somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের শিল্পীদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মটা দিবে কারা?

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কেন জানেন? আমি যতদূর জানি, তা হচ্ছে, জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য। আর কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা জানিনা।
ধরুন আজকে যদি আমরা স্বাধীন অখন্ড ভারতের অঙ্গ রাজ্য থাকতাম, তাহলে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে একটি বর্ডার ঘেঁষা অঞ্চল হিসেবে পড়ে থাকতাম। যেমনটা আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা রাজ্যগুলো আছে। আমাদের উন্নয়নে সরকারের কোন মাথা ব্যথা থাকতো না। রাজ্য সরকার যা করতো, তাতেই আমাদের তুষ্ট থাকতে হতো। আমাদের অঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসতে শুধু কাঠ খড়ই না, আস্ত জঙ্গল পুড়াতে হতো। এই যে সাকিব আল হাসান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার, ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেত কিনা সেটাই হতো আসল প্রশ্ন। যে যার জাতিকে আগে প্রাধান্য দিত। যেহেতু বিসিসিআই পর্যন্ত কোন বাঙালির পৌঁছাতে যুগের পর যুগ পেরিয়ে যেত, আমাদের সাকিবও নিজের প্রাইম টাইম হারিয়ে ফেলতো। এছাড়া আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতন একটা দাগি আসামি। কী হতো সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। হয়তো আজকে কাশ্মীরিদের সাথে যা হচ্ছে, সেটা তখন হতো পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষদের সাথে।
ভারত থেকে স্বাধীন হয়ে আমরা ছিলাম আমাদের "মুসলিম ভাই" পাকিস্তানিদের সাথে। কিন্তু মুসলিম ভাইয়েরা *দির ভাইয়ের মতন আচরণ করলো। এখানেও জাতীয়তাবাদ মুখ্য। বাঙালিদের প্রতি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকদের মতন আচরণ করা হলো। ট্যালেন্টেড হবার পরেও শুধু বাঙালি হবার অপরাধে আমাদের দাবিয়ে রাখা হতো। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক - সর্বক্ষেত্রে আমরা তখন শোষণের শিকার। এই নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলার নেই, সবাই জানেন, অথবা অনেকেই ইচ্ছা করেই জানতে চান না। ঠিক এই কারণেই আমরা আলাদা একটা রাষ্ট্র গড়লাম। কুঁড়ে ঘরে থেকে করবো শিল্পের বড়াই। প্রয়োজনে একবেলা আধপেটা খাবো, তবু মাথা উঁচু করে বাঁচবো। বিশ্ব জেনে নিবে বাংলাদেশ নামেও একটি দেশ আছে। বিদেশী কেউ "ইন্ডিয়ান" ভাবলে আমরা গর্বের সাথে ওদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে বলবো, "না, আমরা বাংলাদেশী।"
এই পর্যন্ত কারোর দ্বিমত আছে?
থাকলে আওয়াজ দিন। শুনি আপনার অভিমত।
এখন আমি নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতিকে ভালবাসি বলে যে অন্যকে ঘৃণা করবো, এমন ছোটলোকি মতবাদে আমি বিশ্বাসী নই। আমাদের দেশের ছোটছোট বাচ্চারা বাংলা ও ইংলিশের পাশাপাশি হিন্দিতেও কথা বলতে পারে, বুঝতে পারে। মুসলিম বাচ্চারাতো আরবি লেখা পড়তেও পারে। এ নিয়ে আমার কোনই আপত্তি নেই। বরং এটি এডভান্টেজ। এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে যে যত বেশি আন্তর্জাতিক ভাষা জানবে, সে তত এগিয়ে থাকবে। স্প্যানিশ ও চাইনিজ ভাষা যদি কেউ শিখে ফেলতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে কেল্লাফতে হয়ে যাবে। কিন্তু অবশ্যই এইটা মাথায় রাখতে হবে যে বিদেশী ভাষা শিখতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষাকে ছোট করে দেখা চলবে না। আমি শেক্সপিয়ারের দালালি করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ছোট করার চেষ্টা করলে নিজের দ্বৈনতা বেরিয়ে আসবে। এই পর্যন্তও সবাই এক মত তো? নাকি আরও বুঝাতে হবে?
