সৌদি আরবের শ্রম বাজার,সম্ভাবনার হাতছানি
৮,৩০,০০০ বর্গমাইলের বিশাল এক দেশ সৌদি আরব।দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ২,৭১,৩৬,৯৭৭। সরকারি হিসেবে আবাসিক অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রবাসীর সংখ্যা ৮৪ লক্ষ।প্রাকৃতিক সম্পদ তেল ও তেলজাত পদার্থে সমৃদ্ধ দেশটির বাজেটের ৭৫% রাজস্বের প্রায় ৯০% ই আসে এই খাত থেকে।এ ছাড়াও পর্যটন খাত, বিশেষ করে হজ্ব ও উমরাহ পালন করতে আসাদের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।
দেশটি ইসলামী শ’রিয়াভিত্তিক আইন অনুযায়ী চলছে।ঘুষ-দুর্নীতি-চুরি-লুটপাট কিংবা আইনের অপপ্রয়োগ কল্পনাও করা যায় না এ দেশে।এ বিষয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করলেও একটি কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, একজন ট্যাক্সিচালক যে বাংলাদেশে ট্রাফিক আইন মানেনি কোনোদিন, ধরা পড়লে কোনোভাবে ‘ম্যানেজ' করেছে, এখানে সেটি সম্ভব নয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে উত্পাদন-ব্যবস্হা থমকে গেছে, খোদ আমেরিকায় বড় বড় সব ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে, কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।অনেক দেশ ধাক্কা সামাল দিতে নানাভাবে কৃচ্ছ্রতা সাধন করেছে। কিন্তু তার আঁচড় কিংবা মারাত্মক ছায়া এ দেশটিতে তেমনভাবে দেখা যায়নি।দেশটিতে বিপুল কর্মসংস্হানের সুযোগ রয়েছে।
সরকারি অফিস-আদালতগুলো ছাড়াও সর্বত্র, বিশেষ করে ৫টি সেক্টর উল্লেখযোগ্য -
(১) নির্মাণশিল্প-সংশ্লিষ্ট যথা -প্রকৌশলী, (ডিপ্লোমাসহ), কার্পেন্টার, নির্মাণ-শ্রমিক, বিদ্যুৎ, যন্ত্র ও প্রকৌশলে কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, টাইলস্ ও সিরামিক্স, রং, ওয়েলডারসহ সব ধরনের দক্ষ শ্রমিক।
এসব কাজের মজুরী অত্যন্ত সম্মানজনক। বর্তমানে এই খাতটিতে নির্মাণ-শ্রমিক হিসেবে বাঙালিরা কাজ করলেও এটি পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে।
(২) স্বাস্হ্যসেবা খাতসংশ্লিষ্ট যথা - ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক, ফার্মাসিস্ট, আয়া, পরিচ্ছন্নকর্মী। এখানে ভারতীয়রা এগিয়ে আছে, এ ছাড়াও মিসরীয়রা সুবিধাজনক অবস্হানে আছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমাদের অবস্হান পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে, আর হাতে গোনা যাবে এমন কিছু ডাক্তার আছেন। বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি এখানে খুবই সম্মানজনক।প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এই খাতে প্রবেশের।
(৩) সাধারণ সেবা, বিক্রয় ও বিপণন - সুযোগ রয়েছে অত্যাধুনিক ও বিশাল মলগুলোতে সেলসম্যান এর কাজ করার।গ্রোসারি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন এর ব্যবসা করার সুযোগও রয়েছে।বস্ত্র, প্রসাধনী, হোটেল, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, বিক্রয়-বিপণন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির পরিবেশক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদেশে ওষুধ ও চিকিত্সা-সামগ্রীর বিশাল বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় এখানে ওষুধের দাম অনেক, অনেক বেশি।
ধরা যাক, গ্যাসট্রিক এর ঔষধ Ranitidine hcl 150mg বাংলাদেশে মাত্র ২ টাকা ।আর এখানে ২ রিয়াল (১ রিয়াল ১৮.৫০ টাকার সমপরিমাণ), Omeprazole(20mg) বাংলাদেশে মাত্র ৪ টাকা, এখানে ৪ রিয়াল।
স্হানীয়ভাবে এখানে ওষুধ প্রস্তুত, বিক্রয় ও বিপণন হলেও ইউরোপ, আমেরিকা, জর্দান, দুবাই, মিসরের ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রীতে বাজারটি সমৃদ্ধ হয়েছে।বাংলাদেশী ওষুধ তুলনামূলকভাবে সস্তা হওয়ায় খুউব সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।এখানকার ফার্মেসিগুলোতে দক্ষ ফার্মাসিস্টদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্হানের সুযোগ রয়েছে।
(৪) ব্যাপক কর্মসংস্হানের সুযোগ রয়েছে হালকা ও ভারি যানবাহন, অফিস কিংবা বাসাবাড়ির গাড়িচালক, ট্যাক্সি-ক্যাব চালকদের জন্য।
(৫) আই,টি ক্ষেত্র, কমপিউটর প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার ডিজাইনার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, হিসাব-বিজ্ঞান সেক্রেটারি, দক্ষ ব্যবস্হাপক, ব্যবসা প্রশাসক, শিক্ষকসহ নানা পেশাজীবীর জন্য প্রতিনিয়ত কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
এ ছাড়াও ফসল, যেমন গম, ভুট্টা, শাক-শব্জি, ফল ও খেজুর বাগান, গবাদিপশু লালন-পালন, বিনোদন কেন্দ্র, ক্যাটারিংসহ নানা খাতে প্রবেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।একজন পেশাজীবি,দক্ষ শ্রমিক অত্যন্ত ভালো বেতন,বাসা,চিকিত্সা সেবা,যাতায়াতের খরচ সব নিয়োগ কর্তার নিকট হতে পেয়ে থাকেন।
বিপুল জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ।সীমাবদ্ধ সম্পদের কথা মাথায় রেখে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি ও বিদেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে নিয়ে দেশকে সমৃদ্ধিরপথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের এই শতাব্দীর সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৩:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



