somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানের অধিকার : আইন ও বাস্তবতা

০৭ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলিম পারিবারিক আইনে পিতার উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের অংশ স্বয়ং পবিত্র কুরআন দ্বারা নির্ধারিত। ফারায়েযের নিয়মানুসারে সহোদর ভাইয়ের অবর্তমানে এক বোন থাকলে সেই বোন পাবেন পিতার মিরাসি সম্পত্তির পুরো অর্ধেক। বোনের সংখ্যা একের অধিক হলে সেক্ষেত্রে তারা সমষ্টিগতভাবে সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবেন। আর সহোদর ভাইয়ের বর্তমানে বোন পাবেন ভাইয়ের অর্ধেক। ইসলামের এই সুবিন্যস্ত বণ্টন পদ্ধতিতে পৈত্রিক উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তান একটি সম্মানজনক অংশ পেয়ে থাকেন, যা তার সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

পিতার মিরাসি সম্পত্তি থেকে কন্যা সন্তানের এই নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণের অধিকার ইসলাম ও আমাদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই নারীরা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আইনানুসারে কন্যা সন্তানকে সম্পত্তির অংশ দেবার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তারা তা পাচ্ছেন না বললেই চলে। দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল ছাড়া প্রায় সবখানেই কন্যা সন্তানদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার একটি সামাজিক ট্র্যাডিশন তৈরি হয়ে গেছে।

পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে নারীদের বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজগুলোতে দু’ধরনের প্রথা গড়ে ওঠেছে। কোনো কোনো সমাজে প্রথাটি এমন যে, উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের সময় কন্যা সন্তানকে তার অংশ দেয়া হবে বটে; কিন্তু সেই নারীটি তার সম্পত্তি গ্রহণ করবেন না; বরং তার ভাইদের জন্যে তার অংশটুকু ছেড়ে দেবেন। এই প্রথার বাস্তবায়নে নারীর মাঝে সমাজ এক বিশেষ ধারণা তৈরি করেছে। তা হলো, পিতার সম্পত্তির অংশ কড়ায়-গণ্ডায় গ্রহণ করলে ভাইদের কাছে ভবিষ্যতে বোনদের আর কোনো দাবি-দাওয়া অবশিষ্ট থাকবে না। মামা বাড়িতে থাকবে না ভাগ্নে-ভাগ্নি কিংবা বোন জামাইয়ের কদর! সুতরাং, জমির দাবি উত্থাপন করে ভাইদের সাথে বাদানুবাদে না জড়ানোই শ্রেয় মনে করেন তারা।
কোনো কোনো অঞ্চলে আবার কন্যা সন্তানদের বঞ্চিত করা হয় আরেকটি প্রতারণার মাধ্যমে। উত্তরাধিকার সম্পত্তির অংশ তাদের দেয়া হয় ঠিকই, কিন্তু তারা তা নিজেদের মালিকানায় ধরে রাখতে পারেন না বেশিদিন। খুব সত্বর ভাইদের কাছে নিজেদের অংশ বিক্রি করে দিয়ে আসতে হয় তাদের। এক্ষেত্রে কোনো কোনো স্থানে ভাইয়েরা বোনদের প্রাপ্ত সম্পত্তি বাজার দরে কিনে নিলেও অধিকাংশ জায়গাতেই বোনদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়।

এভাবে বিভিন্ন আকৃতিতে আমাদের সমাজে নারীরা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোথাও তাদের বোঝানো হচ্ছে যে, সম্পত্তি নিয়ে নিলে ভাইদের সাথে বোনের সুসম্পর্ক ব্যাহত হবে। আবার কোথাও কোথাও সম্পত্তি নিজ মালিকানায় রাখবার ব্যাপারে তাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সামাজিকভাবে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে ভাইদের কাছে জমি বিক্রি করে দিয়ে আসতে। এর প্রত্যেকটিই নারী অধিকারহীনতার একেকটি অনাকাক্সিক্ষত রূপ।
আমাদের দেশে নারীবাদীরা উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের অংশ সমান করবার আন্দোলনে বেশ সরব। কিন্তু তারা এটি ভেবে দেখছেন না যে, মুসলিম আইনানুসারে নারীর যে পরিমাণ অংশ পাবার কথা, সেটুকুও তারা পাচ্ছেন না আমাদের এ সমাজব্যবস্থায়। যৌতুক, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি ইস্যুতে জনসচেতনতা বাড়াবার বহু কর্মসূচি দেখা গেলেও নারীকে সম্পত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ব্যাপারে নারীবাদীদের কোনো ভূমিকাই এখন পর্যন্ত লক্ষ্যণীয় নয়।

নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাওয়া এবং তা নিজ মালিকানায় রাখবার ব্যাপারে নারীর আইনানুগ অধিকার রয়েছে। এ অধিকার বাস্তবায়িত হচ্ছে না সমাজের বিকৃত ও সঙ্কীর্ণ মানসিকতার কারণে। নারীসমাজকে তাদের এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন ও বলিষ্ঠ হতে হবে। সাথে সাথে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নারীর সম্পত্তি গ্রহণ ও তা নিজ মালিকানায় রাখবার অধিকারের ব্যাপারে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আর এর সবই করতে হবে সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। মিডিয়াকে এব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা পালনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:১১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×