somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদিয়ানী থেকে ইসলামে (সিরিজ ২)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাদিয়ানী থেকে ইসলামে, সিরিজ ১ এর পর থেকে

কাদিয়ানী থেকে ইসলামে সিরিজ ১

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি কিন্তু নিজের আকীদা লুকাচ্ছেন! 'মির্যা গোলাম আহমদ-ই মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ' এরকমই বিশ্বাস আপনার! যা মুসলিম উম্মাহার জন্য বড়ই কষ্টের ও বেদনা-দায়ক! এমনকি মির্যা গোলাম আহমদ তিনি নিজেও 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' সম্বোধিত হতে পেরে খুব খুশি ছিল! আপনি ১৯০৬ সালের ২৫ শে অক্টোবরে 'কাদিয়ান' থেকে প্রকাশিত 'আখবারে বদর' পত্রিকা খুলে দেখুন সেখানে মির্যা সাহেবের জনৈক অনুসারী কাজী জহূর উদ্দিন আকমল কর্তৃক লেখিত একটি কাব্যে পরিস্কার উল্লেখ আছে -

"গোলাম আহমদ রাসূলুল্লাহ হে বরহক; শরফ ফা-ইয়া হে নূ-এ ইনস ও জান মে।"

"মুহাম্মদ ফের উতর আয়ে হেঁ হাম মে; আওর আগে চে হেঁ বাড়কর আপনি শান মে।"

"মুহাম্মদ দেখনে হোঁ ছিস নে আকমল; গোলাম আহমদ কো দেখহে কাদিয়ান মে"।

অর্থাৎ গোলাম আহমদ তিনি সত্যিকারের একজন রাসূলুল্লাহ। তিনি জ্বীন ও ইনসানের মাঝে মর্যাদা লাভ করেছেন। মুহাম্মাদ আমাদের মাঝে পুনরায় ফিরে এসেছেন; মান মর্যাদায় তিনি পূর্বের অপেক্ষা (বর্তমানে) অগ্রগামী। পরিপূর্ণ মুহাম্মদ যদি দেখতে চাও; তবে গোলাম আহমদকে দেখে নাও কাদিয়ানে।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কেউ একজন আবেগতাড়িত হয়ে লিখল, তাতে কার কী আসে যায়! আপনি কিভাবে বুঝলেন যে, এই কাব্য দ্বারা মির্যা সাহেব খুব খুশি হয়েছিলেন? আন্দাজে কথা বলবেন না!

প্রফেসর মতিন খালেদ : আমি সঠিক বলেছি। আপনি ১৯৪৪ সালের ২৩ শে আগস্ট এর 'আল-ফদ্বল' পত্রিকার ৪ নং পাতাটি খুলে দেখুন। সেখানে উক্ত কাব্যটিতে কাজী জহূর উদ্দিনকে মির্যা সাহেব 'জাজাকাল্লাহ' বলার কথাও ছাপিয়ে আসছে এবং পরিস্কার করে এটাও লিখা আছে যে,

وہ اس نظم کا ایک حصہ ہے جو حضرت مسیح موعود کے حضور میں پڑھی گئی اور خوشخط لکھے ہوئے قطعے کی صورت میں پیش کی گئی اور حضور اپنے ساتھ اندر لے گئے۔

অর্থাৎ "এটি ওই কাব্যের একটা অংশ যা মাসীহে মওঊদ (মির্যা গোলাম আহমদ)'র উপস্থিতিতে পড়া হয়েছিল। কাব্য আকারে লেখিত মানপত্রটি পেশ করা হলে হুজুর (মির্যা) সেটি সাথে নিয়ে (ঘরের) ভেতরে চলে যান।"

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি প্রমাণ দেখে অত্যন্ত লজ্জিত হন এবং ফ্যাকাসে মুখে নিরবতা পালন করেন)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা দয়া করে বলুন তো এই আয়াতগুলো দ্বারা কাকে বুঝাবে?

(১০৮:০১) 'আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করিয়াছি'। (তাযকিরা ২৩৫; চতুর্থ এডিশন)।

(৯৪:০৪) 'এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করিয়াছি।' (তাযকিরা ২৩৬; চতুর্থ এডিশন)।

(৯:৩৩) 'মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করিলেও অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করিবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁহার রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন।' (তাযকিরা ৫৩৮; চতুর্থ এডিশন)।

(৫৩:৩-৪) 'এবং সে মনগড়া কথাও বলেনা। ইহা তো ওহী, যাহা তাহার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। (তাযকিরা ৩২১; চতুর্থ এডিশন)।

(৫৩:৮-৯) 'অতঃপর সে তাহার নিকটবর্তী হইল, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাহাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রহিল অথবা উহারও কম। (তাযকিরা ৩২১; চতুর্থ এডিশন)।

(০৭:১৫৮) 'বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী।' (তাযকিরা ২৯২; চতুর্থ এডিশন)।

(৩৩:৪৬) '(হে নবী) আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁহার দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে (আপনাকে পাঠাইয়াছি)।' (তাযকিরা ৫৪১; চতুর্থ এডিশন)।

(১৭:০১) 'পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁহার বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করাইয়াছিলেন আল-মসজিদুল হারাম হইতে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত।' (তাযকিরা ৫৪৩ ও ৬৩; চতুর্থ এডিশন)।

(১১১:০১) 'ধ্বংস হউক আবু লাহাবের দুই হস্ত এবং ধ্বংস হউক সে নিজেও।' (তাযকিরা ৫৪৬; চতুর্থ এডিশন)।

(২১:১০৭) 'আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতস্বরূপই প্রেরণ করিয়াছি।' (তাযকিরা ৫৪৭; চতুর্থ এডিশন)। সংক্ষেপে কয়েকটা দিলাম।
____
টিকা:
اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ
فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ
اِنَّ شَانِئَکَ ہُوَ الۡاَبۡتَرُ
وَ رَفَعۡنَا لَکَ ذِکۡرَکَ
ہُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَہٗ بِالۡہُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡہِرَہٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّہٖ ۙ وَ لَوۡ کَرِہَ الۡمُشۡرِکُوۡنَ
وَ مَا یَنۡطِقُ عَنِ الۡہَوٰی
اِنۡ ہُوَ اِلَّا وَحۡیٌ یُّوۡحٰی
وَّ دَاعِیًا اِلَی اللّٰہِ بِاِذۡنِہٖ وَ سِرَاجًا مُّنِیۡرًا
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰی
فَکَانَ قَابَ قَوۡسَیۡنِ اَوۡ اَدۡنٰی
قُلۡ یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنِّیۡ رَسُوۡلُ اللّٰہِ اِلَیۡکُمۡ جَمِیۡعَۨا الَّذِیۡ لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ۪ فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہِ النَّبِیِّ الۡاُمِّیِّ الَّذِیۡ یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَ کَلِمٰتِہٖ وَ اتَّبِعُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تَہۡتَدُوۡنَ
وَّ دَاعِیًا اِلَی اللّٰہِ بِاِذۡنِہٖ وَ سِرَاجًا مُّنِیۡرًا
سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِہٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَہٗ لِنُرِیَہٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ
تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَہَبٍ وَّ تَبَّ
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ
_____
আপনার সামনেই 'তাযকিরা' বইটি রাখা আছে। একেকটা পৃষ্ঠা খুলে চেক করে দেখুন! অতপর বলুন, আয়াতগুলো কার উপর নাযিল হল? আয়াতগুলোতে কাকে সম্বোধন করল? যদি আয়াতগুলো দ্বারা মুহাম্মদে আরাবী (সাঃ)-ই উদ্দেশ্য হন তাহলে মির্যা গোলাম আহমদ কিজন্য দাবী করত যে, এগুলো তার (মির্যা) জন্য নাযিল হয়েছিল? নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ; যদি এমনি হয় তাহলে তো পরিস্কার কথা যে, তাকে আপনিও 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' মেনে নিয়েছেন! এখন এর কী হবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পুরোই লা-জবাব!)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব কিন্তু আপনা তথাকথিত ওহী আর ইলহাম সম্পর্কে বলেছেন "আমি খোদাতায়ালার কসম করে বলছি, আমি এসব ইলহামের উপর এমন ভাবে ঈমান রাখি যেভাবে পবিত্র কুরআন ও খোদাতায়ালার অন্যান্য কিতাবের উপর রাখি। আমি পবিত্র কুরআনকে যেমনিভাবে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্যভাবে খোদার বাণী বলে মনে করি, তেমনি এই বাণীকেও যা আমার উপর নাযিল হয়ে থাকে; খোদার বাণী বলেই স্বীকার করি।" (হাকিকাতুল ওহী ; রূহানী খাযায়েন ২২/২২০)।

তিনি এক জায়গায় আরো লিখেছেন "যেই ব্যক্তি খোদাতায়ালার উপর প্রতিক্ষণে মিথ্যারোপ করে আর নিজের কথাকে খোদার নাম ভেঙ্গে বলতে থাকে যে, এটি খোদারই ওহী যা আমার প্রতি করা হয়েছে; এমন বদজাত মানুষ তো কুকুর আর শুয়োর এবং বানরের চেয়েও নিকৃষ্ট। (বারাহীনে আহমদিয়া ৫/১২৬; রূহানী খাযায়েন ২১/২৯২)।

এখন একটু ভেবে দেখুন তো মির্যা সাহেব নিজেই নিজের কথায় কী হয়ে গেলেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (পুরোই লা-জবাব)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনার বিশ্বাস হল, পবিত্র কুরআন ইতিপূর্বে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠে গিয়েছিল! পরবর্তীতে নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ; এটি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী'র উপর দ্বিতীয়বার নাযিল হয়!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আপনি অসত্য বলছেন। এমন কোনো বিশ্বাসই আমি পোষণ করিনা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : যদি প্রমাণ করে দিতে পারি তখন আপনি কোন শাস্তিটা মাথাপেতে নেবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আপনি কি ঝগড়া করতে এলেন নাকি আলোচনা করতে এলেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি নিজেই তো আমার ব্যাপারে বলেছেন, আমি অসত্য বলছি! অথচ আমি যা বলছি তা একদম সত্য এবং প্রমাণিত। কুরআন শরিফ সম্পর্কে আপনাদের সেই আকিদা যা আমি বলছি।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কি আশ্চর্য! আমি বলছি এমন কোনো আকিদা (বিশ্বাস)ই আমি রাখিনা আর আপনি বারবার চ্যালেঞ্জ করে বলছেন, এসব আমার আকিদা!! আমার বিশ্বাস হচ্ছে, কুরআন মাজিদ শুধুই কেবল মুহাম্মদে আরাবী (সাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছে।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনার আকিদা যদিও বা তেমন নয়, কিন্তু এধরণের আকিদা যদি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর হয়ে থাকে আর আমি তা প্রমাণ করে দিতে পারি তখন কী হবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি অত্যধিক গোস্বা আর রাগান্বিত স্বরে বললেন) আগে দেখি, প্রমাণ করুন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : (আলোচনা সংক্ষেপ রাখতে শুধু মির্যাপুত্রের বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে বললেন) 'কালিমাতুল ফছল' বইয়ের ১৭৩ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, "আমরা বলে থাকি যে, কুরআন কোথায় বিদ্যমান? যদি কুরআন কোথাও বিদ্যমান থাকতই তবে কারো আগমন করার প্রয়োজন কী ছিল? সমস্যা তো এটাই যে, কুরআন দুনিয়া থেকে উঠে গিয়েছিল। তাই মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (মির্যা সাহেব)-কে বুরুজিভাবে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার প্রেরণ করে তাঁর উপর কুরআন শরিফ নাযিল করার প্রয়োজন দেখা দেয়! (নাউযুবিল্লাহ)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (প্রমাণ দেখে তিনি শিহরিত হয়ে উঠেন, মুখে জড়তা সৃষ্টি হয় এবং আমতাআমতা করেন)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেন! মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব কি কখনো নবী রাসূল বলে দাবী করেছিলেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মির্যা সাহেব হুজুরেপাক (সাঃ)-এর অত্যধিক অনুগত ছিলেন বলেই তাঁর আনুগত্যের বরকতে তিনি নবুওতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি এভাবেই নবুওত অর্জন করেছেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : তার মানে কি মির্যা সাহেবের নবুওত(!) খোদাপ্রদত্ত ছিলনা, বরং তার নিজেরই উপার্জিত ছিল, এমন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : জ্বী হ্যাঁ, উনার নবুওত নিজেরই উপার্জিত ছিল।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা সাহেবের বইতে তো লিখা আছে যে " নবুওত কী? নবুওত তো হল খোদাপ্রদত্ত একটা জিনিস! যদি (নবুওত) উপার্জনের মাধ্যমে হত তাহলে সব মানুষই নবী হয়ে যেত!" (মালফূজাত ১/২৩৯; নতুন এডিশন)।

তিনি আরো লিখেছেন "এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, 'মুহাদ্দাসিয়ত' কেবলই খোদাপ্রদত্ত হয়ে থাকে, নিজের উপার্জন দ্বারা হতে পারেনা; যেমনিভাবে নবুওত উপার্জন দ্বারা অর্জিত হতে পারে না!" (হামামাতুল বুশরা ১৩৫; রূহানী খাযায়েন ৭/৩০১)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (সীমাহীন লজ্জিত হলেন।)

প্রফেসর মতিন খালেদ : কোনো মদখোর, হারামখোর, চোর যেনাকার কখনো কি নবুওত পেতে পারে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (অত্যধিক হয়রান হয়ে গেলেন এবং আশ্চর্যের সাথে বললেন) আরে আরে এসব কী বলছেন! এটা কিভাবে সম্ভব??

প্রফেসর মতিন খালেদ : কেন! মির্যা সাহেবের বইতে তো এমনই লিখা আছে!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মিথ্যা কথা। মির্যা সাহেব এমন কথা কল্পনাতেও আনতে পারেন না!

প্রফেসর মতিন খালেদ : বিশ্বাস না হয় তো 'তিরয়াকুল কুলূব' এর ১৫২ নং পৃষ্ঠাটা খুলে দেখুন। রূহানী খাযায়েন এর ১৫ নং খন্ডের ২৭৯-৮০ নং পৃষ্ঠাও দেখা যেতে পারে। সেখানে পরিস্কার লিখা আছে, কোনো একজন ছোটলোক মেথর সে ত্রিশ-চল্লিশ বছর যাবত কোনো একটি গ্রামে মল মুত্রসহ নালা-নর্দমা পরিস্কার করার কামলা ঘাটল। এরই মধ্যে দু' একবার চুরি করে ধরাও খেল। কয়েক বার যেনা ব্যভিচার করে ধরা খেয়ে অপদস্থও হল। কয়েক বছর জেলও খাটল। কয়েকবার খারাপ কাজ করার দায়ে তাকে জুতাপিটা করাও হল। আল্লাহর ফজলে সম্ভব যে, সেই লোক নবী এবং রাসূল হতে পারে। (সংক্ষেপে)।

সত্য বলতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেও এমন চরিত্রের ছিলেন। আফসোস! এমন অসৎ চরিত্রের মানুষটি 'নবুওত উপার্জন করা'র দাবী করতেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, মির্যা সাহেবের বইতে এমন কথাও লিখা থাকবে। চুপচাপ বসে থাকলেন)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন! মুহাম্মদে আরাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ আনুগত্য দ্বারা কোনো মুসলমান জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারে কি?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : জ্বী হ্যাঁ, মুক্তি পেতে পারে!

