ব্লগে আমার বিচরণ খুব বেশি না। তার উপর হঠাত করে বাসার কম্পিউটাটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমি আরো পংগু। যাহোক আজ দুপুরে শুনলাম আরিফের মুসলিম এইড সংক্রান্ত এই ব্লগের কথা.........পড়লাম। ব্লগের চেয়েও আরো প্রানবন্ত আর গুরুত্বপূর্ন মনে হল মন্তব্যগুলো, মনে হল আমারো কিছু কথা বলা উচিত।
তার আগে বলি বিদেশ বিভূইয়ে চাকরী বাচিয়ে চলাটা খুব জরুরী। আমার মত যারা বাঙ্গালি রেষ্টুরেন্টের ওয়েটার বা এই জাতীয় অডজব দিয়ে টিউশন ফি মিটিয়েছেন তারা জানেন একটু ভাল চাকরী বিদেশে কি জিনিস। অনেক অডজব, অনেক জঘন্য মানুষের মুর্খের মত গা জ্বালানো গাধা মার্কা উপদেশ শুনেছি, সহ্য করেছি কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যারা কখনও রাজাকারদের সাথে যাইনি, হাত মেলালেই অনেক টাকা, কিন্তু আমার মত অনেকেই আছেন যারা আজ পর্যন্ত সে সব থেকে অনেক দূরে। অনেকেই আছেন যারা এই কষ্টের বাজারেও দেশের চ্যারিটি কাজে একটা পয়সা নেনে না, বরং সাধ্যমত যা পারেন সেটা দিয়ে সাহায্য করেন। সুতরাং, প্রথমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
যাহোক, এবারে আসি ব্লগের কথায়। মুসলিম এইডের সাথে কাজ না করে আমি ইসলামিক রিলিফের পক্ষে বাংলাদেশ যেতে রাজি হই শুধুমাত্র এই কারনে যে এরা জামাতি নয়। (আরিফের একটা কথা খুব সত্য কে জামাত আর কে না বোঝা খুব কষ্ট আজকাল। লন্ডনে এমন কট্টর জামাতি দেখেছি যারা গোলাম আযমকের দেখতে পারে না, নিজামিকে দেখতে পারে না। কারন আর কিছু নয় এরা জামাত-শিবিরের মত এত মজবুত দলের সুনাম ক্ষুন্য করছে) আমি জানি মুসলিম এইড-এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মঈনুদ্দিন অন্যদিকে ইসলামিক রিলিফ বরং কওমি মাদ্রাসা পন্থি যারা কি-না এ্যান্টি জামাতি। কথ দিচ্ছি ব্যাপারটা আরো ভাল করে জেনে আপানাদের জানাবো। ক্ষমা চাইছি যদি আমার জানার সীমাবদ্ধতার কারনে আমি এদেরকে চিন্তে ভুল করে থাকি।
@ হিডেন ষ্ট্রীটঃ , উন্মনা রহমান =রেজোয়ানের কথা লিখেছেন। ওর ব্যাক্তি চরিত্র বা উদ্দেশ্য নিয়ে লিখতে চাইছি না। শুধু আপনার কথাই ‘যদি’ মেনে নেই তো ঘটনাটা এরকম, রেজোয়ান ঢাকা এ্যায়ারপোর্টে নিজেকে ভিআইপি সেলিব্রিটি মনে করে আতলামি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। কিন্তু তাই বলে একটা স্বাধিন দেশের তিনটা এয়্যারফোর্স অফিসারের এত ক্ষমতা কি থাকা উচিত- তারা ডিক্লেয়ার করে বলে বলে একজন মানুষের এক হাত, এক পা আর সমস্ত শরীরের ৬০ মাংস থেতলে দিবে? কি ভয়ানক সে যন্ত্রনা! কি পাশবিক অত্যাচার!! এক মূহুর্তের জন্যে ভাবুন, এরা কিন্তু ৭১-এর বিহারি জানোয়াড় না, এরা হল আমাদের দেশের রক্ষক (!) বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত প্রতিগ্যাওয়ালা শিক্ষিত তরুন, এরা কিভাবে এমন পশু হয়? রাজাকার শুনলেই আমার বুনো গোয়ার ঘোত-ঘোত করতে থাকা শুয়োরের কথা মনে হয়, কিন্তু এরাতো তা না!!!
