somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি কি? ইসলাম কি বলে?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একজন ছাহাবী ছিলেন, যার নাম ছিল জুলায়বীব (রাঃ)। জুলায়বীব শব্দের অর্থ ‘ক্ষুদ্র পূর্ণতাপ্রাপ্ত’। এই নাম দিয়ে মূলতঃ জুলায়বীবের খর্বাকৃতিকে বুঝানো হ’ত। তিনি ছিলেন উচ্চতায় অনেক ছোট।
আনাস (রাঃ) বলেন, তিনি দেখতে কুশ্রীও ছিলেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বিবাহ করার কথা বললে তিনি নিজের কুশ্রী চেহারার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, বিবাহের ক্ষেত্রে তো আমি অচল বা চাহিদাহীন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ’তে পারে, তবে আল্লাহর নিকটে তুমি অচল নও।
আবু বারযা আল-আসলামী (রাঃ) বলেন, জুলায়বীবের বিষয়টা এমন ছিল যে, সে মহিলাদের নিকটে গেলে তারা সেখান থেকে চলে যেত। তারা তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তোমরা জুলায়বীবকে তোমাদের নিকটে প্রবেশ করতে দিও না। কেননা সে যদি তোমাদের নিকটে আসে, তাহ’লে অবশ্যই আমি (কিছু) করব, আমি অবশ্যই (কিছু) করব। তাকে স্বীয় গৃহে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিলেন। কোন মেয়ে জুলায়বীবকে বিবাহ করার কথা চিন্তাও করত না।
কিন্তু মহানবী (ছাঃ)-এর দৃষ্টিতে জুলায়বীবের অবস্থান ছিল অনেক উপরে। তিনি এই ছাহাবীর প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত, আবু বারযা আল-আসলামী (রাঃ) বলেন, আনছার ছাহাবীদের কারো মেয়ে থাকলে তারা ততক্ষণ পর্যন্ত কোথাও বিয়ে দিতেন না, যতক্ষণ না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হ’তেন যে, রাসূল (ছাঃ)-এর তাকে বিয়ে করার প্রয়োজন নেই।
রাসূল (ছাঃ) জুলায়বীবের কথা চিন্তা করে একদিন এক আনছারীর কাছে গিয়ে বললেন, ‘আমি তোমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই’। আনছার লোকটা খুবই খুশী হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এতো খুবই বিস্ময়কর, সম্মান, আনন্দ ও আমার চক্ষু শীতলকারী খবর। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আমি ওকে নিজের জন্য চাই না’। লোকটি (কিছুটা হতাশ হয়ে) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাহ’লে কার জন্য? তিনি বললেন, ‘জুলায়বীবের জন্য’। এ কথা শুনে আনছার মনে একটা ধাক্কা খেলেন এবং নিচু গলায় বললেন, আমি এ ব্যাপারে মেয়ের মায়ের সাথে পরামর্শ করব। এই বলে লোকটি তার স্ত্রীর কাছে চলে গেলেন এবং সব খুলে বললেন। স্ত্রী তার মতই রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক জুলায়বীবের সাথে মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব শুনে স্তব্ধ হয়ে বললেন, জুলায়বীবের সাথে! না, কখনোই নয়। আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে (নিজ মেয়েকে) তার (জুলায়বীবের) সাথে বিয়ে দেব না। তখন সেই আনছারী তার স্ত্রীর অমতের কথা রাসূল (ছাঃ)-কে জানাতে যাওয়ার জন্য উদ্যত হ’লেন। কিন্তু তার মেয়ে যে কি-না আড়াল থেকে সব শুনছিল। সে এসে জিজ্ঞেস করল, তোমাদেরকে আমার বিয়ের ব্যাপারে কে প্রস্তাব দিয়েছেন? উত্তরে মা তাকে বললেন, রাসূল (ছাঃ) তাকে জুলায়বীবের সাথে বিয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন।