প্রফেসর মতিন খালেদ : যদি তাই হয় তাহলে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মানার দরকার কী?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (লা জবাব)। ইত্যবসরে তার পক্ষের দ্বিতীয়জন বললেন, মির্যা সাহেবকে না মানলে হুজুর (সাঃ) এর আনুগত্য দ্বারাও মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়!

প্রফেসর মতিন খালেদ : হুজুর (সাঃ) এর আনুগত্য দ্বারা একজন মুসলমান যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি না পেতে পারে তাহলে তাঁরই আনুগত্য দ্বারা 'নবুওত' পেতে পারে কিভাবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির ও তার সঙ্গী : (দু' জনই লা-জবাব)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা এমন কেউ কি আছেন যে রাসূল (সাঃ) এর পূর্ণ আনুগত্যের ক্ষেত্রে তাঁর সাহাবীগণের চেয়েও বেশি অগ্রগামী? অধিকন্তু আল্লাহপাক সাহাবায়ে কেরামের প্রতি দুনিয়াতেই আপনা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন 'রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদ্বূ আনহু' (তথা তিনি [আল্লাহ] তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট)। এমতাবস্থায় এমন সাধ্য আছে কার যে রাসূলের আনুগত্যে তরক্কি (উন্নতি) করার ক্ষেত্রে সাহাবীদেরও পেছনে ফেলে দিতে পারে!? হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যদি আমার পরে কেউ নবী হত তাহলে উমর-ই হত। (তিরমিযী শরীফ)। এতদসত্ত্বেও সাহাবীদের কেউ কি বলেছিলেন যে, নবীকরীম (সাঃ)-এর পূর্ণ আনুগত্য দ্বারা তাদেরও একেকজন নবীজী'র পূর্ণ প্রতিচ্ছায়ায় পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (অনবরত শুনেই যাচ্ছেন, প্রতিউত্তর করার মুরোদ হল না)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা সাহেবের মেঝো ছেলে মির্যা বশির আহমদ এম.এ তার 'কালিমাতুল ফছল' এর ১১৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন "সুতরাং এজন্যই উম্মতে মুহাম্মদিয়ার মধ্যে শুধু একজনই নবুওতের মর্যাদা পেয়েছেন যা অন্যদের জুটেনি। কেননা সবার কাজ নয় যে, এতটা তরক্কি করতে পারে! তবে নিঃসন্দেহে এই উম্মতের মধ্যে এমনও অনেক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন যারা - 'উলামায়ু উম্মতি কা আম্বিয়ায়ি বনী ইসরাঈল' এর পর্যায়ভুক্ত। তবে কিন্তু তাদের মধ্যে মাসীহে মওঊদ (মির্যা গোলাম) ছাড়া অন্যদের কেউই নবীকরীম (সাঃ)-এর আনুগত্যে এমন কোনো দৃষ্টান্ত রাখেননি যার ফলে (তাদেরকে নবীজীর) পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছায়া বলা যায়! আর তাই 'নবী' সম্বোধনের জন্য শুধুমাত্র মাসীহে মওঊদ (মির্যা)কেই খাস করা হয়েছে।" তো এখন এর কী হবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো জবাব দিলেন না)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : অপ্রিয় সত্য কথা হল, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী হুজুরেপাক (সাঃ) এর আনুগত্য করেনি।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কিভাবে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব লিখেছেন "আমার ধর্ম (রায়) সেটাই যা আমি বার বার প্রকাশ করেছি যে, ইসলামের দুটি অংশ রয়েছে। (এক) খোদাতায়ালার আনুগত্য করা। (দুই) এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করা যিনি (আমাদের) নিরাপত্তা দিয়েছেন এবং জালেমদের (বিরুধিদের) হাত থেকে বাঁচাতে ছায়া দান করেছেন। সেই হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।" (শাহাদাতুল কুরআন ৮৪; রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)। মির্যা সাহেবের এই আকীদায় হুজুরেপাক (সাঃ) এর প্রতি আনুগত্য কোথায়?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (খামুশ হয়ে যান)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব জীবনে কখনো ইসলামের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ-জিহাদও করেনি। জীবনে হজ্বও করেনি। মক্কা মদিনায় হাজির হওয়া থেকেও বঞ্চিত ছিল। যাকাতও আদায় করত না। রোজাও রাখত না। মুখে পান নিয়ে নামায পড়ত। শরাব (মদ) পান করত। আফিম সেবন করত। যেনা ব্যভিচার করত। থিয়েটার দেখত এবং পর-নারী দিয়ে শরীর মেসেজ করাত। ইত্যাদি।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (অগ্নিশর্মা হয়ে ও উত্তপ্তকন্ঠে বললেন) আপনি মিথ্যা বলছেন। লানতুল্লাহে আলাল কাযেবীন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আমি আমার উল্লিখিত অভিযোগ প্রমাণ করতে সুস্পষ্ট ডকুমেন্ট পেশ করতে প্রস্তুত আছি।


কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : ঠিক আছে প্রমাণ পেশ করুন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : ওকে থ্যাংকস! তাহলে বলুন তো মির্যা সাহেব কি হজ্ব করেছেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : হজ্ব কি যার তার উপর ফরজ? টাকা পয়সা থাকলেই তো তিনি হজ্ব করবেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : তার টাকা পয়সা ছিলনা—এটা মিথ্যা কথা। আপনি তার লেখিত 'হাকিকাতুল ওহী' এর ২১২ নং পৃষ্ঠা খুলে দেখুন, মির্যা সাহেব স্বীয় ভক্ত ও অনুসারীদের কাছ থেকে হাদিয়া (উপঢৌকন) হিসেবে হাজার হাজার রূপী গ্রহণকরার কথা উল্লেখ আছে। তিনি পরিস্কার লিখেছেন

اسی نے ایسی میرے دستگیری کی کہ میں یقینا کہہ سکتا ہوں کہ اب تک تین لاکہ کے قریب روپیہ آچکا ہے اور شاید اس سے زیادہ ہو۔

অর্থাৎ তিনি [খোদাতায়ালা] আমাকে এমনভাবে সাহায্য করেছেন ফলে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, এখন আমার নিকট তিন লক্ষ রুপির কাছাকাছি কিবা তার চেয়েও বেশি রুপি এসে পৌছে গেছে।" (আরো দেখুন রূহানী খাযায়েন ২২/২২১)।

আপনি তার 'মাজমূ'আয়ে ইশতিহারাত' বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডের ২৫১ নং পৃষ্ঠাটিও খুলে দেখুন, তিনি নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে সেই সময়কার বিরুধিদের সাথে দশ হাজার রুপির বাজিও ধরেন। এমনকি অগ্রীম তিন হাজার রুপি জমা দেবেন বলে ঘোষণাও দেন। উল্লেখ্য সেই সময় ১৬ কিলোগ্রাম গরুমাংস মাত্র ১ রুপিতে পাওয়া যেত। (দেখুন, মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ রচিত সীরাতে মাহদী ১/১৮২ দ্রষ্টব্য)। এবার অনুমান করতে পারেন, তখন মির্যা সাহেব ব্যক্তিগতভাবে শুধুমাত্র পরের হাদিয়ার টাকায় কী পরিমাণে সম্পদশালী হয়েছিলেন! সংক্ষেপে।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : ইসলামে জান বাঁচানো ফরজ। মির্যা সাহেব জীবন-নাশের আশংকা বোধ করে হজ্ব করেননি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা সাহেবের বইতে লিখা আছে, আল্লাহতায়ালা তার উপর নাকি ইলহাম করেন - 'তুমি ডরাইও না, তুমিই বিজয়ী হবে। খোদা প্রতিটা ময়দানে তোমার সাহায্য করবেন।' (তাযকিরা ২৯৭; চতুর্থ এডিশন)। এখন কথা হল, মির্যা সাহেবের প্রতি এরকম ইলহাম হওয়া সত্ত্বেও কিজন্য তিনি জানের ভয় করবেন? নাকি তার নিজেরও নিজের ইলহামের উপর আস্থা ছিলনা?

আপনি তার রচিত 'বারাহিনে আহমদিয়া' এর ৫নং খন্ডের ১৫৩ নং পৃষ্ঠা খুলে দেখুন, তিনি লিখেছেন "আমি এমন কেউ নই যাকে মৃত্যুও খোদাতায়ালার পথ থেকে সরাতে পারে! যদিও আমি খোদার পথে ক্ষতবিক্ষত হই কিবা জবেহ হয়ে যাই!"

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কথার মোড় ঘুরে ফেললেন এবং বললেন) মির্যা সাহেব শারিরীকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এটা আপনার অসত্য কথা। উনি যদি সুস্থই না থাকবেন তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে কিভাবে করলেন? তিনি জীবনের শেষপ্রান্তে এসে মির্যা আহমদ বেগ এর কন্যা মুহাম্মদী বেগমের প্রতিও তৃতীয়তম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরপরও কি বলবেন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ?

আপনি 'সীরাতে মাহদী' বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডের ১৩২ নং পৃষ্ঠা খুলে দেখুন, মির্যা সাহেবের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় মুরগী, খাসির মাংস, কাবাব, কোর্মা পোলাও, ডিম ইত্যাদি থাকত। তিনি দুধ, মাখন আর নানা রকম ফলফলাদি অধিক পরিমাণে খেতেন। সংক্ষেপে।

সে যাইহোক, তিনি অসুস্থতার কারণে হজ্ব করেননি, বলা সর্বতোভাবে প্রত্যাখ্যাত?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো উত্তর নেই)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তারপর মির্যা সাহেব একইভাবে যাকাতও দেননি, ইতিকাফও করেননি ইত্যাদি।একথা উল্লেখ আছে তারই পুত্রধন তথাকথিত কমরুল আম্বিয়া মির্যা বশির আহমদ এম.এ রচিত 'সীরাতে মাহদী' বইয়ের ৩নং খন্ডের ১১৯ নং পৃষ্ঠায়।

একইভাবে মির্যা সাহেব রমজান মাসে ঠিকঠাকভাবে রোজাগুলোও রাখেননি। এর কারণ হিসেবে আপনা পুত্রধন বশির আহমদ এম.এ স্বীয় মায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন 'একদা এক রমজানে মসীহে মওঊদ অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানীর দওর (Head circling and diarrhea) আরম্ভ হলে তিনি একটা রোজাও রাখেননি। তারপরের বছরও প্রায় একই অবস্থা; মাত্র ৮ বা ৯টি রাখলেন। তারপরের বছরেও তাই। মাত্র ১৩টি রাখলেন। আবার মৃত্যুর আগে লাগাতার দু' তিন বছর তিনি কোনো রোজাই রাখেননি; তা-ও কিনা তার শারীরিক দূর্বলতার কারণে! কিন্তু বিপত্তি বাধে অন্য জায়গায়। তিনি পরবর্তীতে রোজাগুলোর কাজা করেননি বরং ফেদিয়া দিয়েই পর্ব শেষ করেন। ভাবতে অবাক লাগে, একজন নবুওতের দাবিদার ও একই সাথে হুজুরেপাক (সাঃ) এর আনুগত্যে তরক্কি (উন্নতি) করার দাবিদার রমজানের রোজাগুলো পরবর্তীতে কাজা (পূর্ণ) করলেন না! সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র ফেদিয়া দিলেন! সারসংক্ষেপ। (সীরাতে মাহদী ২/৬৫-৬৬)।

আপনি জেনে অবাক হবেন, মির্যার পুত্রধন বশির আহমদ সাহেব তিনি ডাক্তার মীর মুহাম্মদ ইসমাঈল এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, মির্যা সাহেব কখনো কখনো মুখে পান রেখে নামায পড়তেন। (সীরাতে মাহদী ৩/১০৩ দ্রষ্টব্য)। এখন আমার প্রশ্ন হল, হজ্ব না করা, ইতিকাফ না করা, রোজাগুলো পরবর্তীতে কাজা না করা, মুখে পান রেখে নামায পড়া ইত্যাদি এসবের কোনো একটাও কি হুজুরেপাক (সাঃ)-এর আনুগত্যের মধ্যে পড়ে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো জবাব নেই)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব এলকোহল নিতেন, টনিক ওয়াইন (শক্তিবর্ধক মদ) এবং আফিম কিছুই বাদ দেননি; সব ঘাটেই মুখ দিয়েছেন।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (শুনামাত্র চোখ কপালে তুলে ফেলেন এবং বললেন) কিসব উদ্ভট কথাবার্তা বলছেন! আপনার কলিজায় কি আল্লাহর ভয় নেই? এত জঘন্য মিথ্যা কিভাবে বলতে পারেন?

প্রফেসর মতিন খালেদ : মোটেও মিথ্যা বলছিনা। 'খতূতে ইমাম ব-নামে গোলাম' এর ৫ নং পৃষ্ঠা খুলে দেখুন, মির্যা সাহেব তদীয় শিষ্য হাকিম মুহাম্মদ হুসাইন কুরাইশি'র নিকট চিঠিযোগে লিখেছিলেন

اس وقت میاں یار محمد بھیجا جاتا ہے ۔ آپ اشیاء خریدنی خود خرید دیں اور ایک بوتل ٹانک دائن کی پلومر کی دکان سے خرید دیں مگر ٹانک دائن چاہیے۔ اس کی لحاظ رہے۔ باقی خیریت ہے۔

অর্থাৎ 'আমি এখন মিয়া ইয়ার মুহাম্মদকে পাঠাচ্ছি। আপনি নিজেই সবকিছু কিনে দেবেন এবং পলিমারের দোকান থেকে এক বোতল টনিক মদ (Tonic wine)ও কিনে দেবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, টনিক মদ-ই হতে হবে। ওকে ফাইন।' উল্লেখ্য, হাকিম মুহাম্মদ হুসাইন কুরাইশি সাহেব মির্যা সাহেবের শিষ্য এবং লাহোরের 'রফিক আস সিহাত দাওয়াখানা' এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন। মূলত মির্যা সাহেবকে টনিক-ওয়াইন এর বোতলগুলো তিনিই সাপ্লাই দিতেন!

