somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মার্ট দেশ: সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশ কতদূর?

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০১৪ সালে নিজেদেরকে স্মার্ট দেশে রুপান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করে সিঙ্গাপুর৷ সম্প্রতি বাংলাদেশও ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে৷ তা কতটা সম্ভব হবে?


বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদদের কাছে সিঙ্গাপুর বেশ জনপ্রিয়৷ স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা থেকে শুরু করে সাধারণ চিকিৎসার জন্যেও তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ছুটে যান৷ আবার রাজনৈতিক বক্তৃতায় সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিরা বাংলাদেশের উন্নয়নকে সিঙ্গাপুরের সঙে তুলনা করতে ভালোবাসেন৷

অর্থনীতি, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, উন্নত জীবনযাত্রার দিক থেকে সিঙ্গাপুর গত কয়েক দশকে ইর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে৷ বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের জীবন সহজ ও উপভোগ্য করা যায় তার চমৎকার উদাহরণ দেশটি৷ প্রায় এক দশক ধরে সিঙ্গাপুর নিজেদের ব্র্যান্ডিং করছে ‘স্মার্ট নেশন’ হিসেবে৷ সেটি যে শুধু কথার কথা নয় তা বোঝা যাবে কিছু তথ্যে৷ স্মার্ট শহরের সূচকে (IMD-SUTD Smart City Index, 2021) সিঙ্গাপুরের অবস্থান বিশ্বে সবার উপরে৷ কেপেএমজি গ্লোবাল র‌্যাংকিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বাইরে তথ্য-প্রযুক্তির সবচেয়ে আকর্ষণীয় উদ্ভাবন হাব হিসেবে স্বীকৃত সিঙ্গাপুর৷ ডিজিটাল ব্যবস্থায় ৯৯ শতাংশ সরকারি সেবা তারা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে৷ ‘ডিজিটাল ইনক্লুশন’ (জনগণকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনা), ইনক্লুসিভ ইন্টারনেটে (ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করে তোলা) সিঙ্গাপুর শীর্ষে৷ এই সাফল্য তারা অর্জন করেছে ধাপে ধাপে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অর্থনীতির পরিকল্পনামাফিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে৷

তথ্যসূত্রঃ ডয়চে ভেলে




২০১৪ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং সিঙ্গাপুরকে ‘বিশ্বের প্রথম স্মার্ট নেশন’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন৷ এর অংশ হিসেবে ‘স্মার্ট নেশন প্রোগ্রাম অফিস’ চালু করা হয়, যাদের উপর সিঙ্গাপুরকে ‘স্মার্ট নেশন’-এ পরিণত করার দায়িত্ব বর্তায়৷

গত ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’-এর আয়োজনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন৷ সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তার নেতৃত্বে একটি নির্বাহী কমিটিও গঠন করা হয়েছে, যারা প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করবে৷ অর্থাৎ, সিঙ্গাপুরের আদলে বাংলাদেশকেও স্মার্ট দেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা৷ দেখে নেয়া যাক, এমন কর্মসূচি নেয়ার আগে সিঙ্গাপুরের প্রযুক্তিগত কাঠামোটি কেমন ছিল, আর সেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি কেমন?

সিঙ্গাপুর বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশের একটি যারা ১৯৯৭ সালেই উচ্চগতির ইন্টারনেটের জন্য দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে৷ সেই নেটওয়ার্কে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুলগুলোকে যুক্ত করা হয়৷

এদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাতে গত বছর কাগজে-কলমে বাংলাদেশে ‘ইনফো সরকার-৩' নামের একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে৷ তবে সবার জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট যে এখনও বহুদূর তা মহামারিতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মুখ থুবড়ে পড়াতেই টের পাওয়া গেছে৷ বিশ্বব্যাংকের সবশেষ ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছানো গেছে ছয় শতাংশেরও কম জনগোষ্ঠীর কাছে, যেখানে ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুরে এই হার ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ প্রায়৷

২০১৪ সালেই সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন৷ সবশেষ হিসাবে (২০২০) বাংলাদেশে এই হার মাত্র ২৫ শতাংশ৷ উন্নত দেশতো বটেই বাংলাদেশ এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার চেয়েও পিছিয়ে৷

