somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবদ্রোহ (উপন্যাস: পর্ব-ছয় )

০৬ ই অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাথর এবং কাঁদার গাঁথুনিতে গৃহের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে দেয়ালের দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব দু-দিকে তিনটি বাতায়ন রাখা হয়েছে যাতে অবাধে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে গৃহমধ্যে। বাতায়ন দিয়ে যাতে কেউ গৃহে প্রবেশ করতে না পারে সে-জন্য কাঠের সরু কাঠি পুঁতে দেওয়া হয়েছে আর গরুর ধূসর বর্ণের চামড়ার পর্দা টাঙানো হয়েছে, ইচ্ছে হলেই পর্দা উপরে তুলে রাখা যায়। প্রবেশ দ্বারে একখানা বেষ্টনি বানানো হয়েছে বাঁশ ও গরুর চামড়া দিয়ে, ইচ্ছেমতো দ্বার রুদ্ধ বা খোলা যায়। গৃহের উপরে বাঁশের কাঠামো আর তার উপরে যবের খড় দিয়ে পুরু ছাউনি দেওয়া হয়েছে যাতে বৃষ্টির জল ঢুকতে না পারে। স্বর্গের দেব ও ব্রহ্মাবর্তের মানবরা এই শৈলীতেই গৃহ নির্মাণ করে, তবে তারা ছাউনি দেয় ছন কিংবা কুশ ঘাস দিয়ে। তাদের তৈরি গৃহ তেমন নিপুণ নয়, দেব ও মানবদের চেয়ে দৈত্য ও দানবরা গৃহ নির্মাণে অধিক দক্ষতা অর্জন করেছে, কারণ তারা অনার্য বানদের শৈলী গ্রহণ করেছে। অনার্য বানর জাতি গৃহ নির্মাণে দক্ষতার অনেক উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে।

বসতবাটীর পূর্বদিক খোলামেলা, আলোজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন রাখার কথা বলা হয়েছে শাস্ত্রে; এজন্য গৃহের সামনে রাখা হয়েছে প্রশস্ত আঙিনা। আঙিনার উত্তরে চতুর্দিক উন্মুক্ত রেখে খড়ে ছাওয়া একটি ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে; এই ছাউনিতেই সভা, বিচারকার্য, কিংবা নিছক বৈঠকি আড্ডা অনুষ্ঠিত হবে। আঙিনার দক্ষিণদিকে উপবেশনের জন্য কয়েকটি পাথরের চাঁই রাখা। গৃহ দুটির সামনে প্রশস্ত আঙিনা ছাড়াও দু-পাশে এবং পিছনে রয়েছে বৃক্ষাদিতে পূর্ণ পর্যাপ্ত স্থান, আর আঙিনা ও বৃক্ষাদিপূর্ণ স্থানের প্রান্তসীমায় পাথর ও কাদার গাঁথুনি দিয়ে কোমর সমান দেয়াল নির্মাণ করে সামনের দিকে একটি মাত্র প্রবেশ পথ রাখা হয়েছে। নৃপতিকেকে কিছুটা সুরক্ষা দেবার জন্যই এই দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।

এই স্থানটি বৃক্ষাদি, তৃণ আর লতা-গুল্মে পরিপূর্ণ ছিল। গৃহ নির্মাণ ও আঙিনা প্রশস্ত করার প্রয়োজনে তৃণ ও লতা-গুল্ম পরিষ্কার করতে হয়েছে, কিছু বৃক্ষও কাটতে হয়েছে। তবে প্রয়োজনের বাইরে বৃক্ষ কাটা হয়নি, আর্যরা অপ্রয়োজনে বৃক্ষ কাটা পছন্দ করে না। গৃহ এবং আঙিনার চতুর্দিকে এখনো প্রচুর বৃক্ষ রয়েছে। গৃহের পিছনদিকে ও উত্তর-দক্ষিণে রয়েছে শাল, কিংশুক, খয়ের, নিম, বিভীদক, গিরিকদম্ব, দাড়িম্ব, আমলক, হরিতকী ইত্যাদি বৃক্ষ এবং দূর্বা আর লতাগুল্ম। আঙিনার উত্তরদিকে রয়েছে কয়েকটি মৌলশ্রী, দুটি শাল ও দুটি শীশম বৃক্ষ; পূর্বদিকে তিনটি রক্তকাঞ্চন, দক্ষিণদিকে একটি বৃহৎ আমলক, একটি বিভীদক ও কয়েকটি পেয়ারাগাছ রয়েছে। বাটীতে প্রবেশ পথের বাইরের রাস্তার দু-ধারে বেণ এগারোটি শীশম ও চারটি মৌলশ্রী বৃক্ষের চারা রোপন করেছেন, শাস্ত্রমতে যে ব্যক্তি রাস্তায় এগারোটি শীশমবৃক্ষ রোপণ করে তার ইহলোক ও পরলোক দুই-ই ভালো থাকে। আর দুই বা তার অধিক মৌলশ্রী বৃক্ষ রোপন করলে একশত যজ্ঞের সমান পূণ্যলাভ হয়।