উল্লেখ্য Tonic wine সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন, সওদায়ে মির্যা ৩৯; দ্বিতীয় এডিশন (টীকা) লিখক, হাকিম মুহাম্মদ আলী সাহেব; অধ্যক্ষ, তিব্বিয়া কলেজ, অমৃতস্বর পাকিস্তান।

মির্যা সাহেব টনিক ওয়াইন ছাড়াও Zad Jaam Ishq (যৌন উত্তেজক মেডিসিন) ব্যবহার করতেন যার একটি উপাদান ছিল 'আফিম' এর মত নেশাদ্রব্য।

কিন্তু প্রশ্ন হল মির্যা সাহেব কিজন্য এমন যৌন উত্তেজক ঔষধ ব্যবহার করতেন? তার উত্তর পাওয়া যায় তারই খাদেম হাফিয হামেদ আলী সাহেবের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেছেন, মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেন তখন তিনি ইতিপূর্বে দীর্ঘ এক বছর একাকিত্ব জীবন-যাপন করায় এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করায় নিজের মধ্যে (যৌন) দুর্বলতা উপলব্ধি করেন। তাই তার প্রতি 'Zad Jaam Ishq' নামীয় মেডিসিন সেবন করার ইলহাম হয়। ফলে তিনি সেটি সেবন করতে থাকেন। এই কথাগুলো লিখা আছে মির্যার পুত্রধন বশির আহমদ এম.এ রচিত সীরাতে মাহদী এর তৃতীয় খন্ডের ৫০-৫১ নং পৃষ্ঠায়।

এখানে বড় আপত্তির বিষয় হল, তিনি সেটিকে জায়েজ করার জন্য 'ইলহামি' (খোদা নির্দেশিত) বস্তু বলে চালিয়ে দেন। অথচ এই 'টনিক ওয়াইন' লাহোরের পলিমারের দোকানে পাওয়া যায়—এমন তথ্য তাকে প্রথম দিয়েছিলেন ডাক্তার আজীজ আহমদ। (সওদায়ে মির্যা ৩৯ দ্রষ্টব্য)। তার আগে তিনি এর কিছুই জানতেন না। আর এখন তার দাবী, এটি তার ইলহামি মেডিসিন! এ কেমন মশকরা কথাবার্তা!

এখানে উল্লেখ্য, Zad Jaam Ishq নামীয় প্রসিদ্ধ Sexual arousal মেডিসিনটির উপাদানগুলোর মধ্যে - জাফরান, দারুচিনি, জায়ফল, আফিম, মিশক, অকরকুরহা, শংগরফ ও করংফল অন্যতম। এবার দেখুন এই উপাদানগুলোতে 'আফিম'ও আছে! এখন এর কী হবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : তিনি ঔষধ হিসেবে তা সেবন করতেন। এতে দোষের কী আছে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : সে যাইহোক, অন্ততপক্ষে এটুকু তো প্রমাণিত হল যে, হুজুরেপাক (সাঃ) এর পূর্ণ আনুগত্যের দাবিদার মানুষটি টনিক ওয়াইন থেকে শুরু করে শেষমেশ আফিমও তার বাদ গেল না! আরেকটা কথা, আফিম না হয় রোগের জন্য ছিল, কিন্তু বোতলে বোতলে তার টনিক ওয়াইনের কী হবে? হয়ত বা এখানেও তাবীল নিয়ে হাজির হয়ে যাবেন, কিন্তু ভুলে গেলে হবেনা যে, সব ক্ষেত্রে তাবীল সবাইকে আকর্ষণ করেনা।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আর কোনো উত্তর নেই)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এটাও সত্য যে, মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব একজন জেনাকার ছিলেন। আপনি বিশ্বাস করেন বা না করেন, তাতে কিছুই যায় আসেনা! যেহেতু তারই একজন শিষ্যের জবানবন্দিতে তার সম্পর্কে জেনা- ব্যভিচারের অভিযোগ পাওয়া যায়।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মিথ্যা কথা! আপনি কিন্তু মাসীহ মওঊদ ইমাম মাহদীর উপর অপবাদ রটিয়ে নিজের ধ্বংস ঢেকে আনছেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : প্রথম কথা হল, আপনি সাত অন্ধের হাতি দেখা মানুষগুলোর মত যাচ্ছেতাই বলতে পারেন, আমি নিষেধ করব না; যেহেতু মির্যা সাহেব না মাসীহ মওঊদ ছিলেন আর না ইমাম মাহদী ছিলেন! বরং ইতিহাস বলছে তিনি বিকৃত রুচিসম্পন্ন একজন জেনাকার ছিলেন। আমি এখনি তা প্রমাণ করে দিচ্ছি।

কাদিয়ানের একটি দৈনিক সংবাদপত্র 'রোজানা আল-ফজল (روزانہ الفضل)'। পত্রিকাটি মির্যা কাদিয়ানীরই ভাবাদর্শে প্রতিষ্ঠিত ও তারই জীবদ্দশা থেকে প্রচারিত। এটি এখনও প্রকাশমান। তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এর অতীত আর বর্তমান প্রায় সব সংখ্যার পিডিএফ সংরক্ষিত আছে।

মির্যা সাহেবের হাতে বাইয়াতপ্রাপ্ত জনৈক অনুসারী তদানিন্তন কাদিয়ানী খলিফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের উপর জেনা-বলাৎকার এর অভিযোগ আনেন। তিনি এই মর্মে একটি চিঠিও লিখেন। মির্যা বশির উদ্দিন পত্রটি কাদিয়ানে তাদের জুমা মসজিদে সবার সম্মুখে পাঠ করে শুনিয়ে দেন। পরের দিন তা হুবহু 'আল ফদ্বল' পত্রিকায় ছেপে আসে।

অভিযোগকারী তার চিঠিতে মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি পূর্ণ সম্মান বজায় রাখেন এবং মির্যাকে 'মাসীহে মওঊদ ওলীউল্লাহ থে'—এইরূপ শব্দচয়নে উল্লেখ করেন। যতদূর জানা যায়, সেই লোক আমৃত্যু কাদিয়ানি-ই ছিলেন। বড়জোর কাদিয়ানিদের দ্বিতীয় গ্রুপ 'লাহোরি জামাত' এর সদস্য ছিলেন। ফলে মির্যা বশিরের পত্রিকা 'আল-ফদ্বল' তাকে ব্যঙ্গার্থে 'পয়গামী' শব্দে সম্বোধন করেন। (দৈনিক আল-ফদ্বল, প্রকাশকাল ১৯৩৮ সালের ৩১ শে আগস্ট)।

পত্রিকাটির এডিটরের সাফাই-জবাবকে বর্তমানের আহমদিরা মির্যা বশিরের নির্দোষিতার পক্ষে দলিল বানিয়ে থাকেন আর বলতে চান যে, নিজেদের পত্রিকায় কি কখনো এমন নিউজ কল্পনা করা যায়?

কিন্তু আপনাদের জন্য দুঃসংবাদ হল, মির্যার কথিত সাহাবী (?) তার চিঠিতে মূলত মির্যাপুত্রের স্বভাব চরিত্রের উপরই জোর আপত্তি তুলতে চেয়েছিলেন। যদিও মির্যা সাহেবেরটাও কাকতালীয়ভাবে সামনে চলে আসে!

সে যাইহোক, অভিযোগকারী নিজেই পিতা-পুত্রের চরিত্র নিয়ে স্বীকারোক্তি দিয়ে যা বুঝাতে চেয়েছেন তার সার-নির্যাস হচ্ছে দুই মির্যার চরিত্রহীনতা সম্পর্কে তারাও বেশ খবরদার ছিলেন। যেজন্য তিনি বলতে পেরেছেন "মসীহ মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)'র উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। খেয়াল করুন, অভিযোগকারী মির্যায়ী সাহাবী(?)'র পত্রের ভাষায় : کیونکہ وہ کبھی کبھی زنا کرتے تھے অর্থাৎ কেননা তিনি (মির্যা সাহেব) জেনা করতেন কখনো কখনো। কিন্তু আমার অভিযোগ হচ্ছে, বর্তমান খলিফা মির্যা বশির উদ্দীনের উপর। কারন তিনি প্রতিদিন জেনা করে থাকেন...।"

অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা বশির উদ্দীন সম্পর্কে শীর্ষস্থানীয় সব আহমদীই ভাল করে জানেন যে, তিনি স্বভাবত লাম্পট্য চরিত্রের ছিলেন। একজন সাবেক আহমদী ও বিশিষ্ট লেখক শফিক মির্যা রচিত "শাহরে সদূম" বইয়ের ৯৭-৯৮ নং পৃষ্ঠা দেখে নিন।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (হ্যাঁ বা না, কোনো উত্তর নেই)।


প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব পর-নারীর সাথে মেলামেশা করতেন, তাদের হাত স্পর্শ করতেন এবং তাদের দ্বারা শারীরিক সেবা নিতেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কী প্রমাণ আছে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যার পুত্রধন বশির আহমদ এম.এ রচিত 'সীরাতে মাহদী' এর তৃতীয় খন্ডের ২১০ নং পৃষ্ঠা খুলে দেখুন। 'মোসাম্মৎ ভানু' নামের জনৈক মহিলা মির্যা সাহেবের সেবিকা ছিলেন। এক রাতে তিনি এক শীত মৌসুমে মির্যা সাহেবের পা টিপতে গিয়ে অকস্মাৎ খাটের কাষ্ঠ টিপতে শুরু করেন। তখন মির্যা সাহেব প্রিয়তমা সেবিকা মোসাম্মৎ ভানুকে উদ্দেশ্য করে রসিকতার ছলে বললেন, ভানু! আজ খুব ঠান্ডা তাই না! ভানু বেগম উত্তরে বললেন, তাই তো ঠান্ডায় আপনার পা খাটের কাষ্টের ন্যায় শক্ত হয়ে আছে!! সংক্ষেপে।

মির্যা সাহেবের বাসায় 'মোসাম্মৎ ভানু' সাহেবাদের সংখ্যাও কম ছিলনা। মির্যার খাদেম হাফিয হামেদ আলীর স্ত্রী 'মায়ী রসুল বিবি' আর বাবু শাহদীন এর স্ত্রী উভয়ে মির্যা সাহেবকে সারারাত পাহারা দিতেন। সাধারণভাবে আরো যেসব মহিলা তাকে পাহারা দিতেন তাদের মধ্যে গুজরান ওয়ালা'র অধিবাসী মুহাম্মদ দীন -এর স্ত্রী 'মায়ী ফাজ্জু' এবং শাহ আব্দুস সাত্তার এর বিবাহিতা কন্যা 'যয়নব বেগম' প্রমুখ অন্যতম । (দেখুন, সীরাতে মাহদী ৩/২১৩)।

মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ তিনি তার পিতা (মির্যা কাদিয়ানী)'র জীবনীগ্রন্থে আরো লিখেছেন : ডাক্টার সাইয়েদ আব্দুস সাত্তার শাহ সাহেব আমাকে (বশির আহমদ) লিখনীর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন যে, আমাকে (শাহ সাহেব) আমার মেয়ে যয়নব বেগম বলেছেন, আমি তিন মাসের কাছাকাছি হযরত আকদাস (মির্যা কাদিয়ানী)'র খেদমত তথা সেবায় ছিলাম। আমি গরমের মধ্যে তাকে পাখা ইত্যাদি দ্বারা বাতাস করেছিলাম। অধিকাংশ সময় অর্ধ রাত্রি কিবা তারও বেশি সময় পর্যন্ত আমাকে বাতাস করার মধ্য দিয়ে (রাত্রি) অতিবাহিত করতে হত। তখন আমার কোনো রকম দুর্বলতা আর কষ্ট অনুভব হত না, বরং আনন্দে হৃদয় ভরে যেত। দু'বার এমন হয়েছে যে, এশার সালাতের সময় থেকে ভোর ফজর সালাত পর্যন্ত পুরো রাত্রি (তার) সেবা করার সুযোগ হয়েছিল। তবুও সেই মুহূর্তে আমার না নিদ্রা এল আর না তন্দ্র অনুভূত হল; বরং খুশি আর আনন্দ-ই লেগেছিল। তেমনিভাবে যখন (মির্যা সাহেবের আরেক পুত্র) মুবারক আহমদ অসুস্থ হল তখনও আমাকেই তার সেবা শুশ্রূষা করার মধ্য দিয়ে পুরো রাত্র পার করতে হয়েছিল। তখন হুজুর (মির্যা কাদিয়ানী) বললেন—যয়নব, এই পরিমাণে আমার সেবা করতে থাকে যে, ফলে (মাঝেমধ্যে আমার) শরম করত। (যয়নব বলেন) হুজুর (মির্যা) কয়েকবার আপনা তবররক (বিশেষ কোনো কিছু) আমাকে প্রদান করেছিলেন। (সীরাতে মাহদী ৩/৭৯০)।

আগেকার যুগে রাজাদের মনোরঞ্জণের জন্য রাজমহলে মেয়েদের রক্ষিতা হিসেবে রাখা হত। মির্যা গোলাম আহমদ এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। একদা মির্যা সাহেবের শিষ্য মিয়া জফর আহমদ এর স্ত্রী মারা যায়। তখন তিনি দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজতে শুরু করলে মির্যা সাহেব তাকে বললেন, আমার ঘরে দুটো মেয়ে আছে। আমি তাদের নিয়ে আসছি। তোমার যাকে পছন্দ বিয়ে করতে পার। (দেখুন, সীরাতে মাহদী ১/২৫৯)।

অন্যের স্ত্রী কিবা প্রাপ্তবয়স্ক তরুণীদের সাথে মির্যা সাহেবের এভাবে অবাধ-মেলামেশাকরা কি জায়েজ? এর উত্তরে কাদিয়ানী ঘরানার নিউজপেপার 'আল-হিকাম' (খন্ড ১১, নং ১৩; তাং ১৭ ই এপ্রিল ১৯০৭ ইং) দেখুন! তাতে লিখা আছে

وہ نبی معصوم ہیں ان سے مس کرنا اور اختلاط منع نہیں بلکہ موجب رحمت و برکت ہے۔

অর্থাৎ 'তিনি (মির্যা) তো নিস্পাপ একজন নবী। উনার পক্ষে (কাউকে) স্পর্শ করা এবং অবাধ-মেলামেশা নিষিদ্ধ নয়, বরং (তা) দয়া এবং বরকতের কারণ।' কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব নিজের ব্যাপারে ভিন্ন কথা লিখে গেছেন, তার বইতে লিখা আছে, 'আফসোস! বাটালভী সাহেব এটা বুঝল না যে, নবীগণের পর—না আমাকে আর না অন্য কাউকে নিস্পাপ হওয়ার দাবী রয়েছে।' (রূহানী খাযায়েন ৭/৪৭ দ্রষ্টব্য)। মির্যা সাহেব থেকে পরিস্কার প্রমাণিত যে, তিনি নিজেও নিজেকে নিস্পাপ ও পাপমুক্ত দাবী করতেন না!

এখন আপনি-ই বলুন, হুজুরেপাক (সাঃ) এর পূর্ণ আনুগত্যের দাবিদার মানুষটির চরিত্রের এই দিকগুলোও কি ইত্তিবায়ে রাসূল? লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (পুরোই লা-জবাব)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা! সিনেমা কিবা থিয়েটার দেখা কি জায়েজ (বৈধ)?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : এটা জায়েজ হয় কিভাবে? এখানে তো দুনিয়ার সব নোংরামি, অনর্থক কার্যকলাপ আর নাচগান! কোনো ভদ্র মানুষের পক্ষেও এগুলো দেখা সম্ভব না!

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব এগুলোর কিছুই বাদ দেননি। থিয়েটার, সিনেমা সব দেখতেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : সব মিথ্যা। এর চেয়ে নিকৃষ্ট অপবাদ আর হতে পারে না!

