somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ বছর নোবেল পুরস্কার, এবার কিছুটা বেশী আলোচিত হলো।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিকিৎসা বিদ্যায় এ বছর নোবেল পুরস্কার-২০২২ এবার কিছুটা বেশী আলোচিত হলো।
কারন এই ডাক্তারি শাখার পুরষ্কার মুলত আদী মানবের উদ্ভব ও বিবর্তন, যা চিকিৎসা খাতকে উন্নত করবে।







মেডিসিন ও ফিজিওলজি অর্থাৎ চিকিৎসা বিদ্যায় এ বছর নোবেল পুরস্কার পেলেন সুইডিস জিনেটিক বিশেষজ্ঞ সানটে ফ্যাবো (Svante Paabo)।
বিলুপ্ত হোমিনিন তথা নিয়ানডারথালদের জিনোম এবং মানবজাতির বিবর্তন বিষয়ে ব্যাপক গবেষণার জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এই সুইডিশ বিজ্ঞানী/গবেষককে।


নিয়ানডারথাল মানুষের (হোমোসেপিয়েন্সের) পূর্ব পুরুষ নয়।

নিয়ানডারথাল অনেকটা মানুষের মতই Archaic Human (প্রাচীন মানুষ/আধুনিক মানুষের পূর্ব পুরুষ)
নিয়ানডারথাল বনমানুষরা মানবজাতির বিবর্তনের শেষদিকের একটি শাখা প্রজাতি ছিল, আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে ধিরে ধিরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।






২০০৮ সালে সাইবেরিয়ার ডেনিসোভায় পাওয়া যায় একটি ৪০,০০০ বছর পুরনো হাতের আঙ্গুল। যা ছিল মানুষের ( হোমো স্যাপিয়েন্স) পূর্ব পুরুষের ভাগিদার নিয়ানডার্থাল দলের। পেবো এক অসীধ্য সাধন করেন সেই আঙ্গুল থেকে ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করে। এই প্রথম মানুষ জানতে পারলো, আসলে মানুষের আদি পুরুষ আর নিয়ানডার্থালদের সঙ্গে জিনেটিক মিল ও ভাগাভাগি।
প্রায় ৪ লক্ষ বছর আগে ইউরোপ ও এশিয়ায় নিয়ানডার্থালরা বেড়ে ওঠে, আর আফ্রিকায় তিন লক্ষ বছর আগে মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্সদের ডেভেলপমেন্ট দেখা যায়।

৭০ হাজার বছর আগে কিছু একদল হোমো স্যাপিয়েন্স খাদ্য সন্ধানে ছুটতে ছুটতে আফ্রিকা থেকে ইউরোপ চলে আসে। এই জিকেটিকসের আবিস্কার নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করে মানুষের বিবর্তন এবং প্রায় এক লক্ষ বছর নিয়ানডারথাল আর হোমো স্যাপিয়েন্স একসঙ্গে পৃথিবীতে বিচরণ করেছে। সিম্থসোনিয়ান ইন্সটুটিউশানে প্রকাশিত তথ্য অনুসরে, অ-আফ্রিকান আধুনিক মানুষের জিনোমের মধ্যে নিয়ানডারথালের কন্ট্রিবিউশান ০১% থেকে ০৪%। যদিও নিয়ানডারথাল আর মানুষের ডিএনএ ডাইভারজেন্স আট লক্ষ বছরের মতো।

শত কোটি বছর আগে আগে প্রাণের উদ্ভব এবং ৬ কোটি বছর আগে প্রাইমেট বা আদিম মানবের উদ্ভব । ৩০ লাখ বছর আগে ‘হোমো’ জেনাস বা বংশের জন্ম। এদেরকে বলা হয় হোমিনিন এবং এরাই মানুষের মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ।
হোমো জেনাস ১১টি স্তর পার হয়ে আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্স হয়েছে। যে পূর্বপুরুষ থেকে ডেনিসোভান আর নিয়ানডারথাল এসেছ, ওই একই পূর্ব-পুরুষ থেকে আজকের আধুনিক মানুষের জন্ম। তারপর শাখার এই অংশ নিয়ানডার্থালেরা বিলুপ্ত হয়ে যায়!