যখন মেয়েটি শুনল যে, প্রস্তাবটি রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে এসেছে এবং তার মা সেটা প্রত্যাখ্যান করছেন, তখন সে দৃঢ়চিত্তে নিয়ে বলল, তোমরা কি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছ? আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাও, তিনি নিশ্চয়ই আমার জন্য ধ্বংস ডেকে আনবেন না।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, মেয়েটি বলল, আমি এ ব্যাপারে রাযী হ’লাম এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মতির প্রতি আত্মসমর্পণ করলাম। তারপর সে মা-বাবাকে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি শুনিয়ে দিল ‘আর কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর জন্য উচিত নয় যে, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন সে ব্যাপারে তাদের কোন মতামত থাকে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়েছে’ (আহযাব ৩৬)। অতঃপর তার পিতা মেয়েকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দরবারে গিয়ে তার মেয়ের দৃঢ়তার কথা জানালেন এবং বললেন, আমার মেয়ের জন্য যেটা ভাল মনে করেন সেটাই করুন। মেয়েটির মতামত শুনে রাসূল (ছাঃ) তাঁর জন্য দো‘আ করলেন,اللَّهُمَّ صُبَّ عَلَيْهَا الْخَيْرَ صبًّا وَلاَ تَجْعَلْ عَيْشَهَا كَدًّا كَدًّا
‘হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি কল্যাণ নাযিল কর এবং তার সংসার জীবন কষ্টদায়ক কর না’। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) জুলায়বীবের সাথে তার বিবাহ সম্পাদন করলেন।
এর অব্যবহিত পরেই রাসূল (ছাঃ) কোন এক যুদ্ধে বের হ’লেন এবং এক পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদের বিজয় দান করলে রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের বললেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়ে ফেলেছ? ছাহাবাগণ বললেন, না, আমরা কাউকে হারাইনি। তিনি বললেন, কিন্তু আমি যে জুলায়বীবকে দেখতে পাচ্ছি না। তোমরা তাকে নিহতদের মাঝে খোঁজ কর। তারা খুঁজতে খুঁজতে সাতটি মৃতদেহের পাশে তার মৃতদেহ পেলেন। অর্থাৎ তিনি তাদের সাতজনকে হত্যা করেছেন। অতঃপর নিজে শাহাদত বরণ করেছেন। তারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে সব ঘটনা খুলে বললেন। সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ সেখানে গেলেন এবং বললেন, সে সাতজনকে হত্যা করেছে। অতঃপর তারা তাকে শহীদ করেছে। জেনে রেখো! সে আমারই মত আর আমিও তার মত (তথা আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে- নববী, শরহে মুসলিম)। এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাকে নিজ কাঁধে বহন করে যথাস্থানে কবরস্থ করেন।
ছাবেত (রাঃ) বলেন, তখন আনছারদের বিধবাদের মধ্যে ঐ মেয়েটির চেয়ে অধিক সম্পদশীলা ও দানশীলা আর কেউ ছিল না।
(আহমাদ হা/১৯৭৯৯, আরনাঊত্ব, সনদ ছহীহ; মুসলিম হা/২৪৭২, ইবনু হিববান হা/৪০৩৫, সনদ ছহীহ, ইবনে আব্দুল বার্র, আল-ইস্তি‘আব ফী মা‘রেফাতিছ ছাহাবা, পৃঃ ৮১)।
শিক্ষণীয় বিষয় : সমাজে জুলায়বীব (রাঃ) ছিলেন অবহেলিত, নিগৃহীত ও নিম্ন শ্রেণীর। কিন্তু তাঁর সততা, নিষ্ঠা, ঈমান-আমল ও আনুগত্যের কারণে মহানবী (ছাঃ)-এর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন। ইসলামের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অনেক মর্যাদার অধিকারী। ইসলামে মানুষের মর্যাদা জন্মসূত্রে অথবা দেহবল্লবীতে নির্ধারিত হয় না, বরং নির্ধারিত হয় তাক্বওয়ার ভিত্তিতে। যার বাস্তব উদাহরণ জুলায়বীবের উপরোক্ত ঘটনা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×