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেবের একজন খাস শিষ্য মুফতি(!) মুহাম্মদ সাদিক সাহেবের লেখিত বই 'যিকরে হাবীব' এর ১৮ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, মির্যা সাহেব (কোনো এক ঘটনার প্রেক্ষিতে) বলেছেন

ایک دفعہ ہم بہی گئے تہے تاکہ معلوم ہو کہ وہاں کیا ہوتا ہے۔

অর্থাৎ 'সিনেমা দেখতে একবার আমিও গিয়েছিলাম। যাতে জানতে পারি যে, সেখানে কী চলে!'

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (সীমাহীন লজ্জিত হলেন, আর কোনো সদুত্তর করলেন না)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেবের পুত্রধন মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের জীবনও স্বীয় পিতার ন্যায় রঙিন জীবন ছিল। তিনিও জীবনে থিয়েটার, সিনেমা আর ফিল্ম ইত্যাদি কোনো কিছুরই বাদ দেননি। এবার তার রঙিন জীবন সম্পর্কে শুনুন!

মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ একবার পাকিস্তানের সাবেক বিদেশ মন্ত্রী স্যার জাফরুল্লাহ'র সাথে ইউরোপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি স্যার জাফরুল্লাহকে যা বলেছিলেন তা এই যে,

"যখন আমি ব্রিটেন গেলাম তখন বিশেষ করে ইচ্ছে ছিল ইউরোপিয়ান সমাজের বিচ্যুতিগুলো দেখব। কিন্তু ব্রিটেনে থাকাকালীন সে সুযোগ হয়নি। ফেরার সময় আমরা যখন ফ্রান্স গেলাম তখন চৌধুরী জাফরুল্লাহ সাহেবকে বললাম, আমাকে এমন একটি জায়গা দেখান যেখানে ইউরোপিয়ান সমাজকে উলঙ্গ দেখা যাবে। সেও ফ্রান্স সম্পর্কে অবগত ছিলনা। তারপর সে আমাকে একটি সিনেমা হলে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে সে বলল, এটা সমাজের উঁচু শ্রেণীর বসবাস। এটা দেখে আপনি তাদের অবস্থা অনুমান করতে পারবেন। আমার দৃষ্টি দুর্বল হওয়ায় আমি দূরের বস্তু দেখতে পাচ্ছিলাম না। (তাই আরো কাছে) গিয়ে দেখি, অসংখ্য মহিলা বসা আছে। আমি (স্যারকে) বললাম, এরা কি উলঙ্গ? তিনি বললেন, উলঙ্গ না; কাপড়পরা! (এবার মির্যার পুত্রধন বললেন) কিন্তু তারপরেও তাদের উলঙ্গ মনে হল! আচ্ছা ওটাও তাহলে পোশাক!! সন্ধ্যার দাওয়াতেও তারা গাউন পরে, এটাকেও পোশাক বলা হয়। কিন্তু শরীরের সকল অঙ্গই তাতে দেখা যায়।" (মির্যা বশির উদ্দিন এর ভাষণ, দৈনিক আল ফদ্বল, তাং ২৪ শে জানুয়ারি ১৯৩৪ইং, কাদিয়ানের দারল আমান থেকে প্রকাশিত)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেখতে গিয়েছেন! এতে দোষের কী?

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি (শাহিদ বশির) কি আপনার ছেলে মেয়েকে অন্যদের খোলামেলা চরিত্রের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পশ্চিমা কালচারের জাম্পস্যুট, ম্যাক্সি ড্রেস এবং গাউন—ধরনের অর্ধ্ব-উলঙ্গ পোশাকে শরীরপ্রদর্শনী স্থানে একত্রিত হতে দেবেন?

মনে করুন, আপনি জানতে পারলেন আপনার মসজিদের ইমাম সাহেব সিনেমা বা থিয়েটার দেখেন। আপনার কি মন চাইবে এই থিয়েটারবাজ মানুষটিকে ইকতিদা করতে?

ইতিপূর্বে অভিজ্ঞতার অজুহাতে পিতাও যা দেখলেন তারপর পুত্রধন বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেবও তা দেখলেন! যদি একান্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য-ই হত তাহলে তো 'মাসীহ' দাবিদারের দেখা অভিজ্ঞতা পুত্রের জন্যও যথেষ্ট ছিল, এমন নয় কি?

কোনো ধর্ষক যদি যুক্তি দেয় যে, ধর্ষণে কেমন ইন্টারেস্টিং তার অভিজ্ঞতার জন্যই...। নাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ, বিজ্ঞ আদালত কি তার এই যুক্তি গ্রহণ করবে? কোনো সভ্য সমাজ কি এমন ধর্ষণের বৈধতা দেবে? আপনার কী মনে হয়? তো তার চরিত্রের এই দিকটাও কি ইত্তিবায়ে রাসূল? আস্তাগফিরুল্লাহ।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (লা-জবাব)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যার পুত্রধন ও কাদিয়ানী জামাতের দ্বিতীয় খলিফা(!) মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ একবার ইতালি গিয়েছিলেন। সময়টি ১৯৩৪ সালের। ফিরে আসতে মিস রূপা নামের একটি ইতালিয়ান সুন্দরী মেয়েও সাথে করে নিয়ে আসেন। মেয়েটি পেশায় ছিলেন ড্যান্সার (নৃত্যশিল্পী)। মেয়েটিকে খুব বাধ্য করেই আনা হয়েছিল। মেয়েটি কয়দিন পর-ই কাদিয়ান থেকে লাহোর এসে পৌছেন। জানা যায়, তিনি মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ এর বিরুদ্ধে তাকে ঠকানোর কারণে মামলার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সুন্দরী মিস রূপা আর মামলায় গেলেন না। তিনি লাহোরের সমস্ত সাংবাদিকের সামনে মির্যা বশির উদ্দিন সাহেবের রঙিন মুখোশ খুলে দিয়ে যেভাবে ব্রিফিং দিলেন তা এরকম -

'He [Mirza Bashir Uddin] sent me to Lahore for his impersonation by keeping his mouth away for only five thousand rupees with his micro force. I did not agree to five thousand rupees. '

'তিনি [মির্যা বশির উদ্দিন] তার কর্মকাণ্ড থেকে মুখ বন্ধ রাখতে আমাকে মাত্র পাঁচ হাজার রুপি দিয়েই তার গাড়ি করে জোরপূর্বক লাহোর পাঠিয়ে দেন। আমি পাঁচ হাজার রুপিতে রাজি ছিলাম না।' (সুন্দরী রূপার ব্রিফিং সংক্ষেপে)।

এই ঘটনা সে সময় কাদিয়ানে সর্বসাধারণের মাঝে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। (দেখুন, লাহোর দৈনিক সংবাদপত্র زمیندار [জমিদার] ১৯৩৪ ইং)।

যাইহোক মির্যার পুত্রধন বশির উদ্দিন মাহমুদ কেমন রঙিন জীবন-যাপন করতে অভ্যস্ত তা এতটুকুতেই অনুমেয়।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন) মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সাহেব তার সন্তানদের বিশুদ্ধ ইংলিশ শিক্ষা দিতেই সুন্দরী মিস রূপাকে ভাড়া এনেছিলেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : জ্ঞান বিজ্ঞানের এই সময়ও মানুষ এতটা অন্ধভক্ত হতে পারে তা এখানে না আসলে বুঝতামই না! যদি সন্তানদের বিশুদ্ধ ইংলিশ শিখানো-ই উদ্দেশ্য হয় তবে কোনো ব্রিটিশকে বাদ দিয়ে একজন ইতালিয়ানকে কেন? তাও একটা মেয়েকে! অথচ ইতালিয়ানদের ইংলিশ উচ্চারণ না সেকালে ভাল ছিল আর না একালে; কোনোকালেই না। সব চে মজারকথা, তিনি ইংলিশ শিখাতে কোনো টিচার পেলেন না, ইনভাইটেশন করলেন একজন ড্যান্সারকে!!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আর কোনো জবাব দিলেন না! বুঝতে পেরেছেন, তার আজাইরা কোনো কাসুন্দি-ই উপস্থিত শ্রোতাদের একদম-ই আকর্ষণ করছেনা)।


প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডে নিজেকে অনেক আগেই নেস্তনাবুদ করে ফেলেছেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলুন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব জীবনের শুরুলগ্নে একজন আলেমের ভুমিকা রেখেছিলেন। তিনি অমুসলিম মিশনারীদের মুকাবেলা করেছেন। ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করতে বইপুস্তক রচনা করেছেন। তখন অনেক আলেমও তার প্রশংসা করেছেন। ১৮৮০ সালের কথা। তিনি সবাইকে ঘোষণা দিয়ে বললেন, ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করে ৩০০টি অকাট্য দলিল দ্বারা ৫০ খন্ডে বই লিখব। (মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত ১/৩৮ দ্রষ্টব্য)। আনুমানিক যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৮০০ পর্যন্ত পৌছুবে। (রূহানী খাযায়েন ৬/৪১) বইয়ের নাম হবে - বারাহীনে আহমদিয়া। আর এজন্য তিনি সমস্ত মুসলমানের নিকট চাঁদা দাবী করেন। সেই সময় ভুপালের নওয়াব শাহ জাহান, রিয়াসত পাটিয়ালার খান বাহাদুর সাইয়েদ মুহাম্মদ হাসান প্রমুখসহ অসংখ্য মুসলমান তাকে প্রচুর রুপি চাঁদা দেন। কিন্তু পরে কী হল? তিনি বারাহীনে আহমদিয়া নামক বই তো লিখলেন, তবে ৫০ খন্ডে নয়; মাত্র ৫ খন্ডে!

কাজেই এখন ৫০ খন্ড লিখার প্রতিশ্রুতি আর তজ্জন্য মানুষ থেকে আদায়কৃত হাজার হাজার রুপির কী হবে? তার জবাবে মির্যা লিখলেন "বারাহীনে আহমদিয়া" গ্রন্থটি প্রথমে ৫০ খন্ডে লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ৫ খন্ডে সমাপ্ত করে দিয়েছি। কেননা ৫ ও ৫০ এর মধ্যে মাত্র একটি শূন্যের পার্থক্য। ফলে ৫০ খন্ড লেখার যে প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা আমি করেছিলাম তা ৫ খন্ড লেখার মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। (রূহানী খাযায়েন ২১/৯ দ্রষ্টব্য)। আশ্চর্যের বিষয় হল, ৫০ খন্ড লেখার ওয়াদা যেখানে তিনি সেখানে ৫ খন্ড লিখে বলছেন, پانچ حصوں سے وہ وعدہ پورا ہوگیا তথা পাঁচ খন্ড দ্বারা সেই ওয়াদা পরিপূর্ণ হয়েগেছে! হায় হায়!! ওয়াদা পূর্ণ করার এমন দৃষ্টান্ত কোনো নবুওত দাবীদার থেকে সত্যিই বিস্ময়কর! আপনি মির্যা সাহেবের ওয়াদা পূরণের এরূপ নীতি-নৈতিকতার কী ব্যাখ্যা দেবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি অন্যান্য কাদিয়ানির ন্যায় দায়সারা একটি জবাব দিয়ে বললেন) আল্লাহর তায়ালা হুজুরেপাক (সাঃ)-কে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ দিয়েছিলেন। পরে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সাওয়াব ৫ ওয়াক্তের বরাবর করে দিয়েছেন। এটা সঠিক হলে ওটা কেন হবেনা?

প্রফেসর মতিন খালেদ : এটার সাথে ওটার তুলনা করাটাই চরম পর্যায়ের মূর্খতা ছাড়া কিছুনা! কারণ নামাজ হচ্ছে হক্কুল্লাহ তথা আল্লাহ'র হক আর মানুষের দেয়া হাজার হাজার রুপি চাঁদাগুলো হচ্ছে হক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক। আল্লাহর হক (অধিকার) যা তা তিনি চাইলে বরাবর নয় শুধু; পুরোপুরি মাফও করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দা'র হক যেটি সেটি বান্দা থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া আবশ্যক। হ্যাঁ, বান্দার হক-ও তিনি চাইলে ক্ষমা করে দিতে সক্ষম তবে তা আল্লাহ'র সুন্নাত (নিয়ম) নয়। সুতরাং আপনার দায়সারা গোছের এ সমস্ত জবাবে বান্দার হক মেরে দেয়ার যেই কলঙ্গজনক অধ্যায় তিনি রচনা করে গেছেন তিনি তা থেকে কখনোই রক্ষা পাবেন না।

আচ্ছা, মনে করুন কেউ আপনার কাছে ৫০ টাকা পায়। এখন আপনি তাকে ৫ টাকা দিয়ে ৫০ টাকা পূর্ণ হয়ে গেছে বলে যদি দাবী করেন, সে কি মেনে নেবে? দুনিয়ার এমন কোনো আদালত কি আছে যেখানে মির্যা সাহেবের ওয়াদা পূরণের এই উদাহরণ গ্রহনযোগ্য হতে পারে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (একদম লা-জবাব)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেবের লিখালিখির সূচনাই হুজুরেপাক (সাঃ) এর বিরুধিতার মধ্যদিয়ে ছিল!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : কিজন্য আপনার এমনটি মনে হল!?

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব ১৮৮০ সালে বারাহীনে আহমদিয়া নামের বই লিখার ঘোষণা দেয়ার সেই সময়কার কথা! তিনি বই রচনা করার কথা বলে জনসাধারণ থেকে বইটির হাজার হাজার কপির মূল্য অগ্রিম (Advance) নিতে থাকলেন। কিন্তু তিনি বই লিখা তখনও শুরুই করেননি।

অথচ হুজুরেপাক (সাঃ)-এর ফরমান মোতাবেক ইসলামে যেই জিনিস বিক্রেতার নিকট বিদ্যমান থাকেনা তার ক্রয়বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ তথা হারাম। (তিরমিযী শরীফ, ব্যবসা-পর্ব দ্রষ্টব্য)। এমতাবস্থায়, বলা যেতে পারে যে, মির্যা সাহেবের লিখালিখির সূচনাই হুজুরেপাক (সাঃ)-এর বিরুধিতার মধ্যদিয়ে ছিল! এখন বলুন এমন লোকও হুজুরেপাক (সাঃ)-এর আনুগত্যে তরক্কি করেছেন বলে কিভাবে দাবী করতে পারে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিলেন। বললেন) মির্যা সাহেব যা করেছেন, তাতে তিনি ভুল করতে পারেন না! কারণ তিনি একে তো যুগের আখেরি মুজাদ্দিদ, দ্বিতীয়ত তিনি বহুত বড় আলেম ছিলেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেবকে আপনি যাইচ্ছেতাই মনে করতে পারেন তাতে কার কী আসে যায়! কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য কথা তিনি জাহেলে মুতলাক্ব (গণ্ডমূর্খ) ছিলেন।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (একথার পর উঠে চলে যেতে উদ্যত হন। খুবই নার্ভাস হন এবং বলেন) আমি আপনার সাথে আর মুনাজারাই (ডিবেট) করব না! কারণ আপনি মির্যা সাহেবকে গণ্ডমূর্খ বলেছেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : আমি ও কথা বলে কোনো ভুল করিনি। অপ্রিয় হলেও সত্য, আপনি মুনাজারা (দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা) করার কোনো যোগ্যতাই রাখেন না! কারণ ইসলামী মাসগুলোর নামও আপনার শিখা নেই!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন) আপনার এইরকম মনে হল কেন?