নিয়ান্ডারথাল মানুষের জিন নকশা তৈরির যে প্রক্রিয়াটি ড. পেবো ব্যবহার করেছেন তার একটি ইতিহাস আছে।

তার বয়স যখন ১৩ তখন তার মা তাকে নিয়ে মিশরে গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে।
সেখানে তিনি মিশরের প্রাচীন সংস্কৃতি এবং প্রত্নতত্ত্ব দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তখনই সিদ্ধান্ত নেন তিনি ভবিষ্যতে একজন মিশরবিদ হবেন।


এই কারণেই তিনি ইজিপ্টোলজি ছেড়ে শুরু করলেন মেডিসিন (ডাক্তারি) পড়া। পরে মলেকিউলার জেনেটিক্সে ডক্টরেট করেন। আর এর মধ্য দিয়েই কৈশোরে তার যে বিষয়কে ঘিরে তার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল সেই বিষয়কে তিনি তার পেশার ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত করতে পেরেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস ড. পেবোর ওপর যে প্রোফাইল প্রকাশ করেছে তাতে তিনি লিখেছেন, "আমি বুঝতে শুরু করলাম যে ডিএনএ ক্লোন করার জন্য আমাদের কাছে অনেক প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু এই প্রযুক্তি কেউ প্রত্নতাত্ত্বিক দেহাবশেষ - বিশেষ করে মিশরীয় মমিগুলির ওপর প্রয়োগ করেছে বলে মনে হয় না।"

কিন্তু তিনি এই পথ ধরে শুরু করলেন। বিষয়টি নিয়ে তার প্রবল উৎসাহ তাকে টেনে নিয়ে গেল মমির ডিএনএ অধ্যয়নের দিকে। এর কয়েক বছর পর তিনি চলে যান ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট বার্কলেতে প্রাচীন ডিএনএ অনুসন্ধান নিয়ে গবেষণার জন্য।
এরপর এই গবেষণার ধারায় তিনি চলে যান জার্মানির মিউনিখে, যেখানে গুহাবাসী ম্যামথ এবং মেরু ভল্লুকের গবেষণায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেন।
কাজগুলো সহজ ছিল না, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি তৈরি করলেন, বলা যায়, তার নিজস্ব জিনোমিক টাইম মেশিন।





সময়ের সাথে সাথে তিনি আরও অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিছু করার জন্য প্রস্তুতি নেন। অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়ান্ডারথাল মানুষের ডিএনএ রহস্য উন্মোচন এবং বর্তমানের আধুনিক মানুষের থেকে নিয়ান্ডারথাল মানুষের জিন বিন্যাস কতখানি আলাদা তা ব্যাখ্যা করা।

তিনি হয়তো তখন ভেবে দেখেননি, কিন্তু তার হাত ধরেই বিজ্ঞানে চালু হয়েছিল নতুন একটি শাখা: প্যালিওজেনোমিক্স।


নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে জার্মানির লাইপজিগের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর ইভোল্যুশনারি অ্যানেথ্রোপলজি বিভাগ ড. ফেবোকে চাকরি দেয়। এতে ওনার অনেক সুবিধা হয়।

তিনি নিয়ান্ডারথালদের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ নিয়ে কাজ করে আসছিলেন এবং এই ইন্সটিটিউট তাকে বিশাল এক গুণগত অগ্রগতির সুযোগ তৈরি করে দেয়। সেটা হলো ডিএনএ নিউক্লিয়াসের গঠন সম্পর্কে গবেষণা করা।

চিকিৎসার জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে থাকা করোলিনস্কা ইন্সটিটিউট এক বিবৃতিতে বলেছে, "নতুন ইন্সটিটিউটে, ড. ফেবো এবং তার দল পুরাতন হাড় থেকে ডিএনএ-কে আলাদা করা এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করার পদ্ধতিগুলিকে ক্রমাগত উন্নত করেছেন। গবেষণা দলটি নতুন প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়েছে যা জিন বিন্যাসকে খুব সুদক্ষ করে তুলেছে।"

নিয়ান্ডারথাল জিন বিন্যাসের এই গবেষণার জন্য প্রায় ৪০,০০০ বছর আগের নিয়ান্ডারথাল হাড়ের নমুনা ব্যবহার করা হয়। এই হাড়গুলোতে ডিএনএ-এর কোডগুলি ভালভাবে সংরক্ষিত ছিল।
ওনার গবেষনা এবং নোবেল প্রাপ্তি মানবকুলের বিবর্তনের ইতিহাস টাইমলাইন অনেকটাই সমৃদ্ধ করলো।

তথ্যসুত্র ও ছবি সাইন্স জার্নাল এবং বিবিসি।
সেজান মাহমুদের ফেবু পোষ্টের একটি অংশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪৮
১৩টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×