ব্রহ্মাবর্তের আর্য মানব গোত্রগুলোর বসতি অস্থায়ী, তারা এক স্থানে দু-তিন শরতের বেশি স্থায়ী হয় না। কখনো কখনো তারা এক শরৎ এক স্থানে কাটায় তো আরেক শরৎ ভিন্ন স্থানে অতিবাহিত করে, আবার দু-তিন শরৎ পর হয়ত পূর্বের স্থানে ফিরে আসে। তারা যেখানে গবাদী পশুর চারণভূমি বেশি দেখতে পায়, সেখানেই অস্থায়ী বসতি গড়ে। সমগ্র ব্রহ্মাবর্ত জুড়েই মঞ্জু, কাষ্ঠ, কুশ, দূর্বা প্রভৃতি তৃণ সমৃদ্ধ চারণভূমি রয়েছে।

কেবল ব্রহ্মাবর্তের মানবরাই নয়; সরস্বতীর ভাটির দিকের এবং সপ্তসিন্ধুর অন্য ছয় নদীর তীরে ছড়িয়ে পড়া আর্যরাও এমন যাযাবর স্বভাবের। কখনো নদীর উজানের দিকে যায়, কখনোবা ভাটির দিকে; আবার কখনো কখনো এক নদী ছেড়ে আরেক নদীর তীরে গিয়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে। তবে সপ্তসিন্ধুর তীরে কিছু কিছু আর্য গোষ্ঠী আছে যারা স্থায়ী বসতি গড়েছে, অনার্যদের মতো অনেক আর্য গোষ্ঠীর মধ্যেও স্থায়ী বসতি গড়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।

যাযাবর স্বভাবের কারণেই বেশিরভাগ আর্য গোষ্ঠী কখনো শক্ত-পোক্তভাবে গৃহ নির্মাণের দিকে মনোযোগ দেয়নি, ফলে গৃহ নির্মাণ বিদ্যায় তারা অনার্যদের মতো দক্ষও হয়ে ওঠেনি। তাদের পূর্ব-পুরুষরা পাহাড়-পর্বতের গুহায় বাস করত, কেউবা গবাদী পশুর চামড়ার সঙ্গে চামড়া জুড়ে কিংবা ভেড়ার লোম দিয়ে বোনা মোটা কাপড়ের ছাউনি ও ঘের বানিয়ে তার মধ্যেই পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত কাটিয়ে দিত। এখনো কিছু কিছু আর্য গোষ্ঠী তেমনিভাবেই জীবন অতিবাহিত করে।

বেণ আশপাশের পড়শীদের বসতবাটীর দিকে তাকান, মানুষ ঘুম থেকে উঠতে শুরু করেছে, কেউ কেউ শুরু করেছে দিনের কাজ। ওই তো কিছুটা দূরে এক চিলতে আঙিনায় বসে শীতল খুড়ো পরম যত্নে মাধ্বী তৈরিতে ব্যস্ত, মাধ্বীর মউ মউ করা গন্ধ ভেসে আসে বেণের ঘাণেন্দ্রিয়ে।

