টাকার জন্য বাংলাদেশের লক্ষাধিক লোক বিভিন্ন গার্মেন্টসগুলোতে কাজ করছে। তারা টাকা উপার্জন করছে শুধু মাত্র জীবন-জীবিকার জন্য। তারা এখানে কাজ করে লক্ষ টাকা উপার্জন করার জন্য আসে না। তাই আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রংপুরের জুয়েল। আমি জুয়েলের ঘটনাটি প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণ থেকে আপনাদের সামনে তুলে দিলাম।
"এক লাখ টাকা দাম দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো আমার মায়ের। বোনের লাশের দামও এক লাখ। আর লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য দেবে আরও ১৫ হাজার করে। গরিব গার্মেন্টসে কাজ করে আমার মা আর বোন যে এখন অনেক বড়লোক হয়ে গেছে!"
গাজীপুরের ভোগড়ার গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে বৃহস্পতিবার রাতে আগুনে নিহত জরিনা বেগমের ছেলে মো. জুয়েল বিলাপ করছিলেন এ কথা বলেই। তাঁর মতো দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষেরা যে কেবল জীবন দেওয়ার বিনিময়েই একবারে লাখ টাকার মুখ দেখতে পারেন—এ নির্মম বাস্তবতা নাড়া দেয় উপস্থিত সবাইকে।
অগ্নিকাণ্ডে তাঁর মা আর একমাত্র বোন সান্ত্বনা মারা গেছেন। তাঁদের লাশ নিয়ে কাল দুপুরেই রংপুরের মিঠাপুকুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ২০ বছর বয়সী জুয়েল।
জুয়েলের কাছ থেকে জানা যায়, মা ও ভাইবোন মিলে ওঁরা চারজন কাজ করতেন গাজীপুরের দুটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। এর মধ্যে গরিব অ্যান্ড গরিবে কাজ করতেন মা আর বোন। বাবা শাজাহানকে এখনো এ মর্মান্তিক খবর দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, মা আর বোন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।
স্ত্রী মাজেদা খাতুনের লাশ নিতে আসেন গাজীপুরের আরেকটি গার্মেন্টসের নিরাপত্তাপ্রহরী জামাল উদ্দিন। ময়মনসিংহের বাসিন্দা জামালউদ্দিনের অভাবের সংসার। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, ‘দুইজনের আয়ে কোনোমতে সংসার চলত। এখন তো সব শেষ হয়ে গেল।’
অগ্নিকাণ্ডে নিহত মমতাজ বেগমের (৩২) ভাগ্নে মুমিনও এই গার্মেন্টসে কাজ করেন। ভাগ্যের জোরে তিনি বেঁচে গেছেন। রাত নয়টায় তাঁর শিফট শেষ হওয়ার পর বেরিয়ে যান মুমিন। আর পরের শিফটে কাজ করতে ঢোকেন তাঁর খালা। কিছু সময় পরই লাশ হয়ে যান মমতাজ। এসব কথা বলে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন মুমিন।
এ কান্না ছড়িয়ে পড়ে গাজীপুর সদর হাসপাতাল আর ওই গার্মেন্টস সংলগ্ন এলাকায় সমবেত ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজনদের মধ্যে। চোখের পানি ঠেকাতে পারেননি স্থানীয় লোকজনও।""" - সূত্র প্রথম আলো (অনলাইন)
যাদের ঘামে আমাদের পোষাক খাতে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জিত হচ্ছে। কেন আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না? কেন আমরা তাদের নূন্যতম বেতন নিষ্চিত করতে পারছি না? কেন একেকটি দূর্ঘটনার পর লাখ লাখ টাকা আমরা ব্যয় করছি? কেন এই টাকাটা তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য পাওনা খাতে খরচ করছি না? প্রতি বছর শ্রমিক অসন্তোষে যে পরিমান আর্থিক ক্ষতি হয় তা এবং এই সকল দূর্ঘটনা পরবর্তী ক্ষতিপুরণের টাকা যদি আমরা তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য বেতনের জন্য ব্যয় করি আসা করি তাতে মালিক-শ্রমিকের সাথে বাংলাদেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



