somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর শ্বাসকষ্ট

১৮ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানী যাই বলা হোক না কেন, এটি শিশুদের মধ্যে সর্বাধিক দৃশ্যমান শ্বাস প্রশ্বাসজনিত সমস্যা। দুর্ভাগ্যবশত এর সঠিক রোগ নিরুপণ এবং চিকিৎসা হচ্ছে না। ১৯৯১ সালে অ্যাজমার উপর এক জাতীয় সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশে ৭ মিলিয়ন অর্থাৎ পুরো জনসংখ্যার ৫.২% ভাগ মানুষ অ্যাজমা রোগে ভুগছে। যার ৯০ ভাগেরও বেশি অ্যাজমা রোগী আধুনিক চিকিৎসা নিচ্ছে না। মোট অ্যাজমা রোগীর অর্ধেকেরও বেশি শিশু। অ্যাজমা একটি শিশুর জীবনের গুনগত মানের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং শিশু প্রায়শই স্কুলে অনুপস্থিত ও খারাপ ফলাফলের জন্য অ্যাজমা অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি। যার ফলে শিশু এবং তার বাবা মাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তোলে।

আপনার শিশু কি অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছে: নিম্নে অনসর্গগুলো প্রায়ই দেখা গেলে ভাববেন, আপনার সন্তান অ্যাজমায় আক্রান- হয়েছে:

০ শ্বাস ত্যাগের সময় বাঁশির মত শব্দ যদি প্রতিনিয়ত হয়
০ কাশি, বিশেষকরে রাতে
০ নিয়মিত শ্বাস কষ্ট
০ প্রতিনিয়ত বুক বন্ধ ভাব

শিশু বয়সে অ্যাজমার কারণসমূহ:

০ ভাইরাল ইনফেকশন
০ পশমী জন্তু, যেমন বিড়াল, কুকুর
০ সিগারেট বা কাঠের ধোঁয়া
০ ঘরের ভেতরের জাজিম, বালিশ বা কার্পেটের ধূলা
০ পুষ্পরেণু, পোকামাকড় যেমন তেলাপোকা
০ তাপমাত্রা পরিবর্তন
০ অ্যারোসল, সুগন্ধী সামগ্রী
০ অ্যাসপ্রিন জাতীয় ওষুধ
০ ব্যায়াম, মানসিক যন্ত্রণা

কারা অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারে: যে সকল বাচ্চাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে অ্যালার্জির ইতিহাস আছে। তাছাড়া যাদের অ্যালার্জিজনিত হাঁপানী বা চর্মরোগ আছে, তাদের হাঁপানীতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। তবে এটা একেবারে অস্বাভাবিক নয় যে, হাঁপানী বা পারিবারিক ইতিহাস ছাড়া কোনো বাচ্চার অ্যাজমা হবে না। বরং ইদানীং এই ধরনের শৈশবকালীন হাঁপানী রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কারন আবহাওয়া এবং বায়ু দূষণ।

বাচ্চাদের হাঁপানী রোগ নিরুপনে অতিরঞ্জিত বিষয়সমূহ: প্রায়ই বাচ্চাদের মধ্যে অনেক রকম বাঁশির মত শব্দ শোনা যায়, যা কীনা হাঁপানীর একটি প্রধান উপসর্গ। চিকিৎসকরা একে অ্যাজমা হিসেবে চিহ্নিত করতে অনুপ্রানিত করে। যদিও এর অনেকগুলো অ্যাজমার উপসর্গ নয়।

শৈশবকালীন হাঁপানী রোগের চিকিৎসা: সৌভাগ্যক্রমে বেশিরভাগ শৈশবকালীন হাঁপানী ১-৫ বছর বয়সে দেখা যায়, যা ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। হাঁপানী রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত নতুন নতুন কৌশলের মাধ্যমে চিকিৎসা করে বার বার হাঁপানী রোগে আক্রান্ত হবার প্রবনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এতে যন্ত্রণাদায়ক রাত থেকে মুক্ত থাকা যায়। দিবাকালীন হাঁপানী রোগের চিকিৎসা নিম্নোক্তভাবে করা যেতে পারে:

০ ওষুধের মাধ্যমে
০ রোগী বা তার বাবা মাকে রোগ সম্পর্কে বুঝিয়ে
০ সতর্কতা অবলম্বন কর
০ অ্যালার্জেটিক বিষয়বস্তু যেমন: ধূলাবালি, ধোঁয়া, গৃহপালিত পশু-পাখির লোম এড়িয়ে

ওষুধের ব্যবহার: বর্তমানে হাঁপানী রোগের অনেক নতুন ওষুধ বের হয়েছে। যেমন: ইনহেলড ব্রঙ্কোডাইলেটর, প্রদাহবিরোধী ওষুধ স্টেরেয়ড। আর ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য নতুন কৌশল যেমন, স্পেস ডিভাইস কিংবা নেবুলাইজার শৈশবকালীন হাঁপানীর চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে।