২০১৪ সালে জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট সূচকএবং ই-পার্টিসিপেশন সূচকে সিঙ্গাপুরের অবস্থান ছিল বিশ্বে যথাক্রমে তৃতীয় ও দশম৷ বিগত বছরগুলোতে কয়েক ধাপ এগুনোর পরও বর্তমানে এই সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বে ১১১তম ও ৭৫ তম৷

১৯৯৮ সালে সিঙ্গাপুর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সরকারি গ্রন্থাগারে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিক্যাশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে৷ যার মাধ্যমে জনগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বই ধার নেয়া ও ফেরত দিতে পারে৷ ২০০৭ সালেই দেশটির রাজস্ব কর্তৃপক্ষ কর প্রদান ও ট্যাক্স ফাইলিং প্রক্রিয়া ডিজিটাল করে৷ এমন সেবা বাংলাদেশে কবে পৌঁছাবে সেই ধারণা পাওয়া এখনও কঠিন৷

ডিজিটাল সেবাগুলোর সফল বাস্তবায়নের পর ‘স্মার্ট নেশন’ কর্মসূচির আওতায় সিঙ্গাপুর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি, ‘ইন্টারনেট অব থিংস’সহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবার অটোমেশন ঘটাচ্ছে৷ বাংলাদেশে সেখানে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ লক্ষ্যগুলোই অপূর্ণ থেকে গেছে৷ দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এসে ডিজিটাল বাংলাদেশের কিছু লক্ষ্য ঠিক করে সরকার৷ তার একটি ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ সড়কে টোল আদায়ের কাজ স্বয়ংক্রিয় করা৷ কিন্তু ২০২২ সালের শেষে এসে একটি সড়কেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি৷ ডিজিটাল সেবা দূরে থাক একটি আধুনিক শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় ন্যূনতম যে শৃঙ্খলাটুকু থাকা দরকার বাংলাদেশের রাজধানীতে তা নেই৷

ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার দেড় দশক পার করেছে৷ এই সময়ে গোটা বিশ্বেই প্রযুক্তিগত বড় পরিবর্তন ঘটেছে৷ যেসব দেশ নিজেদের ডিজিটাল বলে ঘোষণা দেয়নি, তারাও বড় ধরনের ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে৷ কম-বেশি পরিবর্তন বাংলাদেশেও হয়েছে, কোনো কোনো সূচকে ধারাবাহিক অগ্রগতি আছে৷ কিন্তু বৈশ্বিক মানের বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে৷

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, চারটি মৌলিক স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ‘স্মার্ট’ হবে, যার প্রথমটি ‘স্মার্ট নাগরিক’৷ তেমন দক্ষ, আধুনিক জ্ঞানম্পন্ন নাগরিক সমাজ তৈরির জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং সে অনুযায়ী বিনিয়োগ ও শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন৷ বর্তমানে শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনে বাংলাদেশ বিশ্বের পেছনের কাতারে থাকা দেশগুলোর একটি৷ জাতিসংঘের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক বা বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে সেই কথাই বলে৷ স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে যে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হয় তাতে এই অবস্থা পরিবর্তনে তেমন আশার আলো দেখা যায় না৷ ‘স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি’; সরকার প্রধানের ঘোষিত বাকি তিন স্তম্ভের দিক-দিশা সম্পর্কেও উপরের তথ্যগুলো থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে৷

ডিজিটালাইজেশনের ধাপ পেরিয়ে উন্নত দেশগুলো বহু আগেই স্মার্ট প্রযুক্তির পথে হাঁটা শুরু করেছে৷ সেটি সিঙ্গাপুরের মতো কেউ ঘোষণা দিয়ে করছে, কেউ নীরবে করে যাচ্ছে৷ প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের এই ঢেউ থেকে বাংলাদেশেরও বাইরে থাকার সুযোগ নেই৷ সরকার চায় আগামী ১৮ বছরের মধ্যেই তা অর্জন করতে৷ কিন্তু ভৌগলিকভাবে যত কাছেই হোক না কেন সিঙ্গাপুরকে এক্ষেত্রে যোজন যোজন দূরের দেশই মনে হয়৷

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×