সম্প্রতি ইজরায়েলে রকেট হামলায় ব্রিটিশ দুই বোন নিহত হয়েছে।
ওদের আহত মা আজকে চলে গেলেন।
খারাপ হলো। ওয়েস্টার্ন মিডিয়া জুড়ে হাহাকার উঠছে। মেয়ে দুইটির ডোনেট করা অর্গান থেকে কতজন মানুষের প্রাণ রক্ষা হলো, সেটাও জানতে পারলাম মিডিয়া থেকেই।
ইজরায়েলীদের এই এক কৌশল। নিজেরা মেরে সাফ করে দিবে, সমস্যা নাই। ওদের উপর একটা মশার কামড় আসলেও সেটাকে ভিক্টিম কার্ড বানিয়ে হায়হায় করতে থাকে। "দেখো পিতিবিবাসী দেখো! আমাদের উপর সবাই কত অত্যাচার করে!"
এইটা সত্যি যে দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধ এবং এর আগে ওদের প্রতি জুলুম হয়েছে, বর্বরতম আচরণ করা হয়েছে ওদের প্রতি, গোটা ইউরোপ জুড়েই ওরা বর্ণবাদের চরমতম শিকার হয়েছে - কিন্তু এরপরে সময় যত এগিয়েছে, ওরা নিজেরাই তত বর্বর হয়ে উঠেছে। গায়ের জোরে অন্যের ভূমি দখল করা, খুন খারাবি করা এখন ওদের ডেইলি রুটিনে পরিণত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি বুঝতে একবার কল্পনা করুন, আপনার কেমন লাগবে যদি দেখেন একদিন আপনার বাড়িতে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের এক নেতা নিজের পরিবার নিয়ে উঠে আসে, এবং আপনারই বাড়িতে আপনার স্থান হয় গ্যারেজে? আপনি বিচার দিবেন? কাকে? ওদেরই সরকার ওদেরকে এই বাড়িতে উঠে যেতে বলেছে। ওদের দেশের নিয়ম হচ্ছে দুনিয়ার যেকোন প্রান্ত থেকে যেকোন ইহুদি ইচ্ছা করলেই ইজরায়েলে এসে নাগরিকত্ব পাবে, এবং ওর থাকার জন্য জায়গা না পাওয়া গেলে যেকোন ফিলিস্তিনিকে নিজ বাড়ি থেকে উৎখাত করা হবে।
এখন যদি দখলবাজ নেতা আপনাকে বলে, "এইটাই মেনে নাও। কারন আমার পরে যে আসবে, সে হয়তো তোমাকে গ্যারেজেও থাকতে দিবে না।"
তখন আপনি কি করবেন?
ফিলিস্তিনে এই ঘটনাই প্রতিদিন ঘটে। এই যে দুই ব্রিটিশ বোন এবং তাঁদের মা নিহত হলেন, ইজরায়েলের দখল করা ভূখণ্ডে তাঁদের অধিকার যেকোন ফিলিস্তিনির চাইতে বেশি।
আর যারা এই আগ্রাসন মেনে নিতে পারেনা, তাঁদের উপর চলে গুলি।
একজন দুইজন না, অনেক সময়ে একেক দিনে আস্ত পরিবার পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
কখনও যদি সেসব এলাকায় যান, দেখবেন প্রায়ই অনেক পুরানো বাড়ির সামনে প্রাচীন কোন বৃদ্ধ ঝিম ধরে বসে আছেন। সেসব বাড়ি ওসব বৃদ্ধদের, যাদের জোর জবরদস্তি করে ঘর থেকে বের করে দিয়ে এখন সেখানে কোন ইহুদি পরিবার বাস করছে। কোথাও বিচার না পেয়ে গৃহহীন এইসব বৃদ্ধরা নিজেদের পৈতৃক ভিটার সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে বিচার দেন।
কয়েক বছর আগের এক ঈদের ঘটনা মনে আছে, একটি বাড়িতে ইজরায়েলি রকেট আছড়ে পড়লো। একাধিক পরিবার মুহূর্তেই খতম। নিহত শিশুগুলোর শরীরে তখন ঈদের জামা জড়ানো। সেটাই তাঁদের কাফন হলো। ছোট্ট ছোট্ট চোখ তখনও অবাক বিস্ময়ে হতভম্ব, মানুষ কতটা পৈশাচিক হতে পারে!
আরেকটা ভিডিওর কথা মনে আছে। একটি ছেলে তাঁর বাগদত্তাকে হারিয়ে হাসছে। কয়েকদিন পরেই তাঁদের বিয়ের কথা ছিল। ছেলেটি বলছিল, "আমি কাঁদবো কেন? ওতো এখন জান্নাতে আছে! অনেক উত্তম স্থান!"
