somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্লাস্টিকের চাল বা প্লাস্টিকের ডিম বলতে কি কিছু আছে?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি গাইবান্ধা শহরের নতুন বাজারের একটি দোকান থেকে উদ্ধার হওয়া ‘প্লাস্টিকের চাল’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এর আগেও নকল বা প্লাস্টিক চাল নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্লাস্টিকের ডিম বা নকল ডিম নিয়েও ফেসবুক-ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখা গেছে।


গাইবান্ধার নকল চাল নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবদুল মতিন। এছাড়া গাইবান্ধায় প্লাস্টিকের চাল পাওয়ার খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আসলেই কি প্লাস্টিকের চাল বা প্লাস্টিকের ডিম বলতে কিছু আছে?

ফেসবুকে আমার টাইমলাইনে সরাসরি না হলেও অন্যদের শেয়ার করা বেশকিছু ভিডিও আজকাল দেখতে পাচ্ছি। জনৈক ফেসবুকার উত্তেজিত স্বরে বলছেন, এত দিন বিশ্বাস না করলেও আজ নিজের চোখে প্রমাণ পেয়েছেন প্লাস্টিকের চাল বা প্লাস্টিকের নকল ডিম।

প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয় কিছু জিনিস। তার সঙ্গে যোগ হয় এখনকার ব্যবসায়ীরা কত খারাপ, এর ওপরে চলছে কমেন্ট্রি। আসলেই কি বাজার ভরে গেছে প্লাস্টিকের চালে? কিংবা প্লাস্টিকের ডিমে?

এই গুজবটা নতুন না। অনেক দিন ধরেই নানা দেশে প্লাস্টিকের চাল বা ডিমের গুজবটা ছড়াচ্ছে। নকল ডিমের "প্রমাণ" হিসেবে ইউটিউবের একটা ভিডিও দেখানো হয় যাতে কোনো এক ফ্যাক্টরিতে এ রকম ডিম বানানোটা ধাপে ধাপে দেখানো হয়।

ঘটনা কি তাহলে সত্যি?

প্রথমেই আসি নকল ডিম বানানো সম্ভব কি সম্ভব না সেই প্রসঙ্গে। অবশ্যই সম্ভব, মোম এবং এই জাতীয় নানা দ্রব্য মিশিয়ে ডিমের মতো দেখতে কিছু অবশ্যই বানানো চলে। চীনে নানা উৎসবে এ রকম ডিমের ব্যবহার আছে বলে অনেক জায়গায় পড়লাম।

আবার স্থানীয়ভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা চীনে এগুলো বিক্রি করার সময় ধরা পড়েছে, তাও পড়লাম দু-এক জায়গায়। তাহলে কি বাংলাদেশে আসছে চীনা নকল ডিম? ফেসবুকে দেখা ভিডিওতে গজগজ করতে থাকা ফেসবুকারটির কথা কি ঠিক?

এ রকম অনেক ভিডিও আছে। তবে আমি যেটা দেখেছি সেটা এ রকম- বাংলাদেশের একজন ক্রেতা বাজার থেকে ডিম কিনে এনে দেখেছেন ভেতরের কুসুমটা অদ্ভুত হয়ে গেছে।

আর ডিমের খোসার ঠিক নিচে একটা কাগজের মতো কিছু, প্লাস্টিক প্লাস্টিকভাব লাগছে। এটাকে মোক্ষম প্রমাণ হিসেবে তিনি পেয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যেন এটা নকল ডিম, খোদ চীন থেকে পাঠানো।

ভিডিওটা দেখে অনেকক্ষণ হাসলাম। হাসতেই থাকলাম। কারণ বিজ্ঞ পোস্টদাতা বা দাত্রী জীবনে কখনো পচা ডিম দেখেন নাই, তা বোঝা গেল।

বাংলাদেশের গরমে দোকানে বাইরে ডিম বেশিদিন রাখলে তা পচবেই, আর পচা ডিমের কুসুমও অবধারিতভাবেই ও রকম দেখাবে। কিন্তু খোসার নিচের "প্লাস্টিক" এর আবরণটা?

