আপনি অধূমপায়ী । মদ, গাজা, চিনি আপনার দুচোখের বিষ । মাংস, চর্বি খাননা, কোক-পেপসি চাননা, যারা খায় তাদেরকেও করেন ঘেন্না । সকালে একঘন্টা জিমে কাটান, তুমুল ব্যায়াম করেন । তারপর প্রিমিও গাড়ীতে অফিসে যান । দৌড়ে লোকাল বাস ধরার যন্ত্রণা বা যাত্রীদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি আপনার জন্য কষ্ট কল্পনা । নয়টা পাঁচটা ডেস্কে বসে কাজ করেন অফিসে । তারপর গাড়ীতে ঘূমিয়েই ফেরেন বাড়ী । সুখের সংসার আপনার । দাম্পত্য আপনাকে অশান্তি নয়- দিয়েছে মানসিক প্রশান্তি । রাতে পরিবারের সাথে ঘন্টা কয়েক টিভি দেখেন বা কম্পিউটার নিয়ে বসেন ।
অথবা ধরেন আপনি student, সারাদিন লাইব্রেরীতে মুখ গুজে পড়ে থাকেন । মনোযোগ বিঘ্নিত হবে তাই এদিক সেদিক যাননা । ক্যান্টিনে আপনার ভয়, যদি আড্ডা জমে যায় । সময়ের সর্বোত্তম ব্যাবহার করছেন । সো নট নড়ন-চড়ন ।
যে কেউ বলবে আপনার life style টা ঈর্ষণীয় ভাবে স-স্বাস্হকর । কিন্ত বিশ্বাস কি করবেন- আপনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা sudden death এর মারাত্মক ঝুকিতে আছেন ? একজন ভিক্ষুক যে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়ায় তার তুলনায় আপনার হঠাৎ মরে যাবার ঝুকি ৪০ ভাগ বেশী । কিন্ত কেন ? কোন সে ভিলেন যা লুকিয়ে আছে আপনার জীবনাচরনে? আর কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে আপনার আয়ূ?
হ্যাঁ Sitting disease নামের নতুন এক মহামারী রোগের গোড়াপত্তন হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে । বিরতিহীন লম্বা সময় বসে থাকা (তা অফিস জব, লাইব্রেরী ওয়ার্ক, ধর্মকর্ম, টিভি দেখা, কম্পিউটার ফেসবুকিং যাই হোক) হৃদরোগ ও হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে । গবেষনায় এটি সুপ্রমানিত । এমনকি আপনি এক ঘন্টা উসাইন বোল্টের গতিতে দৌড়ানোর পর যদি ছয়ঘন্টা অফিস-লাইব্রেরী-টিভি-কম্পিউটারে বসে থাকেন তবে আপনার (দৌড়ানোর) লাভের গুড় কিন্ত্ত (বসে থাকার) পিপড়ায় খেয়ে ফেললো । বিরতিহীন বসে থাকার ফলে আমাদের শরীরবৃত্তে যে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে তা থেকেই এ sitting disease এর উৎপত্তি ।
এ Sitting disease একটা পেশাগত বিপত্তি (Occupational hazard) ও বটে । সেদিন হয়তো বেশী দূরে নয় যখন হার্ট এটাকে আক্রান্ত রোগী তার অফিসের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিবে তাকে কেন বসে বসে কাজ করতে হলো । তবে যে চিকিৎসক মধ্যদুপুর থেকে মধ্যরাত অবধি চেম্বারে বসে বছরের পর বছর রোগী দেখে যান- সে হয়তো তার অকাল-মরনকালে নিজের অর্থলিপ্সা ছাড়া আর কিছুকে দায়ী করার সুযোগ পাবেনা কখনো ।
এ থেকে বাঁচতে হলে কাজের বা বিনোদনের ফাকে ফাকেই আপনাকে নড়াচড়া করতে হবে, উঠে দাড়াতে হবে, অদূরে দুয়েক মিনিট হেটে আসতে হবে- মূল উদ্দেশ্য হল বসে থাকাটা যেন এক নাগাড়ে না হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে হয় । এজন্য পাশের desk এ গিয়ে সহকর্মীকে জিজ্ঞাস করতে পারেন তার কুশল । যতবার ফোন আসবে কথা বলতে পারেন উঠে দাড়িয়ে, হেটে হেটে । অর্থ্যাৎ যে কোনো ছল ছুতো উছিলায় বিরতিহীন বসে থাকাটায় ব্রেক দিতে হবে । ঘন্টায় পাঁচ-দশ মিনিট সময় ক্ষয় করতে হবে এ নড়াচড়ায় । মাঝে মাঝে হাত পা ঝারা দিন, পা দুটো সটান করুন সম্মুখে, আড়মোড়া ভেঙ্গে শরীরটাকে মোচড়-টোচর দিন । অফিসের বস যদি এ হাটাহুটাকে কাজের ক্ষতি মনে করে তবে এ status টা share করে দিন তার ওয়ালে ।
এতো গেলো অফিসটাইমের কথা । বিকাল আর রাতের সময়টার জন্য একটা সুপরামর্শ দিব আপনাকে? ঘরের টেলিভিশনটা ভেঙ্গে ফেলুন । এজন্য রান্নাঘরের ‘পুতা’ টাই যথেষ্ট । আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা এই টিভি আপনার দেহ-মন-মস্তিস্ককে ঘুনে পোকার মত কিভাবে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে । টিভি (ইদানীং ফেসবুক) আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখতে পারঙ্গম । টিভি দেখা বাদ দিয়ে ঐ সময়টা বাচ্চাদের নিয়ে খেলুন । বউকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরুন, গুন গুন করে গাইতে থাকুন- জানালা খুলে আকাশ দেখো, টিভি দেখোনা । বউবাচ্চা না থাকলে ঘুরে ঘুরে আমাবস্যা-পূর্ণিমার ছবি তুলুন- তবু TV, Computer এর সামনে নিশ্চল বসে থাকবেন না ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