এখন আমরা মানি অথবা না মানি, এইটা ফ্যাক্ট যে আমাদের দেশে বলিউডের প্রভাব খোদ ইন্ডিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকেও অনেক বেশি। দক্ষিণের আম জনতা আমির খান, শাহরুখ খানকে চিনে না, আমাদের দেশের সিনেমার নায়ক নিজের বাচ্চার নাম পর্যন্ত শাহরুখের বাচ্চার নাম থেকে চুরি করে রাখে। এই হচ্ছে অবস্থা। সালমান, ক্যাটরিনা, কৈলাশ খের, সনু নিগমরা আমাদের দেশে ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ। তাঁদের জনপ্রিয়তা সীমান্তের কাঁটাতার আটকে রাখতে পারেনি, রাখা উচিতও নয়। শিল্পকে কখনও কোন সীমারেখা দিয়ে আটকে রাখা যায় না। একটি ঘটনা বলি, তাহলে বুঝবেন। একবার কোন এক বিশেষ কারনে আমার ল্যাপটপে রুনা লায়লার ছবি উঠে এসেছিল। এক পাকিস্তানী লোক সেটা দেখে বললেন, "আমি এই মহিলাকে চিনি। ইনি রুনা লায়লা না? যে "দামা দাম মাস্ত কালান্দার" গেয়েছিল?"
পাকিস্তানে এই গানটা হচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুর সেই তুমি, জেমসের মা বা এর চেয়েও জনপ্রিয় একটি গান। এই গানটি কভার করেছেন ওস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলী খান, রাহাত ফতেহ আলী খান, আবিদা পারভীন থেকে শুরু করে হালের আতিফ আসলাম পর্যন্ত মোটামুটি সব লেজেন্ড ও গায়ক গায়িকারা। এর পরেও এই গানটি গাওয়ার জন্য ওদের বর্তমান জেনারেশনের লোকজনও রুনা লায়লাকে স্মরণে রেখেছে, তাহলে ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন? গর্বে বুক ফুলে উঠে না যখন আমাদের রুনা লায়লা বা জেমস বা কোন শিল্পী পাশের দেশের সংগীতানুষ্ঠানের বিচারকের আসন গ্রহণ করেন? ওরা যতটা আমাদের, ততটা বিশ্বের প্রতিটা সংগীতপ্রেমীদেরও। তেমনি, লতা মঙ্গেশকর বা দিলীপ কুমারের জীবন যখন সংকটে পড়ে, এই দেশের ভক্তদেরও দুই হাত উপরওয়ালার দরবারে ভিক্ষার জন্য ওঠে। আমি বলবো না বলিউডের শিল্পীদের বাংলাদেশে আসা উচিৎ না বা এই জাতীয় সংকীর্ণমনা কথাবার্তা। বরং দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর নিয়মিত শিল্পী সম্মেলন করা উচিৎ। সংস্কৃতিক ট্যুরিজম যাকে বলে।
তবে, সেসবের জন্য আলাদা সময়, আলাদা অনুষ্ঠান বেছে নেয়া উচিৎ। যেমন ছিল ফোক ফেস্ট। বিপিএলের মতন একটি অনুষ্ঠান, যেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিপুল সংখ্যক দর্শকের চোখ থাকে, সেখানে নিজের দেশের শিল্পীদের পেছনে রেখে হিন্দি গানের প্রোমোশনের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম না। তাও আবার এটির সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে জন্ম শতবার্ষিকীর ট্যাগ দিয়ে এই ফাজলামির কোন মানে বুঝলাম না। আমাদের দেশে কী আসলেই শিল্পীর অভাব? আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যাদের মঞ্চে তুল্লে আমাদের বেইজ্জতি হবে? চিরকুট যখন আমেরিকার বিখ্যাত মিউজিক ফেস্ট টেক্সাসের সাউথ বাই সাউথ ওয়েস্ট এসে অনুষ্ঠান মাতিয়ে যায়, আমাদের দেশের অডিয়েন্সের মন জয় করতে পারবে না? বিদেশিদের আস্থা আছে আমাদের শিল্পীদের উপর, দেশের আয়োজকদের নেই?
এর আগেও একবার এমন গ্লোবাল ইভেন্টে এ আর রেহমানকে এনেছিল বিসিবি। তখনও দেশের প্রথমসারির শিল্পীদের রীতিমতন অপমান করা হয়েছিল। ভারতের ক্রিকেটারদের যে টুর্নামেন্টে খেলানো যায় না, তাঁদের শিল্পীদের দিয়ে গান গাওয়ানো হয় কিসের যুক্তিতে? আমাদের শিল্পীদের যদি এমন গ্লোবাল ইভেন্টে অবহেলা করে বিদেশীদের গোলামী করা হয়, তবে আমাদের শিল্পীদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মটা দিবে কারা?
আবারও মনে করিয়ে দেই, আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে। এক্সট্রার ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে এই সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে যে একদিন লিড রোল আমাদের হবে। সুযোগ পেলেই যেন আমরা এগিয়ে এসে সব আলো কেড়ে নিতে পারি। প্রতিযোগিতা বড় কঠিন! কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। সেখানে নিজের দেশের লোকেরাই যদি নিজেদের পা টেনে ধরে উইংয়ের বাইরে নিয়ে যায়, তাহলে আমরা এগুবো কিভাবে?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×