ঘটনা হলো ডিমের ভেতরে খোসার ঠিক নিচে একটা পাতলা মেমব্রেন বা আবরণ থাকে বটে। ডিম কড়া রোদে বেশিদিন থাকলে সেটা শুকিয়ে কাগজের মতো হতে পারে। তাই বলে তাকে প্লাস্টিক বা কাগজ মনে করাটা ছেলেমানুষি রকমের হাস্যকর।

একই ঘটনা প্লাস্টিকের চালের ক্ষেত্রেও চলে। আরেকটি ভিডিওতে দেখলাম একজন ভাত রান্না করার পরে ভাতের চেহারা দেখে বলছেন এটা নির্ঘাত প্লাস্টিকের চাল। ভাতের মাড় নাকি শুকিয়ে প্লাস্টিকের মতো হয়ে গেছে, আর ভাতটাকে বল বানিয়ে বাউন্স করানো যাচ্ছে।

পোস্টদাতা কি কখনো ভাতের মাড় শুকানোর পরে কেমন হয় দেখেননি? চাল পুরনো হলে পচতে পারে বটে, আর সেই পচা চালের মাড় নানা অবস্থায় হাঁড়ির গরমে পড়ে প্লাস্টিকের মতো চেহারা হতে পারে বটে।

কিন্তু ওই যে মোক্ষম 'প্রমাণ' ভাতের বল বাউন্স করা? প্লাস্টিক না হলে কি সেটা হতে পারে? হঁ্যা অবশ্যই পারে। ভাত মূলত কার্বহাইড্রেট, আর ভাতের স্থিতিস্থাপকতা অনেক সময়ে বরাবরের মতো হওয়া সম্ভব পদার্থবিজ্ঞানের সব নিয়ম মেনেই।

তার জন্য প্লাস্টিক হওয়ার দরকার নেই। কাজেই ভাতের বল বাউন্স করলেই সেটা প্লাস্টিক হওয়ার প্রমাণ নয় মোটেও।

যাহোক এ রকম আরও কথা বলে তথাকথিত প্রমাণগুলোর বিভ্রান্তি ধরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু তার বদলে অন্যভাবে ব্যাপারটা দেখা যাক। এক কেজি চালের খুচরা দাম কত? ৬০ টাকা? ১০০ টাকা?

আর এক কেজি প্লাস্টিকের দাম কত? মোটামুটি নিম্নমানের ১ কেজি প্লাস্টিকের দাম কোনো অবস্থাতেই ১৫০-২০০ টাকার কম হবে না (আমেরিকার বাজারে প্লাস্টিকের পাইকারি দাম দেখে বললাম)।

আর সেই প্লাস্টিক কাঁচামালকে দিয়ে চাল বানিয়ে সেই চাল চীন থেকে বাংলাদেশে জাহাজে বা স্থলপথে আমদানি করে এবং বেশ কয়েকজন মধ্যস্বত্বভোগী পেরিয়ে মুদির দোকানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তা কখনোই ২০০-৩০০ টাকা কেজির কমে দেয়া সম্ভব না। সেই অবস্থায় কীভাবে ক্রেতা সেটা ৬০ টাকা কেজিতে কিনতে পারবেন? একই যুক্তি খাটে ডিমের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশের বাজারে একটা ডিমের দাম ৮ টাকার মতো।

এখন ভেবে দেখুন, একটা নকল ডিম বানাতে যা লাগে, সেটা কয়েক হাজার মাইল দূরে চীন থেকে বাংলাদেশে রফতানি করার খরচসহ ৮ টাকার কমে কি দেয়া সম্ভব?

দোকানদার আপনাকে ৮ টাকায় একটা ডিম বেচলে অবশ্যই লাভ রেখে বিক্রি করছে। কাজেই তার কেনা দাম ৮ টাকার অনেক কম। তাই হিসাবটা কি মিলে? দুনিয়ার সব ডিম ব্যবসায়ীরা কি অনেক টাকা লস দিয়ে নকল ডিম বিক্রি করবে, যেখানে আসল ডিম সস্তায় মুরগির কাছ থেকে পাওয়া যায়?

কাজেই ফেসবুকে ঢুকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলেই যা তা বিশ্বাস করবেন না। কমনসেন্সকে সিন্দুকে তালা মেরে রেখে আসবেন না। নকল ডিম আর প্লাস্টিক চালের গালগল্প বিশ্বাস করা বা শেয়ার করার আগে একবার ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, এগুলো কি আসলেই সম্ভব কি না।

অর্থনীতির হিসাব বলছে, সেটা সম্ভব না। ফেসবুকিং করছেন বলেই কি সবার কাছে কানপাতলা বিশ্বাসপ্রবণ হিসেবে নাম কিনবেন এসব শেয়ার দিয়ে? মানসম্মানের খাতিরে হলেও কমনসেন্স প্রয়োগ করুন, কান শক্ত থাকুন অনলাইনে, অফলাইনে, সর্বত্র।

[জনস্বার্থে যুগান্তর পত্রিকা হতে কপি-পেস্টিত]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×