@ ফ্রুলিংক্স আপনি লিখেছেন ‘‘সব কটিকে আমার কাছে ভাঁড় মনে হয়।’’ আরো যা যা প্রচলিত আছেঃ আমি বলি এরা সব জামাতি, সব চোর, ভন্ড... মানলাম এদেশে যারাই টাকা তুলে তারা সবাই জামাত-ভন্ড, লোক দেখানো কুকুরসম!
একজন অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার কিছু আক্ষেপ, কিছু কষ্ট আমি আপানদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ব্যাক্তিগতভাবে আমি যতবার তথাকথিত প্রগতিশীলদের সাহায্য চেয়েছি, তারা সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছে। এরা কিন্তু শুধু আওয়ামি-বিএনপি-ওয়ালা না, এদের মধ্যে দেশ থেকে আসা শিক্ষিত, ‘ভাল’ কান্ডগ্যানওয়ালা, খালেদা হাসিনা-কে চোর বলতে দিধা না করা টাইপ তরুন-তরুনীরাও আছেন।
দুই একটা উদাহরনদেই, সম্পুর্ন জামাত-ধর্ম-রাজনীতি ছাড়া আমরা একবার সৌদি আরবের মধ্যবিত্তঘরের এক বাঙ্গালি শিশুকে বাচানোর জন্যে টেলিভিশন এবং বাইরে চ্যারিটি করে কিছু টাকা তোলার চেষ্টা করি। শিশুটির জন্যে প্রয়োজন ছিল প্রায় ৮০ হাজার পাউন্ড। আমরা কয়েকজন মিলে প্রায় ১০০০-এর উপর টেক্সট ম্যাসেজ, কয়েকশ ইমেইল করে এই প্রগতিশীলদের কাছ থেকে বলতে গেলে কোন সাড়াই পাইনি। আমি বলছিনা সবাইকে ১০০ পাউন্ড করে দিতে হবে, পাচ পাউন্ড? এক পাউন্ড? কিন্তু তারা আমাদের এড়িয়ে গ্যালেন! শিশুটি ক’দিন আগে মারা গিয়েছে। অথচ আমি বা আমরা যদি জামাতিদের সাথে মিলে টাকা তুলতাম, তাহলে অন্তত তাদের সাপোর্টাররা এরচেয়ে বেশি টাকা অন্তত দিত আর ঐ দরিদ্র শিশুর বাবা হয়ত এখনকারমত ভাবতো না যে আমরা যতটুকু করতে পারতাম করিনি। এখন যদি ঐ ব্যাক্তিকে জামাতিরা বেশ বড় অংকের টাকাটা তুলে দিত তাহলে কিন্তু সারাজীবন সেই মানুষটি জামাত ছাড়া কিছু বুঝত না। (এটাই হচ্ছে রিলিফের নামে অনেক যায়গায়)
ঘটনা দুইঃ গতকিছুদিন আগে আমরা শাহজালাল বিগ্যান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবি ছাত্রের জন্যে টাকা সংগ্রহ করি (কারো কারো মতে হয়ত এটাও ভন্ডামি) এক্ষেত্রেও আমরা ব্যাক্তিগতভাবে বেশ কয়েকশ মানুষকে রিকোয়েষ্ট করি সাহায্যের জন্যে, বিশ্বাস করবেন কি-না জানিনা দুজন ছাড়া আমার অতি কাছের এইসব অতি প্রগতিশীল-নন জামাত মানুষগুলো সবাই আমাকে এড়িয়ে গেল!!!
