somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত সাড়ে তিনটা! রুমের দরজা খোলা! কিন্তু ইমাম সাহেব নেই _ _ _ _ _ _ রহস্যময়!!!

২০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফারুক হুজুর নামেই তিনি এলাকায় পরিচিত। গত পাঁচ বছর থেকে বায়তুল আমান জামে মসজিদে একসাথে ইমামতি ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকার ফলে অনেকের সাথে তৈরি হয়েছে মধুর সম্পর্ক। মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে ঝগড়ার সুবাদে দুই-একজন আবার বিরাগভাজন ও হয়েছেন।
তবু ও এলাকায় হুজুরের দিনগুলো ভালই কাটছিল। সময় হলে আজান দেন, মানুষ মসজিদে আসে, তাদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়েন। রমজান আসলে তারাবীহ নামাজের দায়িত্ব ও তিনি পালন করেন। ভোর রাতে সবার আগে উঠে মসজিদের মাইকে দোয়া-দুরুদ পড়েন। সবাইকে সেহরি খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করেন। এই বছর রমজানের কয়েকদিন পুর্বে কমিটির সাথে কোন এক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফারুক হুজুর এই মসজিদে আর থাকবেন না বলে সবাইকে জানিয়ে দেন। কিন্তু রমজান চলে আসায় এলাকার মানুষ উনাকে কমপক্ষে ঈদ পর্যন্ত থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেন। অবশেষে তিনি সকলের আন্তরিকতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঈদ পর্যন্ত থাকার ওয়াদা করেন।
সব কিছুই আগের নিয়মে ঠিকঠাক চলছিল। তারাবীহ নামাজ পড়িয়ে তিনি পালাক্রমে মুসুল্লীদের ঘরে গিয়ে খানা খেয়ে আসেন, আর আসার সময় টিফিন বাটিতে করে ভোর রাতের জন্য খানা নিয়ে আসেন। রাত আড়াইটা বাজলেই মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসে ফারুক হুজুরের সুমধুর আওয়াজ। সবাই ঘুম থেকে উঠে সাহরির জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।
কিন্তু আজ রাত আড়াইটা বেজে আরো বিশ মিনিট চলে গেল অথচ মাইকে কোন আওয়াজ আসছেনা। সবাই ভাবল হয়ত আজ হুজুর সময়মত জাগতে পারেন নাই। এভাবে তিনটা পনের বেজে গেল। তবু ও মাইক বন্ধ। মুসুল্লীদের অনেকেই কৌতূহল বশত তাড়াতাড়ি সাহরি খেয়ে কিছুটা সময়ের আগেই মসজিদের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন।
এসে দেখেন মসজিদের দরজা বন্ধ। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে তিনটা।
আস্তে আস্তে সবাই হুজুরের রুমের দিকে এগিয়ে যান। একি! রুমের দরজা খোলা। ভিতরে বাতি জ্বলছে। কিন্তু হুজুর রুমে নেই। টিফিন বাটিটা রুমের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে। অনেকেই মনে করলেন, হুজুর হয়ত কোন কাজে বাহিরে গেছেন। জামাতের সময় হলে চলে আসবেন। কেউকেউ হুজুরের তালাশে আশপাশ ঘুরে আসলেন। এদিকে জামাতের ও সময় হয়ে যায়। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে মুসুল্লিরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে ইমাম বানিয়ে ফজরের নামাজ আদাত করে নেন। সবাই নিজ নিজ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
দুই -একজনের ঘুম আসেনা। নাজানি কি হল হুজুরের? এভাবে না বলে তো চলে যাওয়ার কথা না। পরদিন জোহর-আসর-মাগরিব এভাবে তারাবীহ পর্যন্ত সবাই অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু হুজুর আর আসেন না। টফিন বাটিটা আগের জায়গায় পড়ে আছে। খাবার পচে দুর্গন্ধ বের হলে একজন বাটিটা ধুয়ে রুমে রেখে যান।
দশম রমজানে হঠাৎ হুজুরের বাড়ি থেকে একটা ফোন আসে। রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপার থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠে একজন মহিলার আওয়াজ শুনা যায়, "পুলিশের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন আপনাদের ফারুক হুজুর"।
এলাকায় কান্নার রোল পড়ে যায়।
জংগী সন্দেহে এভাবে কত নিরাপরাধ ফারুক হুজুররা মারা যাচ্ছেন তার খবর আছে আমাদের?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×