প্রফেসর মতিন খালেদ : এটা আমার ধারণা। সে যাইহোক, দেখি আপনি পারেন কিনা! ইসলামী মাসগুলো বলুন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি বলতে শুরু করেন) মোহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানী...।

প্রফেসর মতিন খালেদ : থামুন থামুন! আপনি তো ভুল করে ফেললেন!!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : না, ভুল করার প্রশ্নই আসেনা। আমি একদম ঠিক বলেছি।

প্রফেসর মতিন খালেদ : 'সফর' মাস তো আরবী চতুর্থতম মাস! অথচ আপনি দ্বিতীয়তম মাস উল্লেখ করেছেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : হা হা হা (একরাশ অট্যহাসি), আপনি আমাদের মির্যা সাহেবকে বলছেন তিনি নাকি খন্ডমূর্খ! অথচ এখন নিজেই নিজের মূর্খতার প্রমাণ দিলেন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব তার পুস্তক 'তিরয়াকুল কুলূব' এর মধ্যে লিখেছেন 'সফর হচ্ছে চতুর্থতম মাস'। মির্যা সাহেবের ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডের 'রূহানী খাযায়েন' ১৫/২১৮ খুলে দেখে নিন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (একদম লা-জবাব। চেহারা লাল হয়ে গেল। লজ্জার যেন আর শেষ থাকল না!)

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা বলুন তো, রাসূল (সাঃ) এর পুত্র সন্তান কয়জন ছিল?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : তিনজন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব লিখেছেন

تاریخ داں لوگ جانتے ہیں کہ آپ صلی اللہ علیہ و سلم کے گھر میں گیارہ لڑکے پیدا ہوئے تھے اور سب کے سب فوت ہوگئے تھے۔

অর্থাৎ ইতিহাসবিদগণ জেনে থাকবেন যে, হুজুর (সাঃ)-এর এগারজন পুত্র সন্তান জন্মেছিল। তাদের সবাই মারাও গেছেন। (চশমায়ে মা'রেফত ২৮৬; রূহানী খাযায়েন ২৩/২৯৯ দ্রষ্টব্য)। এখন এর কী হবে?

ইতিহাসবিদ তো বহুত পরের কথা, একজন সাধারণ শিক্ষিত মুসলমানও জানেন যে, হুজুরেপাক (সাঃ) এর পুত্র ছিলেন তিনজন। উম্মুল মুমিনী খাদিজা (রাঃ) হতে কাসিম এবং আব্দুল্লাহ আর মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ) হতে ইবরাহীম জন্মগ্রহণ করেন। সকলেই বাচ্চা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। (যাদুল মা'আদ, ইবনে কাইয়ুম; পরিচ্ছেদ: ফী আওলাদিহি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আর কোনো জবাব নেই)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা বলুন তো, রাসূল (সাঃ) এর পিতা জনাব আব্দুল্লাহ তিনি রাসূল (সাঃ) এর জন্মের আগে ইন্তেকাল করলেন নাকি পরে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : নিশ্চয়ই রাসূলের জন্মের আগে ইন্তেকাল করেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু মির্যা সাহেব তার 'পয়গামে ছুলহি' বইয়ের ২৮ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, রাসূল (সাঃ) এর জন্মের পরে উনার পিতা ইন্তেকাল করেছেন। (রূহানী খাযায়েন ২৩/৪৬৫ দ্রষ্টব্য)। ইসলামের ইতিহাসজ্ঞানে একজন নবুওতের দাবীদারের এমন শোচনীয় অবস্থা ভাবতেও অবাক হই।

সে যাইহোক, যার কিতাবাদি সাধারণ সাধারণ বিষয়েও এরকম ভুলভ্রান্তিতে ঠাসা তার অপরাপর কথাবার্তায় মানুষ কিভাবে নির্ভর করবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (লা-জবাব; খুবই লজ্জিত হলেন)।


প্রফেসর মতিন খালেদ : ১৮৯৭ সালে মির্যা সাহেবের স্ত্রী নুসরাত জাহান প্রেগন্যান্ট হন। মির্যা সাহেব থেকে এ সম্পর্কে তার 'তিরয়াকুল কুলূব' বইয়ের ৮৯ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, স্ত্রীর গর্ভে থাকা সেই সন্তানটির নাম ছিল মুবারক আহমদ। তিনি ১লা জানুয়ারী ১৮৯৭ সালে পেটের ভেতর থেকে ইলহামিভাবে দুইবার কথা বলেছেন। বিপত্তি বাধে অন্য জায়গায়! মির্যা সাহেব বাচ্চাটির কথা বলার ঘটনা লিখলেন কিন্তু কথার আওয়াজ কোথা থেতে বেরুত, তিনি তার কিছুই লিখলেন না! বড্ড চিন্তার বিষয় নয় কি?

এখানে আপত্তির জায়গাটি হচ্ছে, ১৮৯৭ সালের পহেলা জানুয়ারীতে মুবারক আহমদ-ই যখন পেট থেকে কথা বললেন তখন পরবর্তী দুই মাস পরে সেই ডেলিভারিতে 'মুবারক আহমদ' না হয়ে 'মুবারাকাহ' নামের কন্যা সন্তানের জন্ম কিজন্য হল? এমতাবস্থায় মুবারক আহমদ এর তথাকথিত ইলহামি কথাবার্তার কী হবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মুবারক আহমদ তার ভাইদের সম্বোধন করে পেট থেকে কথা বলেছেন এভাবে যে, 'আমার আর তোমাদের মাঝে (মিলিত হওয়ার) নির্ধারিত মেয়াদকাল একদিন-ই।' এখানে একদিন বলতে দুইবছর বুঝাবে। মুবারক আহমদ তিনি ১৮৯৭ সালে জন্ম না নিয়ে তার বোন মুবারাকাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার দুইবছর পরে ১৪-ই জুন ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : হতে পারে। কিন্তু তিনি পেটে থাকতে কেন বলে দিলেন না যে, আমি আরো দুইবছর পেন্ডিংয়ে থাকব। তাই এই বছর তোমাদের সাথে আর দেখা হচ্ছে না!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি এর আর কোনো জবাব দিলেন না।)

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেবের এও জ্ঞান ছিল না যে, নামাজ কিজন্য পাঁচ ওয়াক্ত হল! মির্যা সাহেব তার 'মালফূযাত' বইয়ের তৃতীয় খন্ডের ১৪২ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন "আরবের লোকদের পাঁচ বেলা মদ পান করার অভ্যাস ছিল। আল্লাহ এর বদলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায দিয়েছেন।" এখন আমার প্রশ্ন হল, মির্যা সাহেব এই সমস্ত কথা কোথায় পান? নামায কি শুধু আরবের লোকদের জন্য নাকি কেয়ামত পর্যন্ত সব মুসলমানের জন্য? বর্তমানে আমাদের দেশের মানুষগুলো পাঁচ বেলা তো দূরের কথা, এক বেলাও মদ পান করেনা! তাহলে এদের জন্য নামায কয় ওয়াক্ত হওয়া উচিত?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি এর কোনো উত্তর দিলেন না)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আচ্ছা বলুন তো আপনার মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মির্যা সাহেব ১৮৩৯ অথবা ১৮৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এটি আপনার আন্দাজে কথা! এসব 'অথবা' বাদ দিয়ে ঠিক করে বলুন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আমি এটাই জানি এবং এটাই সঠিক। মির্যা সাহেব নিজেও তার বইতে এটা লিখে গেছেন। দেখুন, কিতাবুল বারিয়্যাহ ১৫৯; রূহানী খাযায়েন ১৩/১৭৭ দ্রষ্টব্য।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আফসোস! একজন নবুওতের দাবীদারের নিজের জন্ম তারিখটা পর্যন্ত ঠিক করে স্মরণ নেই! যাইহোক, মির্যা সাহেবের পুত্রধন মির্যা বশির আহমদ এম.এ লিখেছেন, ১৩-ই ফেব্রুয়ারী ১৮৩৫ ইং মোতাবেক ১৪-ই শাওয়াল ১২৫০ হিজরী। (সীরাতে মাহদী ৩/৭৬ দ্রষ্টব্য)।

আবার আরেক জায়গায় লিখা আছে, ১৭ ই ফেব্রুয়ারী ১৮৩২ ইং। (সীরাতে মাহদী ৩/৩০২ দ্রষ্টব্য)। আরেক জায়গায় লিখা আছে ১৮৩১ ইং। (সীরাতে মাহদী ৩/৭৪ দ্রষ্টব্য)। আরেক জায়গায় লিখা আছে, ১৮৩৩ অথবা ১৮৩৪ ইং। (সীরাতে মাহদী ৩/১৯৪ দ্রষ্টব্য)। এখন অনেকগুলো তারিখের মধ্যে কোনটা সঠিক?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো জবাব নেই)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি বললেন, মির্যা সাহেব বহুত বড় একজন আলেম ছিলেন! তিনি প্রায় ১০০টি বই রচনা করেছেন। কিন্তু তিনি পবিত্র কুরআনের একটি তাফসীরগ্রন্থও লিখে যাননি। সনদসহ হাদীসের কোনো কিতাব-ও রচনা করেননি। অথচ তার নিজের সম্পর্কে দাবী ছিল, কোন হাদীস সহীহ আর কোন হাদীস ভুল এবং কুরআনের সহীহ অর্থ - সবই আল্লাহতায়ালা তাকে অবহিত করে দিয়েছেন! (রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৫৪ দ্রষ্টব্য)। এমনকি মির্যা সাহেব রাসূলেপাক (সাঃ) এর সীরাতের (জীবন-চরিত) উপর পরিপূর্ণ একটা বইও লিখে যাননি।

আরো অবাক করার বিষয় যে, মির্যা সাহেবের লেখিত কোনো বই পৃথিবীর কোনো স্বীকৃত পাঠশালায় পড়ানো হয়না। তার কারণ, মির্যা সাহেবের লেখিত এমন একটি বইও সিলেক্ট করার মত নয় যা পৃথিবীর স্বীকৃত কোনো কলেজ, ইউনিভার্সিটি কিবা পাঠশালাকে আকৃষ্ট করতে পারে ! এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আপনাদের জন্য আর কী হতে পারে? আরেকটি কথা না বললে নয়, কাদিয়ানী জামাত আজকের দিনটি (২০০৯ ইং, বাহাস অনুষ্ঠিত হবার সময় সাপেক্ষে) পর্যন্ত প্রায় ১২০ বছর পর করে ফেলল, অথচ তাদের ভেতর এমন কেউ আজ পর্যন্ত জন্ম নেয়নি যিনি মির্যা সাহেবের বইগুলো আরবী আর ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করবে! কাজেই আমি আপনাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার মত কোনো কারণই দেখিনা।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আগের প্রসঙ্গ থেকে সরে এসে 'নবুওত' জারি আছে কি নেই মর্মে প্রশ্ন শুরু করেন) পবিত্র কুরআনের সূরা আ'রাফ এর ৩৫ নং আয়াতে সমস্ত আদম সন্তানকে সম্বোধন করে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, اما يأتينكم رسل منكم অর্থাৎ যদি তোমাদের মধ্য হতে রাসূলগণ আগমন করে—এই আয়াত হুজুরেপাক (সাঃ)-এর উপর নাযিল হয়। এখানে আদম সন্তান থেকে রাসূলগণের আগমনী সংবাদ দেয়া হয়েছে। সুতরাং নবুওতেরধারা বর্তমানেও চলমান থাকার প্রমাণ পাওয়া গেল।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এই আয়াতে আদম সন্তানদের প্রতি আল্লাহর উক্ত সম্বোধন রূহের জগতে তখন করা হয় যখন পৃথিবীতে কোনো নবীরই আগমন হয়নি। উক্ত আয়াতের পূর্বাপর ২৬, ২৭ এবং ৩১ নং আয়াত দেখুন, বুঝে আসবে। প্রসঙ্গ ছাড়া আয়াত উদ্ধৃত করা ঠিক না। এতে সাধারণ মানুষ বিব্রতবোধ করতে পারে।

যাইহোক, আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবের পর আর কোনো নবী হবে কি?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : না, হবেনা।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তাহলে সূরা আ'রাফের উক্ত আয়াতের কোন কোন শব্দ দ্বারা বুঝতে পারলেন যে, মির্যা কাদিয়ানীর পর নবুওতের দ্বার আর খোলা থাকবেনা?

আচ্ছা এটাও না হয় বাদ দিলাম। আপনি নিজেই বললেন মির্যা কাদিয়ানীর পর আর কোনো নবী নেই। অথচ আয়াতটিতে রাসূল শব্দের বহুবচন 'রসুল' (তিন বা ততোধিক রাসূল) এসেছে। এবার এর সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন? আপনার বিশ্বাসের সাথে দলিলের মিল কোথায়?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। একদম লা-জবাব হয়ে গেলেন)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনাদের দৃষ্টিতে তো 'নবুওত' তিন প্রকার! যথা- হাকিকি, মুস্তাকিল এবং জিল্লি। (কালিমাতুল ফছল ১৪/১১৮ দ্রষ্টব্য)। আরো সহজ করে বললে, শরিয়তি নবী, স্বাধীন শরিয়তবিহীন নবী এবং পরাধীন শরিয়তবিহীন নবী। এদিকে মির্যার পুত্রধন বশির আহমদ এম.এ সাহেব লিখেছেন

اب حقیقی نبوت اور مستقل نبوت کا دروازہ قطعی طور پر بند ہے۔

তথা 'এখন হাকিকি নবুওত এবং মুস্তাকিল নবুওতের দ্বার অকাট্যভাবে রুদ্ধ হয়ে গেছে।' (তিনি আরো লিখেছেন) তবে জিল্লি নবুওতের দ্বার রুদ্ধ হয়নি এবং মাসীহে মওঊদ (মির্যা) এই প্রকারের নবুওতেরই দাবী করতেন। (কালিমাতুল ফছল ১৪/১১৮)।

