somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন্টোর একটি অসাধারণ শিশুতোষ গল্প : চুরি...

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মূল- সাদাৎ হাসান মন্টো
ভাষান্তর–মনযূরুল হক


“বাবুজি, গল্প বলুন”– স্কুলের তিন চারটে ছেলে আগুনের কুণ্ডুলির চারপাশে গোলাকার হয়ে বসতে বসতে বললো।
সেখানে যে বয়স্ক মানুষটি একটা পুরোনো চটের উপর আয়েশ করে বসে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিজের থুত্থুড়ে হাত দু’টি সেই কুণ্ডুলির প্রতি বাড়িয়ে রেখেছিলেন, কথাটি তারই উদেশ্যে বলা। বৃদ্ধ সম্ভবত কোনো গভীর ভাবনায় ডুবে ছিলেন। মাথাটি তার লকলকে ঘাড়ের করোটিতে অধোমুখি হয়ে ঝুলে আছে। ভারাক্রান্ত। ধীরে ধীরে উপরে তুললেন।
“গল্প..কাহিনী..! আমি নিজেই তো জ্যান্ত একটা কাহিনী..। কিন্তু..”
এরপরের শব্দগুলো তার শুকনো মুখের ভেতরেই বিড়বিড়িয়ে গেলো। হয়তো তিনি চান না, সম্পূর্ণ কথাটা ছেলেগুলো শুনুক। কিংবা হয়তো এতটা সূক্ষ্ম দর্শন বোঝার উপযুক্ত ওরা হয়ে ওঠে নি।
কাঠখড়ির একেকটি টুকরো হঠাৎ হঠাৎ ফস করে জ্বলে উঠছে আর ক্রমাগত পুড়ে পুড়ে অগ্নিকুণ্ডের পেটে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কখনো বিচ্ছূরিত আলো ছেলেদের নিষ্পাপ চেহারায় প্রতিফলিত হয়ে আশ্চর্য সম্মোহন সৃষ্টি করে চলেছে। ছোট ছোট ফুলকি, ধূসর ছাইয়ের অনুকণা বিচিত্র ভঙ্গিমায় উড়ে উড়ে উত্থানরহিত আলোকশিখার শীর চুমে চুমে যেন ক্লান্ত। গাছের শুকনো পাতাগুলিও কিছুক্ষণ বেশ সাহসিক লড়াই চালিয়ে শেষে জ্বলন্ত কবরে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে কখনো সখনো ঠাণ্ড বাতাস কুঠুরির উষ্ণ আবহাওয়াকে একটু আধটু স্বাগত জানানোর কোশেশও করে। এক কোণে একটি মাটির দুর্বল প্রদীপ খামোখাই অশ্রু বিলিয়ে যায়।
“গল্প...প্রতিদিন গল্প ! যাও কাল শোনাবো।”– বয়স্ক লোকটি কুটোর আগুন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললেন।
ছেলেগুলোর উজ্জ্বল চেহারায় একটা মলিন ছায়া নেমে এলো। আশা ভঙ্গের বেদনা। পরস্পরের চোখে চোখ বিনিময় হলো। সে ভাষাও পড়া যায়– আজ রাতে গল্প ছাড়াই ঘুমুতে হবে। সহসা একটি ছেলে, যাকে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন ও বুদ্ধিমান মনে হয়, বলেই ফেললো,
“কিন্তু গতরাতে আপনি কথা দিয়েছিলেন যে, আজ একটা চমৎকার কাহিনী শোনাবেন। কথাটা না রাখা কিন্তু মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কালই না আপনি হামেদ নামের একজনের পরিণতির ঘটনা শুনিয়েছিলেন, যে সবসময় নিজের কথা রাখতে ভুলে যেতো !”
