আমাদের মধ্যে অনেক টাইপের মুসল্লি আছে, যেমন সাপ্তাহিক যারা শুধু শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করে, আবার আরেক দল হলো বাৎসরিক যারা ঈদের নামাজকে ফরজ মনে করে মসজিদে যায়। অনেকে আছে নিয়মিত আবার অনিয়মিতদের সংখ্যাও কম নয়। এদের মধ্যে যারা সাপ্তাহিক তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি।
জুম্মার দিন দেখা যায়, হুজুর খুৎবার সময় যখন "ফাজকুরুনি আজকুরকুম ওয়াশকুরুলি ওলাতাকফুরুন" এই লাইনটা বলেন তখন সবাই নামাজের জন্য দাড়িয়ে যান। যেহেতু আমাদের মুসল্লি ভাইদের অধিকাংশই আরবি জানেন না, তাই তারা এটাকে একটা সংকেত হিসেবে নিয়েছেন, হুজুর যখন এই কথা গুলো বলবে তখন ধরে নেয়া হয় খুৎবা শেষ। বাস্তবেও তাই, প্রায় সকল ইমাম সাহেবরাই এই কথাগুলোকেই খুৎবার উপসংহার হিসেবে ব্যবহার করেন। বছরের পর বছর আমরা এই কথা গুলো শুনে আসছি, কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি, চেষ্টা থাকেলেও উপায় হয়নি। এই লেখাটিতে আমি খুৎবায় কি বলা হয় মানে অধিকাংশ খুৎবার মর্মার্থ বিশ্লেষণ করবো।
খুৎবার প্রথম অংশে থাকে সাপ্তাহিক আপডেট এবং করণীয় সম্বন্ধে। দ্বিতীয় অংশে থাকে দোয়া। আর উভয় অংশ জুড়েই থাকে আল্লাহ’র প্রশংসা আর বাণীবাহক মুহাম্মদের (সা.) প্রতি দুরূদ। দ্বিতীয় অংশে নিজের এবং পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের জন্য দোয়া ছাড়াও সুন্নিগণ চার খলিফা (আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলী [রা.]), মুহাম্মদের বংশধর (ফাতেমা, হাসান, হোসাইন [রা.]), মুহাম্মদের সহচরগণ (সাহাবিগণ (রা.)), সাহাবাদের বংশধরগণ (তাবে’য়ী ও তাবে’-তাবে’য়ীনগণ [আল্লাহ তাঁদের প্রতি দয়াপরবশ হোন]), ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ওলি-আওলিয়াদের [রহ.] জন্য দোয়া করেন। তাই, প্রথমাংশে সামান্য ব্যতিক্রম থাকলেও প্রায় সকল স্থানেই দ্বিতীয় খুৎবায় অনেক মিল। যেহেতু দ্বিতীয় খুৎবায় দোয়া পাঠ করা হতে থাকে, তাই এসময় উপস্থিত শ্রোতারা মনে মনে “আমীন” (তাই হোক) বলাটা উত্তম।
বাংলাদেশের ইমামগণ সাধারনত যে ভাবে খুৎবা শুরু করেনঃ-আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহি নাহমাদুহু ও নাস্তা-ইনুহু ও নাস্তাগফিরুহু ও নু'মিনুবিহি ও নাতাওক্কালু আলাইহি ও নাউজুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ও মিন সাইয়িয়াতিনা.।
অর্থঃ সকল প্রশংশা আলাহর,আমরা সকলে তার প্রশংশা করছি, তার কাছেই চাই, তার কাছেই ক্ষমা চাই, তাকেই বিশ্বাস করি, (তাওক্কুল শব্দটার প্রচলিত বাংলা মনে পড়ছে না) এবং আমাদের নফসের খারাপ ওয়াস-ওয়াসা ও সকল খারাপ কাজ থেকে আমরা পানাহ চাই.. অতপর বাংলায় যা যা বলা হয়েছে তার সার সংক্ষেপ বলা হয় সাথে থাকে কুরানের উদ্ধৃতি।
এর পর ইমাম সাহেব বসেন। এখন দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবেন।
এই পর্বে খুৎবার নিয়ম অনুযায়ী সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য দোয়া করা হয়। রাসুল সাঃ , তার সাহাবী এবং আলেম-ওলামা সর্বপরি সকলের জন্য দোয়া করা হয়। মাঝে মাঝে ইরাক, ফিলিস্তিন, চেচেন এই সব দেশের নামও শুনে থাকবেন। এবং শেষে বলা হয় "ফাজকুরুনি আজকুরকুম ওয়াশকুরুলি ওলাতাকফুরুন"
অর্থঃ আমাকে তোমরা স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরন করবো; আমার শুকরিয়া জ্ঞাপন কর এবং অবিশ্বাসী হয়ো না।