ইংলিশে "বাটারফ্লাই ইফেক্ট" সূত্রানুযায়ী, পৃথিবীর একপ্রান্তে একটি প্রজাপতি পাখা নাড়ে বলেই পৃথিবীর অপর প্রান্তে হয়তো সুনামি এসে বিস্তীর্ন জনপদ ধ্বংস করে ফেলে। আক্ষরিক অর্থে না নিলেও প্রতীকী মানেটা ঠিক আছে। আমরা বুঝতেই পারি না, আমাদের জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কর্মকান্ডগুলোই আমাদের জীবনের গতিপথ পাল্টে দেয়। সেই কবে সিলেটের এক বইমেলায়, যেখানে আমার যাবার কথা ছিল না, বিকেলে ক্রিকেট খেলা ছেড়ে যেতে হয়েছিল, কেন সেটাও মনে নেই। তারপরে এক স্টল থেকে "হিমু" কেনা। তাও পিতার অমতে, কেবলই আমার জেদের বশে। কারন সেই ঈদের নাটকে ঐ চরিত্রে আসাদুজ্জামান নূরকে অভিনয় করতে দেখে নামটা মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। এবং তারপরে সেই বই পড়ে সেই সিরিজের সব বই পড়ে শেষ করা।
সে বছরই বা পরের, নানুর বাসায় কর্মহীন থেকে নিতান্ত অলস সময় কাটাতেই মামাদের সংগ্রহশালার হাজার খানেক বই ভান্ডার থেকে "নিশীথিনী" খুঁজে বের করে পড়ে মিসির আলীর ভক্ত হয়ে যাওয়া, এবং সেই সিরিজের আগের পরের সব বই কিনে পড় পড়তে ধরাশায়ী হওয়া। এরপরের দিন মাস বছর কেবলই হুমায়ূন আহমেদে আচ্ছন্ন হওয়া। তাঁর গল্প, তাঁর নাটক, তাঁর সিনেমা, তাঁর সাক্ষাৎকার, তাঁর কলাম - আমার পাঠ ভুবন ছিল কেবল হুমায়ূনময়। দেশি বিদেশী ক্লাসিক কালজয়ী সবধরনের লেখকেরই লেখা পড়েছি, কিন্তু তাঁর লেখায় যে তৃপ্তি ছিল, যেন নিজের রান্নাঘরে মায়ের হাতের ব্যঞ্জন, এই স্বাদ আর কোথাও পাইনি।
বিতর্ক ছিল তাঁর জীবনে? অবশ্যই। কার নেই? পৃথিবীতে কয়জনকে পাওয়া যাবে তর্কের উর্দ্ধে? তাই বলে গল্পের বই পাঠ শিখেছি যার হাত ধরে, জীবন পাল্টেছে যে কারনে, তাঁর অবদান অস্বীকার করবো কিভাবে? এই যে টুটাফুটা লেখালেখির চেষ্টা, এই যে ফেসবুকের মতন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে "ক্যানভাস" নামের প্রায় চার লাখ সদস্যের সাহিত্য গ্রূপ সৃষ্টি, যা থেকে বেরিয়ে আসছেন নিত্য নতুন লেখক, পাঠক, কবি - এসবের কিছুইতো হতো না যদি সেই বইমেলায় তাঁর বই না কিনতাম। বাটারফ্লাই ইফেক্ট!
তাঁর জন্মদিনে তিনি নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর ছায়া।
পাখির শূন্য খাঁচায় রয়ে গেছে তাঁর পালক।
সেই পালক ছুঁয়ে পাখির গায়ের ঘ্রান আমরা নেই। পাখিকে স্মরণ করি।
জন্মদিনে অনেক অনেক শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রিয় লেখক!
ওপারের ভুবন মাতিয়ে তুলুন যেভাবে এ জগৎ জয় করেছিলেন।
ছবি চুরি: গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:০২