-- ছাতকে নাইকো দুর্নিতি তদন্তে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ টিম
গতকাল আদালতে খালেদাকে আনার পর খালেদা বললেন - শেখ হাসিনাকেও আদালতে হাজির করতে!
প্রথম আলোতে খালেদার বক্তব্য ফলাও করে ছাপা হল।
কেন?
প্রথমআলো কি নিজেদের লেখাও ভুলে যায়?
প্রথমআলো কি এই ইশুতে তার পুর্বের বহুল আলোচিত রিপোর্ট গুলোর কথা উল্লেখ করতে পারতো না?
সম্পাদক তো পরিবর্তন হয় নি।
ঐ শালা মতিয়ুর কি স্মৃতিশক্তি লোপ পেল? নাকি এখানেও রাজনীতি?
২০০৮ এর পর দফায় দফায় নাইকো নিয়ে ইনভেষ্টিগেটিভ রিপোর্ট ছাপিয়েছে প্রথম আলো?
সেখানে বার বার বলা হয়েছে এই দুর্নিতি হাসিনার আমলে হয় নি, ২০০৩ এ হয়েছে।
তত্তাবধায়ক আমলে এই মামলা শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া - উভয়ের বিরুদ্ধেই ছিল সত্য।
কিন্তু শেখ হাসিনার বিপক্ষে মামলা খারিজ হয়ে গেছে, কারন একটি ধারা বিতর্কিত হওয়ায় হাসিনা শেষপর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে নি।
শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালে নাইকোর সাথে আলোচনা করেছে এবং দর কষাকষি করেছে, কিন্তু বাংলাদেশবিরোধী শর্তের কারনে কোন চুক্তি করেনি কারণ নাইকোর একটি শর্ত বাংলাদেশের স্বার্থের বিপক্ষে যাচ্ছিলো।
শেখ হাসিনা কোন চুক্তিই সই করেননি। যে কারনে, শেখ হাসিনার বিপক্ষে মামলা খারিজ হয়ে যায়।
অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মাদার োদ মাহামুদূর ও মওদুদ আহমদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এর পরামর্শে নাইকোর সাথে দুর্নিতির শর্ত রেখে চুক্তি সই করে ফেলে।
সরকারি সংস্থা বাপেক্সকে ধমক দিয়ে ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর নাইকো-বাপেক্স জেভিএ (জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট) সই হয়।
পরবর্তিতে কানাডার আদালতে প্রমানিত হয় যে, নাইকো বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার আমলে ঘুষ দিয়ে কাজ পায়।
নাইকো মামলার ঝামেলায় না যেয়ে দোষ স্বীকার করে মোটা অংকের জরিমানা দিয়ে রেহাই পায়। কিন্তু বাংলাদেশী আসামিদের মামলা চলছে।
কানাডিয়ান পুলিশ বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন তদন্ত করে। এমনকি আদালতের অর্ডার নিয়ে জেল থাকে আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করে নিয়ে যায়। কানাডিয়ান রেকর্ডে হাসিনার নাম নেই।
কিন্তু নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া, মাহামুদুর রহমান, মোশাররফ, মুওদুদ সহ ২৬ জন আসামির নাম এখনো ভিন দেশের আদালতেও। চলছে।
এছাড়াও আরো প্রমান - তত্তাবধায়ক ও তৎকালিন দুদকের ভয়ে একটি অফার পেয়ে কিছু দুর্নিতিবাজ রাজনিতিক ও ব্যবসায়ী কালো টাকা সাদা করেছিল।
রাজনিতিকদের ভেতর যারা চোরাই টাকা সাদা করেছিল তারা সবাই বিএনপির।
এরা সাইফুর রহমান, খালেদা জিয়া, আবদুল আউয়াল মিন্টু তারেকের বন্ধু মামুন ইত্যাদি।
প্রথম আলো ১৬ জুলাই ২০১৬ থেকে কিছু অংশ
সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে নাইকো ছাতক গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য একটি আনসলিসিটেড প্রস্তাব দিয়েছিল ১৯৯৮ সালে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে তিনটি নির্দেশনা দেয়। এক, প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র (যে ক্ষেত্র থেকে গ্যাস তোলা শেষ অর্থাৎ পরিত্যক্ত ক্ষেত্র) উন্নয়নের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য। দুই, এ ব্যাপারে বাপেক্স নাইকোর সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। তিন, এই প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের প্রস্তাবকে ‘সুইস চ্যালেঞ্জ’-এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সুইস চ্যালেঞ্জের অর্থ হলো—নাইকো-বাপেক্স যৌথ সমীক্ষা ও সমঝোতার ভিত্তিতে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র নির্ধারণ করবে। এর ভিত্তিতে নাইকো উক্ত গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের যে প্রস্তাব দেবে, তার ওপর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। সেই দরপত্রে যদি অন্য কোনো কোম্পানি নাইকোর চেয়ে আকর্ষণীয় প্রস্তাব দেয়, তাহলে সেই প্রস্তাব গৃহীত হবে। সে ক্ষেত্রে নাইকো গ্যাসক্ষেত্রের ইজারা পাবে না।
এই নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের আগস্টে নাইকো-বাপেক্স প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র নির্ধারণের জন্য একটি যৌথ সমীক্ষা করে। এই সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি (জেভিএ) গঠনের জন্য কোম্পানি দুটির মধ্যে আলোচনার সময় ছাতককে (পূর্ব) প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র বলে মানতে সরকারি সংস্থা বাপেক্স অস্বীকার করে।
