somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবং ছেলেটা.........

২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড়রা মনে করে,বাচ্চারা কিছু বুঝতে পারে না।ভূল, আমরা সব বুঝতে পারি।এই যেমন আমি বুঝতে পারছি বাবা দরজা বন্ধ করে মাকে মারছে।মা নিশ্চয় খুব কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু বের হয়ে মা এমন ভাব করবে যেন তারা ঘরে এতক্ষণ গল্প করেছে।আজ অবশ্য বাবা মাকে বেশ করে মারতে পারবে না।কারণ আমি আগেই বাবার বেল্ট, বিছানার ঝাড়ু আর টয়লেটের ব্রাশ সরিয়ে ফেলেছি।

বাবা মাকে মারছে কারণ মামা কিছুতেই তালাকনামায় সই করবে না।বাবা যা বলেন মা তাই করে।এইতো সেদিন মাঝরাতে বাবা বললো,"মিনি যা, আমার সিগারেট এনে দে।" মা এনে দিল।অথচ আমি সন্ধ্যায় আইসক্রিম খেতে চাইলেও মা বলে,"রাইদ, কাল সকালে খেও। আব্বা, আমার অন্ধকার খুব ভয় লাগে।"

তালাকনামা কি আমি জানি না।তবে বুঝতে পারি খুব খারাপ কিছু।বাবা মাকে বকা দেন, ধলা মাগী। সেদিন আমাদের কাজের বুয়ার হাসবেন্ডও তাকে বকা দিয়ে বলেছে,"কাইল্লা মাগী টেহা দেস না কেন?"
"তালাকনামা" আর "মাগী" এই দুইটা শব্দের অর্থ জানতে হবে।কিন্তু আমার কাছে কোন বাংলা একাডেমি ডিকশনারি নেই।মুহিব মামাকে বললে এনেদিত। কিন্তু মামা গত পরশু চলে গিয়েছে, আর ফিরেনি।

মুহিব মামার গায়ের চামড়া গন্ডারের,মামার লজ্জা নেই, মামার কোন বুক-পিঠ নেই,মামা বসে অন্ন ধ্বংস করছে;এইসব বাবা প্রায়ই বলেন।আমার বাবাতো আইনজীবী, তাই তিনি কঠিন কঠিন শব্দ বলেন।এই জন্যই আমার একটা বাংলা ডিকশিনারি দরকার।

"দাদা, এই দাদা!পিপি করবো।"
এটা আমার ছোটবোন, অরু।ওর জন্যই যত সমস্যা।মেয়েটার সারাদিন খিদে আর পিপি লেগেই থাকে।আর সে যেখানে সেখানে "ভাউ" দেখে।সারাদিন ট্যাট্যা করে, "দাদা পিপি, দাদা ওখানে ভাউ, দাদা ভয় লাগে, দাদা দুদু খাবো, দাদা আমার মাম খাবো!"
আমি কিন্তু বিরক্ত হই না।কারণ, ও দেখতে Frozen'র এলছা'র মত।কি মায়া করে দাদা ডাকে!

কাল ও না থাকলে, আমি বাবাকে খুন করতাম।আমি একটা নতুন ব্লেড নিয়ে ঘুমন্ত বাবার পাশে ঘাপটি মেরে বসে আছি।মা পাশে ঘুমোচ্ছে। আমার মন্দ মন, ভালো মনের সাথে যুদ্ধ করছে।একজন বলছে, মেরে ফেল। মেরে ফেললেই মা শান্তি পাবে।ভালো মন বলছে, মারিস না রাইদ।তোর মা কষ্ট পাবে।আর তোর বাবা তোকে খুব ভালোবাসে।

মন্দ মন জিতে গেল,কারণ আর বাবা মাকে খুব মারে। আর মা যে জেদি, কিছুতেই তালাকনামায় সই করবে না।আমি ব্লেড দিয় পোছ দিব দিব, ঠিক তখনি অরু বলল,"দাদা, দাদা!তুই আমায় একা রেখে চলে এলি কেন?আমার ভয় লাগে।বিছানার নিচে ভাউ, শব্দ করছে হাউ হাউ!" বাবা জেগে গেল।আমাকে আর অরুকে কোল নিয়ে বললো,"কি ব্যাপার বাবা, ঘুম আসছে না।চল গল্প শোনাই।" আমি আর অরু বাবা কোলে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম।ভেবে বসবেন না, আমার বাবা অনেক ভালো। আসলে মধুর আচরণ করে দুই ধরনের লোক- সাধু আর পিশাচ।আমার বাবা পিশাচ। মায়ের পিঠটাতো দেখেননি!

