ভাওয়াল রাজবাড়ী অবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের ভাওয়াল এস্টেটে, বর্তমানে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত একটি রাজবাড়ী। বিংশ শতকের প্রথম দিকে একটি বিখ্যাত মামলা হয়েছিল যা ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায়কে ঘিরে ও ভাওয়ালের সন্ন্যাসী মামলা নামে খ্যাত। এছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনীত সন্ন্যাসী রাজা নামের বাংলা ছবিটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল যার ঘটনা এই রাজবাড়িকেই ঘিরে। এই রাজবাড়ীর আওতায় ভাওয়াল এস্টেট প্রায় ৫৭৯ বর্গমাইল (১,৫০০ কিমি২) এলাকা জুড়ে ছিল যেখানে প্রায় ৫ লাখ প্রজা বাস করতো। ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায় ও আরো দুই ভাই মিলে এই জমিদারীর দেখাশোনা করতেন।
ভাওয়াল এস্টেট পরিধি এবং আয়ের দিক থেকে পূর্ব বাংলায় নওয়াব এস্টেটের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারি। ভাওয়াল জমিদার বংশের পূর্বপুরুষগণ মুন্সিগঞ্জের অন্তর্গত বজ্রযোগিনী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা যায়। এই বংশের জনৈক বলরাম সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে ভাওয়াল পরগনার জমিদার দৌলত গাজীর দীউয়ান হিসেবে কাজ করতেন। বলরাম এবং তার পুত্র শ্রীকৃষ্ণ তৎকালীন বাংলার দীউয়ান মুর্শিদকুলী খানের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন এবং কৌশলে গাজীদের বঞ্চিত করে জমিদারি হস্তগত করেন।
রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে মুর্শিদকুলী খান বহু মুসলমান জমিদারকে বিতাড়িত করে তদ্স্থলে হিন্দু জমিদার নিযুক্ত করেন। ভাওয়ালের গাজীগণ মুর্শিদকুলী খানের এই নীতির কারণে জমিদারি স্বত্ব হারান। ১৭০৪ সালে শ্রীকৃষ্ণকে ভাওয়ালের জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকে এই পরিবারটি ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে এই জমিদারির অধিকারী ছিলেন। শিকারী বেশে রমেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর পরবর্তী সময়ে ভাওয়াল পরিবার বহু ছোটোখাটো জমিদারি বা জমি ক্রয় করে একটি বিরাট জমিদারির মালিক হয়। ১৮৫১ সালে পরিবারটি নীলকর জেমস ওয়াইজ এর জমিদারি ক্রয় করে। এই ক্রয়ের মাধ্যমে পরিবারটি সম্পূর্ণ ভাওয়াল পরগনার মালিক হয়ে যায়। সরকারি রাজস্ব নথিপত্র থেকে এটি জানা যায় যে, ভাওয়ালের জমিদার ৪,৪৬,০০০ টাকা দিয়ে ওয়াইজের জমিদারি ক্রয় করেন, যা ছিল সে যুগের মূল্যমানের বিচারে বেশ বড় একটি অঙ্ক। ১৮৭৮ সালে এই পরিবারের জমিদার কালীনারায়ণ রায়চৌধুরী ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বংশানুক্রমিক ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন। কালীনারায়ণের পুত্র রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী এই জমিদারির আরও বিস্তৃতি ঘটান। এই সময়ই ভাওয়াল জমিদারি ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জ জেলায় বিস্তৃত হয়ে পড়ে এবং পূর্ব বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারিতে পরিবর্তিত হয়। উল্লেখ্য যে, যদিও ঢাকার নওয়াব এস্টেটটি পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলাসমূহে জমিদারি বিস্তৃত করেছিল এবং জমিদারির প্রশাসনিক কেন্দ্র ঢাকা শহরেই অবস্থিত ছিল, কিন্তু ঢাকা শহরের অংশবিশেষ ও আশপাশের প্রায় সকল জমির মালিক ছিলেন ভাওয়াল রাজা। ১৯১৭ সালে ভূমি জরিপ ও বন্দোবস্ত রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ভাওয়াল পরিবারটি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২২৭৪টি মৌজায় ৪,৫৯,১৬৩.৩ একর জমির মালিক ছিলেন। ১৯০৪ সালে জমিদারিটি সরকারকে ৮৩,০৫২ টাকা রাজস্ব হিসেবে প্রদান করে এবং সকল খরচ-খরচা বাদ দিয়ে ৪,৬২,০৯৬ টাকা নিট আয় করে।
সংগ্রহনেঃ উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২২