দ্রুত রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে, যদি

০ রোগের আক্রমন তীব্র হয়
০ বিশ্রামরত অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হয়
০ কথা বলার সময় বাক্য সম্পূর্ণ করতে না পারে
০ অস্থিরতা বোধ হয়
০ শ্বাসকষ্টের কারণে খাবার খেতে না পারলে বা বমি হলে
০ তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়া স্বত্বেও হুইজ বা বাঁশির মত শব্দ খুব বেশি জোরে শুনা গেলে কিংবা অনুপস্থিত থাকলে (শ্বাসনালী পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে)
০ নিঃশ্বাসের সর্বোচ্চ প্রবাহ রোগীর সুস্থ থাকাবস্থায় ৬০% এর কম হলে
০ শুরুতে যে চিকিৎসা দেয়া হয়, তার ফলাফল আশানুরূপ না হলে

অন্যান্য যে কারণে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে :

০ পূর্বে হাঁপানীর কারণে যাদের অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছিলো
০ দ্রুত কার্যকরী ওষুধ নেবুলাইজারের মাধ্যমে পর পর ৩ বার সেবন করার পরও যাদের অবস্থা ভাল হয়নি
০ বাড়ীতে হাঁপানী চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবে বলে নির্ভরযোগ্য মনে হয় না
০ বাড়ীতে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না পাওয়া গেলে

অ্যাজমার প্রতিরোধযোগ্য নিয়মাবলী :

০ বিছানার চাদর, কম্বল ইত্যাদি সপ্তাহে একবার গরম পানিতে ধূয়ে সূর্যের তাপ বা গরম বাতাসে শুকাতে হবে। ঘরে কার্পেট ব্যবহার করা যাবে না।
০ ধূমপান জনিত ধোঁয়া প্রতিরোধ এবং বাবা-মা’র ধূমপান বর্জন করতে হবে
০ গৃহপালিত প্রাণী কুকুর ও বিড়াল বাড়ী থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে
০ সমস্ত বাড়ী এবং বাড়ীর চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে
০ মুখে ধূলা প্রতিরোধক মাস্ক ব্যবহার এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত গাড়ী বর্জন করতে হবে

রোগী এবং বাবা মা’র অবশ্য করণীয় :

০ নিয়মিত ওষুধ খাওয়া
০ নেবুলাইজার ও স্পেসার যন্ত্র সঠিক নিয়মে ব্যবহার
০ ক্ষণস্থায়ী এবং দীর্ঘমেয়াদী ওষুধের পার্থক্য জানা
০ বার বার ওষুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা
০ পিইএফ দ্বারা রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ :
০ হাঁপানীর উপসর্গগুলো ভালোভাবে চিনে রাখা এবং রোগীর শারীরিক অবনতিতে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া
০ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া
০ অ্যালার্জি উদ্রেক করে এ ধরনের পরিবেশ থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকা।


আমার এক ভাতিজার এমন লক্ষন দেখা দিয়েছে, তাই তাদের এই লিখা পড়ে ফোনে তাদের বললাম এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম যদি কারো উপকারে আসে।


সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ০৬, ২০১০
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার ১৫ বছর

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:১৭

১৫ বছর পূর্তির এই পোস্টটা যখন লিখছি, তখন আমি একটা বড় পারিবারিক দূর্বিপাকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমার ছোটভাইয়ের কনিষ্ঠ পুত্র, যার বয়স ১১ মাস, সে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিম্মি বিনিময়ের সুনামে হামাস দেশ ত্যাগ করলে, ফিলিস্তিনের জন্য ভালো হতো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬



হামাস জিম্মি/বন্দি বিমিয়মে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে: তারা নেতানিয়াহুর সামরিক নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যা, অসফলতা ও বিশ্বের চাপকে কাজে লাগিয়ে, জিম্মি বিনিময়ের কন্ট্রোল নিজের হাতে রেখেছিলো। তারা জিম্মিদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিব্যক্তি

লিখেছেন আরোগ্য, ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০০





১. অদ্ভুত মোহ মায়ার জগৎ এটা। সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে জেনেও বারবার আঁকড়ে ধরার ব্যর্থ চেষ্টায় রত থাকি। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কেউ আর বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা কিংবা বচন-২

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:২৪

আগের বচনগুলোর লিংক :

১। অম্লতিক্ত অপ্রিয় সত্যাবলি

২। অম্লবচন-১

৩। অম্লবচন-২

৪। অম্লবচন-৩

৫। রম্যমধুর অম্লবচন

৬। অম্লবচন মধুরবচন - আমাদের মন ও মানবতা

৭। কবিতা কিংবা বচন

নিঠুর পৃথিবী

আমি এক আলাভোলা ঘরকুনো প্রেমখোর বাঁদর
ভালো লাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন প্রেম খুলবে স্বর্গ দ্বার।

লিখেছেন সামরিন হক, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ২:০৪

একদিন অভিমানি সব চোখ,জলে ভরে উঠবে ।
একদিন তোমারআমার ক্ষোভ ওপারে ফিরবে ।

২৫শে জুলাই ২০২০

একদিন আধাঁর ,আলোকিত করবে সব বোধ।
একদিন তোমারআমার হাসি ,আকাশের নেবে কোল।

২৮শে জুলাই ২০২০

একদিন ধু ধু মরুভূমি ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×