বিশ্বাস করুন, যতবার ছেলেটি হাসছিল, প্রতিটা দর্শক তখন চোখের পানি ফেলছিল।
শুধু মুসলিম না, ফিলিস্তিনিদের অপরাধ তাঁরা ফিলিস্তিনি। আপনি ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টান হলেও আপনাকে বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের (আরও বেশি হবার কথা) হাজার হাজার বছরের পুরানো ভিটা থেকে খেদানো হবে।
একটা ব্যাপার কি কাউকে কখনও ভাবায় না যে, আমাদের ঈসা (আঃ) বা খ্রিষ্টানদের যীশু খ্রীষ্টের (আঃ) জন্মস্থান ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে, তাঁদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাঁকে ক্রুশবিদ্ধও করা হয় ফিলিস্তিনেই, তাহলে কেন ফিলিস্তিনে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা এত কম?
বলতে গেলে একেবারেই নেই। ইজরায়েলি আগ্রাসন ওদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে। আর মাত্র এক জেনারেশনের অপেক্ষা, তারপরে ফিলিস্তিনে হয়তো আর কোন খ্রিস্টান থাকবে না। ইতিমধ্যেই বর্তমান বাসিন্দাদের উত্তরসূরিরা দেশত্যাগ করে ফেলেছে।
যেহেতু খ্রিষ্টান জাতি কয়েক হাজার শাখায় বিভক্ত হয়ে গেছে, তাই ওরা এই নিয়ে কিছু বলেও না। উল্টো ইভেনজেলিক খ্রিষ্টানরা (আমেরিকা) ইজরায়েলকে সাপোর্টও দিয়ে যাচ্ছে। কারন ওদের বিশ্বাস, যখন সব ইহুদি ইজরায়েলি ভূখণ্ডে (জেরুজালেমে) একত্রিত হবে, তখন ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে নেমে আসবেন, এবং ওদের সবাইকে হত্যা করে রাজত্ব কায়েম করবেন। মানে, ওদের প্রতি এই আলগা প্রেম মূলত জবাই করার আগে পশুর প্রতি কসাইয়ের ভালবাসা প্রদর্শনের মতই ব্যাপার।
ইজ্রায়েলীরা যেহেতু খ্রিষ্টান ধর্ম বা যীশুকে (আঃ) মানে না, কাজেই ওরা বিমলানন্দে এই অতিথি সেবা গ্রহণ করছে। ওরা জানে জবাইয়ের ঘটনা ঘটবে না। মাঝে দিয়ে আপেল কলা মিষ্টি খেতে পেলে ক্ষতি কি?
মুসলিমদের মাঝে এখনও কিছুটা হলেও ঐক্য আছে। তাই ফিলিস্তিনের জন্য হাহাকার মোটামুটি সব মুসলিম দেশেই ওঠে। নিজেরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে ব্যস্ত বলে কেউ একজোট হয়ে কিছু করেনা। সবাই শুধু থটস এন্ড প্রেয়ারসেই সীমাবদ্ধ।
এদিকে অস্ত্রের জবাবে অস্ত্র ঝলকে উঠে। মরে খুন হয় সাধারণ মানুষ। বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু পরিকল্পনা করে আরও মানুষ খুনের। মারুক। ফিলিস্তিনিদেরতো হারাবার কিছু নেই। শহীদ হবার জন্যই তাঁদের জন্ম হয়েছে। প্রতিবার ওরা মরে, আর আশেপাশের সবাই বলে "আলহামদুলিল্লাহ!"
ফিলিস্তিনে চালানো ইজরায়েলি আগ্রাসনের খবরও মাঝে মাঝে মিডিয়াতে আসে। মহা পবিত্র আল আকসা মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসলিমদের উপর বর্বরের মতন বেপরোয়া লাঠিচার্জ, ভাংচুর, গোলাগুলি এখন অনলাইনে ভাইরাল। প্রতি রমজানেই ওরা এই কাজটা করে, এইবার যেন আগের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তাই লেবানন, সিরিয়া ইত্যাদি থেকে ছুটে গেছে রকেট। অনেকেই উল্লাস করছেন। এখন জবাবে ইজরায়েল যে কি কি পদক্ষেপ নিবে সেটা কে বলতে পারে? মারবেতো সিভিলিয়ানদের। সেটাই ওদের বাহাদুরি।
কিছুদিন আগে এক ইজরায়েলি মহিলা বিচার দিচ্ছিলেন, ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলায় উনার ছেলের পরিবার নিরাপদে ছিল, কিন্তু রকেটের শব্দে বাড়ির অবলা কুকুরগুলো খুব ডিস্ট্রেস্ড হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনি ভদ্রমহিলা কথাটা শুনে বলেন, "তোমার ছেলের ভাগ্য ভাল ওর নিরাপত্তার জন্য কোথাও যাবার জায়গা আছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সেটা নেই। নয়টি পরিবার গতকালই পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আর তুমি তোমার কুকুরের মানসিক হাল নিয়ে চিন্তিত!"
মোট কথা, ইজরায়েল ফিলিস্তিনিদের মারবেই। রক্তের বদলা আরও বহু রকেট ছুটে যাবে ইজরায়েলের দিকে। ওদেরও কেউ কেউ মরবে। নাহলে কুকুরগুলি ডিস্ট্রেস্ড হবে।
এ সংঘাতের শেষ কোথায়? জানি না। তবে এইটা জানি যে সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।