ভ্যাম্পায়ার: রক্তচোষা বাদুড়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
গভীর রাত। তুমি বেঘোরে ঘুমুচ্ছো। শোওয়ার ঘরের জানালাটি খোলা। আর, সেখান থেকে চাঁদের আবছা আলো তোমার ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ কী এক শব্দে তোমার ঘুম ভেঙে গেলো। তুমি চোখ মেলে দেখলে, কি একটা প্রাণী দুটি প্রশস্ত পাখায় ভর করে তোমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। তুমি মা বলে প্রচণ্ড চিৎকার করলে। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলোগুলো জ্বলে উঠলো, আর মাসহ ঘরের সবাই ছুটে এলো তোমার ঘরে। এমন ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটলেও, আমেরিকায় প্রায়ই ঘটে।
কিন্তু, তুমি বলতে পারো প্রাণিটি আসলে কী ছিল। না বন্ধু, এটি কোনো ভূত, ডাইনি, কিংবা লোমহর্ষক চলচ্চিত্রের ড্রাকুলা নয়। এটি একটি বাদুড়। তবে রক্তচোষা বাদুড়। ইংরেজিতে বলা হয়- ভ্যাম্পায়ার ব্যাট। এরা বাস করে সম্পূর্ণ অন্ধকার স্থান যেমন- গুহা, পরিত্যক্ত কুয়া, ফাঁপা গাছের গুড়ি কিংবা পুরাতন পোড়ো ভবনে। আর এদের প্রধান বসতঅঞ্চল মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল।
রক্তচোষা বাদুড়গুলো সাধারণত শেষ রাতে শিকারের সন্ধানে বের হয়। রাতের আঁধারে এদের দেখতে মোটেও সুবিধার মনে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে, এরকম একটি বাদুড়ের সঙ্গে তোমার দেখা হয়ে গেলে তোমার মনে হবে, যেনো চলচ্চিত্রের লোমহর্ষক চরিত্র ড্রাকুলা তোমার সামনে এসে হাজির হয়েছে।
তবে, একটা কথা জানলে তুমি অবাক হবে, তুমি এই রক্তচোষা বাদুড়টিকে যতটা ভয় পাও, তার থেকে তোমাকে সে অনেক বেশি ভয় পায়। এরা মানুষের রক্ত পান করলেও, মানুষই এদের প্রধান শিকার নয়। এদের প্রধান শিকার গরু, ঘোড়া, এবং অন্যান্য গবাদি পশু। তবে, এদেরকে ড্রাকুলার সঙ্গে তুলনা না করে বরং বিরক্তিকর মশার সঙ্গেই তুলনা করা যায়।
এবার শোনো রক্তচোষা বাদুড়গুলো মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর শরীর থেকে কীভাবে রক্ত পান করে।
আমাদের মুখের নিচের এবং ওপরের চোয়ালের সামনের সারিতে যে দুটি-দুটি দাঁত রয়েছে, তাকে বলে ছেদক দাঁত। রক্তচোষা বাদুড়েরও ছেদক দাঁত রয়েছে। তবে, তা আমাদের থেকে অনেকগুণ বেশি তীক্ষ্ম। বাদুড়গুলো এ দাঁতের সাহায্যে শিকারের শরীরে অগভীর ক্ষত তৈরি করে। আর এ ক্ষত থেকে বের হওয়া রক্ত পান করে।
তবে শিকারের শরীর থেকে বের হওয়া এ রক্ত যাতে সে নির্বিঘ্নে পান করতে পারে, সে জন্যে বাদুড়টি তার মুখ থেকে বিশেষ এক ধরনের লালা নিঃসরণ করে। এ লালা রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না। ফলে বাদুড়টি খুব দ্রুত ও সুবিধাজনক উপায়ে রক্ত পান করতে পারে।
আরেকটি মজার বিষয় হলো- এটা যখন কোনো প্রাণীর শরীরে দাঁত বসায়, সে তখন কিছুই টের পায় না। অর্থাৎ, কোনোরূপ ব্যথাও অনুভব করে না। এরা মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর শরীর থেকে যে রক্ত পান করে, তার পরিমাণও খুবই সামান্য (প্রায় এক কিউবিক সেন্টিমিটার বা ১ গ্রাম)।
রক্তচোষা বাদুড় সম্বন্ধে যতটা লোমহর্ষক কাহিনী আমরা জানি, তা আসলে সত্যি নয়। এরা কোনোভাবেই ভয়ঙ্কর কিংবা অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রাণীও নয়। এরা বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী। শিশুদের লালন পালন এবং অন্য বাদুড়দের বিপদে তারা সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। সুতরাং, এদের কোনো একটির সঙ্গে তোমার যদি কখনো দেখা হয়ে যায়, তুমি নিশ্চয়ই ভয় পাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।