পাবলো পিকাসো স্প্যানিশ চিত্রশিল্পীদের মধ্যে এক অনন্য নাম।তিনি ১৮৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৩ সালে মারা যান।জন্মসূত্রে স্প্যানিশ হলেও তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ফ্রান্সে কাটিয়েছেন।চিত্রশিল্পীর পাশাপাশি তিনি একজন গুণী ভাস্করও ছিলেন।তাঁর পরিচিতি একজন কিউবিস্ট হিশেবেই ব্যপ্ত।তিনি কিউবিস্ট মুভমেন্টের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন।
পেইন্টিং টা দেখা যাক!

চিত্রটির পটভূমি হচ্ছে স্পেনের ব্যস্ক কান্ট্রির গোয়ের্নিকা নামক শহরটিতে স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারের সময় জার্মান ও ইতালিয়ান যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষন।স্প্যানিশ ন্যাশনালিস্ট দের কমান্ডেই তারা এই বোম্বিং টা করে। গোয়ের্নিকা ছিলো রিপাব্লিকান চেতনা ও ব্যস্ক সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র।তাই ন্যাশনালিস্টরা এই শহর ধংস্বের জন্য উন্মত্ত ছিল।
চিত্রটিতে রঙ আছে তিনটি। সাদা, কালো ও ধূসর।এই তিনটি রঙ ব্যবহার করার কারণ মূলত একধরনের বিবর্ণতা, বিষাদ ফুটিয়ে তুলা।ম্যুরালাকৃতির এই পেইন্টিং টি তেলরঙে করা।দৈর্ঘ্য ১১ ফিট আর প্রস্থ ২৫.৬ ফিট।এই চিত্রে দেখা যায়, একটি ঘর যার বামপাশে উন্মুক্ত অংশে একটি ষাঁড়, তার সামনে মৃত শিশু নিয়ে ক্রন্দনরত মা।মধ্যে দেখা যায় প্রচণ্ড উন্মত্ত একটি ঘোড়া, আঘাতপ্রাপ্ত।একটা মানুষের খুলি ঘোড়ার শরীরকে আগলে রাখছে আর একটি ষাঁড় ঘোড়াকে কেটে ফেলার চেষ্টা করছে।আঘাতরত ষাঁড়টির লেজ, যেটা অনেক অগ্নিরশ্মি বা চুরুটের ধোঁয়ার মতো।ঘোড়ার শরীরের নিচে একটি সৈনিক, মৃত।সৈনিকের হাতে একটি স্টিগ্মা (তলোয়ার) যেটা স্প্যানিশ সংস্কৃতিতে শাহাদাতের চিহ্ন।অশুভ চোখের আকৃতির একটি বাল্ব জ্বলছে ঘোড়ার মাথার উপর।এইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি এলিমেন্ট।স্প্যানিশ ভাষায় বাল্বকে বলা হয়, বোম্বিলা।তাই এইখানে বাল্ব বোমাবর্ষনের দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত করে।ঘোড়াটির উপর একটি ভাসমান যুবতীকে দেখা যায়, যে খোলা জানলা দিয়ে ভেসে এসেছে বলেই বুঝা যায়। আর তার হাতে একটি আলোকবর্তিকা যা বাল্বটির খুব কাছাকাছি।এই থেকে পতনের খুব কাছেই থাকে আশা এইরুপ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যেন।যুবতীর পিছনেই একটি আতঙ্কিত রমণীকে দেখা যায় যে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ঐ বাল্বের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ষাঁড়ের পিছনেই শেলফের মধ্যে একটি পাখি আতংকগ্রস্থ তাকিয়ে রয়েছে ষাঁড়টির দিকে।একেবারে ডানে দুইটি হাত উঁচু করা যে ধংস্বের নিচে চাপা পড়েছে।আর তার ডানে কালো দেয়ালে চিত্রটি শেষ হয়েছে।

এই চিত্রের মাধ্যমেই পিকাসো অসাধারণ খ্যাতি লাভ করেন।এইখানে শুধু স্পেন নয় পৃথিবীর সমগ্র স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতিরোধী স্বত্তাকে তুলে ধরা হয়েছে আর মানুষের ধংস্বাত্বক প্রকৃতির নিন্দা করা হয়েছে।
যতদিন মানুষ,স্বাধীনতার স্পৃহা, অগ্রগামী চিন্তাচেতনা বেঁচে থাকবে ততদিন গোয়ের্নিকা বেঁচে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



