somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন খলিলুল্লাহ কিংবা বাংলার এক মানুষ খেকো মানুষের গল্প......:o

০২ রা জুন, ২০১২ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭৫ সালের ৩ এপ্রিল। দৈনিক বাংলার একটি বক্স নিউজ পড়ে শিউরে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। ছবিতে দেখা যায় এক যুবক মরা একটি লাশের চেরা বুক থেকে কলিজা খাচ্ছে! ‘সে মরা মানুষের কলজে মাংস খায়!’ শিরোনামে খবরটি ছাপা হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়তে দুদিন লেগে যায়। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় খলিলুল্লাহ নামের এই মানুষখেকোকে এবং মানসিক চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় পাবনা মানসিক হাসপাতালে। ২০০৫ সালে মারা যায় সে। বছর দুয়েক আগে স্মৃতিতে আবারও ফিরে আসে খলিলুল্লাহ। কালের কণ্ঠ তাদের অপরাধ নামায় একটি সিরিজ স্টোরি করে তাকে নিয়ে। সে সময়কার কিছু পেপারকাটিং এবং কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনগুলো নিয়ে এই ফটো পোস্ট। আশা করি বন্ধুদের ভালো লাগবে। খলিলুল্লাহর স্বীকারোক্তি :ওই মাংস না খাইলে পাগল অইয়া যাইমু ১৯৭৫ সালের তোলপাড় করা নরমাংস খাওয়ার ঘটনা সারা দেশে লোকমুখে ফিরতে ফিরতে একসময় পর্দার আড়ালে চলে যায়। মানসিক চিকিৎসার জন্য খলিলুল্লাহকে পাবনা পাঠানোর মাধ্যমে ঘটনাটি মিলিয়ে যেতে থাকে। তবে যারাই ঘটনাটি শুনেছে, তাদের মনে তা বিভীষিকার সূচনা করেছে। ১৯৯৭ সালের দিকে অনেকটা কাকতালীয়ভাবে প্রতিবেদকের সঙ্গে নরমাংসখেকো খলিলুল্লাহর সাক্ষাৎ মেলে আজিমপুর কবরস্থানের গেটে। লম্বা, বয়সের ভারে কিছুটা কুঁজো, চাপ দাড়িওয়ালা, লুঙ্গি-শার্ট পরা খলিলুল্লাহ নিজেকে সুস্থ দাবি করে। তবে সুস্থ হলে এখনো কেন কবরস্থানের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়, এ প্রশ্নের জবাবে সে বলে_তার কোনো আত্দীয়স্বজন বা জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সন্ধান জানে না। কেউ তার খোঁজ নিতেও আসেনি। যার কারণে কবরস্থানের এখানে-সেখানে সে ঘুরে বেড়ায়। মানুষ তার পরিচয় পেয়ে দুই-চার টাকা সাহায্য দেয়। তা দিয়ে তার পেট চলে যায়। রাতে কবরস্থানের বাইরে কোনো জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে। মানুষের মাংস ও কলিজা খাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে খলিলুল্লাহ প্রথমে কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। পরে তাকে পেটপুরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এতে বেশ কাজ হয়। অনর্গল বলে যায় পুরনো দিনের কথা। তবে কেন সে নরমাংস খেত, তা ঠিকমতো বলতে পারেনি। হঠাৎ মাথায় গণ্ডগোল হলে সে কী করত তা নিজেই অনুভব করতে পারত না। তবে খলিলুল্লাহ প্রতিবেদকের কাছে আরো জানায়, পাবনা মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসায় সে ভালো হয়ে যায়; কিন্তু কলিজাখেকো বলে কেউ তাকে কাজ কিংবা আশ্রয় দেয়নি। অনেকে শারীরিকভাবে আঘাতও করেছে। যার জন্য শুধু বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে কবরস্থানকে বেছে নিয়েছে। তবে মরা মানুষের মাংসের লোভে নয়, শুধু নিজেকে সমাজ থেকে দূরে রাখার জন্য। যদি মানুষের মাংস খাওয়ার জন্যই কবরস্থানে আসি, তাহলে তো কবরস্থান কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই তাড়িয়ে দিত বলে সে দাবি করে। তবে দৈনিক বাংলা কিংবা বিচিত্রায় তাকে নিয়ে যখন কভার স্টোরি করা হয়, তখন সে ছিল উন্মাদ। প্রতিবেদক আরিফুর রহমান যখন খলিলুল্লাহকে বললেন তাকে বেশি বেশি লাশ খেতে দেওয়া হবে, তখন সে লাফ দিয়ে উঠে বলেছিল, 'স্যার, আমাকে লাশ খেতে দেবেন?' হা হা বলে একটা অট্টহাসিও দিয়েছিল। এরপর প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাব দেয়_ প্রশ্ন : এখন বল তুই সত্যিই লাশ খাস? উত্তর : হ, খাই। প্রশ্ন : কেন খাস? উত্তর : ভালো লাগে। প্রশ্ন : না খাইয়া থাকতে পারস না? উত্তর : ওই মাংস না খাইলে পাগল অইয়া যাইমু। প্রশ্ন : শোন। কয়দিন পর পর খাস? উত্তর : দুই হ্না। আঙুল দিয়ে দুই দেখাল। প্রশ্ন : কয়দিন আগে খাইছিস? উত্তর : পরশু দিন। একটা মাইয়া খাইছি। কইলজা স্যার। মুখে হাসি। তেল ভি খাইতে পারি। প্রশ্ন : কি খাইতে ভালো লাগে, কইলজা না তেল? উত্তর : এইখানের মাংস। হাত দিয়ে ঊরু দেখাল। প্রশ্ন : শোন, আর মাংস খাবি না বুঝলি। আর খাবি? উত্তর : খামু। প্রশ্ন : কেন, তোর খারাপ লাগে না? গন্ধ আসে না? উত্তর : হা হা, ভালো লাগে। এরপর প্রতিবেদক ইয়ার্কি করে বললেন, তুই যে মানুষের মাংস খাস তা কি বাস্তবে দেখাতে পারবি? সঙ্গে সঙ্গে খলিলুল্লাহ মর্গের ভেতরে ঢুকে ছুরি দিয়ে এক টুকরো মাংস নিয়ে আসে। সঙ্গে কলিজার টুকরো। তার সামনেই পৈশাচিকভাবে কলিজার টুকরো কচকচিয়ে খেতে লাগল। এরপর প্রতিবেদক খলিলুল্লাহকে ডেকে ২০ টাকা দিলেন, যাতে ঘটনাটি অন্য কোনো সাংবাদিককে না বলে। তবে খলিলুল্লাহর শর্ত ছিল একটাই_সাংবাদিককে মর্গের ডোম রবিকে বলে দিতে হবে তাকে যেন মরা মানুষের কলিজা বেশি খেতে দেয়। এ প্রতিবেদক ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে খলিলুল্লাহকে পেয়ে পুরনো ঘটনার অবতারণা করলে তার চোখ চঞ্চল হয়ে ওঠে। অতৃপ্ত মনের নরমাংস খাওয়ার নেশা যেন চোখেমুখে প্রকাশ পায়। পুরনো অভ্যাসটা এখনো ভুলতে পারেনি। তবে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়। বলে, স্যার অতীতকে ভুলতে চাই। সভ্য হয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×