somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শূন্যভুবনের মেহেদী
চারপাশের সব অসাধারণ প্রতিভাবানদের ভিড়ে অতি সাধারন একজন। ভালোবাসি বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিকে অনুভব করতে, ভালোবাসি কোন এক জোছনা রাতে আঁধারে মিশে যেতে, ভালোবাসি বন্ধুত্ব, প্রান খোলা হাসি, গান, কবিতা আর আঁধারে হারিয়ে যাওয়া একাকী।

অদ্ভুত ছোটগল্পঃ ❝ঘুম❞

০১ লা মে, ২০১৭ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৩৯ মিনিট ধরে ঘরের দরজায় বসে আছি। বৃষ্টি আর বাতাস বাড়ছে কিন্তু বাবলুর আসার কোন নাম গন্ধ নেই। বিরক্তি যেন সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ছে।

বৈশাখ মাসের এক আঁধার কালো সকাল ।

আসলে একে সকাল না বলে ‘সকাল নামের সন্ধ্যা’ বলাই ভালো। সন্ধ্যার মতোই অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশ। গত বছর ভালো বৃষ্টি হয়নি, এ বছর মনে হয় গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। খান সাহেবের বাড়ির আম গাছগুলি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মানুষ এতো জ্ঞানহীন হয় কিভাবে? বাবলু বলল যে ঠিক সময়ে চলে আসবে কিন্তু এখন পর্যন্ত তার আসার কোন খবর নেই। নাহ, আর অপেক্ষা করে থাকা যাবে না। নাহলে ওই পাড়ার টুকুরা এসে সব আম নিয়ে যাবে।

রাগে গজগজ করতে করতে বের হলাম।

স্কুলের মাঠ পর্যন্ত এসে চিন্তা করলাম শ্মশানের রাস্তাটা দিয়ে যাই তাহলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। যদিও এই শ্মশান নিয়ে আমাদের বন্ধুদের ভিতর অনেক ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর গুজব চালু আছে। কিন্তু এখন এতোসব চিন্তা করার সময় কই? জোরে জোরে পা ফেলে হাঁটতে লাগলাম। হঠাৎ কোত্থেকে দমকা এক বাতাস এসে শরীর কাপিয়ে দিয়ে গেলো। কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগলো। ‘এটা কোন খারাপ বাতাস নয় তো?’ – আনমনে ভাবতে ভাবতে পুকুরপাড় দিয়ে হাঁটছি।

হঠাৎ অকারণ তীব্র ভয়ে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো! মনে হল কে যেন হাঁটছে আমার সাথে সাথে। কিন্তু আশেপাশে তো কেউই নেই তাহলে ওই পদশব্দ আসছে কোত্থেকে? প্রচন্ড ভয়ে যেন সারা শরীর অসার হয়ে গেলো। দৌড়াতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না। পা গুলো যেন মাটিতে গেঁথে গেছে। এখন পদশব্দ খুব কাছে, খুব বেশীই কাছে। হঠাৎ কোন অচেনা ফুলের তীব্র গন্ধ পেলাম। এটা তো চেনা কোন গন্ধ নয়! আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি এই গন্ধের উৎস আমাদের ধারণার বাইরের অচেনা কোন জগতের! যে জগতের সাথে আমাদের জগতের দেখা হয় শুধুমাত্র মৃত্যুর সময় !




ধড়মড় করে জেগে উঠলাম আমি। ঘামে যেন সারা শরীর ভিজে গেছে। স্বপ্ন এতো বাস্তব হয়? অচেনা জগতের স্পর্শ যেন আমি এখনো অনুভব করতে পারছি। এমনকি ফুলের গন্ধটাও যেন নাকে লেগে আছে! কি ভয়ঙ্কর! কি ভয়ঙ্কর!