ঘটনা তিনঃ আলতাব আলি পার্কে ২১শে ফেব্রুয়ারীর ইতিহাস বাংলা,ইংরেজি-ফ্রেঞ্চ আর জার্মান ভাষায় কাল মার্বেলে সাদা অক্ষরে লেখার একটা চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি বেশ কিছু নন-জামাত প্রগতিশীল-উদার- ধর্ম নিরপেক্ষ মানুশদের কিছু গ্রুপের কাছে আমার রিকুয়েষ্ট পাঠাই হঠাত করে সব শালা-শালিরা ব্যাস্ত হয়ে পরেছে! ঘটনা কি? তলে তলে ঘটনা হইলো আরে নন পলিটিক্যাল কিছু পোলাপাইন এই মহত ঐতিহাসিক ঘটনার উদ্দোক্তা হয়ে যাবে? এইটা কি করে হয়! আমাদের সংগঠন এতকিছু করছে আর এরা কে?
অথচ সিলেটের এক ছাত্র শিবিরের ছেলে এসে আমাকে বলে, ভাই আপনি নিঃশ্চই উচ্ছাস ষ্টাইলে (আরিফের ধুলিমাখা চাদে উচ্ছাসের ঘটনাটা আছে) এইটা করবেন? আমি আছি। পার্টি-বাদ!!! (ব্যাপারটি হল সময়মত গোলাম আজমের মত এখানেও এরা বলতে পারবে আমাদের পার্টির বিশাল অবদান ইউকেতে বাংলা ভাষা প্রচারে!!!)
চারঃ ১৬-ই ডিসেম্বর ২০০৭। চ্যানেল এস-এ বিলেতের নতুন বাঙ্গালি প্রজন্ম এবং মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক একটা মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠান করব, মোট ১২ জন পার্টিসেপেন্ট দরকার দেশের আর এদেশের বাংলাদেশি মিলে। স্বাধিনতার পক্ষের শক্তি/সংগঠন যারা তাদের মধ্যে এমন কেউ বোধকরি বাদ যাননি যারহাতে পায়ে ধরিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্যে একমাত্র আন্দালিপ, শামিমা আপা (কবি শামিম আজাদ) আর তিনজন ১৯ থেকে ২৩ বছর বয়সি বৃটিশ বাংলাদেশি ছাড়া আর কেউ না-কি সময়মত ষ্টুডিওতে পৌছাতে পারলো না! এক বিশিষ্ট আলোচকতো শেষ পর্যন্ত বলল আমিত রওনা দিয়েছিলাম কিন্তু পেটে ব্যাথা হওয়ায় আসতে পারছি না!!! আমি বলছিনা স্কুল পালানোর বয়স পার হলে আর কারো পেটে ব্যাথা হতে পারবে না কিন্তু স্কুলের পর এই ধরনের হাস্যকর যুক্তি বহুদিন শুনিনি! ‘’রাজাকার কে এবং রাজাকার বলতে কি বুঝি’ সেই লাইভ শতে একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক কাজল ছাড়া আর কেউ আসলো না স্বাধিন তার পক্ষের!!! এমনকি ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটি থেকেও কেউ না!
তাহলে আমার লেখার উদ্দেশ্য কি? সবাই মিলে জামাতিদের টাকা তোলা (এবং সেই টাকায় জঙ্গি বানানোর) খেলায় নাম লেখাই?
