আই ই আর-এর নিচতলার রিহার্সাল রুমে ইন্টারভিউ দিতে যাবার মুখে টেবিলে বসা ছিল সে, লাল একটা শাড়ি পড়া। প্রথম দেখাতেই প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম, সামনে যেতেই কিরকম একটা জানি সুঘ্রাণ পেতে লাগলাম, নাম জিজ্ঞাসা করে ভিতরে যেতে বলল। ভিতরে টেবিলে ২/৩ জন লোক বসা ছিল, টুকটাক কথা-বার্তা বলার পর বলল পরদিন বিকাল থেকে আসতে, বের হয়ে যাবার সময় আর একবার আড়চোখে দেখলাম, আবার কি দেখলাম জানি না, কিন্তু জীবনের প্রথম বুঝলাম, সুন্দর আর সিগ্ধতার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাকে দেখে হয়ত অনেকে বলবে এর চেয়ে অনেক সুন্দর মেয়ে নীলক্ষেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করে, কিন্তু সব সুন্দরই যে সিগ্ধ নয় তা আষাঢ়কে না দেখে বোঝার উপায় নেই। তার চারপাশে বাতাসে ক্যামন যেন একটা সুঘ্রাণ মো মো করে, শুধুই কাছে থাকতে ইচ্ছা করে। আবিস্কার করতে পারিনি সেটা কি, হয়ত পারতাম আর কিছুদিন তার সাথে থাকতে পারলে।
তার পরদিন থেকে আমার শুরু হল নতুন একটা অধ্যায়, সকালে ঢাকা কলেজের ক্লাস, বিকালে আই ই এ নাটকের রিহার্সাল, আমি খুব সিরিয়াস। কিন্তু বুঝতে পারিনি যে আমি নাটকের জন্য যা না সিরিয়াস তার চাইতে বেশি ছিলাম অন্য কিছুর জন্য, অন্য কোন সান্নিধের জন্য। তিনটা বান্ধবী খোঁচানো শুরু করে দিল, আগে কলেজের পরে নীলক্ষেতে-নিউমার্কেটে আড্ডা না মারলে বাসায়ই যেতে চাইতাম না, আর এখন তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে কি করি? আবিস্কার আমিও করতে পেরেছি কিন্তু অনেক পরে, আর যখন পেরেছি তখন সে যে কোথায় হারিয়ে গেল, সেসময় বোকা আমি অভিমানের পাহাড় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, কিন্তু একবারও ভাবলাম না, কেন সে এমনটা করল?
আষাঢ়কে কোনদিন বলব তোমাকে ভালোবাসি এটা হয়তো তখনও কোনভাবেই চিন্তা করিনি, কিন্তু বাধ সাধল আমার গ্রুপের ম্যানেজার বাবলু ভাই, আমার প্রতি আষাঢ়-এর অনুভুতি তিনি কাজে লাগাতে চাইলেন যখন বুঝতে পারলেন সে হয়তো আর গ্রুপ করবে না। আমাকে একদিন ডেকে বললেন, আমি জানি আষাঢ় তোমাকে পছন্দ করে। আমি চাই তুমি তাকে ভালবাসার কথা বল এবং এতে করে সে নিয়মিত আবার আসা যাওয়া করবে, আমি বোকার মতো ওনার কথামত কোন রকম কিছু চিন্তা না করেই তাকে বললাম আমি তাকে ভালোবাসি। এটা যে জিজ্ঞাসা করে আদায় করার মতো কোন জিনিস না, তা বোঝার মতো আমার হয়তো জ্ঞান ছিল না। সে সব শুনে আমার কাছে সময় চাইল ভাববার জন্য, কিন্তু আমি অস্থির, এমন একটা ভাব যেন আমাকে এই স্বীকারোক্তি নিয়েই আমার যত শান্তি। সে যখন কিছু বলছিল না, ক্যামন যেন একটা জিদ চেপে গেল। যে আমাকে এত পছন্দ করত সে কেন এত সময় নিচ্ছে এটা জানানোর জন্য। আর বাবলু ভাই তো আমাকে নিয়মিত জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে কি হল, যা আমার জন্য আরও পীড়াদায়ক।
