somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শূন্যভুবনের মেহেদী
চারপাশের সব অসাধারণ প্রতিভাবানদের ভিড়ে অতি সাধারন একজন। ভালোবাসি বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিকে অনুভব করতে, ভালোবাসি কোন এক জোছনা রাতে আঁধারে মিশে যেতে, ভালোবাসি বন্ধুত্ব, প্রান খোলা হাসি, গান, কবিতা আর আঁধারে হারিয়ে যাওয়া একাকী।

অন্তরীণ . . . ! (জীবনের গল্প)

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাকদের কোনো সময়ের হিসেব আছে কিনা, ছেলেটা জানে না। তবুও প্রতিদিন ভোরে তার কার্নিশে একটা কাক এসে হাজির হয়। সময়ের একটু একটু উনিশ-বিশ হলেও ভোরের নরম বাতাসে উড়তে উড়তে সে মোটামুটি একই সময়ে চলে আসে। তবে ছেলেটা খুব একটা ঠাহর করতে পারে না, একই কাক প্রতিদিন আসে নাকি একেকদিন একেকজন আসে। তার কাছে কোরিয়ানরা যেমন সব এক, কাকও সব এক। ছেলেটা তার রাতের খাবার থেকে একটু খাবার বাঁচিয়ে রাখে কাকটার জন্য। তার পাঁচ হাত ছোট্ট ঘরে মুক্ত পাখিটাই যেন নীল আকাশের চিঠি নিয়ে আসে!

ওই তো সে উড়ে এসে কার্নিশে বসে কা কা করে ডেকে উঠলো। ছেলেটার হঠাৎ একটা বিভ্রম হল, সে যেন আজকে এই কাকের কথা বুঝতে পারছে।
- স্যার, আজকে রুই মাছের তরকারীতে লবণ কম হয়েছে!
- মাছের তরকারীতেই লবণ কম হবে, ভাতে তো লবণ কম দেওয়ার সিস্টেম নেই। থাকলে সেখানেও লবণ কম হতো!

কথাটা বলেই ছেলেটা চমকে উঠলো। সে যখন খেতে বসে লবণ কম হওয়ার বাহানা দিয়ে উঠে যেতে চাইতো, তখন তার মা হুবুহু এই কথা বলতো। ছেলেটার অবচেতন মনে কি মায়ের কথা ঘুরছে? একটু চিন্তা করলো সে, শুধু মায়ের কথা নয়, আরও কত কথা যে চিন্তা করছে।
- স্যার মন খারাপ না করে আমাকে আরেকটু ভাত দেন তো!
ছেলেটা আবারো চমকে উঠলো। তার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি? সে কি নিতে পারছে না এই একাকীত্ব? কিন্তু সে তো নিজেই বেছে নিয়েছিলো এই নির্বাসন। জানালার চৌকাঠে আরেকটু ভাত রেখে ছেলেটা বাইরে চোখ রাখল। সে তাকিয়ে আছে, কিন্তু কিছুই যেন দেখছে না। ফেলে আসা সব মুহূর্তগুলো কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে..!

ছেলেটার বুকের মাঝে নদীতে যেন সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। তার মায়ের মুখটা বারবার মনে পড়ছে। আর বড় ভাইয়ের পিচ্চি মেয়েটার জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আসার সময় বুড়িটা কুটকুট করে বলেছিল, চাচ্চু..! তার কাছে যাওয়া হল না, শক্ত করে জড়িয়ে ধরা হলো না! একটু ছুঁয়ে দেখতে পারলো না শেষবারের মতো! সে কি আর এই জীবনে বাচ্চাটাকে শক্ত করে বুকের মাঝে নিতে পারবে?

ছেলেটার ইচ্ছে ছিল নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান থেকে হাজার হাজার বই কিনবে। অ্যাডভেঞ্চার গল্প তার খুব পছন্দ, কিন্তু ইংরেজিতে একটু দুর্বল বলে অনুবাদ পড়তো। অ্যাডভেঞ্চার বইয়ের অনুবাদ তেমন পাওয়া যায় না দেখে কত বই না পড়া হয়ে আছে।
সামনে বড় কোনো বন্ধ পেলে বান্দরবান চষে ফেলবে। বিশাল কোনো পাহাড়ে উঠে মেঘের ভেলায় ভাসবে। পাহাড়ের বিশালতায় হারিয়ে যাবে! গেলবার সব বন্ধুরা গেলো, কিন্তু পকেট ফাঁকা থাকায় ছেলেটা যেতে পারলো না। জীবন কি তাকে আরেকটা বার সুযোগ দিবে?

কাকটা খাওয়া শেষ করে দুইবার কা কা করে উড়ে গেলো। ছেলেটা যেন স্পষ্ট বুঝতে পারলো, কাকটা তাকে ধন্যবাদ দিয়ে গেলো। কী অদ্ভুত, সে কাকের কথা বুঝতে পারছে! ছেলেটা আপনমনে হেসে দিলো। সে জানালায় এসে আকাশের দিকে তাকাল। কি স্বচ্ছ, নীল আকাশ!

মেয়েটাকে প্রথম দেখেছিল নীল শাড়িতে। যেন শাড়ি না, সে এসেছিল নীল মায়া জড়িয়ে। তারপর কত কথা, তার স্পর্শের কত আকুলতা, কাছে রাখার কত ব্যাকুলতা। তারা ঠিক করেছিল, কোনো একদিন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে বর্ষা উদযাপন করবে। ছেলেটা ঠিক করে রেখেছিল, সেদিন সে মেয়েটার গালে একটা চুমু একে দিবে। এখন মনে হচ্ছে দেরি হয়ে গেছে, বড্ড দেরি হয়ে গেছে। সেদিন অ্যাম্বুলেন্সে উঠার সময় মেয়েটা দূরে দাড়িয়ে ছিল, তাকে কাছে আসতে দেয়া হয়নি। কত দূরে ছিল তবুও তার অব্যক্ত আর্তনাদ ঠিকই ছেলেটার কানে পৌঁছেছিল। কী তীব্র দৃষ্টি ছিল মেয়েটার চোখে! কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না, সে তখন শূন্যতার অতল গহ্বরে বন্দী। সেদিন একমুঠো অভিমান এক আকাশ বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিয়েছিল পুরো শহরকে!

ছেলেটা বুঝতে পারছে, সব কিছুর জন্য বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ব্যাকুল হয়ে জীবনকে ডেকেও এখন কোনো উত্তর পাবে না! ছেলেটার বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা শুন্যতা সৃষ্টি হল, গলার কাছে আঁটকে গেলো একদলা অভিমান!

আজকেও আকাশটা ঘন নীল, মাঝে মাঝে শুভ্র মেঘের দৌড়াদৌড়ি। সবাই যার যার ঘরে বন্দী। তবুও জীবন কেটে যাচ্ছে জীবনের নিয়মে, নতুন দিনের ব্যস্ততায়। এই ব্যস্ততায় কেউ টের পেলো না, একটা কাক তারস্বরে ডেকে যাচ্ছে। কেউ বুঝলো না, আজকে কাকটার গলা কেমন যেন বিষাদমাখা!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১০
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×