“ঠিক বলেছো... সত্যিই আমি ভুলে গিয়েছিলাম।”– বলতে বলতে তিনি অনুশোচনার একটা ভান করলেন। মাথাটা এদিক-ওদিক হেলালেন। খানিক পরে আবার সেই সাহসী ছেলেটির স্পর্ধিত উক্তি মনে করে সামান্য হাসলেন।
“দু:খিত, বাবুরা, আমার আসলেই ভুল হয়ে গেছে; মাফ করে দাও। কিন্তু আজ তোমাদের আমি কিসের কাহিনী শোনাবো, বলতো ? দাঁড়াও, আমাকে খানিকটা সময় দাও। স্মরণ করাতে সুযোগ দাও।”
চিন্তায় ডুবে গেলেন তিনি। ভূত-প্রেতের অহেতুক কিসসায় তার বিরক্তি ভীষণ। বাচ্চাদেরকে তিনি সেই সব কাহিনী গল্পের মতো করে সাজিয়ে বলেন, যা তাদের মন-মগজকে শুধরে সুস্থ চিন্তার পথ তৈরি করে দেয়। বহু চিত্তাকর্ষক গল্পকথা তার মুখস্ত ছিলো। হয়তো ছেলেবেলায় শুনেছেন, অথবা শিশুতোষ বইগুলোতে পড়েছেন। কিন্তু এক্ষণে বয়স কালের সব সূত্রাদি ছিঁড়েফুঁড়ে উপর্যুপরি নাবছিলেন একটি স্বপ্ন জাগানিয়া সুরের সন্ধানে। ছেলেরা বাবুজিকে ভাবনায় দেখে ফিসফাস কথা বলছিলো। সম্ভবত, তারা কোনো সহপাঠীর আলোচনা করছিলো, যে বইচুরির অপরাধে স্কুলে আজ বেদম মার খেয়েছে। কারো স্বর নৈশব্দ ভেঙে বলে ফেললো,
“স্যারের সেই ছেলেটা তো আমার বইও চুরি করেছিলো। স্যার সেদিন ওকে কিচ্ছু বলেন নি।”
বই চুরি করেছিলো– মাত্র এই তিনটি শব্দ। ব্যস্, বৃদ্ধের বিস্মৃতির অতল যেন মুক্তো চাগিয়ে দিলো। তিনি ধবধবে মাথাটা তুললেন এবং নিজের চোখের সামনে সেই ভুলে যাওয়া আখ্যানের চিত্রটা নিংড়ে আনতে সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন। ক্ষণকাল ঝলমল করে জ্বললেন। আবার সঙ্গে সঙ্গে নিভেও গেলেন। স্মৃতির চাপল্যে দোল খেতে খেতেই নিজের দুর্বল দেহটায় আরেকটু উত্তাপ নিতে কুণ্ডুলির কাছাকাছি এগিয়ে এলেন।
আগুনের টকটকে লাল রোশনি ছেলেদের নাকে-মুখে খেলছিলো আগের মতোই।..মাটির প্রদীপটাও তেমনই নি:শব্দে কাঁদছে। কুঠুরির বাইরের সুষুপ্ত রাতের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ম্রিয়মান আলো ধুকছে বটে। তবু ছেলেদের আলাপচারিতায় কোনো ভাঁটা নেই। বাবুজিও কিছুটা ঝুঁকে এসে তাদের নিষ্পাপ কথাগুলি কান পেতে শুনছিলেন। তারপর বললেন,
“বাচ্চারা, আজ তোমাদেরকে আমার জীবনের কাহিনী শোনাবো।”
একবাক্যে সবাই খামোশ। তনুমন সব একদিকে। কুণ্ডলির খড়িগুলোও যেন একবার ফস করে জ্বললো। তারপর নিশ্চুপ। মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশ জুড়ে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা।
“নিজের কাহিনী বলবেন ?”– একটি ছেলে উৎফুল্ল স্বরে জানতে চাইলো।
“হ্যাঁ, আমার কাহিনী।”– এইটুকু বলে বৃদ্ধ তার নি¤œমুখী নজরটাকে ঘুরিয়ে কুঠুরির বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকালেন। একটু পরে আবার ছেলেদেরকে সম্বোধন করে বললেন,
“জীবনের প্রথম চুরির কাহিনীই তোমাদের শোনাবে আজ। হলো তো !”