না, অবশ্যই না।
শুধু ব্লগে লিখে, ফেইসবুকে আন্দোলন করে, উইকএ্যান্ড্রের ঘরোয়া পার্টতে জামাত শয়তান, রাজাকারদের ফাসি চাই, সব পলিটিশিয়ান চোর, দেশটার কিচ্ছু হবে না, সব শালা মিডিয়া ভন্ড, জামাতের পা-চাটা, এইসব বলে-ভেবে প্রশান্তি নিয়ে অনেক কাজ করলাম তাই ক্লান্ত হয়ে খুব করে খেয়ে হাগু করে একটা স্বস্তির ঘুম দিয়ে সকাল বেলা আবার নিজের কাজে মন দেয়া খুব সহজ, কিন্তু কেউ মাঠে নামতে চায়না।
নিজের খেয়ে পার্টির জন্যে (কিংবা বেহেশ্তের হুরপ্রি আর সূরার লোভে) শিবিরের ছেলেগুলো কিন্তু লেগে আছে। হ্যা এরা পার্টি থেকে প্রচুর আর্থিক আর মাসিক সাপোর্ট পায়, কিন্তু তাই বলে কি আমরা পথ ছেড়ে দিব? ওরা মিডিয়াতে সুন্দর সুন্দর কথা বলে যায়গা করে নিতে পারলে স্বাধিনতার পক্ষের যারা, যারা ধার্মিক বা না-ধার্মিক হয়েও ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলেন তারা কেন টেলিভিশনে এসব বক-ধর্মকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইছেন না? কেন?
কারন হল, জামাতের লীডারদের আমি যখন দেখি Artifitial Intelligence in Space in relation to Quran কিংবা চায়নায় কমিউনিজমের সাফল্য কিভাবে বাংলাদেশে ব্যাবহার করা যায় সেসব নিয়ে পড়তে, আলচনা করতে, তখন বিকল্প ধারার এক বিরাট নেতা বিঃ চৌধুরীর নাম ভুলে গিয়ে বলছেন আমাদের নেতা ডাঃ সাহেবের দুই নয়ন, লন্ডনবাসির উন্নয়ন!!! (২০০৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাতে যারা আলতাব আলি পার্কে ছিলেন তারা অনেকেই এই মজা দেখেছেন-শুনেছেন) স্বাধিনতার স্বপক্ষের একজন বিরাট-বিশাল শ্রদ্ধেও নেতা বিলেতি সূধায় এতই মজেছেন যে এক তরুন ব্যাবসায়ির কাছ থেকে স্বাধিনতা-বঙ্গবন্ধুর উপর ম্যাগাজিন বের করবেন বলে টাকা নিয়ে পুরোটাই মেরে দিয়েছেন। আর সেই ব্যাবসায়ী কেন তার কাছে টাকার কথা জানতে চাইলো সেই অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদে পদে তাকে অপমান-অপদস্থ............আর কত বলবো।
আপনাদের কারো উপর আমার কোন ব্যাক্তিগত ক্ষোভ নেই। বিশ্বাস করুন আর নাই-বা করুন আরিফ ছাড়া এখানে কাউকে আমি চিনিও না, কারো সম্পর্কে ধারনাও নেই! কিন্তু বিলেতের কিছু রাজনৈক নেতা, য়ামার মত দেশ থেকে আসা বেশ অনেক ছাত্র-ছাত্রী, চাকুরিজীবি, সংস্কৃতি কর্মি আর কিছু কিছু লেখক কলামিষ্টদের উপর আমার
আক্ষেপ আছে,কষ্ট আছে আপনাদের উপর। এখানে যারা লিখেছেন তাদের কেউ না (আমার জানা মতে তারা কেউ এখানকার নামে বা নি কে লেখেন না) আপনাদের দেশ প্রেম হয়ে গিয়েছে ব্লগ ভিত্তিক। ফেইসবুক আন্দোলনে দিয়ে আপনারা শিবিরের বিচার করবেন আর শীতলাগে বলে ঘরে বসে বসে জামাত বিরোধিতার কারনে চাকরি যাওয়া ছেলেটির দুঃখে রেডওয়াইনে চুমুক দিবেন!
যারা ঢালাওভাবে শুধু কথা বলে যান, দোষারোপ করে যান কিন্তু আজ পর্যন্ত পাদ আর তিতা ঢেকুরের মত কথা উগরে যাওয়া ছাড়া আমরা কে কি করছি? জামাত-শিবিরকে আটকাতে হলে শূধু কথায় কি হবে?
মির্জা
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