সে যাইহোক, এখন আমি যেই প্রশ্নটি করতে চাই সেটি হচ্ছে, তথাকথিত জিল্লি তথা তিন নাম্বারি নবুওতের দ্বার ব্যতীত বাকি সব প্রকারের নবুওতের দ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আপনারাও যেহেতু আমাদের সাথে একমত হয়ে গেছেন, সেহেতু এখন বিতর্কের বিষয় শুধুই তিন নাম্বারি নবুওত! আপনারা বিশ্বাস করেন এই প্রকারের নবুওতের দ্বার বন্ধ নয়! কাজেই সূরা আ'রাফ এর যেই আয়াত দিয়ে আপনি নবুওতের দ্বার খোলা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন সেই আয়াত খাস করে যিল্লি তথা তিন নাম্বারি নবুওতের দলিল কিভাবে হল তা বুঝিয়ে দিন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আর কোনো জবাব দিতে পারলেন না)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : তর্কের খাতিরে মানলাম, এই আয়াত জিল্লি নবুওতের দলিল! কিন্তু তা সত্ত্বেও মির্যা সাহেব নবী হবেন না! কারণ, আয়াতটিতে শুধুমাত্র আদম সন্তান থেকেই নবীর আগমনের কথা রয়েছে!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : তার মানে কি মির্যা সাহেব আদম সন্তানের বাহিরে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেব নিজের সম্পর্কে একজায়গায় লিখেছেন, আমি আদম-জাত নই, আমি মানুষের লজ্জাস্থান। (রূহানী খাযায়েন ২১/১২৭ দ্রষ্টব্য)। এখন বলুন, যেই লোক নিজেকে মানুষের লজ্জাস্থান আখ্যা দেয় আর নিজকে নিজ আদম জাত হওয়া অস্বীকার করে সেই লোক কিভাবে এই আয়াত দ্বারা নবী হওয়ার দাবী করে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মির্যা সাহেব অনেক বেশি বিনয়ী ছিলেন। তাই তিনি নিজকে নিজ এভাবে ব্যক্ত করেছেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : নিজকে নিজ বিনয়ী প্রকাশ করার মত দুনিয়ায় বুঝি আর কোনো শব্দ ছিলনা! নিজেকে মানুষের গণ্ডি থেকে বের করে দিয়ে 'লজ্জাস্থান' আখ্যা দেয়া কেমন বিনয়ী? সে যাইহোক, এমন বিনয়ী(!) মানুষটি-ই কিন্তু নিজেকে দাবী করে বলতেন- 'আমি আদম, আমি নূহ, আমি ইবরাহীম, আমি ইসহাক, আমি ইয়াকুব, আমি ইসমাঈল, আমি মূসা, আমি দাউদ, আমি ঈসা ইবনে মরিয়ম এবং আমি মুহাম্মদ!' (রূহানী খাযায়েন ২২/৫২১ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'আমি যামানার মাসীহ, খোদার সাথে কথপোকথনকারী মূসা, আমি-ই মুহাম্মদ এবং আমি-ই আহমদ মুজতবা।' (রূহানী খাযায়েন ১৫/১৩৫)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'আমার আগমন দ্বারা প্রত্যেক নবী জীবিত হয়ে যায়। প্রত্যেক রাসূল আমার জামার ভেতর লুকানো।' (রূহানী খাযায়েন ১৮/৪৭৭-৭৮ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'কারবালায় আমার ভ্রমণ সদাসর্বদা হয়, শত হোসাইন সর্বদা আমার পকেটে থাকে।' (নুযূলুল মাসীহ ৯৯; রূহানী খাযায়েন ১৮/৪৭৭ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'ইবনে মরিয়মের আলোচনা ছাড়, তার চে উত্তম গোলাম আহমদ।' (দাফেউল বালা ২৪; রূহানী খাযায়েন ১৮/২৪০ দ্রষ্টব্য)। সংক্ষেপে। এখন এগুলোকে কী বলবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (উত্তর না দিয়ে বললেন) সূরা নিসা, আয়াত নং ৬৯; আল্লাহতায়ালা বলেছেন

وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَ الرَّسُوۡلَ فَاُولٰٓئِکَ مَعَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیۡقِیۡنَ وَ الشُّہَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیۡنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا

—এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য দ্বারা যেমন সিদ্দিক, শহীদ আর সালেহ হতে পারবে তেমনি 'নবী '-ও হতে পারবে।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কথায় আছে—যার অন্তরে বক্রতা থাকে সে দেখতেও বাঁকা দেখে! যে কেউই সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতের অনুবাদ আর তার শানে নুযূল দেখামাত্রই বুঝে ফেলবেন—কিভাবে আপনারা সহজ বিষয়কে জটিল করে সাধারণ আহমদিদের ধোকা দিয়ে যাচ্ছেন!
_____
টিকা :
________
অনুবাদ: আর কেহ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করিলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ—যাহাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করিয়াছেন—তাহাদের সঙ্গী হইবে এবং তাহারা কত উত্তম সঙ্গী। (অনুবাদ—ইফা)।

তাফসীরের গ্রন্থগুলো দেখে নিন! আয়াতটির প্রেক্ষাপট ডেকে ডেকে বলছে, সেখানে উল্লিখিত مع (মা'আ তথা সঙ্গে) শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ এবং তার রাসূলের আনুগত্যকারীরা পরকালে স্তরভেদে উপরিউক্ত ৪ শ্রেণীর মানুষের সঙ্গ লাভ করবে। সকল তাফসীরকারক হাদীসের আলোকে প্রেক্ষাপট উল্লেখপূর্বক এটাই লিখেছেন। তাছাড়া উক্ত আয়াতের শেষেই رفيقا শব্দের মাধ্যমে এর সুস্পষ্ট সমাধান রয়েছে—And how excellent these companions are! তথা 'এবং এই সঙ্গীরা কতই না উত্তম!'

আচ্ছা, হুজুরেপাক (সাঃ) এর সাহাবীদের মধ্যে এমন কেউ কি ছিলেন যিনি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য দ্বারা নবীর মর্যাদা লাভ করে নবী হয়ে গিয়েছিলেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : না, এমন কেউ নেই।

প্রফেসর মতিন খালেদ : সূরা আত তওবাহ, আয়াত নং ৭১; আল্লাহতায়ালা বলেছেন و يطيعون الله و رسوله অর্থাৎ 'তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করেন।' এখন বলুন, এঁদের কেউ কিজন্য আনুগত্য দ্বারা নবীর মর্যাদা লাভ করে নবী হলেন না?

সে যাইহোক, এখন আপনার কথায় আসি। এই আয়াত দ্বারা আপনি দাবী করেছেন, আনুগত্য দ্বারা-ও নাকি নবী হতে পারবে! তার মানে হুজুরেপাক (সাঃ) এর আনুগত্যে তরক্কি (উন্নতি) অর্জন করেও নবী হওয়া যায় এমন আকিদার পক্ষে এই আয়াত আপনার দালিল! কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল, আপনি তো মির্যা সাহেবের পরে আর কেউ নবী হবেনা বললেন! আর হ্যাঁ, মির্যা সাহেব থেকেও এধরনের কথা লিখা আছে। যেমন তিনি লিখেছেন

نبي كا نام پانے کیلئے میں ہی مخصوص کیا گیا۔

অর্থাৎ 'নবী নাম পাওয়ার জন্য আমাকেই খাস করা হয়েছে।' তিনি আরেকটু পর এসে এও লিখেছেন ایسا شخص ایک ہی ہوگا অর্থাৎ 'এমন ব্যক্তি একজনই হবেন।' (রূহানী খাযায়েন ২২/৪০৬-৭ দ্রষ্টব্য)। অথচ আয়াতটিতে নবী শব্দের বহুবচন النبيين (আন নাবিয়্যীন তথা নবীগণ) শব্দ এসেছে। ফলে আনুগত্য দ্বারা তিন বা ততোধিক সংখ্যক 'নবী' বুঝায় কিনা? সমীকরণ তো মিলেনা!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আমতা আমতা শুরু করেন। মাথা নিচু করে গভীরধ্যানে চলে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলেন)।



সূরা হজ্ব, আয়াত নং ৭৫; আল্লাহতায়ালা বলেন اَللّٰہُ یَصۡطَفِیۡ مِنَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ رُسُلًا وَّ مِنَ النَّاسِ অর্থাৎ আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্য হইতে মনোনীত করেন বাণীবাহক এবং মানুষের মধ্য হইতেও; আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা (অনুবাদ—ইফা) ।

আয়াতে ভবিষ্যতবাচক ক্রিয়াপদ یَصۡطَفِیۡ (ইয়াছত্বফী) উল্লেখ আছে। সুতরাং নবুওতেরধারা ভবিষ্যতকালেও চলমান থাকার প্রমাণ পাওয়া গেল।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট আমাদের বলছে, এখানে উল্লিখিত মুদারের ক্রিয়াপদটি পুরাঘটিত বর্তমানকালের জন্য এসেছে। ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতি (রহঃ) সেই প্রেক্ষাপট এভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, এটি সেই সময় নাযিল হয় যখন মক্কার মুশরিকরা রাসূল (সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলেছিল

أانزل عليه الزكر من بيننا

অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) কি কুরআন আমাদের মধ্য থেকে তার (মুহাম্মদ) উপরই নাযিল করলেন? এরই প্রত্যুত্তরে উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছিল। (জালালাইন শরীফ দ্রষ্টব্য)। যেন বুঝাতে চেয়েছেন যে, হ্যাঁ তিনি (আল্লাহ) মানুষের মধ্য থেকেও রাসূল মনোনীত করেন। তাই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদেরই স্বজাতি মুহাম্মদকে রাসূল মনোনীত করা হয়েছে। এখানে ওদের আপত্তি আর আল্লাহর প্রতিউত্তর দুটোই তদানিন্তন সময় সাপেক্ষ। তাই এ থেকে নবুওতেরধারা ভবিষ্যতকালেও চলমান থাকার দাবী পুরোপুরি ভুল ও পরিত্যাজ্য।

আরবী ব্যকরণ সম্পর্কে যার সামান্যতম ধারণা আছে সেও জানে যে, মুদারের ছিগাহ (ক্রিয়াপদ) ভবিষ্যতবাচক অর্থের জন্য নির্দিষ্ট নয়, বরং কখনো কখনো পুরাঘটিত বর্তমানকালের জন্যও হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে তার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। যেমন, সূরা আল হাদীদ, আয়াত নং ৯ দেখুন। আল্লাহতায়ালা বলেন

هوَ الَّذِیۡ یُنَزِّلُ عَلٰی عَبۡدِہٖۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ

অর্থাৎ "তিনিই তাঁহার বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেন (অনুবাদ—ইফা)।" এখানেও ক্রিয়াপদটি মুদারের হওয়া সত্ত্বেও ভবিষ্যতকালের অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। নতুবা মেনে নিতে হবে যে, পবিত্র কুরআন নাযিলেরধারা রাসূল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পরেও কেয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে! (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ কোনো পাগলেও এটা মনে করেনা!

মুদারের ছিগাহ'র আরেকটি উদাহরণ মির্যা সাহেবের 'হাকিকাতুল ওহী' নামক বই থেকেও দেয়া যায়। সেখানে মুন্সী ইলাহী বখশসহ তার অন্যান্য অনুসারীদের উদ্দেশ্যে মির্যা সাহেবের একটি ইলহাম(!) লিখা আছে

يريدون ان يروا طمثك

অর্থাৎ 'তারা সকলে তোমার ঋতুস্রাবের খুন দেখতে চায়।' এখানেও কিন্তু ক্রিয়াপদটি মুদারের। সেহেতু আপনার কথা অনুসারে এখন প্রশ্ন আসে যে, মুন্সী ইলাহী বখশসহ অন্যরা মির্যা সাহেবের ঋতুস্রাবের খুন যেন কেয়ামত পর্যন্ত দেখতে চাচ্ছেন! এর কী উত্তর দেবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি এর উত্তর না দিয়ে নতুন আরেকটি আয়াত পেশ করে বললেন) পবিত্র কুরআনের সূরা মুমিনূন, আয়াত নং ৫১ দেখুন। আল্লাহতায়ালা বলেন

یٰۤاَیُّہَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا

অর্থাৎ 'হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হইতে আহার কর ও সৎকর্ম কর (অনুবাদ—ইফা)।" এই আয়াত নাযিল হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি। আর তিনি ব্যক্তি হিসেবে একজন। অথচ আয়াতে রসুল শব্দটি বহুবচন। ফলে মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরেও নবুওতেরধারা চলমান থাকার প্রমাণ পাওয়া গেল!

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি সূরা মুমিনূন এর ৫১ নং আয়াত দ্বারা যুক্তিতে বলতে চাচ্ছেন, আয়াতটিতে বহুবচনে 'রসুল' শব্দ থাকায় প্রমাণিত হল যে, নবী রাসূলের আগমন অদূরভবিষ্যতে আরো হবে! কিন্তু আপনার এই অনুমান ও চিন্তা ভুল এবং খুবই দুর্বল। তার কারণ, দুই আয়াত পরেই তথা ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন

فَذَرۡهمۡ فِیۡ غَمۡرَتِهمۡ حَتّٰی حِیۡنٍ

অর্থাৎ 'সুতরাং কিছুকালের জন্য উহাদের স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকিতে (ছাড়িয়া) দাও (অনুবাদ—ইফা)।' এখানে ذَرۡ (ইংরেজিতে Leave) শব্দ এসেছে। এটি একবচনের ও নির্দেশসূচক ক্রিয়াপদ। তার অর্থ, তুমি ছেড়ে দাও'।

এবার আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসি। উল্লিখিত ৫১ নং আয়াতটি ভবিষ্যতকালে আরো নবী রাসূল আগমনের দলিল হলে তার পরবর্তী ৫৪ নং আয়াতে নির্দেশসূচক ক্রিয়াপদটিও বহুবচনের না হয়ে বরং একবচনে হল কেন? কেন-ই বা একবচন উল্লেখ করে বলা হল যে, তুমি তাদের ছেড়া দাও! ভাবিয়ে তুলে কিনা?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : তাহলে ৫১ নং আয়াতে বহুবচনে উল্লিখিত 'রসুল' এরা কারা?

প্রফেসর মতিন খালেদ : আয়াতটিতে বহুবচনে উল্লিখিত 'রসুল' এরা কারা - এই প্রশ্নের উত্তরে আরেকটু পরে আসি! তার আগে আমাকে বলুন, মির্যা সাহেবের পর আর কেউ নবী হবেনা, এটা তো আপনাদেরই বিশ্বাস, তাই নয় কি? এমতাবস্থায় এই আয়াতটাও আপনাদের দাবীর পক্ষে দলিল হতে পারে কিভাবে?

সে যাইহোক, আপনাকে আগেও বলেছিলাম, আয়াতের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে কিংবা পূর্বাপর সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা না করে মাঝখান থেকে কোনো আয়াতের মর্মার্থ নিতে চাওয়াই ভুল। আপনি একই সূরার ৪৫ নং আয়াত দেখুন। মূসা এবং হারুন (আঃ) এর উল্লেখ রয়েছে। তারপর ৫০ নং আয়াত দেখুন। সেখানে হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) এর আলোচনা আছে। মোট তিনজনের আলোচনা শেষ করে ৫১ নং আয়াতে এসেছে 'ইয়া আইয়্যুহার রসুল।' এবার ভেবে দেখুন, এখানে ' হে রাসূলগণ' বলে প্রকৃতপক্ষে কাদেরকে বুঝাতে চাচ্ছিল? হুজুরেপাক (সাঃ) এর পরে নতুন কাউকে নাকি শুধুমাত্র উল্লিখিত তিনজনকে? অবশ্যই উল্লিখিত তিনজনকেই বুঝাতে চাচ্ছিল। অতএব আপনার অনুমান ও চিন্তা ভুল এবং প্রত্যাখ্যাত।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : সূরা ফাতেহা, আয়াত নং ৫; আল্লাহতায়ালা বলেন, اِهدنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ অর্থাৎ 'আমাদেরকে সরল পথ দেখান।' তার মানে, আমাদেরও সেই নেয়ামত প্রদান করুন যা পূর্ববর্তীগণকে দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন দাঁড়াল, তাহলে সেই নেয়ামতটা কী? এবার পবিত্র কুরআন থেকেই জেনে নিন যে সেই নেয়ামত হচ্ছে, নবী বানানো আর রাজা-বাদশাহ বানানো। যেমন সূরা মায়েদা, আয়াত নং ২০; আল্লাহতায়ালা বলেন "আর যখন মূসা তার কওমকে বলল, ‘হে আমার কওম, স্মরণ কর তোমাদের উপর আল্লাহর নেয়ামত, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে নবী বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে রাজা-বাদশাহ বানিয়েছেন"। আল্লাহতায়ালা নিজেই এই দুটোকে 'নেয়ামত' আখ্যা দিয়েছেন এবং তজ্জন্য দোয়াও শিক্ষা দিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহতায়ালা এ সমস্ত নেয়ামতের দোয়া কবুল করবেন। সুতরাং উম্মতে মুহাম্মদিয়ার মধ্যে নবুওতেরধারা চলমান থাকার প্রমাণ পাওয়া গেল।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনার জন্য দুঃসংবাদ যে, উল্লিখিত দলিল আদতে আপনার নিজেরই বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে! কিভাবে জানেন? মির্যা সাহেবের পর আর কেউ নবী হবেনা, এটা কিন্তু আপনাদেরই বিশ্বাস! এমতাবস্থায় اِهدنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ শীর্ষক আয়াতটাও আপনাদের পক্ষে দলিল হয় কিভাবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : দলিল হয় না কিভাবে?

