somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিপ্রেশন

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৌ যখন প্রেগন্যান্ট ছিল, ওকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যেতাম। সেখানে অনেক ম্যাগাজিন পড়ে থাকতো। আজাইরা গসিপ ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে স্পোর্টস ম্যাগাজিন হয়ে টাইম, ন্যাশনাল ডিসকভারি বা মেডিকেল জার্নাল থাকতোই। এইসব ব্যাপারে আমি সর্বভুক। সহজ বোধগম্য ভাষায় আমার সামনে যাই হাজির করো, আমি গিলে খাব।
তেমনই মাঝে মাঝে কিছু মেডিকেল ম্যাগাজিন খুলে পড়তাম। দেশের বিখ্যাত ডাক্তাররা সেখানে লেখালেখি করতেন। আমাদের দেশে এমনটা লিখলে সবচেয়ে বড় সমস্যা যা হবে তা হচ্ছে, ঘরে ঘরে ডাক্তার পয়দা হয়ে যাবে। সবাই ডাক্তারি ফলাতে শুরু করবে।
"এটা হয়েছে? এই ওষুধটা খেয়ে ফেল, সব ঠিক হয়ে যাবে।"
"কিন্তু এইভাবে না জেনে বুঝে ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে?"
"না জেনে মানে? আমি মেডিকেল জার্নালে পড়েছি বলেইতো বলছি। তোর কি আমার উপর বিশ্বাস নেই?"
আমাদের দেশে পাশ করা ডাক্তারের চাইতে লোকে ফার্মেসির কম্পাউন্ডারের উপর বেশি ভরসা করে। ওদের কথায় এন্টিবায়োটিক খায়। সেখানে এই ধরনের বই/ম্যাগাজিন যে কি সর্বনাশটা ঘটাবে, সেটা অনুমান করাই যায়।
যাই হোক। সেখানেই একবার ডিপ্রেশন নিয়ে পড়েছিলাম। অনেক আগের কথা, সবটা মনেও নেই। তবে যা মনে আছে, তা হচ্ছে, ডিপ্রেশন একটি ভয়াবহ মানসিক রোগ। অনেক কারণেই ডিপ্রেশন হতে পারে। চাকরি চলে যাওয়া, সন্তান না হওয়া, কারোর মৃত্যু, কোন কিছু না পাওয়া থেকে শুরু করে আবহাওয়ারও ভূমিকা আছে ডিপ্রেশনের পেছনে। রোদ ঝলমলে দিন, প্রচুর আলো বাতাস, নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা মন হালকা করে দেয়। অন্যদিকে মেঘলা, গুমোট আবহাওয়া, হীম শীতল পরিবেশ যা মানুষকে বাড়িতে বন্দি থাকতে বাধ্য করে - মনের উপর প্রচন্ড চাপ ফেলতে সক্ষম। চাকরি না করা যেমন ডিপ্রেশনের কারন হতে পারে, বিরতিহীন কাজ করে যাওয়াটাও কারন হতে পারে। কোন ছুটিছাটা নেই, দিনরাত শুধু কাজ কাজ আর কাজ। চারপাশ থেকে বানের জলের মতন টাকা আসছে। সবাই এই কারণেই হিংসায় শেষ। একদিন দেখবেন এমন মানুষ দুম করে আত্মহত্যা করে ফেলেছে।
"মন খারাপ" আর "ডিপ্রেশন" এক না। মন মেজাজ খারাপ হলে সেটা ভাল করার নানান উপায় থাকে, ডিপ্রেশনের জন্য একচুয়াল মেডিকেল চিকিৎসা নিতে হয়। কারোর ওষুধ লাগে, কারোর লাগেনা। এবং কেউ ডিপ্রেশনে আছে কিনা, সেটা একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ভাল বুঝতে পারবেন, আমি আপনি আমরা নই। কারন ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো পুরুষ ও নারী ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
কিছু লক্ষণের বর্ণনা দেই।
১. প্রচন্ড মন খারাপ থাকে, এবং শূন্য অনুভব করে।
২. খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যায়।
৩. কথায় কথায় রাগ উঠে যায়। যেকোন ছোটখাট বিষয়েই।
৪. উদ্বিগ্নতা বাড়ে প্রচন্ড পরিমানে।
৫. অফিস বা অন্যান্য কাজের উপর থেকে মন উঠে যায়।
৬. পরিবারের উপরও বিরক্তি চলে আসে।
৭. সবসময়ে যা করতে ভাল লাগে, যেমন কেউ বাগান করে, কেউ বই পড়ে, সিনেমা দেখে, সেগুলোর উপর থেকেও মন উঠে যায়।
৮. স্বামী স্ত্রীর মিলনে পর্যন্ত আগ্রহ থাকেনা।
৯. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন চলে আসে। খেতে মন চায় না। একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে কোনই সমস্যা হয়না।
১০. মৃত্যুচিন্তা মনে দানা বাঁধতে থাকে, এবং মাঝে মাঝে সুইসাইডাল হতেও মন চায়।
এইগুলো সামান্য একটা তালিকা। কারোর ডিপ্রেশন হয়েছে কিনা সেটা বুঝতে এই তালিকার সবগুলো লক্ষণ থাকতে হবে, এর কোন গ্যারান্টি নেই। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ডিপ্রেশন হয়েছে কিনা, সেটা বুঝার ও চিকিৎসা দেয়ার একমাত্র ক্ষমতা কেবলই ডাক্তারের আছে।

এই লেখা পড়ে যে কেউ লেখককে এবং নিজেকে ডাক্তার মনে করে বসবেন না। যদি কেউ উপরের দশ লক্ষণ নিজের মধ্যে পান, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নিন। যদি কারোর মাঝে দেখেন, নিজে ডাক্তারি ফলাতে ("এইটা কর, ঐটা কর, ঠিক হয়ে যাবে" জাতীয় উপদেশ) যাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৪:৪৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতার আসনে বেশী দিন থাকা শাসকদের মাঝে খালেদা জিয়া সর্বসেরা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৩



আমার এক ছাত্র চাকুরীর পরীক্ষায় ৫২ নম্বর পেয়ে ৩ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। দ্বিতীয় জন পেয়েছিল ৪৯ নম্বর এবং তৃতীয় জন পেয়েছিল ৪৭ নম্বর। সে হিসাবে খালেদা জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসহীনতার নাম খালেদা জিয়া: যন্ত্রণার বিনিময়ে গণতন্ত্রের প্রাচীর

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৭



ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে একাত্তরের বিভীষিকায় বন্দিত্ব, অল্প বয়সেই বিধবা হওয়া—বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের শুরুটাই ছিল যন্ত্রণার অধ্যায়। এরপর ইতিহাস যেন তাঁকে একের পর এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×