somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরিত্রীর আত্মহনন: শিক্ষকেরাই দোষী?

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( লেখাটি পড়েview this link ভালো লাগলো তাই কপি পেস্ট করলাম )

অরিত্রীর আত্মহনন: শিক্ষকেরাই দোষী?
আসিফ নজরুল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক

আমি কন্যাসন্তানের বাবা। কন্যাদের স্কুলে নিয়ে যাই, স্কুল থেকে আনি, পড়াই, খেলি তাদের সঙ্গে। গর্ব করে বলি, আমি একজন ফুলটাইম বাবা।

আমার মতো একজন মানুষের পক্ষে অকালে কোনো সন্তানের মৃত্যু মেনে নেওয়া খুব কঠিন। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী অরিত্রীর মৃত্যুও আমাকে প্রচণ্ডভাবে ব্যথিত করেছে। কিন্তু আমি মনে করি, এ জন্য শুধু শিক্ষকদের যে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে, যেভাবে তাঁদের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গালাগাল করা হচ্ছে, যেভাবে জনমতের চাপে তদন্ত ছাড়া তাঁদের বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।

পরীক্ষা হলে নকল করলে বা শুধু মোবাইল নিয়ে এলেও আমি ছাত্রছাত্রীদের বকা দিই। আমার হাতে নকলের জন্য বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। আমি স্কুল টিচার হলে, স্কুলে নিয়ম থাকলে হয়তো এমন কোনো ছাত্রছাত্রীকে টিসি দেওয়ার কথাও বলতাম। এটা নিয়ম, বহু দেশের নিয়ম।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নিয়মাবলিতে পরিষ্কারভাবে মোবাইল নিয়ে এলে টিসি দেওয়া হতে পারে বলা আছে। অরিত্রী মোবাইল নিয়ে এসে পরীক্ষা হল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, তার বাবা-মা তিরস্কৃত হয়েছেন, তাকে টিসি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এসব তো অস্বাভাবিক নয়। অরিত্রীদের বকাবকি মাত্রছাড়া হয়ে গেছে, অবশ্যই তাদের প্রতি আরও মানবিক হওয়া যেত, এমনকি সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া যেত। অরিত্রীর শিক্ষকেরা মানবিক হননি। কঠিনভাবে নিয়মের প্রয়োগ করেছেন, আমাদের সমাজের রীতি অনুসারে অভিবাবকদের ডেকে পাঠিয়েছেন। অপমানজনক কথাও বলেছেন। কিন্তু এ জন্য কি তাঁরা অরিত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচক হয়ে গেলেন?
আমি ছোটবেলায় স্কুলে বহুবার মার খেয়েছি। আমার এক কাজিনের কারণে তার বাবাকে কয়েকবার স্কুলে ডেকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে, পরে সে স্কুল থেকে তাকে বেরও করে দেওয়া হয়েছে।

আমি বা আমার কাজিন আত্মহত্যা করিনি। অরিত্রী করেছে। আমার মতে, অরিত্রীর প্রতিক্রিয়াটা খুব স্বাভাবিক নয়। আমরা কি কখনো ভেবে দেখতে পারি কেন সে এমন অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া করল? পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী বা স্কুল প্রশাসন—কোন প্রতিবেশের কারণে সে পরীক্ষা হলে পরিষ্কার নিষেধ থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন নিয়ে গেল? আমরা কি ভেবে দেখতে পারি, অরিত্রী কি শুধু বাবা-মা এবং নিজে অপমানিত হওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আত্মহত্যা করল, নাকি পেছনে আরও বহু মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ছিল? সংবাদটা পাওয়ামাত্র শিক্ষকদের ওপর ঢালাওভাবে ঝাঁপিয়ে না পড়ে একটু অপেক্ষা করলে, সুষ্ঠু তদন্ত করতে দিলে ভালো হতো না?
আরেকটা কথা। গত এক বছরে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই আটজন ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন না হলে সব আত্মহত্যার পেছনে কোনো না কোনো প্ররোচনা থাকে। আমার জানামতে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কেউ মানসিক রোগী ছিল না। এদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে বারবার সরকারি চাকরিতে সব পরীক্ষায় খুব ভালো করার পরও মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়ে।

কীভাবে এবং কাদের এখন এসব পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়—এ নিয়ে বহু কথা শোনা যায়। কিন্তু আমরা কি আমাদের ছাত্রদের করুণ আত্মহননের জন্য ঢালাওভাবে কাউকে দায়ী করেছি কখনো? আমরা এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের বারান্দার ঠান্ডায় মরে যাওয়া বা হলের ভেতর গুলি খেয়ে খুন হওয়া ছাত্রদের করুণ অপমৃত্যুর জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে দায়ী করেছি? এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতাজনিত প্ররোচনা ছিল না আমাদের কারও? কেউ কি চাকরি হারিয়েছে বা গ্রেপ্তার হয়েছে এ জন্য? আমরা বিভিন্ন ঘটনায় ভিন্নভাবে খুবই প্রতিক্রিয়া দেখাই। কেন আমি ঠিক বুঝতে পারি না।

অরিত্রীর জন্য ভালোবাসা, আমার ছাত্রদের জন্য ভালোবাসা। কিন্তু আমি আমাদের সন্তানসম এদের সবাইকে এটাও বলতে চাই, কাজটা ঠিক করোনি মা, ঠিক করোনি বাবা!

জীবন তো ম্যারাথন। এক শ মিটারে পিছিয়ে থাকলে থেমে বসে পড়লে হয় না। ঠিক তেমনি একটা বিপর্যয়ে ভেঙে পড়লেও চলে না। সামনে থাকতে পারে অনেক সুদিন। এটা মনে রাখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×