somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুনি

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি কোনো খুনিকে চেনেন?

নিয়ন্ত্রনহীন উত্তেজনায় অঘটন ঘটিয়ে ফেলা কোনো খুনি কিংবা টাকার জন্যে হত্যাকে ডালভাত বানিয়ে ফেলা পেশাদার কেউ না, আপনার খুব কাছের কারও ভেতর থেকে ঠান্ডা মাথার খুনিকে উঁকি দিতে দেখেছেন?

আমি দেখেছি! জিঘাংসায় পাষণ্ড হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ কাউকে আমি আপনজনের বের হয়ে যাওয়া জিভ আর ঠিকরে বের হয়ে আসতে চাওয়া চোখ দেখে ভয়ঙ্কর বাঁকা হাসি দিতে দেখেছি! শুনবেন গল্পটা?

ঘটনার শুরু আসলে সেই একত্রিশ বছর আগে, নাকি একত্রিশ মাস আগে আমি এখনও ঠিক করে উঠতে পারি নি, ভাগ্যনিয়ন্তা বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে তো বহু আগেই এই চক্র শুরু হয়ে থাকবে, তবে রফিকের সাথে আমার প্রথম দেখা বা পরিচয় ওই একত্রিশ বছর আগে, প্রাইমারী স্কুলের ক্লাস ওয়ানের প্রথম দিনে। ও আমার যাকে বলে লেংটাকালের দোস্ত, আমার কলেজফ্রেন্ড, আমার ভার্সিটিমেট! আমার আপনজন। আপনজন? বটেই!

ও যে আমার আপনজন সেটা আমি প্রথম বুঝতে শুরু করলাম অবশ্য আড়াই বছর আগে, গুনে বললে একত্রিশ মাস। বহুদিন পর রফিকের সাথে আমার দেখা হয়ে গেল একটা অনুষ্ঠানে, আমরা দুজনেই পরম আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম কিভাবে যেন গত পাঁচ বছরে আমাদের দেখা-সাক্ষাত হয় নি, শেষবার এরকম একটা অনুষ্ঠানেই আমাদের শেষ দেখা, রফিকের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো ওটা।

আমরা দুজনেই দারুন খুশি হলাম বলা বাহুল্য, রফিক আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। নানামুখী আলোচনার পর জিজ্ঞাসা করল বিয়ে করেছি কি না, “না” বলাতে আমার পেটে আলতো ঘুষি মেরে একটা অশ্লীল ইঙ্গীত দিয়ে বলল, এখনও খেয়ে যাচ্ছিস? আমি যথাযথ রকমের হাসি দিয়ে তার প্রতিউত্তর করলাম।
একটু পর রফিক আমাকে ওর বউ-বাচ্চার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, ওর ছেলেটার একেবারে দেবদুতের মত চেহারা, আচরণ অবশ্য ঠিক দেবদুতের মত না, প্রথম দর্শনেই সে আমার মুখে খামচি দিয়ে দিল, রফিকের বউ সাথে সাথে ছেলের পিঠে চড় বসিয়ে দিয়ে তাকে তার বাপের হাতে হস্তান্তর করে দিল।

আমার গাল ছড়ে গিয়েছিল, রফিকের বউ, যার নাম মৌলী সে একটু ইশশ ইশশ করে বলল, “স্যরি, স্যরি ভাই, দাড়ান আমি দেখি স্যাভ্লন নিয়ে আসচি।” সে কোনো একদিকে হাঁটা শুরু করার একটু পর রফিকের খুক খুক কাশিতে আমি চমকে তার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গেলাম, অস্বীকার করার উপায় নেই, আমি মৌলীর ছন্দময় নিতম্বের দিকে বেশ সময় নিয়েই তাকিয়েছিলাম, কিন্তু আমার চোখে ভাসছিলো তার চাহনি, প্রথম পরিচয়ের পর তার ফোলাফোলা ঠোঁট আর টানা চোখগুলো একসাথে কথা বলে উঠল কিভাবে?

রফিক বাঁ হাতে আমার কলার চেপে ধরে বলল, এই এই, ওদিকে না বন্ধু। আমি হেসে চোখ টিপলাম।

এর কিছুদিন পরই রফিকের সাথে অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় দেখা হয়ে গেল। দৈবক্রম, কিংবা হয়ত আমার অফিস এদিকে জানা থাকায় রফিকের চোখ আমাকে খুঁজছিলো, কারণ ওই আমাকে টেনে থামালো। ওর বাসায় নিতে অবশ্য খুব একটা জোরাজুরির দরকার ছিলো না।

দু-তিনমাস পর থেকে আমার সপ্তাহান্তের রুটিন বেশ ভালোই বদলে গেল। পাগলের মত আমার প্রেমে পড়তে মৌলী সময় নিল আরও ছয় মাস।