ছেলেরা হতবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তাদের কারো ধারণাই ছিলো না যে, বাবুজি কোনোদিন চুরি করতে পারেন। তিনি সবসময় ভালোর উপদেশ দেন। সুতরাং সেই চটপটে সাহসী ছেলেটা বিস্ময় চেপে রাখতে না পেরে বললো,
“আপনি সত্যিই কি চুরি করেছিলেন ?”
“সত্যি।”
“তখন কোন ক্লাসে পড়তেন ?”
“ক্লাস নাইনে।”
ছেলেদের বিস্ময় আরো বেড়ে গেলো। তাদের কারো নবম শ্রেণীতে পড়া ভাইয়ের কথা মনে হলো। যে বয়সে ওর দ্বিগুণ। কত কিছু শিখছেন। কয়েকটি ইংরেজী বই পর্যন্ত তার পড়া শেষ। সে বয়সের একটি ছেলে এত কিছু পড়ার পরও চুরি করেছিলো– কিভাবে সম্ভব ! বুদ্ধিতে কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে আবার প্রশ্ন হলো,
“আচ্ছা, আপনি চুরি কেন করেছিলেন ?”
কঠিন প্রশ্ন। বৃদ্ধ সামান্য ঘাবড়ে গেলেন। কেন করেছিলেন– এর কী উত্তর হবে ? স্বাভাবিক জবাব হচ্ছে– ইচ্ছে হয়েছিলো, তাই। কিন্তু তাতে ভরসা না পেয়ে ভাবলেন, পুরো কাহিনীটা শুরু থেকে ওদের বলেই দিলেই হয়। সে তো নিজেই এই প্রশ্নের জীবন্ত জবাব।
“এর উত্তর আমার কাহিনীতেই তোমরা খুঁজে পাবে, বাবুরা। এই তো এখনই শোনাচ্ছি।”
“আচ্ছা, বলুন।”
বাবুজির চুরির ঘটনা। অবশ্যই দীর্ঘ হবে। সবাই পা ছড়িয়ে সুবিধা মতো বসলো। কি আশ্চর্য, বাবুজি চুরি করেছেন ! ঘোর কাটে না। অথচ এই সফেদ চুলের প্রবীন মানুষটাকে তারা কত শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে।
বৃদ্ধ কিছুক্ষণ নীরবে চুলে আঙ্গুল চালালেন। শাদা চুল বিলকুল এলোমেলো করে দিলেন। তারপর অতীতের বিভিন্ন টুকরো জোড়া লাগানোর আগেই বললেন,
“প্রতিটি মানুষের, চাই সে ছোট হোক বা বড়, জীবনে এমন কিছু ঘটেই যায়, যা নিয়ে জীবনভর সে লজ্জিত থাকে। আমার জীবনের সবচে’ বড় দুর্ঘটনা ছিলো, সেই একটা বই চুরি করা।”
এইটুকু বলে থেমে গেলেন তিনি। তার যেই চোখ সব সময় অপরিমেয় উচ্ছাসে ঝিকমিক করতো, তাতে যেন এখন কুয়াশা পড়েছে। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, কাহিনীটা বলতে তার যারপরনাই কষ্ট হচ্ছে তার। আরো কয়েকটি মুহূর্ত ক্ষান্ত দেয়ার পর শুরু করলেন,
