somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাসউদুর রহমান রাজন
আমি মাসউদুর রহমান, আব্বা আম্মা ডাকেন রাজন নামে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পারফর্মিং আর্টস-এর শিক্ষক। ফিল্মমেকিং, অভিনয়, পাবলিক স্পিকিং, প্যান্টোমাইম- এইসব বিষয় পড়াই। এর আগে স্কুলে মাস্টারি করতাম। শিক্ষকতা আমার খুব ভালোবাসার কাজ।

মাননীয় চার্লি

০৮ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“সবাক ছবি যেমন প্রমোদের উপকরণ, নির্বাকও তো তাই। দর্শক মনে সবাকের স্থান থাকলে নির্বাকের জন্যও থাকবে। তাছাড়া আমি মানুষটা যতটা না অভিনেতা, তার চেয়ে অনেক বেশি মূকাভিনয় শিল্পী। বলতে গেলে মূকাভিনয়ের জগতে আমি মস্ত এক কেউকেটা। সে নিজেও বুঝি আমি, অন্যান্যরাও বোঝেন, জানেন। সুতরাং নির্বাক ছবিই তুলব আমি।”
-চার্লি চ্যাপলিন

লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের হাত ধরে চলচ্চিত্রের যে নির্বাক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, মজার ব্যাপার হলো, শিল্প হিসেবে তার সফল পরিণতি ঘটে, সবাক চলচ্চিত্রের যুগে। সবাই যখন চলচ্চিত্রে সংলাপের ব্যবহার নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মত্ত, তখন তিনি চললেন উল্টো পথে, তাঁর নির্মিত, অভিনিত ৮১টি সিনেমার ৭৫টিই হলো নির্বাক। তাঁর এই একগুঁয়ে নির্বাকতা ছাড়িয়ে যায় সব সবাকতাকে। সংলাপের সামর্থ যেখানে শেষ যেন তার নির্বাকতার শুরুটাই সেখান থেকে। তিনি চার্লি চ্যাপলিন। একজন মূকাভিনেতা, একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, একজন চিত্রনাট্যকার, সর্বোপরি একজন জনদরদী অমর শিল্পী তিনি। সংলাপ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে কত বিচিত্র বৈভবে ভাষাকে, অভিব্যক্তিকে, মনের ভাবকে প্রকাশ করা যায়, বেতের ছড়ি হাতে চ্যাপলিন তা দেখিয়ে গেছেন।

১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল চার্লস স্পেন্সর চ্যাপলিনের জন্ম। বাবা চার্লস চ্যাপলিন, মা হান্না হিল। অকল্পনীয় কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে কেটেছে চার্লির শৈশব। মা নাচতেন মঞ্চে। মায়ের অসুস্থতার কারণে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মায়ের স্থলে তাকে মঞ্চে নাচতে হয়েছিল। বারো বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। এর ঠিক অল্প পরেই তার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন চার্লি সম্পূর্ণ কপর্দকহীন অবস্থায় পথে নামেন। ১৯০৬ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত বিখ্যাত ফ্রেডকার্নো থিয়েটার কোম্পানির সদস্য হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা। ১৯১৪ সালে কিস্টোন ফিল্ম কোম্পানির প্রযোজনায় চার্লির প্রথম অভিনীত ১ রীলের ছবি Making a Living প্রদর্শিত হয়। এরপর চার্লিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তী এক বছরে একই কোম্পানি থেকে একে একে চার্লির ৩৫ টি নির্বাক ছবি নির্মিত হয়, যার ২৩ টির পরিচালনায় ছিলেন চার্লি নিজেই। সেই থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত সর্বমোট একাশিটি ছবিতে তিনি কখনো পরিচালক, কখনো প্রধান চরিত্রে, কখনো কাহিনীকার আবার কখনো অতিথি শিল্পী হিসেবে, বিচিত্র পরিচয়ে যুক্ত থেকেছেন তিনি।

ছোট ছোট এক রীল কিংবা আধা রীলের স্লাপস্টিক কমেডি দিয়ে যাত্রা শুরু করে চ্যাপলিন বানিয়েছেন A Dog’s Life, The Kid, The Gold Rush, The Circus, City Lights, Modern Times, The Great Dictator, Mansieur Verdoux এবং Limelight এর মতো অসাধারণ কাহিনী নির্ভর সব ছবি। A Dog’s Life ছবিতে ছবিতে সর্বহারা মানুষ আর কুকুরকে সমান্তরালে দেখানো হয়েছে। বুর্জোয়া সমাজে নিম্নবিত্তদের মূল্য একটা কুকুরের চেয়েও তুচ্ছ, অথচ একটা কুকুর আর একজন সর্বহারা যেমন পরস্পরের দুঃখের সঙ্গী আবার একইভাবে সুদিনেও তারা একই সাথে থাকে। একটা কুকুর আর একজন রাস্তার মানুষ যেন একই পরিবারের সদস্য। A Dog’s Life যেন সেটাই মনে করিয়ে দেয়।
চার্লির অসাধারণ সৃষ্টি The Great Dictator -এ প্রথম ব্যাপকভাবে সংলাপ ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিতে চার্লিকে দেখা যায় রাষ্ট্রনায়ক হিংকেলের ছদ্মবেশে হিটলারের ভুমিকায়।

চ্যাপলিনের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিয়ে অল্প পরিসরে কিছু বলা সম্ভব নয়। স্বপ্নবিলাসী এক ভবঘুরে কত দৃঢ় ও সাবলিলভাবে প্রচলিত সমাজকে, সমাজ ব্যবস্থাকে, উঁচুশ্রেণীর মানসিক ও মানবিক শূন্যতাকে তীক্ষ্ণ সূঁচ দিয়ে খুঁচিয়েছে, তা নিজ চোখে না দেখলে উপলব্ধি করার উপায় নেই।
১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর এই মহান শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×