

বরগুনার ’বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর’ ধ্বংস করা হয়েছে। জাদুঘরের অন্যতম উদ্যোক্তা পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাইভে এসে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত গিয়ে নৌকার নকশা সংগ্রহ করেছি। সেই থেকে ছোট ছোট নৌকা কারিগরের মাধ্যমে তৈরি করেছি। তিনি আরো বলেন, জাদুঘরের নাম নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে। তার মানে এই নয় যে নৌকাগুলো ধ্বংস করবেন। থেকে নৌকা কিছু সময় ভিডিও প্রচারের পর কতিপয় ব্যক্তি এসে তাতে বাধা দেন।’
আরিফুর রহমানের কষ্টটা আমি অনুভব করতে পারি। দেশের নানা প্রান্তে গিয়ে সখের জিনিস সংগ্রহ করা কতটা কষ্টের তা আমি বুঝেছি পুতুল সংগ্রহ করতে গিয়ে। চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কিংবা কনকনে শীতে নানা জায়গায় ছুটে যাই পুতুল সংগ্রহ করতে। পাঁচশো-সাতশো টাকার পুতুল কিনতে যাতায়াত আর হোটেল ভাড়ায় খরচ করি তিন-চার হাজার টাকা। যেখানেই ঘুরতে যাই, আগে স্থানীয় মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করি- ’মাটির পুতুল বা জিনিসপত্র কোথায় পাওয়া যায়?’ ’আশপাশে পালপাড়া কোথায়?’
আর সংগ্রহ করা পুতুল সংরক্ষণ করা আরেক যন্ত্রণার কাজ। সাজিয়ে রাখা পুতুলগুলোর ধুলো মুছতে মুছতে কত শত ঘণ্টা যে ব্যয় হয়! গৃহকর্মীদেরকে পুতুল মুছতে দিই না। একবার একজনকে দিয়েছিলাম, কাপড় দিয়ে এমন ঘষা দিয়েছিল যেন পুতুল নয়, ঝামা দিয়ে পাতিল ঘষছে! অত পুতুল তো আর সাজিয়ে রাখা যায় না, কার্টনে ভরে বাথরুমের ওপরের স্টোরে রাখতে হয়। খাটের নিচে রাখতে হয়। বাসা বদলের সময় আরেক বিড়ম্বনা।
তাই পুতুল জাদুঘরের জন্য জায়গা খোঁজা শুরু করেছিলাম। গত বছর সেই আশার মৃত্যু ঘটেছে, এই দেশে পুতুল জাদুঘর তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। কিন্তু জাদুঘর করব, অন্য দেশে। কারণ, এত কষ্টের আর যত্নের পুতুল উন্মাদেরা ধ্বংস করবে, সেটা সহ্য করতে পারব না। জাদুঘরটি পৌরসভার অধীনে হলেও আরিফুর রহমানের অবদান অনেক। তিনি জীবনের মূল্যবান সময় আর অর্থ ব্যয় করে একটা বিরাট স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তার সময়, অর্থ, স্বপ্ন সব শেষ!
জগতে কিছু মানুষ থাকেন, যারা নিজের ক্যারিয়ার, বিলাসী জীবনের মোহ ত্যাগ করে জীবনটাকে উৎসর্গ করেন ঐতিহ্য-সংস্কৃতি রক্ষা আর সৃজনশীলতার পিছনে। আমার ধারনা আরিফুর রহমানও তেমন মানুষ। নইলে কোন পাগলে লঞ্চ ব্যবসা না ক’রে নৌকা সংগ্রহ করে, যেখানে লঞ্চের কর্মচারী কয়েক বছরেই লঞ্চের প্রভাবশালী মালিক হয়ে যায়!
আরিফুর রহমান, এই দেশটা আমাদের নয়, চলুন অন্য কোথাও, অন্য কোনো দেশে, যেখানে আমরা গড়তে পারব আমাদের স্বপ্নের যত সৌধ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


