১ম কিস্তি Click This Link
২য় কিস্তি Click This Link
৩য় কিস্তি Click This Link
...............
আনন্দদের প্রিটেষ্ট পরীক্ষা গতকাল শেষ হয়েছে। তবুও সারারাত আনন্দ ঘুমাতে পারেনি। অদ্ভূত এক অনুভূতিতে মন আচ্ছন্ন ছিল গতকাল। সমগ্র অনুভূতি জুড়ে ছিলো অন্তর।সে অনুভূতি অতৃপ্ত সন্তানের হৃদয়ের হাহকারের কথা ভেবে, মাতৃহৃদয়ের ভালোবাসার মত একান্ত শুভাকাঙ্খী হিসেবে। যথার্থ প্রকাশ হল কিনা, আনন্দ জানে না। গতকাল ও অন্তরদের বাসায় গিয়েছিল। ও ভাবতেও পারেনি,অন্তরের মা ওকে দেখে এত খুশী হবে। আসলে অন্তরদের বাসায় তেমন কেউ আসে না। আসলেও অন্তরের মা'র সাথে কথা বলার জন্য তো নয় ই। হয়তো দীর্ঘদিন পর প্রাণ খুলে কথা বলার একজন মানুষ পেয়ে তিনি এত খুশী হয়েছিলেন। আসলে মেয়েদের কষ্ট কেবল অন্য একটি মেয়ে ই বুঝতে পারে। ওর মা'র কাছ থেকেই জানতে পেরেছে অন্তরের সব কষ্টের কথা। প্রচন্ড অভিমানী অন্তর ওর বাবাকে খুব ভালোবাসতো, এখনও বাসে। তবু স্বীকার করে না। অথচ বাবার এতটুকু ভালোবাসা পাবার আশায় ওর তৃষিত হৃদয় উন্মুখ হয়ে আছে।
অন্তরদের বাসায় যাওয়ার পর অনেক বৃষ্টি নামে। তাই অনেকক্ষণ অন্তরদের বাসায় ছিলো আনন্দ। অন্তরের মা'র সাথে যখন ও কথা বলছিলো, অন্তর ধারে কাছেও ছিলো না। কথা বলা শেষে আনন্দ দেখে, অন্তর তার ঘরের বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে নীরবে বৃষ্টি দেখছে। আনন্দ চুপচাপ ওর পাশে দাঁড়ায়। বলে
-অন্তর তোমার এত কষ্ট, অথচ তুমি......
-আমার কোন কষ্ট নেই,আনন্দ।
-তোমার হৃদয় জুড়ে তোমার বাবা..
-মিথ্যে কথা। তোমাকে মা বলেছে, তাই না? অন্তরের অন্তর পুড়ে কেবল অন্তর ই আছে। সেখানে অন্য কারো স্থান নেই।
-আচ্ছা ঠিক আছে, অন্তর।
কিছুক্ষন নীরবতা। অন্তর সে নীরবতা ভঙ্গ করে বললো, আমি কেবল আমার মা কে ভালোবাসি, আনন্দ। আমার মা'র এত কষ্ট। অথচ কাউকে বলতে পারে না। আমার মা তোমার সাথে কথা বলে কিছুটা হালকা হবে, এই ভেবে তোমাকে আসতে বলেছিলাম। মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে কত কিছু দেয়। অথচ আমার দেবার মত কিছু নেই। তুমি ভালো রেজাল্ট করে তোমার মা'কে খুশি করবে। কিন্তু আমিতো তোমার মত ভালো স্টুডেন্ট নই। তাই তোমাকে বলেছি আসতে, যেন মা একটু তার সব কথা প্রাণ খুলে বলতে পারে। তুমিতো বলো, তুমি আমার আপন, তাই তোমাকেই বলেছি। আমার বাসায় তো তেমন কেউ আসেও না। তোমার আজ অনেক কষ্ট হল, আনন্দ।
এসব বলো না অন্তর, আনন্দ বললো । কিছুক্ষন চুপ করে অন্তর আবার বললো, আচ্ছা, তুমি একদিন বলেছিলে, তুমি জি পি এ ৫ পেলে, আমায় কিছু একটা দিবে। কি দিবে তুমি?
আনন্দ বললো, তুমি যা চাইবে, আমার সাধ্যের মধ্যে কুলোলে আমি তাই তোমায় দিবো।
অন্তর স্মিত হেসে আবার বৃষ্টি দেখতে লাগলো। আনন্দের মনে হল, অন্তর এমনকিছু চাইবে না, যা তার সাধ্যের অতীত। বরজোড় বলবে ইন্টারমিডিয়েটের তার প্র্যাকটিকাল খাতার কোন ছবি এঁকে দিতে, কিংবা বলবে আরেকবার তার মা'র সাথে দেখা করতে। নীরবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আনন্দ। ওর মনে হল, যদি অন্তর আরোও বড় কিছু চাইতো, অনেক বড় কিছু..। ও তা দিত, অন্তত চেষ্টা করতো দিতে। ওকে ফেরাতো না সে। এ কথা ভাবতেই অদ্ভূত এক শিহরণ বয়ে গেলো ওর তনুমনে । তারপর আবার ও খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্তরের ঠিক পাশে গিয়ে গ্রীলে হাত রেখে নীরবে বৃষ্টি দেখতে লাগলো ।
(চলবে...)।