মা ঘর থেকে বের হয়ে হাসিহাসি মুখে বললেন,"রাইদ, আমরা কোর্টে বেড়াতে যাবো। যাও রেডি হও।"

কোর্টে কি হচ্ছে আমি জানি না।আমরা বাবার চেম্বারে বসে আছি।আমাদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছেন শাওন, শাওন আন্টি!আজ নিশ্চয় উনার আনন্দের দিন।বাবা আজ উনাকে বিয়ে করবে। উনি দেখতে শাওনের মতই, ঠিকই ধরেছেন নিষাদের আম্মু শাওন।মা বলতেন, হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে সত্যি খুব ভালোবাসেন True love।আমি উনার নীল হাতি, বোতল ভূত পড়েছি;আজেবাজে লিখা!

বাবাও নিশ্চয় শাওন আন্টির True love, তাহলে মায়ের কি হবে?অরুটা কি যে বোকা, চকলেট দিলেই নিতে হবে।অবশ্য শাওন আন্টি খারাপ না।আগে আমার জন্য কাচ্চি, পাস্তা নিয়ে আসতেন।তখন বাবা শাওন আন্টির একটা কেস লড়ছে!তাকে দেখেই কোলে ঝাপিয়ে পরতাম, এখন ভালো লাগে না।তাকে পেত্নী পেত্নী লাগে!বাবা এই কালো-মোটা মেয়েটার মাঝে কি দেখেছে কে জানে?অথচ মা কত সুন্দরী! সুবর্ণা মোস্তফা আর মাকে একইরকম দেখতে।

সুপ্রিম কোর্ট কি সুন্দর! চেনা খুব সহজ, শাহবাগ পাড় হয়ে মৎস্য ভবন, ডান দিকেই তাকালেই সুপ্রিম কোর্ট। অবশ্য আজ আমি ভাবছি অন্য কথা, কিভাবে বাবাকে খুন করা যায়?গুগলে অনেক পদ্ধতি দেখেছি।Mikey,Badlapur, Mom, Perfume:story of a murder, Wrong Turn মুভিগুলোতে দেখেছি কীভাবে খুন করতে হয়। আমার জন্য বেশ কঠিন। আমি ছোট তাই।কিন্তু আমি জানি, আমি পারবো, মাইকি'র মত বিদ্যুৎ দিয়ে বাথটাবেও মারতে পারি।তবে ব্লেড দিয়ে গলা কাটা সহজ।

মুহিব মামার সাথে আলোচনা করা যেত, কিন্ত একে মামা নেই; মামা আমার "ভালো মন"র মত।তাই মামা রাজি হত না।এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে, সাক্ষী থাকবে না।

আমরা এখন বিচারক আংকেলের রুমে বসে আছি।উনাকে আগে থেকেই চিনি। মুহিব মামার সাথে একবার আমাদের বাসায় কেয়া আন্টি এসেছিলেন।তিনি বলেছিলেন,"রাইদ, তোমার দেখি ঘাড়ে তিল।যাদের ঘারে তিল তাদের ফাসি হয়।" বাবাকে খুন করার জন্য আমারও নিশ্চয় ফাসি হবে। তখন এই আংকেল বলবেন,"৩০২ ধারা মোতাবেক রাইদকে ফাসিতে মৃত্যু কার্যকরের আদেশ দেয়া হইলো।"

যেহেতু মা দুশ্চরিত্রা, মায়ের অন্য জনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে। তাই আমরা আর মায়ের সাথে থাকতে পারবো না।কিন্তু একটা আংকেল কাসুন্দি রেস্টুরেন্টে মাকে বলেছিল, তিনি মাকে এখনো ভালোবাসেন।মায়ের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবেন।যেকোনো ভাবে মায়ের সাথে থাকতেন চান।মা হেসে উড়িয়ে দিলেন।বাবার এতএত প্রশংসা করলেন।অথচ সেদিন সকালেও বাবা মাকে আমার খেলার ব্যাট দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে।

বিচারক আংকেল জিজ্ঞেস করলেন আমরা কার সাথে থাকতে চাই।আমিতো বাবার সাথেই থাকবো, নইলে তাকে খুন করবো কিভাবে?বোকা অরু মায়ের জন্য কান্না জুড়ে দিল।চকলেট, পুতুল, আইসক্রিম সব ছুরে ফেলে দিল।কলম দানী দিয়ে দিল শাওনের কপালে বাড়ি।শাওন এবার বুঝবে কেমন লাগে, কত ধানে কত মুড়ি!

আমি মায়ের কানে কানে বললাম,"মা তুমি ভয় পেও না।মুহিব মামা তোমাকে বিয়ে করবে।আর মামা যদি কেয়া আন্টিকে বিয়ে করে, তুমি কাঁদবে না।আমি বড় হয়ে তোমায় বিয়ে করবো।আর আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে আসবো।"

মা একটু হাসলেন। মা তো হাসবেনই। মা তো জানে না, আজ রাতেই বাবাকে খুন করবো। ব্লেড দিয়ে আস্তে একটা পোছ!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৫৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×