“সবচে’ নিন্দনীয় যেই কাজ, বইচুরি, সেটাই একবার এক বই বিক্রেতার দোকান থেকে আমি করেছিলাম। মাত্র নবম ক্লাসে পড়ি তখন। আজ যেমন তোমাদের গল্প শোনার শখ, ঠিক তেমনি সে বয়সে আমার শখ ছিলো নোভেল আর থ্রিলার পড়া। না না, শখ না, নেশা ছিলো। বন্ধুদের নিকট চেয়ে হোক অথবা নিজে কিনে, প্রতি সপ্তাহে একটা নোভেল অবশ্যই পড়ে শেষ করতাম আমি। আব্বা-আম্মার কোনো খবরই ছিলো না। জানলে নিশ্চিত বাধা দিতেন। আজ বুঝি, এই বইগুলো ছেলেদের জন্য কত ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনছে। অথচ আমি পুরোপুরি উদাসীন ছিলাম। তার পরিণাম আমাকে ভোগ করতে হয়েছে। আমি একদিন চুরিই করে বসলাম এবং ধরা খেয়ে গেলাম।”
“চুরি করে ধরা খেয়েছেন আপনি ?”– ছেলেদের অবিশ্বাস মাখা প্রশ্ন।
“হ্যাঁ, গ্রেপ্তারও হতে পারতাম।...সবার অজান্তে এই নোভেল পড়ার অভ্যাস আমার স্বভাবে পরিণত হয়ে গেলো। প্রতিদিনই একটা বই অর্থাৎ নোভেল পড়ার নেশা হতো। বাসা থেকে যে কয়টা টাকা হাত খরচার জন্য পেতাম, সেটা জমিয়ে বাজার থেকে ক্রাইম নোভেল কেনায় ব্যয় করতাম। ক্রমশ স্কুলের বইপুস্তকে আগ্রহ হারাই। সারাক্ষণ মন-মগজে ঘুরপাক খেতো, অমুক লেখকের অমুক বইটা আমাকে পড়তে হবে। আমার জানা ছিলো, কোন বইয়ের দোকানে নতুন নোভেল উপন্যাসের মজুদ আছে। এক নজর দেখার বাসনা হৃদয়ে পুষে রাখতাম।... মানুষের শখের মাত্রা যখন এই স্তরে এসে পৌঁছে, তখন হয় পাগলামি। তখন সে নিজেও জানে না যে, আসলে সে কী করছে বা করতে যাচ্ছে। একটা নির্বোধ বাচ্চা বনে যায়, যে নিজের শখ পূরণে জ্বলন্ত আগুনে হাত দিতে দ্বিধা করে না। বোঝে না, এই জ্বলজ্বলে আলো আসলে মিথ্যেও কারুকাজ।...কথা হলো, শিশুদের বোধশক্তি অল্প থাকে, তাই তারা না বুঝে না জেনে ক্ষতিকর কিছু করে ফেলে। কিন্তু আমি তো বুদ্ধিমান ছেলে ছিলাম। তবু চুরিটা হলো। একেই বলে চোখ থাকতে অন্ধ। এমন নিকৃষ্ট কাজ কস্মিনকালেও কি হতো যদি সেই বদঅভ্যাসটা আমাকে উস্কে না দিতো ! প্রতিটি মানুষের বিবেকের ওপর শয়তান সওয়ার থাকে। সময় পেলেই অশোভন কাজে প্রেরণা জোগায়। সে সময় শয়তান আমার ওপর এমনভাবে চেপে বসেছিলো যে, আমার স্বভাবিক বিচার-বুদ্ধি লোপ পেয়েছিলো। যা হোক...
