somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুদ্ধিজীবী দিবস

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পদ্মা সেতুর অস্বাভাবিক ও অবিশ্বাস্য খরচ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে তাকে দেশদ্রোহী, রাজাকার, পাকিপ্রেমী, বিম্পি জামাত ট্যাগ দেয়ার কিছু নেই। সে যেহেতু দেশের নাগরিক, ট্যাক্স দেয়, তাঁর অধিকার আছে জানার যে কোথায় কোথায় কেমন খরচ হলো। এসব জানতে চাওয়া হয়না বলেই সরকারি প্রতিষ্ঠানের মামুলি গাড়ির ড্রাইভার আজকে রাজপ্রাসাদে বাস করে। হাজার হাজার কোটি কাটা সরকারি দলের আতি পাতি নেতার পকেটে চলে যায়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে আনন্দ প্রকাশ করার মানে এই না যে কেউ সরকারের তেলতেলে চাটুকার হয়ে গেল। আগাগোড়া পঁচে যাওয়া সিস্টেমের দেশের একটি সাফল্যে সে গর্বিত। সরকারকে সেজন্য সে তাঁদের প্রাপ্য অভিনন্দন জানাচ্ছে।
নির্মিয়মান ভাষ্কর্য, যা মূলত "রাষ্ট্রীয় সম্পদ", ভাংচুরের ঘটনায় নিন্দা জ্ঞাপন মানে এই না যে "কাফির" হয়ে গেছে। ভ্যান্ডালিজম বা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা যে কোন সুনাগরিক মুসলিমের দায়িত্ব। অন্যের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হাত দেয়ার অধিকার পর্যন্ত ইসলাম কাউকে দেয়না, ভাংচুরতো দূরের কথা। কেউ যদি আমার এই দাবির বিরুদ্ধে কোন দালিলিক প্রমান পেশ করতে পারে, কানে ধরে উঠবস করবো। ঠিক এই কারণেই, এই কর্মকান্ডের পক্ষে দেশের কোন "আলেম" কথা বলেনি।
সরকারি টাকায় ভাষ্কর্য নির্মাণে শান্তিপূর্ণ আপত্তি জানানো রাজাকারের লক্ষণ নয়, এটা গণতন্ত্র। মত প্রকাশের অধিকার। কেউ যদি দাবি করে এই টাকায় টোস্ট বিস্কিট কিনে জনতার মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হোক, সেটাও তার নিজস্ব মতবাদ, এবং সেটা প্রকাশ করা তার নাগরিক অধিকার। মানা না মানা সেটা সরকারের বিবেচনা। পৃথিবীর সব দেশেই গণতন্ত্র এভাবেই চলে।
সমস্যাটা হচ্ছে, আমাদের দেশে এইরকম সহজ স্বাভাবিক চিন্তা করার মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিতের কথা বাদই দিলাম, শিক্ষিত লোকজনকেও এমনসব কথাবার্তা বলতে শুনি যা শুনলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে। সেদিন এক ছাগল দাবি করলো, নিজেকে মুসলিম দাবি করলে আমি নাকি "বাংলাদেশী" দাবি করতে পারবো না। এর লজিক কি বুঝলাম না। মুসলিমরা কি "বাঙালি" নয়? একই লজিকে তাহলে হিন্দু/বৌদ্ধ/খ্রিষ্টান মানে কোন ধর্মের অনুসারীই বাঙালি হবার কথা নয়। তাহলে বাঙালি কারা? এই হচ্ছে কোন শিক্ষিত লোকের যুক্তি?
বুয়েটে ছাত্র পিটিয়ে হত্যা করা হলো, আদালতে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনারা জানেন ছাত্রদের পেটানো হয়, তাহলে বাঁধা দেন না কেন?
