কোনো পরীক্ষাগার নেই, নেই কোনো রসায়নবিদ। মেঝেতে নোংরা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। খাট আর মেঝেতে বসে ক্যাপসুলের খোসায় ওষুধ ভরছেন কয়েকজন শ্রমিক। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভিটামিন, প্রোটিন ও যৌন-উত্তেজক ক্যাপসুল-বড়ি। ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ মণিপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ তৈরির কারখানাটির খোঁজ পান। এ সময় কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ৫২২/২, দক্ষিণ মণিপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই বাড়ির দোতলায় তৈরি হচ্ছে ওয়েজ গোল্ড নামে মাল্টিভিটামিন ই ক্যাপসুল। এ ছাড়াও সেখানে তৈরি হচ্ছে যৌন-উত্তেজক বড়ি জেল প্লাস ও ক্যালসিয়াম ক্যাপসুল অসবন। ওই বাড়ির দোতলার খাটে ও মেঝেতে বসে ওষুধ তৈরির কাজ করছিলেন পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক।
এসএ ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান এসব ওষুধ তৈরি করছে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তাজুল ইসলাম। তাঁর স্ত্রী নাদিয়া সুলতানা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। আদালত ওই বাড়ির উল্টো দিকের একটি ভবনের গুদাম থেকে প্রায় ২০ লাখ পিস ওষুধ জব্দ করেন। একই গলিতে রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়।
বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা আসিফ খান জানান, নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ওষুধ তৈরি হচ্ছিল। ওষুধ তৈরিতে তাঁরা নিষিদ্ধ রং ব্যবহার করছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তাজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নাদিয়া সুলতানা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন। এ ধরনের ভুল আর কখনো করবেন না বলে আদালতের কাছে অঙ্গীকার করেন তাঁরা। পরে জব্দ করা ওষুধগুলো পাশের একটি খালি জায়গায় আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
আদালত পরিচালনাকারী র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা প্রথম আলোকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা একটি কোম্পানির কাছ থেকে ক্যাপসুলের খালি খোসা কিনে ভেতরে নিজেদের তৈরি ওষুধ ভরছিলেন। এই অপরাধে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী মালিক তাজুল ইসলামকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী নাদিয়া সুলতানাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ার পাশা আরও বলেন, বাজার থেকে নিম্নমানের ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ক্যালসিয়াম পাউডার কিনে সেখানে ক্ষতিকর সবুজ রং ব্যবহার করা হচ্ছিল। চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে প্রোটিন ও ভিটামিন। এসব তৈরিতে কোনো নীতিমালা না থাকায় অনেকেই বাসায় বসে তৈরি ও বাজারজাত করছেন।
অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহায়তা করেন বাংলাদেশ শিল্প, বিজ্ঞান ও গবেষণা পরিষদের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তারেক আবদুল্লাহ; ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সুপার সফিকুল ইসলাম; বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা আসিফ খান; র্যাব-৪-এর উপপরিচালক সারোয়ারসহ একটি দল
সূত্র: প্রথম আলো

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