নৃপতি বেণও নিত্যদিনের মতোই কাজ শুরু করবেন, নৃপতি হয়েছেন তাতে কী, তাঁর সংসার তো তাঁকেই সামলাতে হবে। বাটীর সদরদ্বার অতিক্রম করে পথে নেমে পুরোনো গৃহের উদ্দেশে পা বাড়ান তিনি।

পায়ে চলা সরু পথের পাশেই শীতল খুড়োর উনুন, মৃৎপাত্রে ফুটন্ত মাধ্বী, উনুনের মুখে খড়ি ঠেলতে ঠেলতে হঠাৎ বেণের দিকে দৃষ্টি পড়তেই বলেন, ‘কী গো নৃপতি, চোখ যে এখনো রক্তিম, গত রাত্রের নেশা এখনো কাটেনি বুঝি?’

বেণ বলেন, ‘তুমি বুঝি জানো না খুড়ো- যে নেশা আমাকে কখনোই গ্রাস করতে পারে না!’

‘তা তো জানি, তবু ভাবলাম নতুন নৃপতি হয়েছ, একটু বেশি পানের ফলে নেশা এখনো কাটেনি, চোখ যে এখনো বেশ রক্তিম।’
‘রাত্রে নিদ্রা কম হয়েছে খুড়ো, তাই চোখ রক্তিম।’

‘একটু বসে যাও, প্রভাতকালে আমার উনুনের পাশ দিয়ে যাচ্ছো, নুতন নৃপতিকে একটু আপ্যায়নের সুযোগ দাও, দু-চষক মাধ্বী পান করে যাও।’

‘বলছ যখন, তোমার কথা ফেলি কী করে!’

গাছের কাণ্ড কেটে তৈরি করা আসনে উপবেশন করেন বেণ। শীতল খুড়ো নারিকেল মালা আর বাঁশের ফালি দিয়ে তৈরি হাতা দিয়ে পাত্রের মাধ্বী ঘোটা দিতেই পাত্রের তল থেকে অজস্র বুদবুদ ভেসে ওঠে, তারপর হাতায় মাধ্বী তুলে চষকে ধোঁয়া ওঠা মাধ্বী ঢেলে বাড়িয়ে দেন বেণের দিকে।

মধু থেকে প্রস্তুত করা এক ধরনের বিশেষ মদ্য- মাধ্বী, শীতল খুড়োর হাতের মাধ্বীর খুব সুনাম আছে আর্য দেব এবং মানবদের মধ্যে। পুরুষরা তো বটেই নারীদের মাঝেও খুব জনপ্রিয় মাধ্বী। মাধ্বীর তেতো নয়, মিষ্ট ধরনের, তাই মাধ্বী নারীদের খুব পছন্দের মদ্য। শীতল খুড়ো এককালে খুব ভালো যোদ্ধা ছিলেন, এখন এই বাষট্টি বছর বয়সেও তার শরীর দারুণ মজবুত। মাথা ভর্তি কাঁচাপাকা কেশ ছাড়িয়ে যায় পিঠ, এখন অবশ্য খোঁপা বাঁধা। তার দাড়ি-গোঁফ ঋষিদের মতো লম্বা। আর্য তরুণরা দাড়ি-গোঁফ রাখতে অপছন্দ করলেও, মধ্যবয়সে পা রাখতেই তারা দাড়ি-গোঁফ রাখতে শুরু করে।

শীতল খুড়ো বলেন, ‘তাক ঠিক আছে?’
‘হ্যাঁ, দারুণ! তোমার হাতের মাধ্বী সোমরসকেও হার মানায় খুড়ো!’
‘কী যে বলো!’ হাসেন শীতল খুড়ো।

‘তোমাকে খুশি করার জন্য নয়, সত্যি বলছি খুড়ো। দেবগণ আর অপ্সরাদের আপ্যায়নের জন্য বড় এক পাত্র মাধ্বী আমার গৃহে পৌঁছে দিও, অপরাহ্ণে তুমি আমার থেকে একটা ভেড়া নিয়ে নিও।’

‘দেবতাগণ আমাদের সকলের অতিথি। তাঁদের জন্য মাধ্বী দিয়ে তোমার কাছ থেকে ভেড়া নিলে আমার পাপ হবে, দেবতাগণের সেবার জন্য আমি এমনিতেই মাধ্বী পাঠিয়ে দেব।’