প্রফেসর মতিন খালেদ : আয়াতে উল্লিখিত اِهدنَا -এর মধ্যে نَا (ইংরেজিতে Our) কর্মবাচক সর্বনামপদটি বহুবচনাত্মক। এমতাবস্থায় নেয়ামতপ্রার্থীর দোয়া কবুল হতে গেলে তিন বা ততোধিক নবীর আগমনকে মেনে নিতে হবে! যা আপনাদেরই নীতিবিরুদ্ধ। ইতিপূর্বে দলিল প্রমাণসহ আপনি নিজেও দেখেছেন। এখন এর কী হবে?

আচ্ছা এটা বাদ দিন! দোয়াটি তো আম বা ব্যাপকহারে নারী পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত। এখন আয়াতটির পাঠকদের মধ্যে নারীরাও নবী হবেন কিনা? অথচ পুরস্কারের ক্ষেত্রে নর-নারীর সমানাধিকার। দেখুন,

আয়াতের ভেতর দোয়াকারী ব্যক্তি কিন্তু পূর্ববর্তী নেয়ামতপ্রাপ্তদের সরল পথেই হিদায়াতের দোয়া করে থাকেন। কাজেই আপনার মতানুসারে এর মানে 'নবুওত' এর দোয়াই বুঝানো হলে তখন তো আপনারা আরো কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন! তা হচ্ছে পূর্ববর্তীগণের নবুওত মোটেও তিন নাম্বারি (জিল্লি/বুরুজি/অসম্পূর্ণ) ধরণের ছিল না! যা মির্যার পুত্রধন বশির আহমদ এম.এ রচিত 'কালিমাতুল ফছল' এর মধ্যেও লিখা আছে। ইতিপূর্বে দলিলসহ নিজেও দেখেছেন। এখন এর কী হবে?

সর্বশেষ কথা হল, মূলত নবুওত জিনিসটা পুরোপুরি আল্লাহ প্রদত্ত। ফলে কারো পক্ষে চাহিবামাত্র-ই তা অর্জন করা সম্ভব নয়। যদি দোয়া করা মাত্র-ই নবুওত লাভ করার সুযোগ থাকত তাহলে মির্যার জন্মের পূর্বে বিগত তের শত বছরের মধ্যে কেউ নবী হলেন না কেন?

কিংবা মির্যা গোলাম আহমদ সাহেবের দোয়ার কারণে সেই সময়কার তার সকল অনুসারী একযোগে নবী হয়ে গেলেন না কেন? অথচ মির্যা সাহেব নবী রাসূল হবার দাবীদার ছিলেন! আর একথা সবারই জানা, নবীগণ 'মুস্তাজাবুদ দাওয়া' হয়ে থাকেন! এর কী জবাব দেবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (পুরোপুরি চুপসে গেলেন। আর কোনো জবাব দিতে পারলেন না। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন)। সূরা নূর, আয়াত নং ৫৫; আল্লাহতায়ালা বলেন

وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسۡتَخۡلِفَنَّہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ

অর্থাৎ 'তোমাদের মধ্যে যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাহাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিতেছেন যে, তিনি অবশ্যই তাহাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করিবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করিয়াছিলেন তাহাদের পূর্ববর্তীদেরকে (অনুবাদ—ইফা)।' এখানে আল্লাহতায়ালা জমিনে খলিফা বানাবেন—বলে দিয়েছেন। পবিত্র কুরানে নবীকেও খলিফা বলা হয়েছে। দেখুন, সূরা বাকারা আয়াত নং ৩০; সুতরাং নবুওতেরধারা চলমান থাকার প্রমাণ পাওয়া গেল!

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু এর দ্বারা নবী ও নবীর খলিফা বানানো উদ্দেশ্য নয়, বরং মুমিন হওয়া এবং সৎকর্মকরা—এই দুটি শর্তে মুসলমানদেরকে রাজ্যের শাসনভার দান করাই উদ্দেশ্য।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : আমি আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না!

প্রফেসর মতিন খালেদ : সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু মির্যা সাহেব থেকেও প্রমাণিত আছে যে, উপরের সম্পূর্ণ আয়াত হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর 'খেলাফত' সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। (সিররুল খিলাফত ১৭; রচিতা মির্যা গোলাম আহমদ, রূহানী খাযায়েন ৮/৩৩৬ দ্রষ্টব্য)। এবার তো নিশ্চয়ই একমত হবেন!!

যাইহোক, এবার আপনার কথায় ফিরে আসি। উক্ত আয়াত দ্বারা নবী ও নবীর খলিফা হওয়া বুঝালে তখন তো আপনাকে এটাও মেনে নিতে হবে যে, সেই নবীরা আর যাইহোক না কেন—তিন নাম্বারি (জিল্লি, বুরুজি) ধরণের নবী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বরং তারা হয়ত শরিয়তবাহক হবেন কিংবা স্বাধীন শরিয়তবিহীন হবেন। কেননা সেই আয়াতেই کَمَا (ইংরেজিতে as He granted it) শব্দচয়নে পরিস্কার উল্লেখ আছে যে

کَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ

তথা 'যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করিয়াছিলেন তাহাদের পূর্ববর্তীদেরকে'। অথচ আপনাদের বইতে তার বিপরীতে লিখা আছে যে, জিল্লি বা বুরুজি (তিন নাম্বারি) নবুওত ব্যতীত অপরাপর দুই ধরণের নবুওতের দ্বার অকাট্যভাবে রুদ্ধ হয়ে গেছে। (কালিমাতুল ফছল ১৪/১১৮ দ্রষ্টব্য)। এখন এর কী হবে?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো উত্তর নেই)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা সাহেবের জীবন-চরিত বইতে লিখা আছে, তিনি নিজের দেহরক্ষী হিসেবে সাথে কুকুরও রাখতেন! (সীরাতে মাহদী ৩/২৯৮ দ্রষ্টব্য)। এ সম্পর্কে কী বলবেন?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মির্যা সাহেব বিরুধীদের পক্ষ হতে নিজেকে সব সময় অনিরাপদ মনে করতেন। তাই তিনি এভাবে নিরাপত্তাবলয় গঠন করেছিলেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : কিন্তু উল্লিখিত আয়াতের একদম শেষে তো এটাও রয়েছে যে,

وَ لَیُبَدِّلَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِہِمۡ اَمۡنًا

অর্থাৎ 'এবং তাহাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাহাদেরকে অবশ্য নিরাপত্তা দান করিবেন।' কাজেই যেই আয়াত দ্বারা স্পষ্টত বুঝা যায় খেলাফতের অন্যতম একটা বিশেষত্ব ভয়-ভীতি মুক্ত জীবন, মির্যা সাহেব কিনা নিরাপত্তার অভাবে কুকুর পোষণ করতেন, রাতে মহিলারা পালা বদল করে পাহারা দিতেন; নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে ভাগ্যে হজ্বটা পর্যন্ত জুটলো না—কেমন যেন উলোটপালোট হয়ে গেল না!!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (একদম চুপ হয়ে গেলেন)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আয়াতটির শেষাংশে কিন্তু এটাও আছে যে

یَعۡبُدُوۡنَنِیۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ بِیۡ شَیۡئًا

অর্থাৎ 'তাহারা আমার ইবাদত করিবে, আমার কোনো শরীক করিবেনা।' অথচ মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে শিরিক করে আসছিলেন! ফলে বলা যায় তিনি জীবনের বড় একটি সময় ব্যাপী পাক্কা মুশরিক ছিলেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : মিথ্যাবাদির উপর উপর আল্লাহর লানত! আল্লাহকে ভয় করুন!

প্রফেসর মতিন খালেদ : মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মত একটি অকাট্য বিশ্বাস হচ্ছে, হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর এখনও ইন্তেকাল হয়নি। আল্লাহতায়ালা তাঁকে আকাশে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন। কেয়ামতের আগে তাঁর দ্বিতীয়বারের আগমন ঘটবে। তিনি ফিলিস্তিনের লূদ নামক ফটকে মাসীহে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তিনি চল্লিশ-পয়তাল্লিশ বছরের মধ্যে ইন্তেকাল করবেন। মদীনায় রাসূল (সাঃ) এর রওজায় তাঁর দাফন হবে। সেখানে তাঁর কবরটি চতুর্থতম কবর হিসেবে গণ্য হবে।

কিন্তু মির্যা সাহেব এর বিপরীতে ফতুয়াবাজি করে লিখেছেন, ঈসা (আঃ) আকাশে জীবিত—এ ধরণের বিশ্বাস শিরিক। (রূহানী খাযায়েন ২২/৬৬০ দ্রষ্টব্য)।

অথচ মির্যা সাহেব মাসীহ ঈসা দাবীর পূর্ব পর্যন্ত নিজেও এগুলো বিশ্বাস করে আসছিলেন। যেমন তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, হযরত ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে নাযিল হবেন—আমার নিজেরও এই বিশ্বাস ছিল। (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২ দ্রষ্টব্য)।

এমনকি তিনি নিজেকে 'মাসীহ ঈসা' দাবীকরার পরেও আরো দশ বছর পর্যন্ত বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, ঈসা (আঃ) আকাশে জীবিত রয়েছেন। (আনওয়ারুল উলূম ২/৪৬৩ দ্রষ্টব্য ; মির্যার পুত্রধন বশির উদ্দিন মাহমুদ)।

এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, তিনি ইতিপূর্বে মুসলমানদের মতই যে বিশ্বাস পোষণ করে আসছিলেন পরবর্তীতে সেটি 'শিরিক' হলে তিনি নিজেই কি একজন মুশরিক হয়ে যাচ্ছেন না? এমতাবস্থায় সহজেই কথা উঠবে যে, যে দলের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই একজন পাক্কা মুশরিক তার অনুসারী আহমদিয়া সম্প্রদায় তারই উম্মতি হিসেবে কিভাবে হেদায়েত পেতে পারে? অথচ আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্টত বলেছেন, "তিনি মুশরিকদের কখনোই ক্ষমা করবেন না।" (সূরা নিসা, আয়াত ৪৮ দ্রষ্টব্য)। এখন এর কী হবে?



কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (আর কোনো জবাব দিলেন না। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললেন) কেউ কেউ তাদের বুযূর্গ লোকদের 'খাতামুল মুহাদ্দিসীন' কিংবা 'খাতামুল মুফাসসিরীন' টাইটেল দিয়ে থাকেন, যেমনিভাবে খোদাতায়ালা আপনা নবীর জন্য 'খাতামান নাবিয়্যীন' শব্দ ব্যবহার করেছেন। অথচ দেখা গেছে পরবর্তীতে অনেক কেউ মুহাদ্দিস কিংবা মুফাসসিরও হয়েছেন। সুতরাং বুঝা গেল, খাতাম শব্দের অর্থ—শেষ, একথা ঠিক না।

প্রফেসর মতিন খালেদ : সাধারণ মানুষের কথাবার্তায় এক—আধটু বাড়াবাড়ি কিবা ছাড়াছাড়ি থাকাটাই স্বাভাবিক। যেহেতু তারা না আল্লাহ আর না আল্লাহর মনোনীত কেউ। ফলে তাদের সে সমস্ত কথাবার্তা সত্যিকারের জ্ঞানীদের কখনোই আকৃষ্ট করতে পারেনা।

পরন্তু আমাদের প্রতি আল্লাহতায়ালার নির্দেশ এই যে, মতভেদপূর্ণ বিষয়ের মীমাংসার জন্য একমাত্র 'সালিশ' হবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল। অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার বিপরীতে সাধারণ কারো যে কোনো কথা-ই মূল্যহীন।

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : 'খাতাম' শব্দটি যখন কোনো বহুবচনাত্মক শব্দের সাথে যুক্ত থাকবে তখন সেটি কোনোভাবেই শেষ—অর্থের জন্য হয় না। কেননা আরবী ভাষায় এর কোনো উদাহরণ নেই।

প্রফেসর মতিন খালেদ : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব নিজেকে তার পিতামাতার সর্বশেষ সন্তান বুঝাতে লিখেছেন 'খাতামুল আওলাদ'। (রূহানী খাযায়েন ১৫/৪৭৯ দ্রষ্টব্য)। তো এখানে 'আওলাদ' শব্দ কি বহুবচনাত্মক নয়?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তিনি সীমাহীন পেরেশান হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন) 'খাতাম' শব্দের আক্ষরিক অর্থ—আফদ্বল তথা শ্রেষ্ঠ।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এটা আপনার মুখের কথা। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, দুনিয়ার কোনো আরবী ডিকশনারি থেকে 'খাতাম' এর এমন অর্থ কস্মিনকালেও প্রমাণ করতে পারবেন না।

সে যাইহোক, তর্কের খাতিরে মানলাম 'খাতামুন নাবিয়্যীন' অর্থ আফদ্বালুন নাবিয়্যীন'। কিন্তু মির্যা সাহেবের বইয়ের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন

اللهم صل على نبيك و حبيبك سيد الانبياء و افضل الرسل و خير المرسلين و خاتم النبيين

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি আপনার নবী ও বন্ধুর উপর রহম করুন যিনি সাইয়েদুল আম্বিয়া এবং আফদ্বালুর রসুল এবং খায়রুল মুরসালিন এবং খাতামুন নাবিয়্যীন। (বারাহীনে আহমদিয়া, রূহানী খাযায়েন ১/২৭২ দ্রষ্টব্য)। এখানে খেয়াল করুন 'আফদ্বালুর রসুল' এর একটু পরেই 'খাতামুন নাবিয়্যীন' শব্দ চয়িত হয়েছে। ফলে বুঝা গেল মির্যা সাহেবের দৃষ্টিতেও 'খাতাম' আর 'আফদ্বাল' সমার্থক নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন অর্থের জন্য! নতুবা 'আফদ্বালুর রসুল' এর একটু পরেই 'খাতামুন নাবিয়্যীন' এর পুণঃ উল্লেখ অনর্থক বৈ কিছুই না। এখানে কী বলবেন!

