somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ

২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রি পেড়িয়ে গেল।শেষ বিকেলে আমি শেওড়া থেকে টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরার জন্য দৌড়ে BRTC'তে চড়লাম।তাড়াহুড়ো করায় একটা মেয়ের সাথে একটু ধাক্কা লাগলো।

"এই যে! আপনার গা থেকে বিচ্ছিরি ঘামের গন্ধ আসছে।গা ঘেঁষে দাড়াবেন না।"চোখ দিয়ে গুলি করা গেলে, মেয়েটা এতক্ষণে আমাকে খুন করে ফেলতো।আমি বেশ দূরে চলে গেলাম।

নিকুঞ্জ পাড় হতেই মেয়েটি প্রায় আমার পিঠ ঘেঁষে দাড়ালো। আমি চমকে দূরে সরে যাচ্ছি দেখে বললো," শুনুন, কেউ হয়তো আমার জামা কেটে দিয়েছে। একটু দেখবেন।"
মেয়েটির জামা পিঠের দিকে কাটা, বেশ বড় চকচকে কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে।

মেয়েটির ওড়না নেই, আমি আমার শার্ট খুলে তাকে দিলাম। যে ঘামের দুর্গন্ধ একটু আগে তার সহ্য হচ্ছিল না, এখন ঘাম মাখা শার্টটাই বেশ যত্নে পরলো।কোন ইতস্তত নেই, একবারও জিজ্ঞেস করেনি শার্ট ছাড়া আমার লজ্জা লাগছে কিনা?

আমাকে বাসার ঠিকানা বলে, সে আজমপুর নেমে গেল।একবার পিছনে ফিরেও তাকালো না।যেন তাকে শার্ট দেয়া আমার দায়িত্ব ছিল, আর ঘামে ভেজা শার্ট দিয়ে আমি দায়িত্বে অবহেলা করেছি।

পিয়ার সাথে আমার এমন বিদঘুটে ঘটনার মাধ্যমেই পরিচয়।

আমার তিনটা ভালো শার্ট। আমি বদলিয়ে বদলিয়ে পরি।শোভন নামে ছোট একজন ছাত্র আছে, এক শার্ট বারবার দেখলেই বলে,"স্যার, আপনার কি একটাই শার্ট? আপনি কি গরীব?"
তাই আমি গত শুক্রবার পিয়াদের বাসায় আমার শার্ট আনার জন্য গিয়েছিলাম।

ওদের বসার ঘরটা উচ্চবিত্তলোকদের ঘর যেমন হয় তেমনি।দামী আসবাব, শোপিস, এন্টিক আর তেলচিত্রে ঠাসা।তবে একটা ব্যতিক্রম, দেয়ালে রাধা-কৃষ্ণ যুগলের একটা তেলচিত্র! আশ্চর্য এই যে এখানে কৃষ্ণের ইচ্ছে পূরণ করা হয়েছে, তাকে ফরশা আকা হয়েছে।কৃষ্ণ সারা জীবন দুঃখ করেছে,"রাধা কিউ গোড়া ম্যা কিউ কালা?" মুসলিম লোকের বাড়িতে রাধা-কৃষ্ণের এই ছবি দেখলে ধর্ম মন্ত্রী গর্ব করে বলতেন, এই সরকারের আমলেই কেবল এটা সম্ভব।

"আমার নাম পিয়া।আপনার খুব খিদে পেয়েছে নিশ্চয়?"
"না। কিভাবে বুঝলেন।"

"আপনি ঠান্ডা চা আর পুতানো চানাচুর খুব আগ্রহ করে খাচ্ছেন তাই।"
"ও!আমার শার্টটা কি ফেরত পাওয়া যাবে?"

"যাবে, কিন্তু আজ না।আমি কাচ্চি রান্না শিখছি, আপনি আগামী শুক্রবার আবার আসবেন। কাচ্চি খেয়ে, শার্ট নিয়ে যাবেন।"
"ঠিক আছে।আমি যাই, পড়াতে যেতে হবে।"

"আপনার নাম কি?আপনি কি করেন?"
"আমি মুহিব, আমি পুলাপান পড়াই।"

সেদিন পিয়ার সাথে অনেক কথা হলো। মেয়েটা একটানা কথা বলে যেতে পারে।মাথা ঝিঝি করছিল, কিন্ত একটা মেয়ে এত আগ্রহ করে গল্প করছে, হুট করেতো ঊঠে যাওয়া যায় না।বিশেষ করে কোন সুন্দরী মেয়ে কথা বললে শুনতে হয়, ভালো না লাগলেও মুগ্ধ হবার অভিনয় করতে হয়।নয়তো অভিশাপ লাগে, সৌন্দর্যের দেবী হেলেনের অভিশাপ!