২০০১ সালের ২৬ জুন বাপেক্স নথিতে উল্লেখ করে যে ছাতক (পূর্ব) ক্ষেত্রটি প্রান্তিক হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ক্ষেত্রটিতে কোনো কূপই খনন করা হয়নি। বরং কূপ খনন কর্মসূচির মধ্যে ক্ষেত্রটির নাম রয়েছে। কাজেই যে ক্ষেত্র থেকে কখনো গ্যাসই তোলা হয়নি, তা কোনোভাবেই প্রান্তিক ক্ষেত্র হতে পারে না।
নথিতে এই মতামত আসার কয়েক দিন পরই তৎকালীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হয়। এরপরও কিছুদিন বিষয়টি নিয়ে কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা ছিল না। এরপর হঠাৎ ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর নাইকো-বাপেক্স জেভিএ সই হয়।
এর আগে, দুর্নিতি বৈধতা দিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মওদুদ আহমদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ ছাতক পূর্ব ও পশ্চিমকে অভিন্ন ক্ষেত্র দেখিয়ে প্রান্তিক বলা যায় বলে সরকারকে পরামর্শ দেয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয় পূর্ববর্তী সরকারের ‘সুইস চ্যালেঞ্জ’-এর বিধান রদ করে।
এরপর কূপ খনন করতে গিয়ে নাইকো ২০০৫ সালে ছাতক ক্ষেত্রে দুবার বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রথম ৭ জানুয়ারি, দ্বিতীয়বার ২৪ জুন। নাইকোর অদক্ষ খননপ্রক্রিয়াই ছিল ওই দুর্ঘটনার কারণ। দেশে ওই বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি ওঠে।
ইতিমধ্যে তৎকালীন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে ১ লাখ ৯০ হাজার কানাডীয় ডলার দামের একটি গাড়ি ও বিদেশ সফরের জন্য পাঁচ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নাইকোর বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ বাংলাদেশে এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইকো ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের কাজ পাওয়ার জন্য একজন মধ্যস্থতাকারীকে (লবিস্ট) ১০ লাখ ডলার ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিল এবং কিছু টাকার লেনদেনও হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ১ কোটি ৮ লাখ টাকার একটি লেনদেনের (চেকের মাধ্যমে) ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়। জেভিএ সই হওয়ার পর, ২০০৪ সালের ৮ জানুয়ারি এই লেনদেন হয় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধমে। বাংলাদেশে কানাডীয় পুলিশ তদন্ত করে ঘুষের অর্থ লেনদেনের একটি সময়সূচি জানতে পেরেছিল। এর মধ্যে একটি লেনদেনের সময় ছিল জেভিএ চুক্তির পর। এই ১ কোটি ৮ লাখ টাকা সেই লেনদেনেরই অংশ বলে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন সরকারপক্ষের আইনজীবীরা। যাঁদের মধ্যে এই লেনদেন হয়েছে, তাঁরা নাইকো-বাপেক্স চুক্তির বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত ছিলেন। কানাডীয় পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে তাঁরা সাক্ষ্য ও তথ্য দিয়েছেন।
কানাডার আদালতে নাইকো এসব ঘুষ-দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছে। দোষ স্বীকার করায় কানাডার আইন অনুযায়ী আদালত নাইকোকে লঘু দণ্ড দেয় (মোটা অংকার জরিমানা দিয়ে জেলদন্ড এড়ানো)। কিন্তু কানাডার পুলিশের কাছে নাইকোর কৃতকর্মের কনফেসন সহ সব তথ্যই রয়ে যায়।
পরে বাংলাদেশ সরকারের নিযুক্ত আইনজীবীরা সেই তথ্য সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে গত ২৫ মার্চ বাপেক্সের পক্ষ থেকে ইকসিডে নাইকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে।
একইসঙ্গে টেংরাটিলায় দুই দফা বিস্ফোরণের দায়ে নাইকোর কাছে প্রায় ৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (প্রায় ১১৭ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে ইকসিড নাইকোর করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে নাইকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এখন সেই প্রক্রিয়া চলছে। তার অংশ হিসেবেই দুর্নীতির আরও অভিযোগ এবং নাইকো-বাপেক্স জেভিএ ও গ্যাস কেনার চুক্তির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মঈন গনি প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই ইকসিডের বিচারকেরা মামলার পক্ষগুলোর সঙ্গে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটি টেলিকনফারেন্স করবেন। তখন দুর্নীতির নতুন তথ্যাদি ও জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা সম্পর্কে আলোচনা হবে। তা ছাড়া শুনানির একটি তারিখও তখন নির্ধারিত হবে।
সুত্র - প্রথম আলো ১৬ জুলাই ২০১৬ - নাইকো দুর্নীতি -খালেদাসহ ২৬ জনের নাম কানাডিয়ান আদালতে