‘আচ্ছা, তোমার যেমন ইচ্ছে।’ বেণ চষকে চুমুক দিতে দিতে কথা বলেন।

শীতল খুড়ো বলেন, ‘কাল রাত্রে অপ্সরার সাথে খুব ভালো নেচেছ তুমি, তোমাদেরই তো নাচের বয়স, এই বয়সে আনন্দ না করলে আর কবে করবে! তবে আমাদেরকে রক্ষার দায়িত্বটাও ভালো করে পালন কোরো বাছা।’

‘নিশ্চয় খুড়ো, আশির্বাদ কোরো আমাকে, নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমি তোমাদেরকে রক্ষা করব।’
বেণ শেষ চুমক দিয়ে চষক শূন্য করেন, শীতল খুড়ো বলেন, ‘আরেক চষক দেই?’
‘না গো খুড়ো, প্রভাতকালে বেশি পান করতে চাই না, তোমার কথা রক্ষার জন্যই এক চষক পান করলাম। সারাদিনের কাজ পড়ে আছে, আমি যাই খুড়ো।’
‘আচ্ছা এসো।’

বেণ উঠে হাঁটতে শুরু করেন আর অল্পক্ষণের মধ্যেই নিজের পুরোনো গৃহের আঙিনায় পৌঁছে দেখেন হংসপাদা বাইরের উনুনে জবের রুটি তৈরি করছেন, অঙ্গ আঙিনায় ধীরপদে হাঁটতে হাঁটতে দন্ত মার্জন করছেন নিমের ডাল দিয়ে।

হংসপাদা বেণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেবগণ উঠেছেন?’

হংসপাদার চোখে দৃষ্টি রাখে বেণ বলেন, ‘না, তাঁরা এখনো শয্যায় আছেন। আরেকটু পরে তাদের আহার পৌঁছে দিও। রুটির সঙ্গে কী দেবে?’

‘গতকালের মাংস রয়েছে অনেক, তাই গরম করে দেব। পিষ্টক আর দুগ্ধও দেব।’
‘কিছু ফল দিও সঙ্গে। শীতল খুড়ো মাধ্বী দিয়ে আসবে, তুমি কয়েকটা চষক নিয়ে যেও।’

বেণ গৃহের দেয়ালের পাথরের খাঁজে গুঁজে রাখা নিমডাল নিয়ে দন্ত মার্জন করেন, তারপর আঙিনায় রাখা জলের পাত্র থেকে জল নিয়ে মুখ ধুয়ে নিমডালখানা পূর্বের স্থানে রেখে গৃহে প্রবেশ করেন। পৃথু আর অর্চি এখনো শয্যায় ঘুমিয়ে আছে, ঘুমন্ত পুত্র-কন্যার দিকে মায়াদৃষ্টি বুলিয়ে দড়িতে ঝোলানো একখানা ছোট্ট বস্ত্র নিয়ে ভেজা হাত-মুখ মুছে বস্ত্রখানা যথাস্থানে রেখে দেন। নিজের শরীরের নিবি ও বাস খুলে রেখে মোটা বস্ত্রের নেংটি পরিধান করেন। তারপর পণি বণিকের নিকট থেকে ক্রয় করা অনার্যদের তৈরি উত্তরীয়খানা কাঁধে ফেলে গৃহের বাইরে বের হয়ে দেখেন মাতা সুনীথা এরই মধ্যে আঙিনার দক্ষিণকোনের ছোট্ট কুণ্ডে অগ্নি প্রজ্জ্বলন করেছেন। বেণ অগ্নিকুণ্ডের কাছে গিয়ে করজোড়ে দাঁড়িয়ে অগ্নিমন্ত্র পাঠ করার পর অগ্নিকুণ্ড প্রদক্ষিণ করেন। সাতবার প্রদক্ষিণ করার পর অগ্নিদেবকে প্রণাম করেন।