২য় বার পিয়ার সাথে দেখা হল রবিবার, সেদিন আমি ৫ নম্বর সেক্টরে জারিফকে পড়াতে যাচ্ছি।পেছন থেকে সে আমাকে ডাকছিল।

"মুহিব, এই মুহিব!কোথায় যাচ্ছেন?"
মেয়েটা এমন কেন, এমনভাবে ডাকছে যেন আমি তার কত পরিচিত। সারারাত জেগে কথা বলি, আমি বাদাম ছিলি সে কুটকুট করে খায়, আমরা হাত ধরে দিয়াবাড়ি লেকের পাড়ে বসে থাকি!

"হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?রিকশায় উঠুন। কোথায় যাবেন, নামিয়ে দিব।সারাদিনের জন্য রিকশা ভাড়া করেছি।ঘুরে ঘুরে বৃষ্টি দেখবো।"
আমি সত্যিই হা করে তাকিয়ে রইলাম, পাগল নাকি মেয়েটা!

"কই, উঠুন।দেখুন, আমার গায়ে কুষ্ঠ হয়নি যে আপনি আমার পাশে বসতে পারবেন না।"

ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।আমার খুব ইচ্ছে করছিল পিয়ার কাধে হাত রাখি, অনেকটা প্রেমিক রিকশার হুড তুলে যেমনভাবে প্রেমিকার কাধে-কোমড়ে হাত রাখে তেমনভাবে।আমার সাহস হয়নি, অথচ ঝাকি লাগলে পিয়া কত সহজভাবে আমার হাটুতে হাত রাখছিল।একটুও ইতস্তত নেই।

আজ শুক্রবার, আমি পিয়াদের বাসার গেটে।আজকে দোতলা বাড়িটা মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো, লাল-নীল-সবুজ বাতি জ্বলছে আর নিভছে।বিশাল বোর্ডে গাদা-গোলাপ দিয়ে লিখা Milon weds Piya!

আজ পিয়ার বিয়ে, এর মাঝে সে নিশ্চয় আমার জন্য কাচ্চি রান্না করবে না।আমি মেসের দিকে হাটা শুরু করেছি।দাওয়াত ছাড়া বিয়েতে যাওয়ার কোন মানে হয় না। অনেকদিন বিয়ে খাই না, গেলেও খারাপ হয় না।কিন্তু দেখা গেল, পিয়া আমাকে চিনতেই পারছে না।খুব অসম্মানের হবে।

"বাইজান, ও বাইজান!"
পিয়াদের কাজের লোক।বলছে, পিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

এটা মনে হয় পিয়ার ঘর।সারা ঘরে বিয়ের শাড়ি, কনে সাজানোর জিনিস আর গয়নার বাক্স। পিয়া একটা প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকছে।তার আগেই হনহন করে একজন মহিলা এলেন,অনেকটা ডলি জহুরের মত। রিনা খানের মত কর্কশ বলছেন,"দেখ ছেলে,তুমি এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে চলে যাবে।আর জীবনেও এই দিকে আসবে না।"আমার প্রতি এত রাগের কারণ কি?আমিতো শার্ট নিতে এসেছি,দিলেই চলে যাবো। আবার আসবো কেন?

পিয়া শান্তভাবে বলল,"মা, আজকের এই কিছুটা সময় আমাকে দাও।কাল আমিতো লন্ডন চলেই যাচ্ছি।তোমার সব কথা রেখেছি,আমার এই কথাটা রাখো।"

ভদ্রমহিলা চলে গেলেন না।পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। পিয়াকে বসার ঘরে টানানো তেলচিত্রের রাধার মত লাগছে। একটাই তফাৎ, সিঁথিতে সিঁদুর নেই।পিয়া মুখ হাসি হাসি রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু তার চোখ বিষন্ন।

পিয়া আমার সামনে সাত রঙের সাতটি শার্ট রেখে বললো,"এগুলো আপনার। না করবেন না। আজ আমার বিয়ে, বিয়ের দিন কনে'কে কষ্ট দিতে নেই।"

আমি চুপ করে রইলাম।পিয়া খাবার প্লেট আমার সামনে দিয়ে বললো,"আমি কাচ্চি রান্না শিখতে পারিনি। তবে ভাত আর ডিমভাজি করেছি।ভাত একটু জাউয়ের মত হয়ে গেছে।প্রথমবার তো!"

মেসে প্রায় প্রতিদিন ডিম খাই।কিন্তু একটা সুন্দরী মেয়ে আগ্রহ নিয়ে প্রথমবার রান্না করেছে, তাই ভালো না লাগলেই আগ্রহের অভিনয় করে খাচ্ছি।না তাকিয়েও বুঝতে পারছি, পিয়ার চোখ দিয়ে ভালোবাসা-মমতা আর মায়ের চোখ দিয়ে আগুন ঝরে পরছে।

আমি পিয়াদের বাসা থেকে বের হয়ে মেসের দিকে হাটছি।ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।একজন শেরওয়ানি পরা বৃদ্ধলোক আমাকে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে এলেন।
"মুহিব, মহিব!তুমি মুহিব?কি হয়েছে বলতো, তুমি চলে আসার পর থেকেই আমার মেয়েটা কাঁদছে।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:১০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×