ছেলেরা মগ্ন হয়ে বৃদ্ধের ভীরু কম্পিত ঠোঁট গলে বেরিয়ে আসা কথাগুলো শুনছে, না যেন বাক্যের প্রতিটি ফোঁটা গিলছে। ঘটনার এমন বেসামাল প্রান্তে এসে তারা নিদারুণ উত্তেজনায় কাঁপছেই বোধ হয়। অথচ মূল কথাটা শোনা হয় নি। প্রতিক্ষার রাত ফুরায় না।
“মাসঊদ, বেটা, সামনের দরোজাটা ভেজিয়ে দাও তো। ঠাণ্ডা আসছে।”– বৃদ্ধ তার কম্বলটা হাঁটুর উপর টেনে আনতে আনতে বললেন।
“আচ্ছা, বাবুজি” বলে মাসঊদ উঠে গিয়ে দরোজা বন্ধ করলো। তারপর আবার নিজ জায়গায় বসে পড়লো।
“যা হোক, একদিন বাবা ঘরের বাইরে ছিলেন।”– বৃদ্ধ নিজের কাহিনী শুরু করলেন,
“আমারও করার মতো কোনো কাজ ছিলো না। ঘরে আমার যা বই ছিলো, পড়া প্রায় শেষ। মন টানছিলো একটা বইয়ের দোকানে, যেখানে গোয়েন্দা বইয়ের স্তুপ আছে। আমার পকেটেও কিছু টাকা আছে সেদিন, একটা নোভেল হয়তো সাধারণ মানের হলে কেনা যায়, তেমন। সুতরাং ঘর থেকে বের হয়ে আমি সোজা গেলাম সেই দোকানে। এমনিতেই তার দোকানে সবসময় মজাদার কাহিনী সম্বলিত বই রাখা থাকতো। কিন্তু সেদিন বিশেষভাবে একগাট একদম নতুন বই ভেড়ানো ছিলো বাইরের বইয়ের তাকে। বইগুলোর রঙ-বেরঙের মলাট দেখে আমার ভেতরের সত্ত্বাটায় একটা আলোড়ন জেগে উঠলো। আহ্, যদি সবগুলো বই আমার হয়ে যেতো ! প্রথমে দোকানির কাছে অনুমতি নিলাম, অন্তত একবার করে হাটকে দেখতে চাই । প্রতিটি বইয়ের উপরের পৃষ্ঠায় কোনো না কোনো মনোহরী বাক্য লেখা¬
“বইটি পড়তে শুরু করলে দম ফেলার ফুরসত পাবেন না।”
“রহস্যময় দ্বীপের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান।”
“উত্তেজনা, রোমান্স, রহস্য...একমলাটে সব।”
এ রকম আগ্রহ উদ্দীপক বাক্য। আমার তবু মন ভরছিলো না। এ জাতীয় বাক্য আগেও দেখেছি। একটা বই পছন্দ হলো। দাম সস্তা। বাছাই করে রাখলাম। ভাবছি, সামনের সপ্তাহে আবার দেখতে আসবো। নিজের বাছাই করা বইটা নিয়ে বের হবো, এ সময় একটা চামড়া বাঁধাই বইয়ের উপর চোখ আটকে গেলো। মলাটের এক কোণে লালরঙে আমার সবচে’ প্রিয় নোভেলিস্টের নাম খোদা। তার একটু উপরে বইয়ের নাম লেখা “প্রতিশোধের আগুন”। “কীভাবে একজন পাগল ডাক্তার লন্ডন ধ্বংস করার পরিকল্পনা করলো”। এই লাইনটা পড়েই আমার চিত্তের ভেতর একটা ঝড় বয়ে গেলো। একে তো সেই লেখক, যে বহুরাতে আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তার ওপর আবার এমন বই। প্রতিশোধের আগুন। এক পাগল ডাক্তারের লন্ডন ধ্বংসের প্ল্যান। কি আশ্চর্য ব্যাপার । এটা কী হতে পারে ? আমি তো জানি তার বইগুলো কতটা শ্বাসরুদ্ধকর হয়। এ বইটা তারচে’ ভালো হবে নিশ্চিত। একদৃষ্টে বইটাকে দেখছিলাম আমি এবং মনের মধ্যে একটার পর একটা চিন্তার বীজ বুনে যাচ্ছিলাম। শেষে বইটা হাতে নিলাম। তৃতীয় পৃষ্ঠার মাঝামাঝি রঙিন হরফে লেখা,
“লেখক এই বইকে তার লেখা শ্রেষ্ঠ বই বলে স্বীকার করেছেন।”