এইরকম একটা সময় যা ভুল করার তাই করলাম। সময়টা এখনকার মতো ছিল না, ফোন খুব সহজলভ্য ছিল না তখন। তার বাসায় ফোন করে এক সন্ধ্যায় তার কাছে জানতে চাইলাম তার উত্তর। চেষ্টাও করলাম না বোঝার ফোনের ওইপাড়ে সে কিভাবে বা কি অবস্থানে আছে। অস্থির হয়ে গেলাম উত্তর শোনার জন্য, যা হবার তাই হল। আমি বারবার জিজ্ঞাসা করছিলাম ওইটার কি খবর, সে বারবার বলছিল কোনটা, এমন একটা ভাব যেন কিছুই বোঝে না যে আমি কেন ফোন করেছি? আমার রাগ আরও বেড়ে গেল, বললাম বুঝো না আমি কোনটা শুনতে চাচ্ছি? সে বলল, ও আচ্ছাওইটা, “ওইটা না”। আমার মনে হল আমার বুক থেকে কেউ অনেক ভারি একটা বোঝা নামিয়ে ফেলেছে কেউ। আমিও রাগে বললাম, এটা আগে বললে না কেন? বলে ফোন কেটে দিলাম। যা বলছিলাম, সময়টা এমন ছিল না, আবার যে ফোন করব বা তাকে যে পাব বা সেই যে ফোন ধরবে, এমনও না।
আমি অনেক ফুরফুরা একটা ভাব নিয়ে বাসায় ফিরলাম। রাতে অনেক ভাল ঘুম হল, পরদিন বাবলু
ভাইকে জানিয়ে দিলাম এটা। উনি শুনে খুব অবাক হলেন, আমি পাত্তা দিলাম না, আমার এত সময় কোথায় এত কিছু নিয়ে চিন্তা করার। বুঝতে পারলাম আমার বাক্তিত্তে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে এই “না” শুনার পর থেকে।
বাস্তব কিন্তু অন্যরকম, এরপর সে রিহারসেলে এসেছিলো ২/৩ বার বা হয়তো আরও অনেকবার আসতো, কিন্তু যে কয়বার এসেছে আমি তাকে কেন যেন সহ্যই করতে পারছিলাম না। খুব বাজে ব্যবহার করছিলাম তারপর কয়েকদিন তার সাথে। তারপর কিভাবে যেন খুব দ্রুত সময় গড়াতে লাগল, আমিও আর খুব একটা যাই না গ্রুপে, ভাঁটা পরে গেল আমার সব উৎসাহে। বেস্ত হয়ে গেলাম অন্য কিছু নিয়ে। তখন হয়তো বয়স হয়নি এত গভীরভাবে চিন্তা করার বা হয়তো কেন যেন চিন্তা করিনি, কিন্তু হায়! যখন চিন্তা করেছি তখন তাকে আর পাইনি এখন পর্যন্ত।
আষাঢ়, আমি জানি না তুমি কি আমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসতে কিনা, হয়তো ভালোবাসতে না, বা হয়তো ভালোবাসতে। কিন্তু আমি যে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এতে কোন সন্দেহ নেই, আমাকে ভালোবাসলে না বুঝে আর ভালো না বাসলে বুঝে। তোমার সাথে আমি এরপর কেন এমন করেছি যা সত্যিই আমি হয়তো করতে চাইনি, কিন্ত কেন করেছি জানি না।
আষাঢ়, আমি জানতে চাই। আজ আমার জীবনে আমি হয়তো তোমার জীবনে তুমিও প্রতিষ্ঠিত, কোন কিছু করা আজ আমারে পক্ষে হয়তো সম্ভব না, কিন্তু আমি জানতে চাই, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে চাই। আমি বলতে চাই, আমি তোমাকে এভাবে আমার ভালোবাসার কথা কোনদিনই জানাতাম না, হয়তো তোমার বন্ধু হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাইতাম। আমি এতটা লোভী কোনদিনই ছিলাম না যে, আমারই সব লাগবে। হয়তো তোমাকে তা জানাতাম আরও অনেক পড়ে বা এটা জানানোরও তো কিছু না, এটা একটা অনুভুতি যা দুজনই বুঝতে পারে।
আষাঢ়, আমি বিশ্বাস করি আমি তোমার মুখোমুখি হব যদি আল্লাহ্ কপালে লিখে রাখে। আমি সেইদিনের অপেক্ষায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




