somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৌলবাদীদের অবাধ নিবিড় অধ্যবসায় ছাড়া এতোটা বর্বর সমাজ গড়ে তোলা যায় না

২৫ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় মৌলবাদী মুমিন মুসলমানরা তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছে, তার মৃত্যু কামনা করছে। একজন শিল্পীর মৃত্যু কামনা করা কিংবা একজন শিল্পীর মৃত্যুর পর মুমিনদের বর্বর উল্লাস কি বাংলাদেশে নতুন হচ্ছে? আপনাদের কাছে এই ঘটনা নতুন মনে হচ্ছে? আমার কাছে এই ঘটনা মোটেও নতুন মনে হচ্ছে না, এক যুগের অধিক সময় ধরে এটা দেখে আসছি, যখন ফেসবুকের এতো রমরমা ছিল না, আমরা ব্লগে মুমিনদের এই উল্লাস দেখেছি। তারপর ইন্টারনেটের আরো বিস্তারের পর ফেসবুকে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বারবার। সেই তখন থেকেই আমরা ব্লগাররা ওয়াজ আর শুক্রবারের জুম্মার বয়ানের বিরুদ্ধে বলে আসছি, তখন আপনারা এইসব বিষয় আমলেই নেননি, আপনারা কেবল শিল্পচর্চা করে বড়ো শিল্পী হতে চেয়েছেন! অথচ আপনাদের শিল্পচর্চার জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছিল। বিজ্ঞান চর্চা করা এবং মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে ২০১৩ সাল থেকে ব্লগাররা খুন হতে থাকে, বাংলাদেশের খুব বেশি শিল্পীকে সেই খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। কী দুর্বিসহ দিন গেছে তখন ব্লগারদের; কেউ দেশ ছেড়েছে, কেউ লুকিয়ে থেকেছে! ২০১৩ সাল থেকে চোরের মতো পিছনের দরজা দিয়ে শিল্পকলায় গিয়ে নাটকের শো করেছি, আবার পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছি, শো শেষে শিল্পকলার সামনের আড্ডায় যোগ দিইনি। বাসে উঠে দেখতাম কেউ ফলো করছে কি না, বাস থেকে নেমে আবার দেখতাম। পিছনে কারো পায়ের শব্দে চমকে উঠেছি বহুবার। প্রগতিশীল সব ব্লগারদের অবস্থা এই রকমই ছিল।
এই রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কি কোনোদিন মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, জঙ্গিদের মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন? আমি অন্তত দেখিনি। হয়তো ভেবেছেন- আমরা শিল্পী মানুষ, গান গাই, আমাদের অতো ঝামেলায় জড়াবার কী দরকার! আরে ভাই, ঝামেলায় তো আপনি জড়াবেন না, ঝামেলা আপনাকে জড়াবে। কপালে একটা টিপ পরার জন্য আপনাকে হত্যা করা হবে, গান গাওয়া কিংবা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্য আপনাকে হত্যা করা হবে। হয়েছেও তো- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. একেএম শফিউল ইসলামকে জঙ্গিরা হত্যা করেছে শুধু তার আধ্যাত্মিকতার চর্চা, লালন চর্চা, মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ানোর কারণে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তিনি ‘সুন্দরম’ নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন, নিজে সেতার বাজাতেন এবং একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন।
হে সুধী শিল্পীবৃন্দ, আপনারা তখনো আশ্চর্য রকমের নীরব ছিলেন! আপনারা পারতেন আওয়ামীলীগ সরকারকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে, আপনারা সেই চেষ্টাটাই করেননি। আপনারা যদি তা চাইতেন, বাংলাদেশের সব শিল্পীকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতেন, তাহলে বোধহয় সরকারও শফি হুজুরের ছায়াতলে যেত না। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পথ দেখাতে পারে কেবল শিল্পীরাই, কোনো কওমীপুত্র বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখবে না, যতোই কওমী জননী খেতাব দিক। এটা কওমী জননীকেও বুঝতে হবে। কোনো সমাজের সর্বস্তরের মানুষ রসাতলে গেলেও শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা যদি সৎ এবং প্রতিবাদী থাকে, তবুও সেই সমাজ আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমাদের মনে হয় সবই গেছে!
আজ সমাজের যে বিরাট অংশ একজন শিল্পীর মৃত্যু কামনা করে কিংবা একজন শিল্পীর মৃত্যুর পর যে বুনো উল্লাস করে, সেই সমাজটা কিন্তু এক-দুদিনে বা এক-দুবছরে তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর আপনাদের নীরবতার সুযোগে, আপনাদের আত্মকেন্দ্রিকতার কারণে মৌলবাদীরা তাদের শ্রমে ও ঘামে আজকের এই বর্বর সমাজটা গড়ে তুলেছে, এখন তো তারা ফসল ঘরে তুলবেই! বছরের পর বছর মৌলবাদীদের অবাধ নিবিড় অধ্যবসায় ছাড়া এতোটা বর্বর সমাজ গড়ে তোলা যায় না।
আপনারা স্বাধীনতার প্রজন্ম জীবনের অনেকটা বছর পার করেছেন, প্রকৃতির নিয়মেই একটা সময় পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু আপনারা আমাদের কোথায় দাঁড় করিয়ে রেখে যাচ্ছেন?
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর একজন শ্রদ্ধেয় সুরকার নাকি একটা কথা (আমি তার বন্ধুর মুখে শুনেছি) বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের কচি বাঁশের ওপর বসিয়ে রেখে গেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর এখন সেই বাঁশ বড় হচ্ছে আর আমাদের পিছনে ঢুকছে।’
আপনারা স্বাধীনতার প্রজন্ম, আপনাদের পিছনেই সেই বাঁশ ঢুকেছে! এবার আপনারাই বলেন, সেই বাঁশ আমাদের কোথা দিয়ে ঢুকে কোথা দিয়ে বের হবে?


জুন, ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×