আমার নেশার আগুন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। হঠাৎ কী যে হলো আমার। মনে হলো কে যেনো কানে মন্ত্র পড়ে যাচ্ছে, বইটাকে তোমার জামার ভেতরে করে নিয়ে যাও, কেউ দেখবে না।”
চোখদু’টি তখন নিয়ন্ত্রণ হারা, ঘুরে ঘুরে দোকানিকে দেখছে। তিনি একটা কাগজে কিছু লিখছিলেন। অন্যপাশে বড় দু’টি ছেলে দাঁড়িয়ে বই ঘাঁটছে। টের পেলাম, মেরুদ- বেয়ে শিরশিরে তরল পদার্থ বয়ে যাচ্ছে।”
বলতে বলতে বৃদ্ধের দুর্বল শরীর কেঁপে উঠলো। একটু নীরব। তারপর বললেন,
“একবার অবশ্য মন বলেছিলো যে, চুরি করা খুব খারাপ। কিন্তু বিবেকের এই আওয়াজ বইয়ের মলাটে লেখা বাক্যের কাছ ঘেঁষতেই উধাও হয়ে গেলো। মস্তিষ্ক কেবল ‘প্রতিশোধের আগুন’ প্রতিশোধের আগুন’ জপ করছে। এদিক সেদিক দু’একবার দেখে আমি ঝট করে বইটা জামার ভেতর লুকিয়ে ফেললাম। হাত পা ভয়ে কাঁপছে। এ অবস্থায়ই বিক্রেতার সামনে গেলাম এবং পূর্বে আলাদা করে রাখা সস্তাদামের বইটার মূল্য পরশোধ করতে একটা নোট বের করে দিলাম। মূল্য নিতে গিয়ে এবং বাকি পয়সা ফেরত দেয়ার মধ্যে সে অহেতুক দেরি করছিলো। এছাড়া সে আমার দিকে কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলোও। আমি হয়রান হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিলো সব কিছু রেখে এখনি থেকে পালাই। জামার যে জায়গাটায় বইটা লুকিয়েছি, তাও আড়চোখে দেখছি। বুঝতে না দেয়ার জন্য যথেষ্ট চেষ্টাও করছিলাম হয়তো। আমার এ অবস্থা দেখে তার সন্দেহ হয়েছিলো নিশ্চয়। মনে হলো, সে যেনো কিছু বলতে গিয়েও বলছে না। আমি বাকি পয়সা হাতে নিয়েই সটকে পড়ি। প্রায় দু’শো গজ সামনে এগিয়ে এসেছি, এমন সময় শুনলাম পেছন থেকে কেউ ডাকছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, দোকানি খালি পায়ে ছুটে আসছে। আমাকে দাঁড়াতে বলছে। আমি আর না পেরে দৌড় দিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কোন দিকে যাচ্ছি। বাড়ি ভুলে বাজারের শেষমাথার দিকে দৌড়াচ্ছিলাম। ভুলটা যখন নিজের কাছে ধরা পড়লো ততক্ষণে দু’ইজন লোক আমাকে ধরে ফেলেছে।”
এইটুকু বলা শেষে বৃদ্ধর গলা শুকিয়ে এলো। জিহ্বাটা বারবার ঠোঁটের উপর ঘোরাচ্ছিলেন। সামান্য থেমে হাঁক দিলেন,
“মাসঊদ, এক ঢোক পানি খাওয়াও তো, বাবা।”
মাসঊদ বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে কুঠুরির এককোণে পড়ে থাকা কলসি থেকে ঢেলে আনলো পানি। গ্লাসটা হাতে নিয়েই বৃদ্ধ এক ঢোকে সবটুকু পানি সাবাড় করে ফেললেন।
“হ্যাঁ, আমি কী যেন বলছিলাম ?”– খালি গ্লাসটা মাটিতে রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
“আপনি দৌড়ে পালাচ্ছিলেন।”– কেউ একজন জবাব দিলো।
