ছবিঃ রাজিব
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বাংগালি, একজন বাংলাদেশী এবং একজন আলোর মানুষ।
জন্মগ্রহন করেন- ২৫ জুলাই ১৯৩৯, পার্ক সার্কাস, কলকাতায়।
১৯৫৫ সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।
১৯৬০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
উনার পরিচয়? বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক। এছাড়াও কবি , উপস্থাপন ও লেখক হিসেবে বেশ সুনাম আছে। ৭০ এর দশকে বাংলাদেশের বেশ আলোচিত ও গ্রহনযোগ্য টিভি উপস্থাপক হিসেবে সুনাম কুড়ান।
তবে সব ছাড়িয়ে উনার একটা যোগ্যতা উনাকে সবার চেয়ে আলাদা করে তুলেছে- এডুকেটর বা শিক্ষাবিদ।
তার অবদান বা তার প্রাপ্তি নিয়ে লিখতে হলে মহাকাব্য হয়ে যায়-
২০০৪ সালে তিনি রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন।
বাংলাদেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০৫ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন ।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন থেকে পালমোকন-১৭ সম্মাননা পান।
৬০ এর দশকে বাংলাদেশে সাহিত্য আন্দোলনের নতুন ধারার তিনিই অগ্রগামী ছিলেন। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বেগবান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে।
তবে সব ছাড়িয়ে দেশের জনগনের জন্য যে কাজটা করে অমর হয়ে রয়েছেন তা হল- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রসঙ্গে বলেন-
দেশের এই সার্বিক অবক্ষয় এবং সম্ভাবনাহীনতার ভেতর সীমিত সংখ্যায় হলেও যাতে শিক্ষিত ও উচ্চমূল্যবোধসম্পন্ন আত্মোৎসর্গিত এবং পরিপূর্ণ মানুষ বিকশিত হওয়ার পরিবেশ উপহার দেয়া যায়, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। একজন মানুষ যাতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অধ্যয়ন, মূল্যবোধের চর্চা এবং মানবসভ্যতার যা-কিছু শ্রেয় ও মহান তার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বসম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠতে পারে- আমরা এখানে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। কাজেই আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রাণহীন, কৃত্রিম, গতানুগতিক প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি সর্বাঙ্গীণ জীবন-পরিবেশ।
দেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা ও লাইব্রেরির বাজে অবস্থা অনুধাবন করে চালু করেন- ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি ১৯৯৮ সালে। যা বাংলাদেশের সাহিত্য বা শিক্ষায় একটা যুগান্তকারী অবদান বলে ধরা হয়।
আমার মনে আছে- ক্লাস ৬/৭ এ থাকতে, ২০০০ এর দিকের কথা। সপ্তাহে রবিবার বিকালের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কারন কবে গাড়ি আসবে আর ৩ ঘন্টা বই পড়তে পারব প্লাস আবার বই বাড়িতে আনতে পারব। আমার মত শত শত ছেলে মেয়ে অপেক্ষা করত সেই সময়ে।
কিন্তু দেশের একটা বিরাট আপামর জনগনের কাছে আব্দুল্লাহ সায়ীদ সাহেব একজন শত্রু এবং উনার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র একটা পাপকেন্দ্র।
কেন? কারন উনি জাতিকে, জাতির নতুন মাথা গুলোকে, বাচ্চা গুলোকে পড়তে শিখিয়েছেন। দুনিয়ার আনাছে কানাছে থেকে বের করে এনেছেন বিশ্বসাহিত্য এর ভান্ডার গুলো এবং সেগুলোকে অনুবাদ করে ছড়িয়ে দিয়েছেন আমাদের শিশু কিশোর দের মাঝে।
তবে, সবচেয়ে বড় যে কাজটা করেছেন- তা হল বই পড়া আন্দোলন। বই পড়া একটা হেলদি অভ্যাস এবং এই কাজ আমাদের ব্রেন এর ডেভেলপমেন্ট এ সাহায্য করে, এটা বাচ্চাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বেশ ভাল করে।
এই মানুষ কে বই পড়ানো মোদ্দা কথা স্কুলের ছোট্ট গন্ডির বাইরের বইএর আর জ্ঞানের যে বিশাল জগত আছে এটার সাথে পরিচয় করানোর কারনে উনার উপর একটা মহল বিশাল রকমের ক্ষেপা।
কারা সেই ক্ষেপা জনগন?