স্বপ্নটা একইসাথে ভয়ংকর আবার একই সাথে খুব সুখের। যে বাচ্চাটা দেখলাম সে আমি। আমারই ছোটবেলার একটা অংশ অনেকদিন পর দেখলাম। কিন্তু এতো অদ্ভুতভাবে কেন? তাছাড়া আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশে তো কোন শ্মশানও নেই! আর ওই পদশব্দটা এতো বাস্তব! কিসের পদশব্দ ওটা? মৃত্যুর?

সময় হয়ে গেছে। অদ্ভুত স্বপ্নটার জন্য দেরি হয়ে গেলো! ধুর !!!

তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বাইরে বের হলাম। আকাশের মন যেন প্রচন্ড খারাপ। যে কোন সময় ঝরঝর করে কেঁদে ফেলবে। ভুল হয়ে গেছে। ছাতা নিয়ে বের হইনি! থাক, এখন আর আফসোস করে লাভ নেই। বৃষ্টি হোক। কতোদিন হল বৃষ্টিতে ভিজি না !

মেয়েটি প্রতিদিন একটু দেরি করে ভার্সিটিতে আসে। আজ যেন একটু তাড়াতাড়িই এসেছে। আর এসেছেও খুব সুন্দর করে সেজে, শাড়ি পড়ে। হাঁসিটা দেখলেই বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠে। এই জন্যই কি রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – ‘বাজিলো বুকে সুখের মতো ব্যাথা!’

ক্লাস শেষ আর আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি শুরু। ক্লাস শেষে হেঁটেই বাড়ি চলে যাই, এতে কিছু হলেও তো টাকা জমাতে পারি। দাঁড়িয়ে আছি বৃষ্টি কমার অপেক্ষায়। হঠাৎ সে সামনে এসে দাঁড়ালো। আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে আমাকে সে নিমন্ত্রণ জানালো, তার সাথে বৃষ্টিতে ভেজার!

হাঁটছি আমরা। খুব কাছাকাছি হয়ে কিন্তু তারপরেও যেন কতো যোজন দূরে। বৃষ্টি অবিরাম আর পাশাপাশি হেঁটে চলা বিরামহীন। আড়চোখে আমার পাশের শাড়ি পড়া অপ্সরার দিকে মুগ্ধ চোখে দেখলাম, কি মায়াময় একটি মুখ ! আচ্ছা, সে কি কাঁদছে ?

সেই রাতেই তার বিয়ে হয়ে গেলো। ভালোবাসা টের পাওয়া যায়। সে পেয়েছিলো, আমি পেয়েছিলাম। কোন কথা না বলেই আমি আমার ভালোবাসাটা তাকে বলেছিলাম, তার ভালোবাসাটাও ছিল অব্যক্ত। কিছু কথা কখনো কাউকে বলা যায় না আর এই না বলার কষ্টটাই সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম নৈঃশব্দও যে শব্দের চেয়ে বেশী কথা বলে। আর আমি সে রাতেই বুঝেছিলাম সে আমার সাথে হাঁটার সময় কাঁদছিলো। আহারে ! তার হাতটা যদি একটু ধরতাম, শুধু একটু ক্ষণের জন্য – তাহলে হয়তো সেই স্পর্শের উষ্ণতাতেই আমি এক জীবন পার করে দিতে পারতাম।




‘অ্যাই, কি ব্যাপার ? কি হয়েছে ? কাঁদছো কেন ?’
আমি যেন এতক্ষণ কোন ঘোরের মাঝে ছিলাম। হঠাৎ করে ঘোর কেটে গেছে।
‘ঘুমের মাঝে এইভাবে কাঁদছিলে কেন বলতো? আর তুমি মাঝে মাঝেই ঘুমের ভিতর কাঁদো! কি হয়েছে আমাকে বলবে?’ যে প্রশ্নের ভয় এতোদিন ধরে করছিলাম সেটা অবশেষে আমাকে করেই ফেললো আমার স্ত্রী।
‘কিছু কথা অতি আপনজনের কাছেও প্রকাশ করা যায় না, প্রতিটা মানুষের কিছু নিজস্ব ব্যাপার থাকে। সেটা শুধুই নিজের, আর কারো না।’ কথাটা বলেই জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি পড়ছে টিপটিপ করে, যে কোন সময় পৃথিবী আঁধার করে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামতে পারে। আমার স্ত্রী অবাক হয়ে কতক্ষণ চেয়ে রইলো আমার দিকে। এক সময় হয়তো সে বুঝতে পারলো কিছু কিছু কথা না জানাই ভালো। চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আর ও কি করে যেন আমার ইচ্ছেটা বুঝে ফেলে এক কাপ চা বানিয়ে আমাকে দিলো।

চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। মাঝে মাঝে কিছু সময় নিজেকে দিতে হয়। এই সময়ে বারান্দার এক কোণে বসে আকাশ আর আকাশ ভাঙা বৃষ্টি দেখতে বেশ লাগে। ঘরের বারান্দায় বৃষ্টি হয় একটুক্ষণ আর মনের বারান্দায় বৃষ্টি অবিরাম।

এক সময় সে বাস্তবতা মেনে নিয়েছিলো। বাস্তবতার কাছে হেরে এক বাদল দিনে শাড়ি পড়ে সে আমাকে বিদায় জানিয়েছিল। আমিও আজ বাস্তবতার কাছে পরাজিত। আচ্ছা, প্রতিটা মানুষ কি জীবনের কোন না কোন সময় নিজেকে পরাজিত মনে করে ?

আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। অফিসে যাইনি। বই পড়ে আর এঘর ওইঘর করে দিন কাটিয়েছি। একটু অলসতায় অনেক বেশী আলসেমি এসে পড়ে। তাই ১০টা বাজতে না বাজতেই চোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম চলে আসলো। ঘরের ভিতর কাজল কালো অন্ধকার আর বাইরে রিমঝিম বৃষ্টি! বাতাসে ভেজা মাটির গন্ধ। আহা!!!




চোখ খুলে দেখি আমি মায়ের কোলে শুয়ে আছি। বেশ তন্দ্রাচ্ছন্ন লাগছে। সারা শরীরে আরামদায়ক আলস্য। চোখ খুলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে তবুও রাখছি। ঘুমালেই তো এই শান্তিটুকু চলে যাবে!
বিকালে মাঠে খেলা শেষ করে বন্ধুরা মিলে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তাই বাসায় আসতে আসতে দেরী হয়ে গিয়েছিলো। বাবা আচ্ছামতন বকেছে। সারা সন্ধ্যা মন খারাপ করেই কাটালাম। বাইরে তখনো ঝুম বৃষ্টি। পড়া শেষ করে মন খারাপ করেই মার কোলে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কোন একটা ছড়া শুনাচ্ছে আমাকে। আমি শুনছি আবার শুনছি না। জাগরণ আর নিদ্রা - এই দুইয়ের মাঝামাঝি কোন জায়গায় আছি। দূরে মাঝে মাঝে অচেনা কোন পাখি করুণ সুরে ডেকে উঠছে, রিমঝিম শব্দের মাঝেও করুণ এই সুরটা খুব করে কানে লাগে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জাগতিক কোলাহল, সব শব্দ বিলীন হয়ে যাচ্ছে নৈঃশব্দের ভিতর, অনুভবে আছে শুধু মায়ের স্পর্শ . !




১১ই মার্চ, ২০১৬
সকাল ৭.১৫

৭ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে তার মা’র কাছে গিয়ে বলল – ‘মা, আমার স্কুলের সময় তো হয়ে গেলো। দাদুভাই যে এখনো ঘুম থেকে উঠলো না !’
‘গিয়ে ডাক দে। ৭ টা বেজে গেছে, এখনো কিসের ঘুম !!!’
মেয়েটি তার দাদুভাইকে ডাকতে এসে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কি সুন্দর হাঁসি হাঁসি মুখ করে দাদুভাই ঘুমিয়ে আছে। বাচ্চা মেয়েটির একটুও ইচ্ছে হল না এতো সুন্দর হাঁসি নষ্ট করে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে . . !
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৭ রাত ১০:২২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×