অরণ্য
তোমার মসৃণ চরাচর কেবলি তৃষ্ণা জাগায়
বিভোর পরিব্রাজক নেশায় চুর।
দূর লাইট হাউসে দাঁড় কাকের মেলা
অপসৃয়মান দিনের আলো ঠোঁট উল্টে
বিকট হেসে ভেঙচে গেল।
ঝর্ণার ঢাল ভাঙে পাহাড়ের এবড়ো পাথর
নির্ঝর জল পতন
তাড়িত স্মৃতিভ্রষ্টের নিষ্ফল রোমন্থন-
শঙ্খচিল আর মেছো বাঘ নখর উঁচিয়ে ক্লান্ত
পাহাড়ি যোনির প্রলুব্ধ আয়োজন
নিঃশঙ্ক শিকার নাক ডুবিয়ে শুকছে গন্ধ
মহুয়ার মতো কাছে টানে-
ঋতুবতী অরণ্যে ধুম পড়ে গেছে
অথচ হিমঘরে সটান শুয়ে নির্বোধ শিকারি।
------------------------------------------------------------------------------------
কুড়িয়ে নিয়েছি যা কিছু
অবশেষে হারিয়ে গেল
যা কিছু নিয়েছি কুড়িয়ে
পদব্রজে দীর্ঘ ভ্রমণে।
জারুল-কৃষ্ণচূড়ার
গাঢ় লাল অথবা নীল
প্রজাপতির মতো পাঁপড়ি।
নির্বাক চেয়ে থাকা
রাত্রির গভীরতা বাড়ে
স্তব্ধতায় শিশিরের পতন
চাদর চাপানো
আটশাট শীতের রাত ।
অবিরাম কথার মাতাল আড্ডা
ঠোঁটে ফিল্টার সিগারেট
বন্ধুর মতো পাশে থাকে ।
সামনে লঘু পায়ে থামে
শহরের রাত্রি শেষের ঝরা ফুল
শেষ রাতে অহর্নিশ ব্যস্ত চৌরাস্তায়
কুয়াশা উড়ানো চায়ে
অচেনা জীবনের কথকতা।
ঘুম ভাঙ্গা শহরে
আপিসের বড়কর্তা অথবা যুবকের
দ্রুত চলা - দীর্ঘ রাত ফুরালে।
বিগত যৌবন স্মৃতি
হিঁচড়ে টেনে নেয়, না ঘুমানো আরক্ত চোখে
প্রাক্তন প্রেমিকার ভুলতে চাওয়া পরিচিত পথে।
অবশেষে হারিয়ে গেল
যা কিছু নিয়েছি কুড়িয়ে
পদব্রজে দীর্ঘ ভ্রমণে।
-------------------------------------------------------------------------------------
দিনলিপি
দিনলিপি সমাপ্ত
নিথর পাতায় গাঙচিল মেলে না চোখ
কালো হরফগুলো মৃতের সারির মতো
বিদঘুটে অন্ধকার
মর্গের স্তব্ধতা।
কবিতার প্রগভলতা
চরাচরে অবিমিশ্র অদ্ভুত সারথী।
আলো আধারির
প্রত্ন ছায়াতে
উদ্গত অস্পৃশ্য বিধি।
হৃপিন্ড বিক্ষত, স্খলিত আর্তনাদ
সমর্পিত ভাগ্যাহতের দশদিক আকীর্ণ
স্তব অথবা মৃতু্যর অভিসন্ধি।
-------------------------------------------------------------------------------------
ভবঘুরের বিকেল দর্শন
কিছু পথে ঝড়ে যায়
দুরন্ত বিকেলের স্তব্ধতা
দিনান্তে সূর্য ঘোমটা টানে
চুরি যাওয়া তারুণ্য মুখ দেখবে বলে।
পাড়ার দোকানি ছোট বাক্সের ভিতর
ঝিমুয় গা এলিয়ে নিভু চোখে
উদ্বিগ্ন বাড়ি খিল আঁটে
ছুটে যাওয়া রাস্তার ঘুম ভাঙে
শহুরে যানের হঠাৎ বেরিয়ে যাওয়ায়।
বাসা বাড়িতে ঢুকে যায় দু-একটি নির্জন পথ
গাঢ় নীল যুবতীর ওড়নী ঝুলে গলায়
উঠতি চাঁদের মতো আধখান স্তন।
চলতি পথে শহরে ভবঘুরে এক
হঠাৎ থেমে ঝেড়ে ফেলে
জুতোয় আটকে পরা পাথুরে কণা।
সব ঠিকঠাক হিসেব কাগজে টুকে রাখা
দোকানীর টালি খাতার তালিকা দীর্ঘ হয়
আরো কত্তো সব হিসেব না রেখেই।
সময় চুইয়ে পড়ে
যুগল স্তনের ভাঁজ কিম্বা যোনি চিরে
রক্ষা কবচ নিয়ে ছুটে চলে শহর-রাস্তা
মহুয়া গাছটির নাভিশ্বাস-বিহ্বলতা।
নাতিদীর্ঘ বিকেল, পাড়ার ছোট গলি
পথিকের পায়ে পায়ে
ছুটে পিচগলা রোদ্দুর ঝলসানো পথে।
-------------------------------------------------------------------------------------
খসড়া
এই শীতে এই হিমে পাখিরা ছেড়েছে নীড় অথবা উড়ে গেছে কোন দূরতম দেশে যেখানে বিচরণ ছিলনা তোমার। ছিল গভীর রাতের ক্রন্দন, মাটির কাছাকাছি শুয়ে মুহুর্তের বিভ্রান্তি আমাদের পথে, বিচ্যুতি মেনে নাকি মেনে নিতে হয় বলে; অনেক কালের ক্ষরণ আজো বুকে জমে আছে, যেখানেই গিয়েছি শুনেছি তোমার ডাক; নির্বাক থেকে থেকে আমাদের মগজে গেঁথে গেছে না শুনার ডাক অথচ আমরা নই কোন কালের মায়া; পৃথিবীর পথে পথে ছড়ানো রক্তবীজ থেকে উত্থিত আমাদের প্রাণ, বহুকাল দুলেছি বকুলের শাখে বহুদূর গিয়েছি হেঁটে তোমাদের পথে এই জন্মান্তরের হিসেব মেলাতে অথবা মেলেনি হিসাব; তবু পথের
পারে তোমাদের আহ্বানে এসেছি আবার। জেনে নিও কালের আঁধারে নিজের চিবুক চিনে নিতে কখনো হয়নি ভুল ... এই পথে এই ঘুমে কোন মৃত্যুর দেশে নয়; মনে হয় জেগে আছি কখনোবা ঘুমে; তবু এই পথ এই নদী তোমাদের বসতি... থেমে থেমে নিরবে কাঁদা অতপর গিয়েছি আপন ভুবনে সাপের মতো দেহটাকে টেনে এই ঘুমে এই জাগরণে।