এরা হল- মুক্ত চিন্তার বিরোধী , ইব্রাহিমস্টাইন এর ভক্ত , মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, তারেক মনোয়ারের গুণগ্রাহী, আল্লামা চন্দ্রপুরীর মুরিদ, মাদ্রাসার হুজুর , আরিফ আজাদ গং এবং সকাল বিকাল স্লোগান দেয়া আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান এর স্বপ্নদ্রষ্টা।
এদের কিছু কমন প্যাটার্নঃ
এরা নারী শিক্ষার বিরোধী, এরা মেয়ে মানে বোঝা মনে করে, এদের কাছে নারী মানে সেক্স স্লেভ আর দাসী। এরা রবীন্দ্রনাথ কে ঘৃণা করে, আবার নজ্রুলের মত চরম নাস্তিক কেও তাদের ধর্ম কবি হিসেবে মানে। এরা মুক্তিযুদ্ধকে ঘৃণা করে, শেখ মুজিব কে ঘৃনা করে। এদিকে আবার শেখ সাবের সহযোগী দের ভালোবাসে। এরা বেগম রোকেয়া কে ঘৃনা করে। এরা নারী জাগরন কে ঘৃণা করে। এদের কাছে আল্লামা চন্দ্রপুরী চাদের বুড়ির সাথে সহবতে সমস্যা থাকেনা তবে চাদে মানুষ যেতে পারে এতে তাদের চরম সন্দেহ। এরা জাফর ইকবাল কে চরম ঘৃনা করে। এরা বিগ ব্যাং আর বিবর্তন কে মিথ্যা বলে জানে ও মানে। এদের কাছে ধর্মের ও জ্ঞানের শেষ কথা আরিফ আজাদ। এরা জীবনানন্দ, শরৎচন্দ্র , সুকান্ত কে ঘৃনা করে কিন্তু আল মাহমুদ ও ফররুখ আহমদ কে সেরা কবি মানে।
এরা আরজ আলীকে ঘৃণা করে, এরা জ্ঞান বিজ্ঞান কে ঘৃণা করে। এরা নাস্তেক নাসারা দের ফেসবুক ইন্টারনেট চালিয়ে সেখানেই তাদের মুন্ডুপাত করে।
এদের সবচেয়ে বড় মিল- এরা পড়াশুনা বা শিক্ষিত হওয়া কে ঘৃণা করে, কারন মানুষের জ্ঞান চক্ষু খুলে গেলেই মানুষ বুঝে ফেলবে এতদিন যে ধর্মের জুজু দেখিয়ে তাদের কে দমিয়ে রাখা হয়েছিল সব মিথ বা অলৌকিক গালগল্প।
এদের কাছে- ইবনে সিনা বড় আকারের বিজ্ঞানী কিন্তু তাকে কে নাস্তিক ঘোষনা দিয়ে দেশ ছাড়া করেছিল ধার্মিক রা তা চেপে যায়।
এরা নাস্তে নাসারা দের বিরোধীতা করায় কিংবা একটা মিসাইল এর সফল উতক্ষেপন দেখে ইরানের অর্গাজমে সুখ পায় আবার তাদের বাসার পাশে বসবাস কারী শিয়া, কাদিয়ানী পরিবার টাকে সমাজ ছাড়া করতে সবার আগে উঠে পড়ে লাগে।
এরা হল- সমাজের সেই আবর্জনা যাদের কে যতই ডাস্টবিনে ফেলে আসেন না কেন, কিছু কুত্তা সেই আবর্জনা মুখে করে আবার নিয়ে এসে আপনার বাসার সামনে রেখে যাবে যেখান থেকে যুগের পর যুগ দুর্গন্ধ ছড়াবেই।
এরাই বাংলাদেশ, এরাই বাংগালি। এরাই ধার্মিক, এরাই একমাত্র সহীহ জান্নাতি।
এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এই শুয়োর গুলো বিশাল সংখ্যায়। ভালো মানুষ দের তুলনায় তাদের ঘোত ঘোত এর পরিমান অনেক অনেক বেশি। কারন- তারা জানে, মানুষ কে আলোর পথ দেখানো মানেই মানুষ তাদের শুয়োর এর খামার থেকে বেরিয়ে মুক্তির পথ খুজে নিবে।
তাই আলোর পথ দেখানো মানুষ দের দমাতেই হবে। যে করেই হোক।
এত বড় লিখার কারনঃ আজকে ব্লগে ১ম পাতায় সায়ীদ সাহেব কে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া একটা লিখা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:২৭