ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব শেষ করলাম। বিশাল কর্মযজ্ঞ। এখন নিজেকে অনেক স্বাধীন মনে হচ্ছে। স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করলাম।
বিদায়ী সভাপতি হিসেবে দু‘বার বক্তৃতা দিতে হয়েছে আজ। একটি লিখিত আর একটি অলিখিত। লিখিতটা রাখলাম সামুতে......
বার্ষিক সাধারণ সভা
কার্যনির্বাহী কমিটি-২০০৯
সভাপতির বক্তব্য
প্রিয় সহযোদ্ধাবৃন্দ,
সালাম ও বিদায়ী শুভেচ্ছা জানবেন। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা শুরু করে আপনাদের সাথে নানা ঘটনার সুখকর স্মৃতি নিয়ে আজ বিদায়ী বক্তৃতা দিতে দাড়িয়েছি। ঘটনাবহুল একটি বছর আপনাদের নিয়ে অনেক বেশী আনন্দে কাটাতে পেরে বেশি ভালো লাগছে। গত একটি বছর আপনাদের সাার্বিক সহযোগিতায় যেভাবে সাংবাদিক সমিতি পরিচালিত হয়েছে তা নিশ্চয়ই ভবিষ্যত ইতিহাসে লেখা থাকবে। আর সে ইতিহাসের ভাষ্য পড়ে নিশ্চয়ই ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রভাবিত হবে। বক্তৃতা শুরুতেই আমি সমিতির নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানাই।
সুহৃদগণ
গত এক বছরে নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা গতানুগতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি কিছু ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেছি। সমিতির ওয়েব সাইট নির্মাণ, প্রস্তাবের বিশেষ প্রকাশনা ও সেমিনার, আন্তর্জাতিক ট্যুর, ব্রিটিশ কাউন্সিলে কোর্স, ওয়ার্কশপ, রাষ্টপতির সঙ্গে সৌজন্য সাাত, ইফতার ও সাংবাদিক মনোয়ার আহম্মেদ স্মৃতি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, বার্ষিক সেমিনার ও সুভ্যেনির প্রকাশ করেছি। এসব কর্মসূচি সাংবাদিক সমিতির মার্যাদাকে যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি সমিতির সদস্য ও ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ছিল উপভোগ্য।
এতো আনন্দের মাঝেও সবচেয়ে ব্যর্থতা ও কষ্টকর বিষয় ছিল সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো। গত এক বছরে একাধিক ক্যাম্পাস রিপোর্টার ছাত্রনেতা নামধারী সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু বরাবরের মতো আমরা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার পেতে ব্যর্থ হয়েছি। এ ব্যর্থতা মেনে নিয়ে নির্যাতিত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাই। একই সাথে আমি মনে করি, ব্যর্থতার পেছনে দায়ী কারণগুলো চিহিৃত করে প্রতিকারে উদ্যোগী না হলে আমাদের জন্য ভবিষ্যতের পথচলা আরো পঙ্কিল হবে। সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা আরো বেশি সচেতন ও সামগ্রীকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে ভবিষ্যতে যে কোন নির্যাতনের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রিয় বন্ধুরা,
গত এক বছরে আমাদের গৃহীত কর্মসূচিগুলো আপনাদের কাছে অনেক বেশি উপভোগ্য বলে আমার বিশ্বাস। প্রতিটি কর্মসূচি শেষে আপনাদের তৃপ্তিময় প্রতিক্রিয়া আমার এই বিশ্বাসকে আরো অটুট করেছে। তবে আমি তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি না। আমার মনে হচ্ছে অনুষ্ঠানগুলোতে আরো শ্রম যোগ হলে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনাদের জন্য উপভোগ্য হতো। পুরো বছরের কর্মযজ্ঞে আপনাদের স্বতষ্ফুর্ত উপস্থিতি আমাদের কাজকে অনেক সহজ করেছে। তবে কারা আমাদের অগ্রযাত্রায় কান্ডারী হয়েছেন, তা আপনাদের ভালো করেই জানা আছে। আমি এখানে নাম উল্লেখ করে তাদের ছোট করতে চাই না।
প্রিয় সহযাত্রীগণ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক হিসেবে সামগ্রিক পথচলায় আমরা একই পরিবারের সদস্যের মতো। নীতি-আদর্শগত ভিন্নতা সত্ত্বেও আমাদের বড় পরিচয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সদস্য আমরা। যখন আমরা এ বিষয়টি ভুলে যাই তখনি বিপত্তি ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে সমিতিতে সংগঠিত ঘটনাবলী এই
বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। অনেক ছোট বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। যদিও সমিতির সকল সদস্য এসব বিষয়ে জড়িত নন, তপানি অনাকাঙ্খিত বিষয়গুলো এড়াতে সকলের সচেষ্ট থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। যারা অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দেন, তারা পরবর্তীতে অনুতপ্ত হন বা না হন; জনসম্মুখে কিন্তু আপনাদের মুখোশ খুলে পড়ে এবং অনেকগুলো প্রশ্নের অবতারণা করে। প্রত্যদর্শীরা হয়তো আপনাদের পুরো জীবনের কর্মকান্ডের মধ্য থেকে অবতারিত প্রশ্নগুলোর জবাব মেলাতে চাইবেন।
সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ
আমরা দেশে ছাত্র রাজনীতির আদর্শবাদী চরিত্র দেখতে চাই। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কখনো ছাত্র রাজনীতির বিপে নয়। কিন্তু চলমান ছাত্র রাজনীতির অনেক বিষয়ের সাথেই হয়তো আমরা একমত হতে পারি না। যার উদ্দেশ্য ছাত্র রাজনীতির আদর্শবাদী ধারা ফিরিয়ে আনা। এেেত্র আমরা সচেতন থাকবো। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি যেন ছাত্র রাজনীতির ক্রীড়ানকে পরিণত না হয়, এ ব্যাপারে সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের সচেতন থাকা উচিত। বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে অনেক বেশি যতœবান হবেন বলে আমি মনে করি।
প্রিয় কলম যোদ্ধারা,
একটু পরেই নতুন নেতৃত্ব সমিতির দায়িত্বভার গ্রহন করবে। অত্যন্ত যোগ্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী কমিটি সাংবাদিক সমিতির দায়িত্ব পাচ্ছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসার কথা থাকলেও আমরা এবারও তাতে ব্যর্থ হয়েনি। নির্বাচন বাদ দিয়ে সিলেকশনে যেতে হয়েছে আমাদের। তবে ভবিষ্যতে গঠনতন্ত্র পুরোপুরি মেনে কমিটি হবে বলে আমি আশাবাদী।
সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা ও সাংবাদিক সমিতির সাথে জড়িত থাকায় এই পেশার সাথে অনেক বেশি জড়িয়ে গেছি। বিশেষ করে সাংবাদিক সমিতির সাথে চলতে গিয়ে এমন কিছু বিষয় শিখেছি, যা নিজেকে বাস্তববাদী করবে। পুরো দায়িত্ব পালনকালে অনেকে আমাদের সঙ্গী হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সহযোগিতার জন্য সবার কাছে চির কৃতজ্ঞতা রইল। তাদের দীর্ঘায়ু ও পেশাগত জীবনে সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় রইলাম। সকলের সবাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি। সামগ্রিক কর্মকান্ডে আমার অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে, এজন্য সকলের কাছে মার্জনা চাচ্ছি।
অশেষ ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছান্তে,
শাহজাহান শুভ
সভাপতি,
কার্যনির্বাহী কমিটি- ২০০৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



