somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কামালা যদি বাংলাদেশী হতেন

০৯ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কামালা হ্যারিসের জন্ম আমেরিকায়, বেড়ে ওঠা আমেরিকায়, পড়াশোনা, চাকরি, রাজনৈতিক কর্মকান্ড সবকিছু আমেরিকায়, কিন্তু ক্রেডিট নেয়ার সময়ে ওর নানার বাড়ির লোকজন ক্রেডিট নিয়ে নিচ্ছেন। দোষ কেবল ভারতবাসীর না, আমাদের দেশের কেউ হলেও এমনটাই করতো। মার্গারিটা মামুনের অলিম্পিক সোনা জয়ের সময়ে মনে নেই? এমন ভাব করছিল লোকে যেন ওর ট্রেনিং পেয়েই মার্গারিটা সোনা জয় করেছিল।
অথচ এই কামালা আন্টি যদি আমাদের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে (বাংলাদেশ, ভারত পাকিস্তানের যেকোন অঞ্চলে) জন্মাতেন, তাহলে জন্মের পর থেকেই তাঁকে শুনতে হতো "কালী পেত্নী" ডাক। ওর মা কেন "কাউলা" বিয়ে করেছে, তা নিয়েও মা-মেয়ে সমাজের তিরস্কারের শিকার হতেন। শৈশব কাটতো তাঁর এই শুনে শুনে যে সে মুখে কালী মেখে চলে। রাতের বেলা ওকে দেখলে আসল ভূতও ভয় পাবে। কয়লাকেও ওর পাশে ফর্সা দেখায়।
ফেয়ার এন্ড লাভলী ঘষাঘষি করে ফর্সা হবার চেষ্টা করে না কেন! কেন ও কারোর সাথে "লাইন" করে বিয়ে করার চেষ্টা করেনা। কারন এরেঞ্জড ম্যারেজতো তাঁর এমনিতেই হবেনা। পড়ালেখা? রাজনীতি? এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটি? সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হবে। পুরুষদের সাথে এত ঘেঁষাঘেঁষি কিসের?
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হলেতো কথাই নেই। নিজের অধিকার টধিকারের জন্য লড়াই ফড়াই বাদ দিয়ে কোনরকমে মাথা ঝুঁকিয়ে গা বাঁচিয়ে চলো। স্বামী-সংসারে মনোযোগ দাও। জীবনটা ভালোয় ভালোয় কাটিয়ে দাও। তারপরে নীরবে মরে যাও।
আল্লাহ কখনই কাঁটাতারের সীমানা বুঝে শিশু জন্ম দেন না। নেতা নেত্রী সব দেশেই জন্মায়। কিন্তু তাঁদের যত্ন নিতে হয়। সঠিক পরিচর্যা করতে হয়। বেড়ে ওঠার জন্য আলো বাতাস পানি ও সার দিতে হয়। আগাছা ছেঁটে পরিষ্কার করতে হয়। আমাদের অঞ্চলে কামালা হ্যারিসরাও জন্মায়। লাখে লাখে, কোটি কোটি তাঁদের সংখ্যা। কিন্তু অঙ্কুরেই তাঁদের মেরে ফেলা হয়। আগাছা ছেয়ে ফেলে ওদের, বাড়তে দেয়না। আলো বাতাস হাওয়া পানি কিছুই পায় না। আপনার মেয়েই হয়তো একটা কামালা, কখনও তাঁর পটেনশিয়াল লক্ষ্য করেছেন? আপনার ছেলেই হয়তো একটা জো বাইডেন ও বারাক ওবামা, কখনও তাঁদের সুযোগ দিয়েতো দেখুন।
অবশ্য আমাদের দেশে রাজনৈতিক অবস্থা যা, তাতে এই ধরনের নেতা তৈরী করা সম্ভব না। ছাত্ররাজনীতিতে ঢুকলে প্রথমেই পড়ালেখা বাদ দিয়ে গুন্ডামি শিখবে। নিজের হোমওয়ার্ক এসাইনমেন্ট করাবে অন্যদের দিয়ে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করবে। ফ্রিতে সিঙ্গারা চা খাবে গরিব ক্যান্টিনওয়ালা বা রেস্টুরেন্টওয়ালার কাছ থেকে, এদিকে ভং ধরবে জনতার দরদে ওদের বুক উছলে পড়ছে।
নেতার চামচামি একটি আর্ট, সেটাতে মায়েস্ত্রো কিভাবে হতে হয় শিখবে।
সমস্ত জীবন নেতার পেছনে ঘুরাঘুরি করার পরে দেখবে ইলেকশনে ঐ নেতারই "সুযোগ্য" পুত্র নমিনেশন পেয়ে গেছে। অথচ এই ছেলে সমস্ত জীবন এলাকাতেই ছিল না। থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কখনই নামেনি। পয়সা না থাকলে আপনাকে পার্টি টিকিট দিবে না। আপনার কাজ ছিল নেতার হয়ে জনসংযোগ করা, এখন তার পুত্রের হয়ে করবেন। অথচ জনতার সেবা করার নিয়্যত ও যোগ্যতা হয়তো আপনার ছিল। জনতা আপনাকে চিনে, আপনাকে চায় আর আপনি আপনার চেহারা ও পরিশ্রম খাটিয়ে বাটপারের জন্য ভোট এনে দিচ্ছেন।
একদিন হয়তো আমাদের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কেউ হোয়াইট হাউজে বসবে। জর্জিয়া সিনেটে ইতিমধ্যেই শেখ রহমান নামের এক ভদ্রলোক শপথ গ্রহণ করেছেন যিনি এক সময়ে তিন ডলার পঁয়ত্রিশ পয়সা বেতনে চাকরি করতেন, ইংলিশ ক্লাস করে ইংলিশ শিখতেন। গর্বের সাথে বলতে পারি, তিনি একজন বাংলাদেশী। ল্যান্ড অফ অপরচুনিটি আমাদের প্রত্যেকটা প্রবাসীর জন্য খোলা, প্রত্যেককেই লাগামহীন স্বপ্ন দেখায়। আর আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি, কবে আমাদের নিজেদের মাতৃভূমি আমাদের সেই সুযোগ দিবে!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×