াশোনা এবং চাকরির অভিজ্ঞতাও আছে, না জানলে গুগল করে জেনে নেন !
তাহলে আপনি তাকে ট্রলটা করছেন কেনো ?
এখন এই পদে যদি একটা গরীব ঘর বা রিকশাচালকের ঘর থেকে থেকে পরিশ্রম করে উঠে আসতো এবং তার কাজের উদ্যোগ হিসাবে রাস্তার দুপাশে ছোট আকারের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিলো, সেই অফিসারটা কি সংশ্লিষ্ট এলাকার পাতি নেতা বা ফুটপাত ব্যবসায়ীর ক্রোধানল কাটিয়ে তার উদ্যোগ সফল করতে পারতেন ? এরকম উদ্যোগ নেওয়া অফিসার অনেক আছে কিন্তু সেটা ইমপ্লিমেন্ট করার ক্ষমতার অভাবে সেগুলা চাপা পড়ে থাকে, তাহলে একজন ক্ষমতাশালী মানুষকে যদি উচ্চ পদে আসীন করানো হয়, তাহলে এই পজিটিভ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা তো কঠিন কিছু না, তবুও আপনি হিট অফিসারকে কেনো বলছেন যে, তার গরমেই নাকি আপনি বেশী হিট হয়ে যাচ্ছেন ?
এসব ভাড়ামি করলে/বললে লাইক কমেন্ট বেশী আসতেছে ?
দিনশেষে আপনার সম্বল ওটুকুই, আর বুশরা কিন্তু অনন্য উচ্চতায় পৌছে গেছেন, যেটা আপনার মেয়েকে পাইতে হলে, আপনার নিজের ঘাম পায়ে পড়লেও হয়তো হবে না, আরো নিচে ফেলতে হবে !
শোয়েব আখতারের ছুড়ে দেওয়া অফস্ট্যাম্পের বল কিভাবে খেলা উচিত সেটা টেন্ডুলকারের চেয়ে বেশি ভালো আমাদের পাড়ার চা দোকানদার কুদ্দুস চাচা খুব ভালো জানে, শুধু জানে না, কিভাবে চা বানাতে হয় ! মনে কিছু নিয়েন না, বেশিরভাগ বাঙ্গালীই তাই !
কেও বিদেশে পড়তে গেলে সেটা বাঙালীর কাছে দোষ, খুব দামী চাকরি নিয়ে বিদেশে থেকে গেলেও দোষ (তবে প্রবাসী হিসাবে বিদেশে গু/গবর সাফ করলে অবশ্য রেমিটেন্স যোদ্ধা), বিদেশ থেকে ফেরত এসে দেশে চাকরি নিলেও দোষ, একজন ক্ষমতাশালী বিদেশে টাকা পাচার করলে দোষ, ক্ষমতাশালীর মেয়ে টাকা পাচার না করে দেশেই চাকরি বাকরি করলেও দোষ...... আপনার দৃষ্টিতে চারিদিকে শুধু দোষী আর দোষী, মাঝখানে আপনি এক জিব্রাইল ফেরেশতা, যার কাজ হলো জনতার মাঝে ফেসবুকে ওহী বিলানো !
আমরা আগেও জানতাম না আমরা আসলে কি চাই, এখনো জানি না কি চাই, তাই যে জানে যে সে কি চায়, তার দিকে আঙুল তুলে বলি, তুইও কিছু জানিস না !
বাঙালী হিসাবে আমরা আজীবন যেমন দোতালী ছিলাম, কোন বিষয়ে কাকে কি বলতে হবে তা নিয়ে একটু মাথা খাটানোর আগেই নিতম্বের মতো দুভাগ হতাম, এখনো তাই হই ।
দিনশেষে আপনার সম্বল বুশরার চেহারা সুরত নিয়ে সেক্সুয়াল টিকলিং করে একটা ভিডিও বানিয়ে হিট হওয়ার চেষ্টা করা(যদিও তা দেখে সুধীজনের মুখে থুতু ছাড়া কিছু আসবে না) নতুবা ভাড়ামী করে লোক হাসানোর জন্য দুএকটা কমেন্ট করে ফ্রেন্ড লিস্টের সমমনা কয়ডা ভাঁড় হওয়ার চেষ্টায় থাকা আতেলের হা হা রিয়াক্ট পাওয়াই আপনার জীবনের অর্জন ! আপনি আজীবন এটাই করে যাবেন, বুশরারা ঠিকই এগিয়ে যাবে !
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম হিট অফিসার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ায় আমাদের বুশরা আফরিনকে অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা, আগামীর বাংলাদেশকে রৌদ্রতপ্ত দিন থেকে রক্ষায় বুশরার উদ্যোগ আগামী প্রজন্মের জন্যে পাথেয় হয়ে উঠুক !
অভিনন্দনসমেত শুভকামনা বুশরা !
© Mahmud Piash