উনি সহজ সরল স্বীকারোক্তি দিলেন। বাঁধা দিলে তাঁরাও মার খেতেন। তার মানে ধরে নেয়া যায়, পরীক্ষার খাতা, এসাইনমেন্ট ইত্যাদিতেও এইসব দলীয় ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা গুণ্ডাশ্রেণীর পোলাপান পার পেয়ে যায়। একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট সাথে থাকলে চাকরি পেতে সমস্যা হবার কথা না। এবং একবার চাকরিতে ঢুকে গেলে, একই কাজ মাসের পর মাস করতে করতে সেটা শিখে ফেলাও কোন কঠিন কাজ না। মাঝে দিয়ে যে গুনগত শিক্ষার মান, সেটার কবর হয়ে যায়। এই জন্য টিভি ইন্টারভিউতে আমাদের জিপিএ পাঁচ প্রাপ্ত ছেলে কনফিডেন্সের সাথে বলে, "I am GPA five." এই কারনে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ দাবি করে মুসলিম হলে বাঙালি হওয়া যাবেনা।
বুয়েটের ঘটনায় আমার নানার একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল।
স্বাধীনতার পরের ঘটনা। নানা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
কিছু ছাত্র নিজেদের সময়মতন পরীক্ষা দিতে এলো, পরীক্ষার সময় শেষ হবার পরেও খাতা জমা দিল না, পরীক্ষা দিতে লাগলো, ইচ্ছা মতন নকল করলো এবং রাত দশটার সময়ে নানার বাসায় এসে হুমকি ধামকি সহ খাতা জমা দিয়ে গেল।
তা আমার দাদার গল্প সবসময়েই করি যে তিনি কতটা তার ছিড়া সৎ মানুষ ছিলেন। আজকে নানার কথা বলি। উনারও মাথায় সমস্যা ছিল। যাদের মাথায় এই সমস্যা থাকে, তাদেরকে এইসব হুমকি ধামকি বা টাকার লোভ দেখিয়ে লাভ হয়না। তাঁদের কাছে নিজেদের ঈমানের মূল্য অসীম। নানা ঠিকই রিপোর্ট করলেন অমুক তমুক এইভাবে পরীক্ষা দিয়েছে, এবং এইভাবে হুমকি ধামকি দিয়েছে।
কথা হচ্ছে, নানার সাথে পুরো সিস্টেম যদি সৎ হতো, তাহলে কোনই সমস্যা ছিল না। কিন্তু আমরা কবে সেটা ছিলাম?
যে গুন্ডার বিরুদ্ধে নানা কমপ্লেন করেছিলেন, তার বাপ ছিল ক্ষমতাসীন সরকারের বড় সর নেতার পুত্র। তা এই গুন্ডা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছিল নানাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিবে।
ভাগ্য ভাল, ক্ষমতাসীন সরকারের আরেক নেতার পুত্র তখন নানার পাশে এসে দাঁড়ায়। নানাকে অফিসে যাওয়া এবং বাড়িতে ফেরার সময়ে প্রটেকশন দেয় কয়েকদিন এবং এরই মাঝে নিজের পার্টির অন্যান্য লোকজনের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি সামলে ফেলতে সক্ষম হয়। নাহলে আমার মা মামা খালাদের জীবন অন্যদিকে প্রবাহিত হতো।
আমি এবং আমার পরিবার যে ছাত্র রাজনীতি দুই চোখে দেখতে পারিনা, এইসব ঘটনাই এর মূল কারন।
যাই হোক, অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি।
মূল কথা হচ্ছে, দাদা নানার মতন ঘাড় ত্যাড়া সরকারি কর্মচারী এখনও আছেন নিশ্চই, কিন্তু সংখ্যাটি অতিরিক্ত কম।
সমাজে সৎ যোগ্য দিকপালের সংখ্যাও আশংকাজনকহারে কম। যে কারনে মূর্খের এত ছড়াছড়ি। যে কারনে জাতিগতভাবেই আজকে সুস্থ সুন্দরভাবে চিন্তা করার শক্তি ও ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলছি।
কেন?
কারন একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ।
জেনারেল রাও ফরমান আলীর মাস্টার প্ল্যান।
বাঙালি জাতির মাথাকে ধীরে ধীরে গুড়িয়ে দেয়া।
পঁচিশে মার্চ থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের তের-চৌদ্দ-পনেরো তারিখ পর্যন্ত যা চলে।
যে কারনে দেশ স্বাধীনের পর মূর্খ ও চাটুকারেরা এগিয়ে এসে তাঁদের স্থান দখল করে নেয়। মাইকে তারাই গলাবাজি করে বেড়ায়। কেউ যুক্তির কথা বলতে এলে, কেউ সৎ সুন্দরের দিকে ডাকতে এলে তাঁদের দাবিয়ে ফেলা হলো। কথা বলতে গেলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়, এই না সাঁড়াশি আক্রমন ধেয়ে আসে!
প্লেটোর সেই উক্তিটি দিয়েই শেষ করি, “Wise men speak because they have something to say; fools because they have to say something.”
বুদ্ধিজীবী দিবসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হচ্ছে, কিছু বাঙালি একে অপরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের "শুভেচ্ছা" দিয়ে বেড়াচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫০
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×