somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখনই বিজ্ঞানকে ধর্মের বিরুদ্ধে, এবং ধর্মকে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফাজলামি দেখার সময় নয়।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে এক ধরনের গ্রূপ ছবি তোলার প্রতিযোগিতা দেখে খুবই বিরক্ত হচ্ছি।
একদল বন্ধুবান্ধব একটি কবিতার প্রতিটা শব্দ আলাদা আলাদা করে ধরে ছবি তুলছেন যেখানে লেখা করোনায় বিজ্ঞান একা লড়ছে, কোন মসজিদ মন্দির কিছু করছে না।
বুঝতে পারছি কোন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে লেখা।
যেসব ধর্মব্যবসায়ী বিজ্ঞানীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নিজে ক্রেডিট নেয়ার ধান্দায় মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করেনা, সেই সমস্ত বদমাইশদের উপর বিরক্ত হয়েই এমন কথা লেখা। এরাই এখন অপেক্ষায় আছে কখন ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হবে, এবং তারা দাবি করবে ওটা কুরআন হাদিসের কোথায় বর্ণনা করা হয়েছিল, এবং বিজ্ঞানীর আসলে কুরআন হাদিস ঘেঁটে সেখান থেকে চুরি করে আবিষ্কার করে ফেলেছে। এই সমস্ত ধান্দাবাজ, অপর্চুনিস্ট বাটপারদের কর্মকান্ডে প্রকৃত ধার্মিকরাই বিরক্ত।
তবে কিনা, উপরের কথাটিতেও একটু ফাঁক ঠিকই থেকে যায়।
আসলেই কী বিজ্ঞান একাই লড়ছে?
দেখুন, আমাদের পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের দায়িত্ব আলাদা আলাদা করে এসাইন করা থাকে। যেমন একজন একাউন্ট্যান্টের কাজ ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট ঘাটাঘাটি করে নানান অংক কষা, যেখানে একজন ডাক্তারের দায়িত্ব মানুষের রোগের বিরুদ্ধে লড়া। একজন একাউন্ট্যান্ট কখনই ইমার্জেন্সি রুমে গিয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে পারবেন না। তেমনই একজন ডাক্তারকে সিএফওর রোলে বসিয়ে দিলে কোম্পানি ডুবে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
এখানেও ঠিক তাই ঘটছে।
ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দায়িত্ব বিজ্ঞানীদের, কোন মোল্লা পুরুতের নয়। কোন মোল্লা বা পুরোহিত যদি ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করে, তাহলে সেটা হবে সর্বনাশের কথা। ঐ ওষুধে কাজ হবার সম্ভাবনা শূন্য।
তবে, মোল্লা পুরোহিত বা অন্য কেউ যে এই লড়াইয়ে একেবারেই লড়ছে না, এই কথাটা ১০০% মিথ্যা।
আজকেই ছবিতে দেখলাম কুর্মিটুলা হসপিটালের বাইরে একদল "দাড়িওয়ালা মোল্লা" পিপিই পরে বসে আছেন। কেন জানেন? করোনায় আক্রান্ত যেসব রোগীর আত্মীয় স্বজন তাঁর জানাজার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানাবেন, এই "অশিক্ষিত" "মধ্যযুগীয়" "বর্বর" "কাঠমোল্লারা" তাঁদের জানাজার দায়িত্ব নিবেন। মুসলিমদের জানাজায় কী কী করতে হয় জানেন নিশ্চই? গোসল, দাফন, কাফন ইত্যাদি অনেক কাজ থাকে, যা এই মুহূর্তে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরেও এই অনাত্মীয় লোকেরা নিজের ও নিজের পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও এগিয়ে এসেছেন। একে অস্বীকার করবেন কোন হিসেবে? যেখানে আমরা জানি, এই কিছুদিন আগেই এক বৃদ্ধা কেশেছিলেন বলে তাঁর নিজের ছেলেমেয়েরা তাঁকে জঙ্গলে ফেলে এসেছিল শিয়াল কুকুরের খাবার হবার জন্য। এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে তাঁর নিজের গ্রামবাসী বেরিকেড দিয়ে তাঁর লাশের গাড়িকে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি। সেই গ্রামের মাটিতে তাঁর কবর হতে পারবে না, এই হচ্ছে শেষ কথা। আমরা জাতি হিসেবে ভীষণ অমানুষ, এই কথা বলতে ভাল লাগেনা। কিন্তু সত্যি কথা এটাই।
নিউইয়র্ক এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর। এখানে অলিতে গলিতে করোনা পেশেন্ট গিজগিজ করছে। লোকজন বাইরে বেরুতে ভয় পায়। কাতারে কাতারে মানুষ মারা যাচ্ছেন। প্রতিদিন সাতশো আটশো সংখ্যায় কেবল মানুষ মরছেই। হাজারে হাজারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তারপরেও এই শহরের মসজিদগুলোর ঈমাম সংঘ ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা যার যার এলাকার মুসলিম মৃতদেহগুলোর জানাজা পড়াবেন। একে অস্বীকার করবেন কিভাবে?
আগেও বহুবার বলেছি, যুদ্ধে কেবল অস্ত্রধারী সেনাই যোদ্ধা না, সেই যোদ্ধা আহত হলে তাঁকে সেবাদানকারী ডাক্তার নার্সও যোদ্ধা। সেই সৈন্যের জন্য খাবার প্রস্তুতকারী বাবুর্চিও একজন যোদ্ধা। যে যার অবস্থান থেকে নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করলে তবেই যুদ্ধে জেতা যায়।
সেই কারণেই, এই যে এমন কঠিন সময়েও ডাক্তার নার্সদের পাশাপাশি গ্রোসারি স্টোরে কাজ করা লোকজন, যারা নিশ্চিত করছেন আমরা যেন সময়মতোন ও চাহিদামতন রসদ পাই, টিভি, ইন্টারনেট, ইলেক্ট্রিসিটি, পানি ইত্যাদি বিভাগে কাজ করা লোকজন - যারা নিশ্চিত করছেন আমরা বাড়িতে বসেই তাঁদের সেবা পাচ্ছি এবং উপভোগ করছি, বা সাধারণ স্বল্পশিক্ষিত ডেলিভারি ম্যান, যারা নিশ্চিত করছেন আমরা বাড়িতে বসেই খাবার পাচ্ছি, পুলিশ ও আর্মির লোকজন, যারা নিশ্চিত করছেন আমরা সচেতন হচ্ছি, বাড়িতে থাকছি এবং ঝুঁকি এড়াচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি ছোটবড় পেশার লোকজন, সবাই যোদ্ধা। প্রত্যেকেই যার যার জীবন ঝুঁকিতে ফেলে আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এবং এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছেন। কেবলই বিজ্ঞানীরা ক্রেডিট দাবি করলেতো সমস্যা। বাই দ্য ওয়ে, এই আহাম্মকি বিজ্ঞানীরা করছেনও না। করছে "বিজ্ঞান কি" এইটা যারা বুঝেনা তারাই।
এখন সময় সবার হাতে হাত ধরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার। এখনই বিজ্ঞানকে ধর্মের বিরুদ্ধে, এবং ধর্মকে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফাজলামি দেখার সময় নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:৫৪
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×