somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন স্বপ্নে.........

১০ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলোর ছুটির দিন ম্যাগাজিনটা পড়ছিলাম। সংখাটা ছিল ৩১এ-মার্চের। কোন একটি পৃষ্টা পড়তে গিয়ে দেখলাম লেখা আছে “গরু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাতে পারে, তবে স্বপ্ন দেখতে হলে অবশ্যই শুতে হয়।“[১] সেটা পড়া থেকেই আমার এই উদ্ভট গল্পের উদ্ভব। গরু কি আসলেই স্বপ্ন দেখে বা সে যদি কখনো একটি ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে সে কী দেখে? ভাবতে লাগলাম, এটা-সেটা আরো কত কী!!!

সিদ্দিক মিয়া গরীব কৃষক। রাস্তা থেকে বা পরের ক্ষেত থেকে কুড়িয়ে পাওয়া কিছু শুকনো খড়, ডোবা থেকে আনা কিছু কচুরি-পানা, ভাতের মাড় ছাড়া নিয়মিত খাবারের বাইরে গরুটার তেমন কিছু জুটে না। জুটবে কিভাবে? উনার সেরকম জমিই নেই যা থেকে কিছু লতাপাতা আর ঘাস এনে গরুটাকে খাওয়াবে। তবে গরুটার সুসময় যায় সে বছর যে বছর মিষ্টি আলু আর মূলার বাম্পার ফলন হয়। সিদ্দিক মিয়া তখন লাভ করতে না পারা কৃষকদের ফেলে দেওয়া আলু আর মূলা কুড়িয়ে এনে গরুটাকে খাওয়ায়।

আজ বেশ সকাল সকাল গরুটার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠেই দেখে তার গলায় কোন দড়ি বাধা নেই!!!! এদিক-ওদিক তাকিয়েই ভোঁদৌড়। দৌড়াচ্ছে কেবল দৌড়াচ্ছেই, কখনো কাউকে ভয় দেখিয়ে কখনো নিজে ভয় পেয়ে...... অবশেষে থমলো গিয়ে একটা মাঠের সামনে। বিস্তির্ণ মাঠ, পুরোটাই লম্বা-লম্বা তাজা ঘাসে ভর্তি, তার এক পাশে একটি বাড়ি। এখন গরুটা কী করবে? তাজা ঘাস পেয়ে খাওয়া শুরু করবে? নাহ, এই গল্পের লেখক হিসেবে আমি যা চাই ও তাই করবে  । সিনেমার ডিরেক্টররা যেমন তাদের ইচ্ছে মত নায়কদের এক্সটা পাউয়ার দিয়ে থাকেন, নিজেদের ইচ্ছে মত কাহিনী ঘুরিয়ে পাকীয়ে দর্শনার্থীদের ধাঁধায় ফেলে রাখেন আর নিজেদের সিনেমাকে হাই-থট সিনেমা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চান তাদের মত আমিও গল্পটাকে রসাই ;) তবে হাই-থটের কিছু নেই। ইন্টারমেডিয়েটে যখন হৈমন্তী গল্পটা পড়ি তখন হৈমন্তীর মৃতুর কারন হিসেবে তৎকালীন সামাজিক ব্যবস্থাকে দ্বায়ী করা হতো। কিন্তু আমার মতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই হৈমন্তীর মৃত্যুর জন্য দ্বায়ী ছিলেন। তিনি চাইলেই পাশের বাড়ির তপুর সাথে হৈমন্তীর ইয়ে-ইয়ে ভাব জমাতে পারতেন। যাহোক গরুটা এত সুন্দর-সুন্দর ঘাস পেয়ে নিজের অশ্রু ধরে রাখতে পারল না  । নিজেকে সামলে নিয়ে আবারো তাকালো...... তাজা-সবুজ ঘাস। বুকভরে শ্বাস নিল আর ঘাসে গড়াগড়ি খেতে লাগল। তারপর...... কী আর করা, শত হলেও গরু, আমার কথা শুনতে চাইছে না, ও এবার ঘাস খেয়েই ছাড়বে। এখান থেকে কিছু খাচ্ছে, ওখান থেকে কিছু খাচ্ছে; দাঁড়িয়ে খাচ্ছে আবার বসে জাবড় ও কাটছে।

কিছুক্ষন যেতে টিন-টিন শব্দ শুনা গেল। শব্দটা যেন দূর থেকে কিছুটা কাছে এসে থেমে গেল। আবার থেমে-থেমে বাজছে। গরুটা দাড়াল, ওইতো...... এক নজরে তাকিয়ে আছে। কী সুন্দর, গলায় ঘুঙুর ঝুলছে; ঠিক দিল ওয়ালে দুলহানীয়া লে জায়েংগে এর মত। তাহলে ওকে কি সিমরান নাম দেয়া যায়? নাহ পাছে লোক আবার বলবে কাজল এবং শাহরুখ খানকে গরুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। লালী নামটা দেয়াই ভাল। গল্পের নায়ক ঘাস খাচ্ছে আর লালীর দিকে আস্তে-আস্তে এগুচ্ছে। টিন-টিন শব্দের মোহ যেন তাকে তাড়া করছে, কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছে; কখন যে ও লালীর সাথে ধাক্কা খেল............ এইমাত্র। দুজন দুজনের দিকে তাকাল, চোখের পলক একটু থেমে-থেমে পড়ছে। গাইবে ‘তোঝে দেখা তোয়ে জানা সানাম, পেয়ার হোতা হে দিবানা সানাম’...... নাহ, ও বলে হাম্বা; বেচাড়া গরু।

এক সাথে ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে, কে প্রতিদিন কী খায় তা শেয়ার করছে ইত্যাদি-ইত্যাদি। হটাত লালীকে আনমনা দেখাচ্ছে, ও কী যেন দেখছে, পাশের বাড়ির খড়ের পাড়া। মানে কী লালী কি খড়ের পাড়ায় যেতে চায়? গল্পের নায়ক ও দেখি লালীকে ইশাড়া করছে, চোখ মারছে খড়ের পাড়ায় যাওয়ার জন্য। কি লিখতে চলেছি আমি এইসব? এতো দেখি বাংলা ছবির দৃশ্যের মত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা আমার কথা শুনছে না, চলে যাচ্ছে। ঐ দিকে আমার লেখার মান-সন্মান গেল বলে!! চলেই গেল......

ওরা খড় খাচ্ছে, খাচ্ছেতো খাচ্ছেই; যেন কোন দিনই খায়নি। লালী টেনে টেনে খড় বের করে দিচ্ছে আর ও খাচ্ছে। কতক্ষন ধরে পানি খাচ্ছেনা তার কোন হিসেব নেই, শুধু খড় খাচ্ছে। একসময় গলায় খড় আটকে গেল, ওর শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। লালীটা আবার দুষ্টুমি করছে, তার লেজ দিয়ে পিঠে পেটাচ্ছে। সামনে আবছা-আবছা পানির গামলাটা দেখা যাচ্ছে। পানির গামলা আবার আসলো কোথা থেকে, এখানে তো ছিল না? শ্বাস কষ্টটা বেড়েই চলছে। পানি খেতে যাবে এমন সময় তার ঘোর কাটল। সিদ্দিক মিয়া গরুটার দড়ি ধরে টানছে আর পেটাচ্ছে “অই উঠ, মাঠে যাইতে হইব। গতকাল রমিজুদ্দিন রে কইয়া আইছিলাম ওরে লইয়া হাল টানমু”।
............................................................................................................
[১]http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-03-31/news/236689
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×