মৌলী আমার প্রেমে পড়ে যাবে এতে অবাক হবার তেমন কিছু নেই, আমি খুব সুদর্শন নই, অন্যান্য যোগ্যতাও আমার তেমন নেই, তবু কি কারনে কে জানে মেয়েরা পাগলের মত আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, ক্লাশ নাইনে লোপা হয়েছিলো, কলেজে থাকতে সুমনা আর তমা, পরে আরও অনেকে। আমি কখনো এই টান অনুভব করিনি, একসময় ভাবতাম আমার আসলে প্রেমে পড়ার ক্ষমতাই নেই। এবার আমার সেই ভুল ভাঙ্গলো, আমিও যুক্তিহীনভাবে মৌলীর প্রেমে পড়ে গেলাম, ভয়াবহ প্রেম।
নিঃস্বার্থ ভালবাসা গোপন থাকে, রাখা যায়, পরস্পরের প্রতি উন্মাদ আকর্ষন লুকিয়ে রাখা যায় না। তাই আমি আর মৌলী পরের দিনগুলোতে নিজেদের চিনলাম, সবভাবেই। চিনলাম আর আরও আকৃষ্ট হলাম! কোনো নারীদেহ নিয়ে সম্ভবত প্রথমবারের মত আমি উন্মাতাল হলাম, বোধশক্তি অনেকটাই লোপ পেয়ে গেছিলো নিশ্চিতভাবেই।

আমরা রফিকের কাছে প্রথম কিভাবে ধরা পড়লাম বা বলা চলে ও কিভাবে টের পেল আমি জানি না, যদিও আসলে টের না পাওয়ার উপায়ই ছিলো খুব কম, রফিক শুধু মুঠোফোনে আমাকে একটা বার্তা পাঠালো, “ডোন্ট কাম মাই হোম এগেন!”
মৌলীকে সাথে সাথে ফোন করায় ঝুকি ছিলো, আমি অতটা আনাড়িও নই। কিন্তু আমার মধ্যে মৌলীর জন্য আবেগের ঘাটতি ছিলো না, হপ্তাদুয়েক পর আমি ফোনে মৌলীর কান্না শুনলাম, “আমাকে ভুলে যাও!” ভুলে যাওয়া সম্ভব ছিলো না।


এরপর আমাদের প্রেম চলতে লাগলো অনেক সতর্কতার সাথে, অনেক লুকোচুরি খেলার মধ্যে একটা বছর চলে গেল।
রফিক ব্যবসা করে, অশান্তির ঘরের জন্য তার টান কম বলেই কিনা কিংবা হয়ত আমাকে দূর করা গেছে ভেবে সে তার ব্যাবসা আর ব্যবসায়িক ভ্রমণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর আমরা, আমি আর মৌলী নিজেদেরকে চিনে নেওয়ার আরও সুযোগ পাই। রফিক-মৌলীর শয়নকক্ষে কোনো এক দুপুরে পরম সুখের মুহুর্তের পরে মৌলী আমাকে বলে, “আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চল, প্লীইজ!” আমি পরম তৃপ্তিতে ওর কাশবনের মত বুকে মুখ গুঁজে দিই।

মৌলী হঠাৎ আমাকে ঠেলে ফেলে ধরমর করে উঠে বসে বুকে চাদর টেনে নিয়ে বিস্ফারিত চোখে দরজার দিকে তাকায়, প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিন্ড নিয়ে আমিও ওর দৃষ্টি অনুসরণ করি।
দুচোখে অদ্ভুত বিস্ময় নিয়ে মৌলীর ছেলে দরজায় দাঁড়িয়ে, যার পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকার কথা। ছয় বছরের শিশু কিছুই বুঝতে পারে নি, কিন্তু আমরা জানি ওর কিছু বুঝতেই বাকি নেই।

আমি চট করে চাদরের নিচে মাথা লুকিয়ে বললাম, “তুমি ওকে ওঘরে নিয়ে যাও।” হতবিহ্বল মৌলীকে আমি খোঁচা দিয়ে জাগালাম, ও চলে গেল।

কাপড়-চোপড় পড়ে ভদ্রস্থ হয়ে ওদের বসার ঘরে সোফায় হেলান দিয়ে আমি মা-ছেলের যুদ্ধের আওয়াজ শুনলাম। সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেখি হাত কাঁপছে, ভাগ্যিস রফিক আজকে রাতে আসবে না!

খুব জোরে ঠাস করে একটা শব্দ শুনলাম চড়ের, তারপরই মৌলী উন্মাদিনির মত ওঘর থেকে বের হয়ে এল। চোখ বড় বড় করে হাফাঁতে হাফাঁতে বলল, “এখন?”

আমি উঠে গিয়ে ওকে একহাতে বুকে টানলাম, “রিল্যাক্স!” দেবদুতের মা আমার বুকে তার সব কয়টি নখ গেথে দিল, তারপর আমাকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিল, “তুমি চলে যাও!” আমি জামার বোতাম লাগিয়ে অ্যাশট্রেতে ছাই ফেললাম, “এটা ঘটবেই, তুমি জানতে!” ধীর গলায় বলা কথাগুলো শুনে মৌলী আমার দিকে বাঘিনীর চোখে তাকালো।


কোনো খুনিকে চেনার কথা হচ্ছিলো না? আমাকে কিংবা মৌলীকে আমি যতটুকি চিনি, অতটুকু আর কে কাকে চেনে?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০৭
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×