somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাদ্যে ভেজাল মেশানো

১৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখের দেখায় কোন পশুর হাড্ডি সেটা বলে দেয়ার অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করে, গুজব ছড়িয়ে কারোর ব্যবসা ও রেপুটেশনের বারোটা বাজানোর অভ্যাসের বিরুদ্ধে সেদিন লিখলাম। এখন লেখা যাক উল্টো বিষয় নিয়ে, মানে আসলেই যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তাদের নিয়ে।

যেমন কিছুদিন পরপরই ভাইরাল ভিডিও দেখা যায়, অমুক জ্যুসের ফ্যাক্টরিতে দেয়ালের পেইন্ট ব্যবহার করে মানুষকে খাওয়ানো হয়। তমুক মসলার কারখানায় মরিচের সাথে ইটের গুঁড়া ভরে দেয়া হয়। অমুক তমুক ফ্যাক্টরিতে আচারের জন্য পঁচা ফল ব্যবহার করা হয়। মোটামুটি বিখ্যাত সব রেস্টুরেন্টেরই কিচেন ভয়াবহ নোংরা। মরা পশুর মাংস খাইয়ে দেয়ার অভিযোগ আজকের না, বহু বছর পুরানো। ফুচকার ফ্যাক্টরিতে অভিযান করে পাওয়া গেছে ইঁদুরের গু। আমার মনে আছে আমেরিকায় একবার এক লোক ইঁদুরের পেশাব খেয়ে মরে গিয়েছিল। গ্যারেজে রাখা কোকের ক্যানের মধ্যে ইঁদুর পেশাব করে দিয়েছিল, বাতাসে সেটা শুকিয়ে যাওয়ায় ও টের পায়নি। যখন ক্যানে চুমুক দিয়ে খায়, তখন ভাইরাস ওর শরীরে প্রবেশ করে।
আমরা বাঙালিরা ইঁদুরের গু মুত খেয়ে দিব্যি বেড়ে উঠছি! আমাদের ঠ্যাকাবে কে?

আমি যখন দেশে ছিলাম, গুলশান ২ এর ফুটপাথে একটা লোক ফ্রাইড চিকেন বিক্রি করতো। দামটা এখন ঠিক মনে নেই, তবে ১০-১৫ টাকার মতন অবিশ্বাস্য কম মূল্যে ছিল, এইটা মনে আছে। যেখানে দোকানেই চিকেনের নাম ছিল কয়েক শ টাকা, সেখানে কিভাবে মাত্র ১০-১৫ টাকায় চিকেন ফ্রাই সে বিক্রি করে, এইটা নিয়ে কেউ চিন্তা করতো না। লোকে ভিড় করে খেত।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস এলাকাতেও তেমনই অবিশ্বাস্য কম দামের একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। খাই নাই, তাই এখন আর মনে নাই কি কত দামে পাওয়া যেত। কিন্তু অংকের হিসাবে মেলানো অসম্ভব ছিল এইটা মনে আছে।
নীলক্ষেতের তেহারির হালও তেমন। লোকে বলতো পশুর চামড়া ছিলার পরে সেখানে যে ছোট ছোট মাংস লেগে থাকে, ওরা নাকি সেটাই কিনে এনে রান্না করে বিক্রি করে। সমস্যা নাই। তাওতো সেটা গরুর মাংস! নাহলে সে খরচ পোষাবে কিভাবে?
এদিকে মিরপুরে পাওয়া যেত এক টাকার শিক কাবাব! ছোট সাইজ, কিন্তু তারপরেও, মাত্র এক টাকায় কিভাবে সম্ভব? আল্লাহ মালুম সেটা কিসের মাংস ছিল!