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (কোনো জবাব না দিয়ে বললেন) খাতাম—অর্থ মোহরও। কাজেই 'খাতামুন নাবিয়্যীন' এর মর্মার্থ নবীগণের মোহর। তথা নবীকরীম (সাঃ) যার উপর মোহর লাগিয়ে দেন সেই কেবল নবী হবেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : এটাও আপনার নিজের মুখের কথা। সম্পূর্ণ ভুল ও ভ্রান্ত কথা। আরবী ভাষায় এধরনের কোনো কথারই উদাহরণ নেই। সে যাইহোক, এবার আপনার কথায় ফিরে আসি। মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন বনী ইসরাইলের 'খাতামুল আম্বিয়া' এর নাম ঈসা (আঃ)। (রূহানী খাযায়েন ২১/৪১২ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'খোদাতায়ালার কিতাব সমূহে মাসীহে মওঊদ এর কয়েকটি নাম রয়েছে। তার একটি 'খাতামুল খোলাফা'। (রূহানী খাযায়েন ২৩/৩৩৩ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন, কুরআন শরীফ হচ্ছে 'খাতামু কুতুবি সামাভী' অর্থাৎ কুরআন শরীফ সমস্ত আসমানী কিতাবের খাতাম। (রূহানী খাযায়েন ৩/১৭০ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'শরীয়তে মুহাম্মদিয়া হচ্ছে খাতামুশ শারায়ি অর্থাৎ পূর্ববর্তী সমস্ত শরীয়তের খাতাম। (রূহানী খাযায়েন ২৩/৩৪০ দ্রষ্টব্য)।

এখন আমার প্রশ্ন হল, আপনি বললেন 'খাতামুন নাবিয়্যীন' এর মর্মার্থ নবীগণের মোহর। তার মানে নবীকরীম (সাঃ) যার উপর মোহর লাগিয়ে দেন সেই কেবল নবী হবেন। (নাউযুবিল্লাহ)। তাহলে ঈসা (আঃ) মোহর লাগিয়ে বনী ইসরাইলের কয়জনকে নবী বানালেন? নতুবা তিনি বনী ইসরাইলের 'খাতামুল আম্বিয়া' হবার কী অর্থ?

অনুরূপভাবে শেষ যুগে আগত মাসীহ মওঊদ তিনিও 'খাতামুল খোলাফা' হবার অর্থ দাঁড়াল, তিনিও মোহর লাগিয়ে আরো বহু খলিফা বানাবেন! অথচ মির্যা সাহেব 'খাতামুল খোলাফা' এর অর্থ করেছেন—ইয়ানী এইসা খলিফা জু ছব চে আখের আনে ওয়ালা হে। (রূহানী খাযায়েন ২৩/৩৩৩ দ্রষ্টব্য)। তো সবার শেষে আগত যেই পুরুষটা 'খাতামুল খোলাফা' টাইটেল পেলেন তাঁর মোহর দ্বারা এখন অন্য কেউ খলিফা হতে গেলে তখন সেই আগত পুরুষটা 'শেষে আগমনকারী' হন কিভাবে? পুরো ব্যাপারটাই জগাখিচুড়ি হয়ে গেল কিনা?

অনুরূপ আপনি না পারবেন 'খাতামু কুতুবি সামাভী' অর্থাৎ কুরআন শরীফ সমস্ত আসমানী কিতাবের খাতাম—একথার পরিস্কার কোনো সমাধা দিতে, আর না পারবেন শরীয়তে মুহাম্মদিয়া পূর্ববর্তী সমস্ত শরীয়তের খাতাম—এরও কোনো ব্যাখ্যা দিতে!

সুতরাং খাতামুন নাবিয়্যীন এর ভেতর 'খাতাম' অর্থ মোহর (সীল) ধরে এমন মর্মার্থই নেয়া অপরিহার্য যা রাসূল (সাঃ) এর বাণী—লা নাবিয়্যা বা'দী (আমার পরে আর কোনো নবী নেই)'র বিরুদ্ধে যায়না। অর্থাৎ তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবুওতের দ্বার মোহর মেরে চিরতরে বন্ধ করা হয়েছে—এমন অর্থই সঠিক। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি 'খাতাম' শব্দকে 'মোহর' ধরে নিজ থেকে যেই ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন তা সুস্পষ্ট ভুল। নতুবা আমার প্রশ্নগুলোর কী জবাব?

কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (লা-জবাব)।

প্রফেসর মতিন খালেদ : ১৮৯১ সালের আগের কথা মির্যা সাহেব তখনও নিজেকে নবী দাবী করেননি। দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের মত তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, রাসূল (সাঃ)-এর আগমনের মাধ্যমে নবুওতের ক্রমধারা রুদ্ধ হয়ে গেছে। এখন আর জিবরাইল ফেরেশতা কারো নিকট ওহী নিয়ে আসবেন না। নবুওতি ওহীর দরজা কেয়ামত পর্যন্ত আর কারো জন্য খোলা হবেনা।

তিনি (মির্যা সাহেব) সূরা আহযাব এর ৪০ নং আয়াতের অনুবাদ নিজেই করেছেন—আওর খতম করনে ওয়ালা নাবিয়ুঁ কা। অর্থাৎ এবং (তিনি) নবীগণের আগমনীধারা সমাপ্তকারী। (ইযালায়ে আওহাম ৬১৪; রূহানী খাযায়েন ৩/৪৩১ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'হ্যাঁ তিনি (মুহাম্মদ) আল্লাহর রাসূল এবং নবীগণের আগমনীধারা সমাপ্তকারী।'

আরো লিখেছেন 'আর যদি আমরা হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর কোনো নবীর আত্মপ্রকাশ হওয়ার বৈধতা দিই তাহলে তো আমরা নবুওতি ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেটি খোলার বৈধতা দিলাম, যা সুস্পষ্টরূপে বাতিল।'

তিনি আরো লিখেছেন 'এবং আমাদের রাসূলের পর আর কোনো নবী কিভাবে আসতে পারে যেখানে উনার (সাঃ) ইন্তেকালের পর ওহী (আসা) বন্ধ হয়ে গেছে এবং আল্লাহতায়ালা উনার মাধ্যমে নবীগণের আগমনীধারা সমাপ্ত করে দিয়েছেন!' (হামামাতুল বুশরা ৩৪; রূহানী খাযায়েন ৭/২০০)।

তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন 'এমনিভাবে আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম—এবং ওয়ালাকির রাসূলাল্লাহি ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন—আয়াতদ্বয়ে সুস্পষ্টভাবে নবুওতকে হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সমাপ্ত করে দিয়েছেন এবং পরিস্কার শব্দে বলে দিয়েছেন, হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন খাতামুল আম্বিয়া।' (রূহানী খাযায়েন ১৭/১৭৪ দ্রষ্টব্য)।

তিনি আরেক জায়গায় আরো লিখেছেন 'সাইয়েদানা মওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর যে কোনো নবুওত এবং রেসালতের দাবীদারকে আমি মিথ্যুক এবং কাফের মনে করি। আমার বিশ্বাস, ওহী রেসালত হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু হয়েছে এবং জনাবে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সমাপ্ত হয়ে গেছে।' (মাজমু'আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩০-৩১; নতুন এডিশন)।

সব শেষে আরেকটি উদ্ধৃতি দেব। মির্যা সাহেব তার বইয়ের আরেক জায়গায় লিখেছেন

میرے ساتھ ایک لڑکی پیدا ہوئی تھی جسکا نام جنت تھا اور پہلے وہ لڑکی پیٹ میں سےنکلی تھی اور بعد اسکی میں نکلا تھا اور میرے بعد میرے والدین کیے گھر میں اور کوی لڑکی یا لڑکا نہیں ہوا اور میں ان کیلئے خاتم الاولاد تھا۔

অর্থাৎ আমার সাথে জমজ একটি বোন(ও) জন্মেছিল। যার নাম ছিল জান্নাত। প্রথমে সে পেট থেকে বের হয়েছিল। তারপর আমি বের হয়েছিলাম। আমার মাতা পিতার ঘরে আমার পরে আর কোনো সন্তান সন্ততি জন্মেনি এবং আমি তাদের জন্য ছিলাম একজন 'খাতামুল আওলাদ'। (তিরয়াকুল কুলূব ৩৫১; রূহানী খাযায়েন ১৫/৪৭৯ দ্রষ্টব্য)।

উপরে উল্লিখিত উদ্ধৃতিগুলোর বিচারে যে কেউই বুঝতে পারবে যে, মির্যা সাহেব নিজেও 'খাতামুন নাবিয়্যীন' বলতে—সর্বশেষ নবী অর্থ নিতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে, মুহাম্মদে আরাবী (সাঃ) এমন শেষনবী যার পরে নবুওতি ওহীর দরজা আর কারো জন্য খোলা হবেনা।

এখন যেই কথা বলতে চাই তা হল, পরবর্তীতে হতভাগা মির্যা সাহেব আগের সব কথা বেমালুম ভুলে যান। গিরগিটির মত আগের সব রূপ বদলে ফেলেন। নিজেকে নবী রাসূল দাবী করেন এবং তা পাকাপোক্ত করতে পবিত্র কুরআনের 'খাতামান নাবিয়্যীন' এর আয়াতের সুপ্রাচীন ও সুপ্রতিষ্ঠিত মর্মার্থের বিপরীতে ইচ্ছেমত লিখে গেলেন! কিন্তু যাইচ্ছেতাই লিখার এই অধিকার তাকে কে দিল? 'খাতাম' শব্দের সুপ্রতিষ্ঠিত মর্মার্থ ইসলামের গত তেরশত বছর পরে মির্যা সাহেবের সময় এসে কি পালটে গেল? নাকি ইসলাম ইতিপূর্বে অসম্পূর্ণ ছিল পরবর্তীতে মির্যা গোলাম আহমদ সেটিকে পূর্ণতা দিয়েছে—বলবেন? আস্তাগফিরুল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ!


কাদিয়ানী মুনাজির শাহিদ বশির : (তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। অসহায়ত্বের চিহ্ন ফুটে উঠে তার পুরো চেহারায়। দেখে খুবই মায়া লাগছিল। তিনি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন) হাদীসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) হযরত আলীকে সম্বোধন করে বলেছেন 'আনতা মিন্নী বি—মানজিলাতি হারূনা মিন মূসা'। (তিরমিযী শরীফ)। অর্থাৎ 'হে আলী! তুমি (দায়িত্ব পালনের দিক থেকে) আমার নিকট সেই মর্যাদায়, হারূন মূসার নিকট যে মর্যাদায়।'

এখানে হারূন (আঃ)-এর মর্যাদার সাথে আলীকে তুলনা করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, নবুওতের দ্বার খোলা রয়েছে। যেহেতু হযরত হারূন (আঃ) একজন নবী ছিলেন।

প্রফেসর মতিন খালেদ : আপনি কিন্তু হাদীস উল্লেখ করার ক্ষেত্রে মারাত্মক খেয়ানত করেছেন! হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম দুটো কিতাবেই রয়েছে। হাদীসটির শেষাংশে পরিস্কার এটাও উল্লেখ আছে—ইল্লা আন্নাহু লা নাবিয়্যা বা'দী। অর্থাৎ (হে আলী) তবে কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী নেই। (দেখুন, সহীহ বুখারী ২/৬৩৩; সহীহ মুসলিম ২/২৭৮)। এবার নিজের বিচার নিজে করুন। আপনি যেই হাদীস দ্বারা নবুওতের দরজা খুলতে চাচ্ছিলেন সেই হাদীসের শেষের অংশটুকু আমাদের পরিস্কার বলছে, না না; নবুওতের দরজায় সীল লেগে গেছে। এই সীল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করার ক্ষমতা কারো নেই।

এখন প্রসঙ্গ থাকল, হাদীসে হারূন (আঃ) এর সাথে আলী (রাঃ) এর প্রাসঙ্গিকতা কী? তার উত্তরে শুধু এটুকু বলব, আপনি সূরা আ'রাফ, আয়াত নং ১৪২ দেখে নিন*।

وَ وٰعَدۡنَا مُوۡسٰی ثَلٰثِیۡنَ لَیۡلَۃً وَّ اَتۡمَمۡنٰہَا بِعَشۡرٍ فَتَمَّ مِیۡقَاتُ رَبِّہٖۤ اَرۡبَعِیۡنَ لَیۡلَۃً ۚ وَ قَالَ مُوۡسٰی لِاَخِیۡہِ ہٰرُوۡنَ اخۡلُفۡنِیۡ فِیۡ قَوۡمِیۡ وَ اَصۡلِحۡ وَ لَا تَتَّبِعۡ سَبِیۡلَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ

অর্থাৎ 'আরো স্মরণ করুন, মূসার জন্য আমি ত্রিশ রাত্রি নির্ধারিত করি এবং আরো দশ দিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয়। আর মূসা তার ভ্রাতা হারূনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে (চল্লিশ দিন) আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না।'

সম্পর্কিত তথ্য—ফিরআউন ও তার দলবলকে ধ্বংস করার পর প্রয়োজন দেখা দিল যে, বানী ইস্রাঈলদের হিদায়াত ও পথ নির্দেশনার জন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ তাদেরকে দেওয়া হোক। সেই জন্য মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে ত্রিশ রাত্রির জন্য ত্বূর পাহাড়ে আহবান করলেন, পরে আরো দশ রাত্রি যোগ করে পুরো চল্লিশ রাত্রি করা হল। মূসা (আঃ) যাওয়ার সময় তাঁর সহোদর ভাই নবী হারূন (আঃ)-কে নিজের স্থলাভিষিক্ত করলেন; যাতে তিনি বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে হিদায়াত ও সংশোধনের কাজ চালিয়ে যান এবং তাদেরকে সকল বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন। এই আয়াতে এ সব কথাই বর্ণিত হয়েছে।

হারূন (আঃ) নিজেও নবী ছিলেন, সংশোধনের দায়িত্বভার তাঁর উপরও ছিল। মূসা (আঃ) শুধুমাত্র উপদেশ ও সতর্কতা স্বরূপ এ কথাগুলো বলেছিলেন। অনুরূপ কোনো এক জিহাদে যাওয়ার সময় রাসূল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে সাথে না নিয়ে মদীনায় রেখে যান। সে হিসেবে মদীনার দায়িত্বভার তাঁর উপর-ই ছিল। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) জিহাদে অংশগ্রহণ করতে না পারায় বিষণ্ণতায় ভুগতেছিলেন। তখন তাঁকে প্রশান্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে রাসূল (সাঃ) বললেন, হে আলী! হযরত হারূন (আঃ) দায়িত্বভার গ্রহণকরার ক্ষেত্রে মূসার যেমন স্থলাভিষিক্ত ছিলেন তেমনি দায়িত্বভার গ্রহণের ক্ষেত্রে তুমিও আমার স্থলাভিষিক্ত। রাসূল (সাঃ) তার পরেই সাথে সাথে বলে দিয়েছেন—তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, আমার পর আর কোনো নবী নেই। সুতরাং এই হাদীস খতমে নবুওতের পক্ষের অন্যতম দলিল-ই বটে।

কামিয়াব মুনাজারা'র বঙ্গানুবাদ

অনুবাদক : মুহাম্মদ নুরুন্নবী এম.এ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×