somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীজির (সঃ) অপমানে বাংলাদেশী হিসেবে আপনার করণীয় কি?

০৭ ই জুন, ২০২২ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৌলবাদীদের ক্ষমতায় রাখলে কি সমস্যায় পড়তে হয় সেটা ভালভাবেই টের পাচ্ছে ইন্ডিয়া।
হিটলারের নাৎসিদের ভারতীয় সংস্করন হচ্ছে আরএসএস। নাৎসিরা ছিল ইহুদি বিদ্বেষী, আর এরা হচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষী। সব মৌলবাদী সংগঠনের মতোই এখানেও অশিক্ষিত উগ্রবাদী মূর্খের ছড়াছড়ি। যারা এতটাই উগ্রবাদী যে ভারতের রাষ্ট্রপিতা, মহাত্মা গান্ধীকেও “মুসলমানদের দালাল" অভিযোগে গুলি করে হত্যা করেছে। সেই আরএসএসের অবৈধ সন্তান হচ্ছে বিজেপি, বর্তমানে যারা ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রী হবার আগে এই নরেন্দ্র মোদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হিসেবে আমেরিকার কালো তালিকায় ছিল, যার ফলে আমেরিকা সফরের জন্য সে নিষিদ্ধ ছিল। গুজরাট রায়টের প্রধানতম আসামি যিনি। স্বাভাবিকভাবেই, সে ক্ষমতায় আসলে ভারতীয় মুসলিমদের উপর দিয়ে স্টিম রোলার চলবে। তা চলেছেও। “গরুর মাংস খেয়েছে" সন্দেহে মানুষকে পিটিয়ে মেরেছে। “জয় শ্রীরাম” বলতে বলতে মানুষের বুকের উপর লাফিয়ে ভিডিও করেছে। মুসলিম পাড়ায় আগুন দিয়েছে। ইদানিং জ্ঞানবাপী মসজিদ ভাঙার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
ওরা এখন বলিউডকেও প্রোপাগান্ডা হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি বহু সিনেমা/সিরিয়াল তৈরী হচ্ছে যেখানে মুঘলদের দেখানো হচ্ছে “বিদেশী" শাসক হিসেবে। মানে মুসলিমরা ভারতের বৈধ নাগরিক নয়, হিন্দুস্তান হচ্ছে হিন্দুদের দেশ।
একই সাথে, এটাও বলে রাখি, গোটা ভারত কিন্তু ওদের মতন সাম্প্রদায়িক ইতর না। একদিকে মুসলিমের উপর হামলা হয়েছে, একই সাথে মুসলিমদেরও আশ্রয় দিয়েছে স্থানীয় হিন্দুরাই। পৃথ্বিরাজ চৌহানের মতন সস্তা, ইতিহাস বিকৃত আর প্রোপাগান্ডা সিনেমার সমালোচনা করছেন ভারতীয় হিন্দু ফিল্ম ক্রিটিকরাই। গোটা ভারত যদি সাম্প্রদায়িক হতো, তাহলে এত শত বছর ধরে মুসলিমরা সেখানে টিকতে পারতো না। ইতরের চাইতে ভদ্রের সংখ্যা বহুগুন বেশি। সমস্যা হচ্ছে, গাধার চিৎকারই বিকট শোনা যায়।
তো যা বলছিলাম। দেশ হিসেবে ভারতে সমস্যার শেষ নেই। হাজারো ইস্যু নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। মূল্যস্ফীতি, পানির অভাব, খাদ্য সংকট, দুর্নীতি ইত্যাদি থেকে শুরু করে এমন কিছুই নাই যেখানে সমস্যা নাই। কিন্তু বিজেপির ভারতে মিডিয়া সরব এই মসজিদ বনাম শিব লিঙ্গ নিয়ে বিতর্কে। সরকারের মদতে এতেই ওদের টিআরপি বাড়ে, পাবলিক খায়, তাই খাওয়ায়। তা এই বিতর্ক বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গেছে যে ওদের সরকারের এক মুখপাত্র আমাদের নবীকে (সঃ) নিয়ে চরম অবমাননাকর এক কথা বলেছে। “মুখ ফস্কে বলে ফেলেছে" - ঘটনা এমন নয়। সে এজন্য সাথে সাথে ক্ষমা চায়নি। সরকারও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অনুষ্ঠান সঞ্চালকও কোন বাচ্চা ছিল না যে এই ধরনের পরিস্থিতিকে কিভাবে সামলাবে জানতো না। সেও এগুতে দিয়েছে, কারন যে সিক্রেট মশলার অনুসন্ধানে ওরা ছিল, সেটা পেয়ে গেছে।
ফলে আরবরাও ফুঁসে উঠেছে। তুমি মুসলিমদের গরু খাবার অভিযোগে মেরে ফেল, ওদের বাড়িঘর জ্বালায় দাও, ওদের মসজিদ ভেঙ্গে ফেল, নানান ইস্যুতে বিভক্ত আরবদের এতে কোনই সমস্যা নাই। কিন্তু নবীকে (সঃ) নিয়ে নাড়াচাড়া করবা, তাইলে ব্রো মনে রাখবা, আমরা এক নবীর (সঃ) উম্মত। এই ব্যাপারে শিয়া সুন্নি ওয়াহাবি বা ইত্যাদি ইত্যাদি কারোরই কোন বিভেদ নাই। ইরান থেকে কুয়েত, কাতার, আমিরাত হয়ে সৌদি আরব - সবাই ক্ষেপে গেছে। প্রতিক্রিয়ার প্রথম ধাপেই ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান করা হয়েছে। অনেকে বহু ভারতীয় নাগরিকদের চাকরিচ্যুত করে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের বিরাট বাজার আছে, পণ্যের ও শ্রমের। এই মার্কেট হারালে ভারত বিপদেই পড়বে। যে কারনে বিজেপি এখন ঐ বদ মহিলাকে ও তার সমর্থককে বহিষ্কার করেছে। লিখিত ক্ষমাও চেয়েছে। আগে করলে এই দিন দেখতে হতো না।
কেউ কেউ আল্লাদি স্বরে বলবে “এতে ব্যবসায়ীদের কি দোষ?”
