somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“একুশ” শহীদ মিনারে ইঁট পাথরের ফ্রেমে বন্দী নয়

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ১৯৫২ সালে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রাঙানো শহীদদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রানের “বাংলা” ভাষার প্রতি ভালবাসা আজ ঘরের দেয়ালের এককোনে ২১ ফেব্রুয়ারীর মলিন ফ্রেমে বাঁধা। যা বছরে এক দিনই শুধু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মেকি প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হই। আর বছরের বাকিঁ ৩৬৪ দিনই বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির অশুভ জোয়ারে নির্লজ্জ ভাবে গা বাসিয়ে ডুবে থাকি এবং যে ভাবে পারি বাংলা ভাষা বিকৃতি ও বিসর্জনের অপচেষ্ঠায় লিপ্ত থাকি।

এ ক্ষেত্রে দেশের মিডিয়া গুলি আরও এক ধাপ এগিয়ে আছে।


বিদেশি ভাষা চর্চা জ্ঞান চর্চারই অংশ কিন্তু তথা কথিত আধুনিকতা ও ভাষা চর্চার নামে নিজের সর্বস্ব ভাষা ও কৃষ্টি প্রতি দিন বিদেশিদের কাছে নির্লজ্জ ভাবে বিসর্জন দিয়ে চরিত্রহীন জাতিতে পরিনত হওয়ার দিকে এগোচ্ছি আমরা।

আরো মজার বিষয় শত সহস্র বছরের বাংলা ভাষাকে আমরা বটি দিয়ে কেটে দুই ভাগে ভাগ করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে ফেলেছি। এক ভাগের নাম ভারতীয় বাংলা এবং আরেকটি আমাদের বাংলাদেশী বাংলা।
ভারতীয় বাংলার রুপ দেখতে এখনি ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিম বঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকায় (http://www.anandabazar.com) বা জী নিউজ ইন্ডিয়াতে (http://zeenews.india.com/bengali)।

আর বাংলাদেশি বাংলাকে দেশের লেখক, কবি সাহিত্যিক, ভাষা প্রেমিক ও কিছু সুশীল ব্যাক্তি সঠিক পথে রাখার আপ্রান চেষ্ঠা করে চলছেন। আর আমরা ১৬ কোটি মানুষ ভাষাটাকে ১৬ কোটি ফুটবল বানিয়ে এর পা থেকে ওর পায়ে, এই পা থেকে ওই পায়ের ঘ্রান নিয়ে আনন্দে আত্নহারা হওয়ার চেষ্ঠা করছি। আর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন, সংযোজন এবং কাচ-ছাঁট করে বানাতে চাচ্ছি একটি আধুনিক বাংলা ভাষা যার নাম হবে “বিদেশি বাংলা ভাষা”।

তবে এটা সত্য যে বাংলাদেশী বাঙালী, ভারতীয় বাঙালী এবং আধুনিক বিদেশী বাঙালী সবাই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শরৎচন্দ্র, জহির রায়হান সহ সকল কালজয়ী বাঙালী সাহিত্যিকদেরকে নিয়ে সবসময় গর্ব করি।


কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা কোন ধরনের বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষনা করেছেন বা লিখেছেন? বাংলাদেশি, ভারতীয় নাকি বিদেশি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য?


সব কাটা কাটি, ভাগা ভাগি ফেলে এবার আসুন একটু বাঙালি হই। ২১শে ফেব্রুয়ারীর জন্য নয় সকল সময়ের জন্য সকল স্থানের জন্য আমরা বাঙালী হব। মাথা উচুঁ করে আমরা এক সুরে বলি আমরা বাঙালী।

বিশ্বের কাছে এটাই আমাদের বড় পরিচয়।


আমাদের ভাষা শহীদগন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দেন নাই। তারা তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন মায়ের ভাষাকে আগ্রাসী জানোয়াদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।

ইউনেস্কো মাতৃভাষার জন্য সেই শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বের সকল মানুষের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সারা বিশ্ব আমাদের ভাষা শহীদগনকে সম্মান দিয়ে নিয়ে গেছে এক অসীম উচ্চতায় আমরা বিদেশী সংস্কৃতির সুতোয় তাদেরকে নীচ দিকে টেনে নামাতে চাচ্ছি। কারন আমরা ভূলে যাই একুশ একদিনের জন্য নয়, একুশ শহীদ মিনারের ইঁট পাথরের ফ্রেমে বন্দি নয়। বছরে শুধু একদিন ফুলে রাঙিয়ে বন্দনা করলেই একুশকে সম্মান জানানো হয় না ।

একুশের অবদান মিশে আছে আমাদের মুখ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি ধ্বনিতে, প্রতিটি কথায়, চিন্তা-চেতনায় এবং বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংষ্কৃতির পরতে পরতে, এমনকি আমাদের রক্তে। তাই তো ৭১এ ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদানের অনুপ্রেরণায় ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটেও আছে সেই ৫২’র শহীদের কীর্তির দুনিয়া কাঁপানো একুশ।

শহীদদের আত্মদানের এই ২১শে ফেব্রুয়ারীর চেতনা ও অনুপ্রেরণায় সকল বিভাজন ভূলে, বিদেশী ও আগ্রাসী সংস্কৃতিকে পদদলিত করে, আমাদের এই সমৃদ্ধশালী ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হোক আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। একুশ আমাদের মুক্তির পথ, আমাদের অহংকার

আমার পূর্ব প্রকাশিত ব্লগ “রক্ত ঝড়ানো ভাষার মাসে ভালবাসার তামাশা নয়” থেকে সংকলিত।


ফেসবুকে আমাকে পাবেন এখানে

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:২১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×