সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের চাইতেও এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাইরাল টপিক হচ্ছে সুলতানের কুত্তা বিরিয়ানি।
ঘটনা হচ্ছে, একজন কাস্টমার কাচ্চি খেয়ে হাড্ডি দেখে উনি বলে দিলেন এটি কুকুর বা বিড়ালের হাড্ডি, খাসির হাড্ডি নয়। উনার কিছু বন্ধু সেটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তিনি মালিক পক্ষের সাথে কথাবার্তা বলে ভিডিও করেছেন। সেই ভিডিও এখন ভাইরাল হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে জাতিগতভাবেই আমরা সবাই পরশ্রীকাতর। যেহেতু সুলতান মোটামুটি একটি ভাল ব্র্যান্ড, কাজেই ওদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই না করেই আমরা ভাইরাল করে দিলাম। রান্না করা মাংসের ছোট এক টুকরা হাড্ডি দেখে কেউ কুকুর বা খাসির পার্থক্য বুঝে ফেলবে, এমন প্রতিভায় দেশ ভরে গেছে ভেবে চোখে পানি চলে আসলো। এত জিনিয়াসরা কোথায় ঝাঁকে ঝাঁকে নোবেল নিয়ে আসবে, তা না, টিকটকানি করে বেড়াচ্ছে!
প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে কি কুকুরের মাংস খাওয়ায় না? অবশ্যই খাওয়ায়। বাজারে গরুর নামে মহিষের মাংস বিক্রি, ছাগলের নামে ভেড়ার মাংস বিক্রি কোন নতুন ঘটনা না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময়ে খাসির নামে শেয়ালের মাংস খাওয়াতো। পরে ধরা খেয়েছিল, পত্রিকায় নিউজ এসেছিল।
অনেক রেস্টুরেন্টে কুকুরের মাংস খাইয়ে দেয়। কিন্তু কোথাওই আজ পর্যন্ত কেউ দাবি করতে পারেনি সে হাড্ডির টুকরা দেখেই বুঝে ফেলেছে ওটা এই প্রাণীর। খাসি ও কুকুর একই সাইজের প্রাণী, খাসির বদলে মুরগি দিলে সহজে বুঝা যায়, গরু দিলে বুঝা যায়, কিন্তু গরু এবং মহিষের হাড্ডির পার্থক্য বুঝা এত সহজ?
নিয়ম হচ্ছে ল্যাব টেস্ট। সন্দেহ হয়েছে, পুলিশে কল দেন, ইদানিং ভ্রাম্যমান আদালত যথেষ্ট স্বক্রিয় হয়েছে, ওদের জানান, পুলিশ-মিডিয়া একসাথে ঝটিকা রেইড দিক, হাতে নাতে প্রমান সহ ধরুক যে ওরা আসলেই কি ঘাপলা করছে - তখন নাহয় এ নিয়ে ভাইরাল হওয়া যাবে। যেমনটা কাচ্চিভাইয়ের প্রোডাক্টে কাপড়ের রং ব্যবহার করা নিয়ে হয়েছিল।
খাদ্যে ভেজাল মেশানো মানে স্লো পয়জনিং করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া। ক্যানসারের জন্য সরাসরি দায়ী খাদ্যে ভেজাল মেশানো। অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড প্রাপ্য। বিষয়টা এতটাই সিরিয়াস। মোটেই ফাজলামির বিষয় না।
সমস্যা হচ্ছে, মিডিয়া ট্রায়ালে আমরা এখন ঘোষণা করে দেই কে অপরাধী এবং কে না।
এখন ভাইরাল হওয়ার যুগ। সবাই ভাইরাল হতে চায়। রেপুটেড কারোর বিরুদ্ধে দুই চারটা কথা বলে ভাইরাল হওয়া আরও সহজ। হ্যাশট্যাগ মিটু মুভমেন্টের সময়ে আমার মনে আছে একটা উদীয়মান কলেজ ফুটবলারের বিরুদ্ধে ওর ক্লাসমেট ধর্ষণের অভিযোগ করে বসলো। মিডিয়া ট্রায়ালে ছেলেটা কয়েক সেকেন্ডেই দন্ডিত আসামি প্রমাণিত হলো, ওর সাথে যে ফুটবল ক্লাব কন্ট্র্যাক্ট করেছিল, ওরা সেটা উইথড্র করলো। তারপরে পুলিশি তদন্তে প্রমান হলো আসলে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি, মেয়েটা বেহুদা ফেমাস হওয়ার জন্য এমনটা বলেছে, কিন্তু ততদিনে ওর জীবনের মহামূল্যবান একটা সিজন শেষ হয়ে গেছে। ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গেছে ছেলেটার।
কথা হচ্ছে, আসলেই কি ধর্ষণ ঘটেনা? অবশ্যই ঘটে। হ্যারাসমেন্ট ঘটে। সবই ঘটে। তারপরেও সব সময়ে সব অভিযোগ সত্য নয়। পুলিশকে তদন্ত করতে দেন, সত্য বেরিয়ে আসুক, তারপরে নাহয় হাউকাউ করা যাবে।
এই যে আজকাল সবাই ফুড ভ্লগিং শুরু করেছে, বেশিরভাগই শুরু করে "প্রিয় দর্শক, আজকে আমি যে পোশাক পরে আছি, সেটা পাওয়া যাবে অমুক দোকানে" - মানে প্রথমেই বুঝিয়ে দিল সে নিজে পয়সা নিয়ে বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছে। দোষের কিছু না। ভাল পোশাক হলে, উল্টা পয়সা পেলে কেন সে প্রচার করবে না?
কিন্তু সে যে রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছে গিয়ে বলছে না যে "আমাকে এত টাকা না দিলে বাজে রিভিউ দিয়ে দিব" - এর নিশ্চয়তা কি? কিভাবে এদের বিশ্বাস করবো? বিশেষ করে আগেও অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক ভ্লগারদের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছে। আর বাংলাদেশে সবই সম্ভব।