“দোকানি আমার পেছন পেছন চোর চোর বলে চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছিলো। এরপর যখন আমার কাছাকাছি দুই ব্যক্তিকে দেখলাম, তখন তো একেবারে দিশাহারা। জেলের লৌহ শলাকা, পুলিশ ও আদলতের ছবি আমার চোখের নদীতে নৃত্য করছে। অপমানের আশঙ্কায় আমার কপাল বেয়ে ঘাম টপটপ করে ঝরছে। হুমড়ি খেয়ে পড়লাম রাস্তায়। দাঁড়াতে চেষ্টা করেও শক্তি পাচ্ছি না। মাথায় কোনো কাজই করছে না। বুকের ভেতরে বাতাস আটকে স্বর বন্ধ হয়ে গেছে। ভয়ে চোখ উল্টে গেছে। কানে হাজার মানুষের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ বাজছে। তখনও আমি পালাবার কসরৎ করছি। অতর্কিতে দোকানি এবং সেই দুইটি লোক আমাকে ধরে ফেলে। তখনের পরিস্থিতি বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কোটি কোটি পাথরসম ভাবনা এসে বিকট শব্দে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যেন। পাঁজরের হাড্ডি ভাঙার কষ্ট অনুভব করছিলাম আমি। তারা আমাকে টেনে হিঁচড়ে দোকানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। নি:সন্দেহে খুব শীঘ্রই আমাকে কারাগারের দরোজা আর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। নিজের ওপরই ঘেন্না হচ্ছিলো আমার এবং শতবার অভিশাপ দিলাম নিজেকে। কিন্তু ততক্ষণে যা হবাার তো হয়ে গেছে। রক্তলাল চোখ ফেটে উষ্ণ পানি গড়িয়ে পড়ছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছি।”
বলতে বলতে বৃদ্ধের চোখ জলে ভরে গেলো।
“দোকানি আমাকে পুলিশে দেয় নি। নিজের বইটা নিয়ে নিলো এবং সময়োপযোগী বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে ছেড়ে দিলো।”
বাবুজি তার চোখের পানি কম্বল দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন,
“আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আদলতের লাঞ্ছনা থেকে আমি বেঁচে গিয়েছিলাম বটে। কিন্তু এই ঘটনা আমার বাবার কান পর্যন্ত ঠিকই পৌঁছে গেছে। স্কুলের সহপাঠীদেরও অগোচরে থাকে নি। বাবা ভীষণ রুষ্ট হলেন এবং জীবনে চুরির মতো নিকৃষ্ট কাজ আর না করি, তার সমুচিত শিক্ষা দেয়ার পরই মাফ করলেন আমাকে। লজ্জায় অনুতাপে দু’তিনদিন প্রচণ্ড জ্বরে ভুগলাম। তারপরও যখন দেখলাম কোনোভাবেই আত্মা শান্তিা পাচ্ছে না এবং কোনোমতেই সাহস হচ্ছে না যে, চেনা মানুষের সামনে দাঁড়াবো, তখন সে শহর ছেড়ে চিরদিনের মতো পালিয়ে এলাম। তারপর থেকে অনেক শহরের জল ঘেঁটেছি, বিভিন্ন অঞ্চল চষে বেরিয়েছি, নানা আপদ মুসিবত সহ্য করেছি, কেবল ওই বইচুরির গন্ধটা গা থেকে মুছে ফেলতে। যদিও পরবর্তী জীবনে আরো অনেকবার চুরি করেছি, ডাকাতি করেছি, বহুবার ধরাও পড়েছি, জেল খেটেছি, কিন্তু তাতে কখনো অনুতাপ হয় নি। লজ্জাও লাগে নি। বরং সে জন্য গর্ব হয়।”
বৃদ্ধের চোখ আবারও আগের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আগুনের উত্তাপ ছড়ানো শিখাগুলোর দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন তিনি।
“হ্যাঁ, সেজন্য গর্ব হয় আমার।”¬– একটু থেমে বাক্যটা আবার দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন।
