শিরোচ্ছেদ আর অন্ধ শিশুটি .... আবদুল্লাহ-আল-মাসুম
লোকটি'র নাম আব্দুল হক ।
লোকটিকে গাছে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে হাতমোড়া করে বেঁধে ।
মৃৃত্যুর আগ পর্যন্ত চোখ মুখ বেঁধে হাত পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ ।
৪ ঘন্টা বাদে মাগরেবের পূর্বে , এই ব্যক্তির শিরোচ্ছেদ করা হবে , সর্বসম্মুখে ।
অনেক মানুষ তার দিকে পাথর ছুড়ে মারছে ।
থূ তু ছিটিয়ে দিচ্ছে ।
লোকটি গুরুতঢ় অণ্যায় করেছে ।
নিজের বাবা মা কে হত্যা করেছে ।
লোকটি তার অন্তিম মূহুর্তে শূধূ এক ফোটা পানি খেতে চাচ্ছে ।
গরম পানি দিয়ে দূর থেকে তার শরীরে ছিটিয়ে ফোসকা ফেলবার চেষ্টা চলছে ।
তাকে ঘৃনা জানাবার ভেতর দিয়ে সকলে অশেষ পূণ্য হাসিল করতে চাচ্ছে ।
লোকটির গায়ে ইরানী আতরের সুগন্ধ ।
অপরাধী হিসেবে তার গায়ের এই পবিত্র গন্ধ বড়ই বেমানান ।
একজন অন্ধ শিশু সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলো ।
লোকমুখে সব শূনে সে শূধূ একটাই প্রশ্ন করলো-
এই সুগন্ধ কি ঐ খুনী ব্যক্তির গা থেকে আসছে ?
একজন বললো - হ্যা , ঐ ব্যক্তিই এই সু গন্ধ ব্যবহার করে এই তল্লাটে ।
অন্ধ শিশুটি বললো- এ অসম্ভব ।
আমি পাশের পাহাড়ের অন্ধ বিদ্যালয় এর সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র ।
তোমরা আমাকে বিশ্বাস করো - এরকম দয়ালূ একজন মানুষ কোন অবস্থাতেই খূনী হতে পারে না।
সকলে বললো - তুমি তো অন্ধ । তাছাড়া শিশু । আমাদের কাজীর ওপর কী করে এই কথা বলছো ?
তোমরা আমাকে কাজীর কাছে নিয়ে চলো । বুঝিয়ে বলছি ।
কাজীর কাছে গিয়ে অন্ধ শিশূটি কাজীর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো ।
এই মানুষ খুনী হতে পারে না । যে মানুষের অন্তরে এতো দয়া, সে মানুষ মন্দ হতে পারে না।
তাকে রক্ষা করুন ।
কাজী বললেন - কয়েক ঘন্টা বাদে তার শিরোচ্ছেদ হবে । জল্লাদ তৈরি ।এ হয় না ।
সে অপরাধী । তাকে দন্ড পেতে হবে । কিন্তু আমি আশ্চর্য হে অন্ধ বালক, কেন তুমি তাকে সেই দয়ালু ব্যক্তি বলে ভুল করছো ? তুমি তো চোখে দেখতে পাও না ?
তাছাড়া - তুমি তার কে হও ?
কি দয়া সে করেছে আর কেনই বা এই লোককে সেই লোক ভেবে ভুল করছো ?
অন্ধ শিশুটি বললো- আমরা এতিম শিশূ । অণ্ধ । এই লোকটির ভেতর পেয়েছি পিতা আর মাতার স্নেহ ।তাকে আমরা ২ মাইল দূর থেকে ইরানী আতরের গন্ধ থেকে চিনি ।
সে আমাদের কেউ নয়, কিন্তু, সবকিছু ।
এই লোক কোনো অপরাধ করতে পারে না ।
কাজী , অন্ধ শিশূটিকে নিয়ে পৌঁছে গেলেন যেখানে শিরোচ্ছেদ হবার কথা ।
জনতার উদ্দেশ্যে বললেন- এই লোক গুরুতর অন্যায় করেছে ।একে এতো দ্রুত কতল করলে , তার প্রায়চ্ছিত্ত হবে না । তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করো । অনাহারে রাখো আরো কয়েকদিন ।
তারপর এর শিরোচ্ছেদ ।
এছাড়া , কাজীর কাছে আর কোনো বুদ্ধি ছিলো না ।
বিচারের দন্ড ঘূরিয়ে দিলে তাকে জনরোষে পড়তে হতো , তাছাড়া , ৪০ বছরে কোনো ভূল বিচার করেন নি তিনি, জানামতে ।
রাতের বেলা ছদ্মবেশে পুরো বিষয়টা তদন্ত করে - কাজী জানতে পারলেন - অন্ধ শিশূটি সঠিক বিচার করেছে , যা হাজারো খোলা চোখ পারে নি ।
মূল ঘটনা ছিলো এরকম -
পেয়াদার জমি;র সঙ্গে , আব্দুল হক এর জমি'র বিরোধের শত্রুতা মেটাতে শিরোচ্ছেদ হচ্ছিলো একজন দয়ালু ভালো মানুষের ।
একই নামে , অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছিলো এই সুযোগে ।
পরদিন , পেয়াদাকে ও সঠিক অপরাধীকে শিরোচ্ছেদ করা হলো আর অন্ধ শিশুটিকে ১০০ স্বর্ন মুদ্রা এবং কপালে কয়েকটি চুম্বন উপহার দিলেন বিচারক ।
লোকটি'র নাম আব্দুল হক । এই নামে একজন অপরাধীর সাজা হয়েছে । কিন্তু, তিনি অপরাধ করেন নি । তিনি হতে যাচ্ছিলেন - ব্যক্তিগত শত্রুতার , জিঘাংসার স্বীকার ।
অন্ধ শিশুটির বসঠিক বিচারের ভেতর দিয়ে কতো বড়ো অন্যায় থেকে একজন ভালো মানুষকে তিনি রক্ষা করতে পেরেছেন - তা ভেবে - তিনি সৃষ্টিকর্তাকে হাজারো শোকরিয়া জানালেন ।
আবদুল্লাহ-আল-মাসুম রচিত মৌলিক গল্প ।