ঋষি অর্থবার অনুসারী অগ্নিপূজারী আর্যরা প্রভাতকালে ঘুম থেকে উঠে কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে অগ্নিকে প্রদক্ষিণ করে প্রণাম করেন। সকল অগ্নিপূজারী আর্যদের বাটীতেই এরূপ অগ্নিকুণ্ড আছে। অগ্নি-প্রণাম শেষে হংসপাদাকে বলেন, ‘আমি স্নান সেরে আসছি।’

সরু পথ ধরে সরস্বতী নদীর ঘাটের দিকে হাঁটতে থাকেন বেণ, পথে যাদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের সঙ্গেই কুশল বিনিময় করেন, প্রয়োজনীয় কথা থাকলে বলেন। বহির্ষ্মতী থেকে বের হবার একমাত্র পথটি সরস্বতী নদীর দিকে, বাকি সবদিকে কাঠের বেষ্টনি দিয়ে ঘেরা যাতে অনার্যরা চতুর্দিক থেকে অতর্কিত আক্রমণ করতে না পারে। বহির্ষ্মতীতে প্রবেশের দ্বারটি রাত্রে রুদ্ধ করে রাখা হয়। কাঠের বেষ্টনি পেরিয়ে সরস্বতীর পারে পা রাখেন বেণ। বর্ষাকালে সরস্বতীর জল অনেক উপরে উঠে আসে আর নিচু ভূমির অরণ্যে ঢুকে যায়, জল নেমে গেলে পড়ে থাকে বালু আর কাদার পলি, কিন্তু এখন বসন্তকাল, সরস্বতীর জল নিচ দিয়ে বইছে।

বালুচরে আর্যরা সকাল-বিকাল দৌড়বিদ্যা, ঘৌড়-দৌড়বিদ্যা, মল্লযুদ্ধ, বর্শা ও তীর নিক্ষেপ, তরোবারি খেলা এবং নানাবিধ শরীর চর্চা করে বারোমাস। এতে তাদের শরীর সুস্থ থাকে, সুগঠিত হয়, যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যায় যারা দক্ষ, আর্যদের পরীক্ষিত সৈনিক যারা, তারা কিশোর ও যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলেন।

বেণ সরস্বতীর চরে নেমে সোজা মল্লযুদ্ধের আখড়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ান, নতুন নৃপতিকে দেখে সকলে অভিবাদন জানায়। মল্লযুদ্ধের দক্ষ প্রশিক্ষক ও যোদ্ধা অরুণ বেণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কী গো নৃপতি, আজই চলে এলে?’

‘না আসার তো কোনো কারণ নেই ভ্রাতা!’

অরুণ মৃদু হেসে বলেন, ‘ভাবলাম নতুন নৃপতি হয়েছ, কিছুদিন বিশ্রাম করবে, সময়টা উপভোগ করবে।’

‘নিত্যদিনের অভ্যাসই আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে। তাছাড়া নৃপতি হয়েছি বলে সেই আনন্দে তো আর নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারি না। নৃপতিকে সব কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়।’

অন্য একজন মল্লযোদ্ধা বলে, ‘তা বেশ বলেছ, এই জন্যেই তুমি আজ নৃপতি।’

অরুণ আবার বলেন, ‘আজ লড়বে নাকি আমার সঙ্গে? নতুন নৃপতির পরীক্ষাটা আমার সঙ্গেই হোক।’ তারপর অন্যদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কী বলো তোমরা?’

কয়েকজন মল্লযোদ্ধা একযোগে বলেন, ‘বেশ, তাই হোক। নৃপতি, লেগে যাও দেখি।’

হাসেন বেণ, ‘এসো তাহলে।’

কাঁধের উত্তরীয়খানা ভূমিতে রেখে অরুণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যান বেণ। দুজনই মৃত্তিকা নিয়ে দু-হাতে ঘসেন আর একে অন্যের শরীরে ছুড়ে মারেন যাতে ধরতে সুবিধা হয়, তারপর দুজনই একে অনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন, শুরু হয়ে যায় দুজনের মল্লযুদ্ধ। অন্যান্য মল্লযোদ্ধারা হাততালি দিয়ে সমস্বরে আনন্দোল্লাস করে ওঠে।



(চলবে......)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:৪৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×