আমাদের বাঙালিদের সমস্যা এখানেই। আমরা একই সাথে লাক্সারিও চাইবো, আবার দামও দিতে চাইবো না। এইটার ফায়দা তুলতেই অসৎব্যবসায়ীগুলি মাঠে নামে।
"গুলশানে বাফে মাত্র পাঁচশো টাকায়" - বলে প্রচার করে দিল, অমনি সবাই নাচতে নাচতে গিয়ে হাজির হলো। একটুও চিন্তা নাই লোকটা নিশ্চই লঙ্গরখানা খুলে বসেনাই, অবশ্যই লাভ করছে। কিন্তু দুর্মূল্যের বাজারে সেটা কিভাবে সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, নিশ্চই সে কোন না কোন ঘাপলা করছে।
এক চালের ব্যবসায়ীকে চিনতাম, ও এক বস্তা চালের মধ্যে এক কেজি পাথর মিশিয়ে বিক্রি করতো। ওটাই লাভ। বেকুবরা সস্তা দেখে কিনে ফেলতো, কিন্তু আসল জায়গায় গিয়ে ধরা খেত।
দেড়শো টাকা প্লেটের বিরিয়ানি খাবা, চার পাঁচ পিস্ বড় বড় সাইজের মাংসও চাইবা, একটুও হিসাব করবা না ৯০০ টাকা দরের মাংসের বাজারে ব্যবসায়ী কিভাবে এটা ম্যানেজ করলো? ওরতো কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়, দোকানের অন্যান্য বিলও আছে, সবই আসে এই খাবার বিক্রি করে। দেড়শো টাকা প্লেট হলে কমসে কম ওর খরচ রাখতে হয় সর্বোচ্চ পঞ্চাশ টাকা। এরবেশি খরচ করলেই ওর লস। ও কিভাবে খরচ ম্যানেজ করছে? একাউন্টিংয়ের সবচেয়ে কঠিনতম অধ্যায়ের একটি হচ্ছে কস্ট একাউন্টিং। ওয়ালমার্ট কিভাবে কস্ট ম্যানেজ করে সেটা নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচিতে ব্যবহার করে। আমাদের এইসব ব্যবসায়ীরাতো তাহলে একেকজন লেজেন্ড!

এনিওয়েজ, কুকুর, বাদুড়, শেয়াল, ইঁদুর, শুকর ইত্যাদির মাংস যদি আমাদের না জানিয়ে খাইয়ে দেয়া হয়, বলা হয় যে ওটা গরু/খাসি/ভেড়ার মাংস, তবে আমাদের ধর্মভ্রষ্ট হবেনা - আপনি যেই মুসলিম ছিলেন, তেমনই থাকবেন, সব গুনাহ হবে যে মিথ্যা বলেছে ওর। কাজেই "হারাম খাইয়ে ফেলেছে, আমি দোজখে চলে যাচ্ছি" টাইপ টেনশনে ভুগতে হবেনা।
তবে এর ফলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে যা আসলেই চিন্তার বিষয়। বাদুড়ের মাংস খাওয়ার ফলে কি কি রোগ হতে পারে সে তালিকা সুবিশাল। কুকুরের মাংস খেলে রেবিস চলে আসতে পারে আমাদের শরীরে। তেমনই নানান নিষিদ্ধ পশুর মাংসে নানান রোগ আছে যা আমার আপনার এবং দেশের বহু মানুষের প্রাণ নিয়ে নিতে যথেষ্ট। এইটা মোটেই ট্রলিংয়ের মতন হাল্কা বিষয় না। সাথে যোগ করুন ফরমালিন মেশানো ফল, মাংস, মাছ, শাক সবজি। যোগ করুন ডিস্টেম্পার মেশানো ফলের জ্যুস, কাপড়ের রং মেশানো খাবার, আরও নানান কেমিকেল মেশানো খাদ্য সামগ্রী যা শরীরে বিষ হিসেবে প্রবেশ করছে। এসব খাওয়ার ফলে আমাদের ভিতরের সব অর্গান ফাংশন করা বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্যানসার হচ্ছে, কম বয়সেই স্ট্রোক বা হার্ট এটাকে লোকজন মরছে। এদের শাস্তি মাত্র এক দুই লাখ টাকা জরিমানায় হওয়া উচিৎ না। এগুলো এটেম্প্ট টু মার্ডারতো অবশ্যই, অথবা ইতিমধ্যেই হয়ে যাওয়া মার্ডার কেস। ড্রাগ্স ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর নীতি অবলম্বন করা হয়, খাদ্যে বিষ মেশানো এইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও প্রচন্ড কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। ন্যূনতম শাস্তি যাবজ্জীবন এবং সর্বোচ্চ হওয়া উচিৎ মৃত্যুদন্ড। নাহলে এই ধারা সহজে বন্ধ হবেনা।
আসছে রমজান মাস, সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য মহাপবিত্র, রহমতের মাস। অথচ আমরা বাংলাদেশের মানুষের মতন একে ভয়াবহ আজাবের মাস বানিয়ে ফেলেছি! যেখানে প্রতিটা মুসলিম দেশে রমজান উপলক্ষ্যে দাম করে, সেখানে আমাদের দেশে দাম কয়েক গুন বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে আরও বহুগুন লাভ করে থাকি। রমজানের যে মূল উদ্দেশ্য, তাকওয়া অর্জন, সেটার থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে আমাদের অবস্থান।
আমাদের সুবুদ্ধির উদয় হোক!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৪০
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×