ব্যবসায়ীদের ট্যাক্সে রাষ্ট্র চলে, দল চলে, সরকার চলে। ব্যবসায়ীরা লস করলে, শ্রমিকরা বেকার হলে সরকারের উপর চাপ দিবে, যা এখন দিচ্ছে। এবং রাষ্ট্রের মুখপাত্রকে একটা বার্তা দিতে হলে “শান্তিপূর্ণ” প্রতিবাদের এটিই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। আপনি যদি না বুঝে থাকেন, তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন, জ্ঞান বাড়লেই বুঝতে পারবেন। না জেনে বুঝে সিরিয়াস বিষয়ে কথাবার্তা বলা বোকার লক্ষণ।
এখন বাংলাদেশী হিসেবে আপনার করণীয় কি?
১. অবশ্যই প্রতিবাদ। রাসূলের (সঃ) অপমানে আপনার যদি কিছুই এসে যায়না, তবে আপনি মুসলিমই না। আপনাকে আপনার অবস্থান থেকে অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে। ফেসবুকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের পাশাপাশি যদি সম্ভব হয় ভারতীয় পণ্য বর্জন, তাহলে সেটাও করবেন। আমি জানি বাংলাদেশে থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জন অতি কঠিন একটি কাজ। টিভি থেকে শুরু করে খাবার পাত, সবই ভারতের দখলে। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজের বদলে দেশি পেঁয়াজ কিনলে, হিন্দি সিরিয়াল না দেখে বাংলা বা কোরিয়ান সিরিয়াল দেখলে আপনি ফকির মিসকিন হয়ে যাবেন না। আপনাকে আপনার নিয়্যত দিয়ে বিচার করবেন স্বয়ং আল্লাহ, আপনি আপনার সাধ্য মতন কাজ করে যান।
২. অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের দেশের হিন্দুরা আমাদের দেশের নাগরিক। বিজেপি সাম্প্রদায়িক ইতর হতে পারে, আমরা যেন না হই। ওরা আমাদের প্রতিবেশী, এবং প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা আমাদের ঈমানের একটি বড় স্তম্ভ। বিজেপির বদমায়েশির জন্য ওদের নিরাপত্তার যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে। আমাদের দেশেও প্রচুর সাম্প্রদায়িক ইতর আছে যারা এই সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকে। ওদের থেকে আমাদের বন্ধু প্রতিবেশীদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।
৩. মাথায় রাখবেন, গোটা ভারত কিন্তু বিজেপি না। বহু বহু বহুউউউউউ ভারতীয় আছেন যারা নিজের ধর্মের জাতভাইদের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও ন্যায়ের পক্ষ নেন। কাজেই ওদের প্রতি যেন কোন অন্যায় করা না হয়।
মাথামোটা মৌলবাদী বিজেপি উপলব্ধিই করেনা যে গোটা বিশ্বেই ভারতীয়রা, হিন্দুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ওদের কর্মকান্ডের জন্য নিরীহ, সংখ্যালঘুদেরও মাসুল গুনতে হয়। এই যে আরব বাজার নষ্ট হয়ে গেল, বহু ব্যবসায়ী, মেধা ও শ্রমজীবীর পেটে লাথি পড়লো, এজন্য দায়ী কে?
আশা করি এই ঘটনায় ইন্ডিয়ার জনতার বোধদয় ঘটবে। মৌলবাদীদের বদলে ভাল মানুষদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে।
২২টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×