ছোট বেলায় সাপকে খুব ভয় পেতাম, ইভেন এখনো পাই। সবারই পাওয়ার কথা । সাপের মুভি খুব প্রিয় ছিল আমার । তো টিভিতে সিনেমায় দেখতাম সাপ কামড় দিলে মানুষ সাথে সাথে যন্ত্রণায় চিৎকার করে অল্প সময়ের ভিতর জ্ঞান হারিয়ে মারা যায় । এদিকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক , ডিসকভারি এসব চ্যানেলে দেখতাম এবং এখনো দেখি যে ভেনামাস স্নেক বা বিষধর সাপ তার শিকারকে আগে বিষাক্ত ছোবল দিয়ে মেরে ফেলে এরপরে পুরোটা গলাধঃকরণ করে । মৃত শিকার দিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সাপ দিব্যি চলে যায় ! তাছাড়া হানিব্যাজার নামের প্রাণী এছাড়াও বেঁজি(নেউল) , গুইসাপ , বিভিন্ন শিকারি পাখি এরা বিষাক্ত সাপ খেয়ে দিব্যি চলে যায় আর বড় হয় কিন্তু এরা মারা যায় না বা ক্ষয়ক্ষতি হয়না ।
এটা দেখে মনে প্রশ্ন ছিল তবে সাপ কি নিজের বিষে মরে না কিংবা এসব সর্পভুক প্রাণীর দেহকি সাপের বিষ প্রতিরোধী ?
আজকে এটা নিয়েই পোস্ট ।
সাপের বিষ হলো কিছু জটিল পেপটাইড চেইনের সমষ্টি । অর্থাৎ সাপের বিষ হলো একটি প্রোটিন বা আমিষ । তবে একটু জটিল বা কমপ্লেক্স প্রোটিন । মাছ মাংস যেমন প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় পদার্থ তেমনি সাপের বিষও একটি আমিষ জাতীয় পদার্থ। আমিষ জাতীয় খাবার দেহের পরিপাকতন্ত্রে পৌঁছলে এটি পাচক রসের ক্রিয়ায় ভেঙে অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয় । একইভাবে সাপের বিষও পাকস্থলী অর্থাৎ পরিপাকতন্ত্রে পৌঁছলে অ্যামাইনো এসিডে বিশ্লিস্ট হয়ে যায় । তাই সাপের বিষ খেয়ে ফেললে কোন বিষক্রিয়া বা এর থেকে মৃত্যু ঘটার সুযোগ নেই ।
সাপের বিষ একমাত্র ব্লাড স্ট্রিম বা রক্ত প্রবাহে মিশে গেলেই এটি দেহের ক্ষতিসাধন করা বা মৃত্যু ঘটাতে পারে । এছাড়া এটির ক্ষতিসাধন করার ক্ষমতা নেই । এই কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপগুলো যেমন ব্ল্যাক মাম্বা, ইনল্যান্ড টাইপান , কিং কোবরা, রেটেল স্নেক সহ কোন বিষধর সাপই তার ছোবলে মারা যাওয়া কোন প্রানী খেলে মরে যায় না ।। সাপের বিষ একমাত্র রক্তপ্রবাহে মিশে গেলেই সমস্যা । আর এখানেই একটি রিস্ক আছে ।
কারো মুখে যদি ক্ষত বা ঘা থাকে, পেটে আলসার, ফোঁড়া বা ইনফেকশন থাকে তবে ওইখান দিয়ে বিষ যদি রক্তে মিশে যায় তবেই একমাত্র ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে । অন্যথায় কোন ক্ষতি হবে না সাপের বিষ খেয়ে ফেললে ।
এখানে ছোটবেলার ভুলটা ভেঙে যাক, সাপ কিন্তু তার নিজের বিষের প্রতি রেসিস্ট্যান্ট না। তার মানে সে যদি নিজে নিজের গায়ে ছোবল মারে বা একই প্রজাতির অন্য সাপ তাকে ছোবল মারে আর বিষ ইনজেক্ট করে তাহলে সেই বিষধর সাপও কিন্তু বিষক্রিয়ায় মারা যাবে । একই কথা সর্পভুক অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । তারাও সাপের বিষের প্রতি রেসিস্ট্যান্ট না । তবে ভেনামের প্রতি মাইল্ড এক্সপোজার ধীরে ধীরে তাদের নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের প্রতি রেসিস্ট্যান্ট তৈরি করে দিতে পারে । তবে এটা ভিন্ন হিসাব ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
কেউ আবার সাপের বিষ খেয়ে এসব টেস্ট করতে যাবেন না। যদি মুখে ঘা , ফোঁড়া আর পেটে আলসার বা ক্ষত থাকে তাহলে সেটা জীবননাশের কারণ হতে পারে ।