আগুনের একটা শিখা হঠাৎ উপরের দিকে ধেয়ে উঠলো এবং থিরথির করে দুলে দুলে আবার আগের মতোই কুণ্ডুলির ভেতর শুয়ে পড়লো। বৃদ্ধ একটুখানি মুচকি হাসলেন। তারপর ছেলেদের দিকে ফিরে বললেন,
“গল্প শেষ। এখন তোমরা ঘরে যাও। তোমাদের আব্বা-আম্মা অপেক্ষা করছেন।”
“কিন্তু পরের চুরি-ডাকাতিতে গর্ব হচ্ছে আপনার। কেন ?”– মাসঊদ জিজ্ঞেস করলো।
“তাই তো ! কেন গর্ব করি ?”– বৃদ্ধ আবারও হাসলেন, “কারণ, আসলে সেগুলো চুরি ছিলো না। নিজের চুরি যাওয়া সম্পত্তিকে পুনউদ্ধারের অভিযান ছিলো। তোমরা সেসব বড় হলে জানবে।”
“বুঝলাম না।”
“যে সব জিনিস তোমার থেকে চুরি গেছে, তোমার অধিকার আছে, সম্ভব্য সকল পন্থা অবলম্বন করে সেগুলো ফিরিয়ে আনা। কিন্তু মনে রাখতে হবে, চেষ্টাটা সফল হওয়া খুব জরুরি। নয়তো ধরা খেয়ে অনর্থক যন্ত্রণা পোহাতে হবে।”
ছেলেরা উঠে দাঁড়ালো এবং বাবুজিকে শুভরাত্রি বলে দরোজার বাইরে চলে গেলো। বৃদ্ধের দৃষ্টি ছেলেদের হারিয়ে যাওয়া অন্ধকারে পথের উপর পড়ে রইলো। এক সময় তিনিও উঠে দরোজার কাছে গেলেন। কী যেন ভাবলেন। তারপর দরোজা বন্ধ করতে করতে বললেন,
“হায়, বড় হয়ে যদি ওরা কেবল নিজেদের হারানো সম্পদটুকু উদ্ধার করতে পারতো !”
খোদাই জানে, ছেলেদের কাছে বাবুজি কী আশা করেন।


{লেখক পরিচিতি : রুশদির মতো বিতর্কিত লেখকও মন্টোকে আধুনিক ভারতীয় ছোটগল্পের অবিতর্কিত শ্রেষ্ঠ রূপকার আখ্যা দিয়েছেন। যদিও বলা হয়, ১৯৩৬ সালে প্রেমচন্দের বাস্তবধর্মী লেখা গল্প ‘কাফন’ দিয়ে উর্দু ছোটগল্পের আধুনিক ধারার যাত্রা শুরু আর মন্টোর ‘খোল দো’ গল্পের মাধ্যমে এসে তা পূর্ণতা পেয়েছে। কিন্তু মন্টোর সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি ছিলেন একজন উদার, প্রতিবাদী ও প্রগতিশীল লেখক। ১৯৩৬ সালে লুভিয়ানভির সাপ্তাহিক ‘মুসাব্বির’-এর সাংবাদিকতা দিয়ে মন্টোর লেখালেখি শুরু। প্রথমে কথিকা ও নাটক। পাকিস্তান হিজরতের পরে তার গল্পে ‘গালিব’ নির্মিত হয়ে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। একই সময় রচনা করেন ‘গাঞ্জে ফেরেস্তে’র মতো রিপোর্টাজ ও স্কেচধর্মী অসাধারণ গ্রন্থ। সাহিত্যজগতে প্রবেশ ভিক্টর হুগোর ‘কয়েদির ডায়েরি’ অনুবাদের মাধ্যমে। জীবনের বেশিরভাগ জুড়ে কাজ করেছেন বারবণিতা ও অবহেলিত মানুষদের নিয়ে। ‘ঠান্ডা গোস্ত’, ‘কালো সেলোয়ার’-এর মতো গল্পের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। মন্টোর জন্ম ১৯১২ সালের ১১ মে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার সোমরালা গ্রামে। আর ১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি দীর্ঘ ২১ বছর সাহিত্যচর্চা শেষে তিনি একেবারেই শূন্যহাতে লাহোরে পরলোক গমন করেন।}
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×